<p style="text-align:justify">চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল নিয়ে যে ধরনের আশা ও সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল, এক বছর পর তাতো দেখাই যাচ্ছে না, বরং প্রতিদিন কয়েকগুণ লোকসান গুনতে হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">গত বছরের ২৮ অক্টোবর এই টানেলটি উদ্বোধনের পর থেকে দৈনিক আয় ব্যয়ের যে হিসাব দিচ্ছে টানেল কর্তৃপক্ষ, তাতে দেখা যাচ্ছে গড়ে প্রতিদিন যে টাকা আয় হচ্ছে এই টানেল থেকে, তারচেয়ে প্রায় চারগুণ বেশিই খরচ হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে সব উচ্চ খরচের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছিল তার মধ্যে কর্ণফুলী নদীর নিচে এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল একটি। যেটি কর্ণফুলী টানেল নামে বেশি পরিচিত।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="নেতাকর্মীদের জন্য আওয়ামী লীগের জরুরি ঘোষণা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/27/1730039935-64c1f3e6af6a117cbb2551d488254e3b.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>নেতাকর্মীদের জন্য আওয়ামী লীগের জরুরি ঘোষণা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/Politics/2024/10/27/1439781" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">প্রায় দশ হাজার সাতশো কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্প কেন এত লোকসান গুনছে তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে। এই কারণ খুঁজতে এরই মধ্যে সেতু সচিবসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রকল্পটি পরিদর্শনে গেছেন শনিবার। ঋণের টাকায় নির্মিত হওয়ায় এই প্রকল্প থেকে থেকে আয় তো দূরের কথা, প্রতিদিনের ব্যয়ও তোলা সম্ভব না হওয়ায় টানেলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।</p> <p style="text-align:justify">অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যোগাযোগ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘সঠিক সমীক্ষা ছাড়া একটি অবাস্তব প্রকল্প ছিল কর্ণফুলী টানেল। এখন কি করে এই লোকসান কমানো যায় আমরা সেই পর্যালোচনা করছি।’</p> <p style="text-align:justify">তবে এটিকে বিগত সরকারের একটি উচ্চাভিলাষী ও মারাত্মক ভুল প্রকল্প বলে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।</p> <p style="text-align:justify"><strong>তাহলে সংকটের সমাধান কী?</strong></p> <p style="text-align:justify">এমন প্রশ্নে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামসুল হক বলেন, ‘মাটির তলদেশে নির্মিত যে কোনো প্রকল্পে সময় বাড়ার সাথে সাথে অপারেশন খরচ অনেক বেড়ে যায়। সুতারং এই প্রকল্প উত্তরণের আর উপায় আছে বলে আমি মনে করি না।’ তবে, সড়ক বিভাগের সাথে সমন্বয় করে এই সংকট কাটাতে চেষ্টার কথা বলেছেন তিনি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বাফুফে নির্বাচনে আ. লীগ নেতার জয়, ঝিনাইদহে বিক্ষোভ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/27/1730040558-b66ca0dd6707601edc3ea3a1e93f6519.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বাফুফে নির্বাচনে আ. লীগ নেতার জয়, ঝিনাইদহে বিক্ষোভ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/27/1439782" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify"><strong>প্রতিদিনের আয় ব্যয়ের হিসাব কি?</strong></p> <p style="text-align:justify">২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে এই টানেলটি উদ্বোধনের পরদিন যানবাহন চলাচল শুরু হয়। গতকাল শনিবার সেতু কর্তৃপক্ষ গত ২২ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় এক বছরের গাড়ি চলাচল ও আয় ব্যয়ের একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে। এই পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এই টানেল দিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় এক বছরে গাড়ি চলাচল করেছে ১৪ লাখ ১১ হাজার ৪১২টি। যার মধ্যে মধ্যে ৭৬ শতাংশই ছিল হালকা যান বা ছোট গাড়ি। বাসের পরিমাণ ১০ শতাংশ, ট্রাক ১২ শতাংশ। আর অন্য বড় ট্রেইলারের পরিমাণ এক শতাংশেরও কম।</p> <p style="text-align:justify">টানেল কর্তৃপক্ষের হিসাব বলছে, প্রতিদিন গড়ে টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে তিন হাজার ৯১০টি। টানেল কর্তৃপক্ষের দেয়া হিসাব বলছে, এখন পর্যন্ত গত এক বছরে এই টানেল থেকে সরকারের আয় হয়েছে ৩৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যেখানে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন গড়ে টানেল থেকে টোল বাবদ আয় হচ্ছে ১০ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।</p> <p style="text-align:justify">কিন্তু মাটির তলদেশে নির্মিত টানেল হওয়ায় প্রতিদিন টানেলে কৃত্রিম অক্সিজেন ও আলো সরবরাহ, সামগ্রিক নিরাপত্তা ও জরুরি নিরাপত্তা বাবদ একটা বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন গড়ে টানেলটির এসব ব্যয় নির্বাহে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="চার বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/27/1730039720-af86d3d8e9a934f5898fe000d8edef89.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>চার বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/campus-online/2024/10/27/1439779" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এখানে আয় ব্যয়ের হিসাব যদি করা হয় তাতে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন সাড়ে দশ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা খরচ করে তার বিপরীতে আয় হচ্ছে ১০ লাখ ৩৭ হাজার টাকা।</p> <p style="text-align:justify">এই বিশাল একটি প্রকল্প থেকে প্রতিদিন সরকারের লোকসান গুনতে হচ্ছে ২৭ লাখ ৯ হাজার হাজার টাকারও বেশি। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় টানেলটি থেকে সরকারের লোকসান প্রায় চারগুণের কাছাকাছি।</p> <p style="text-align:justify"><strong>যে সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল</strong></p> <p style="text-align:justify">২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বা কর্ণফুলী টানেল চালু হবে ধরে নিয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় যান চলাচলের প্রাক্কলন করা হয়েছিল। প্রাক্কলন অনুযায়ী, চালুর পর ২০১৭ সালে দৈনিক গড়ে ১৭ হাজার ৩৭৪টি যানবাহন চলবে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হবে ২০ হাজার ৭১৯। ২০২৫ সালে তা হবে ২৮ হাজার ৩০৫টি। কিন্তু কয়েক দফায় পিছিয়ে প্রকল্পটি চালু হয় ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষে।</p> <p style="text-align:justify">চালুর প্রায় এক বছরের মাথায় দেখা যায় এই টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার যানবাহন চলাচল করছে মাত্র তিন হাজার ৯১০টি। অর্থাৎ সমীক্ষায় দাবি করা সংখ্যার চেয়ে অনেক কম সংখ্যক গাড়ি চলাচল করছে এই টানেল দিয়ে। কিন্তু সমীক্ষার সাথে বাস্তবতার হিসাব কেন মিলছে না?</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="পরীক্ষা দিতে এসে কারাগারে ছাত্রলীগ নেত্রী" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/27/1730039151-7819d64b662f3e8be6157c67fe5042a9.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>পরীক্ষা দিতে এসে কারাগারে ছাত্রলীগ নেত্রী</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/27/1439776" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সামসুল হক বলেন, ‘সে সময় এই টানেল নির্মাণের ডিসিশন নিতে রাজনীতি বেশি হয়েছে। সরকারের আমলারা নিজেদের জাহির করতে এই প্রকল্পটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে হাজির করতে গিয়ে ভুল সমীক্ষা সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছে।’</p> <p style="text-align:justify">যোগাযোগ বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করছে ও আয় হয়েছে সেটি আস্তে আস্তে আরো কমতে পারে। উদ্বোধনের পর প্রথম মাস অর্থাৎ গত বছরের নভেম্বরে টানেলে গাড়ি চলাচল করেছে এক লাখ ৬৬ হাজার ৩১২টি। সে হিসেবে ওই মাসে প্রতিদিন গাড়ি চলেছে পাঁচ হাজার ৫৪৪টি।</p> <p style="text-align:justify">শুরুর পর গড়ে গাড়ি চলাচল এখন কম কেন? কারণ হিসেবে অধ্যাপক সামসুল হক বলেন, ‘চালুর পর যে কোনো নতুন প্রকল্পের প্রথম সময়টা থাকে হানিমুন পিরিয়ড। সে সময় অনেকেই ঘুরতে বা দেখতে যাওয়ার জন্য পারাপার হয়। এখন গড়ে প্রতিদিন যে সংখ্যাটা দেখা যাচ্ছে সেটা আরো কমবে।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>টানেলটির ব্যবহার কেন কমছে?</strong></p> <p style="text-align:justify">২০২৩ সালে টানেল উদ্বোধনের পর ২০২৪ সালে গড়ে প্রতিদিন ১৮ হাজার ৪৮৫টি গাড়ি চলাচল করবে বলে সমীক্ষা প্রকাশ করেছিল টানেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ২০২৪ এর অক্টোবরে এসে দেখা যাচ্ছে গড়ে প্রতিদিন গাড়ি চলাচল করছে ৩ হাজার ৯১০টি। যা প্রকাশিত সমীক্ষার চেয়ে চার ভাগের একভাগেরও কম। তাহলে কী কারণে টানেলটি ব্যবহার কমছে, বা সরকারের এত লোকসান গুনতে হচ্ছে?</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর ১০ উপায়" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/27/1730040618-1acf4290eec622f9a45985428b447385.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর ১০ উপায়</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2024/10/27/1439784" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এমন প্রশ্নে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সেতু ও যোগাযোগ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘তখন এই প্রকল্পটিকে জাস্টিফাই করার জন্য একটা অবাস্তব ও প্রভাবিত সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছিল। যার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল ছিল না। এখন যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করছে সম্ভবত এটাই বাস্তব সংখ্যা।’</p> <p style="text-align:justify">অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথায় এটা স্পষ্ট যে টানেলটিতে গাড়ি চলাচল নিয়ে শুরুতেই ভুল সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা এর সাথে মোটাদাগে টানেল ব্যবহার কমার আরো কিছু কারণের কথা বলছেন। তাদের মতে, কর্ণফুলী নদীতে এই টানেল নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়ে তোলা। সেটি হয়নি নানা কারণে।</p> <p style="text-align:justify">এই টানেলে যানবাহন কিংবা আয় কমার পেছনে কয়েকটি টানেলে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের সুযোগ না থাকা, বাড়তি টোল ভাড়া ও কাছাকাছি দূরত্বে আরো একটি সেতু থাকার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা।</p> <p style="text-align:justify">অধ্যাপক সামসুল হক বলেন, ‘টানেলটি চালুর পর বাইসাইকেল, সিএনজি ও মোটরসাইকেলের মতো যানবাহনগুলো চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে সার্বজনীন না হওয়ায় পরিবহনের সংখ্যা কমছে। এছাড়া কর্ণফুলী টানেলের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে শাহ আমানত সেতু। এ সেতুর তুলনায় কর্ণফুলী টানেলের টোল হার যানবাহন ভেদে আড়াই থেকে ছয় গুণ পর্যন্ত বেশি। টোল হারের এ পার্থক্য টানেলে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="হোটেলে লুকিয়েও রেহাই পেলেন না দুই আওয়ামী লীগ নেতা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/27/1730039097-8b164f79b6e209389c50d7192dc01b17.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>হোটেলে লুকিয়েও রেহাই পেলেন না দুই আওয়ামী লীগ নেতা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/27/1439775" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">এছাড়াও টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে এখনো তেমন কোনো শিল্পকারখানা নির্মাণের যে সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল তাও হয়নি। যে কারণে সম্ভাবনা বাস্তবতায় আর রূপ নেয়নি।</p>