দেশে থামানোই যাচ্ছে না অপরাধ, বেপরোয়া সন্ত্রাসীরা

রেজোয়ান বিশ্বাস
রেজোয়ান বিশ্বাস
শেয়ার
দেশে থামানোই যাচ্ছে না অপরাধ, বেপরোয়া সন্ত্রাসীরা
প্রতীকী ছবি

দেশে বেড়েই চলেছে অপরাধ। প্রতিদিনই একাধিক খুনের ঘটনা ঘটছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ছিনতাই, ডাকাতি। বাসায় হানা দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় বৈঠক করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। এ অবস্থায় গতকাল সোমবার আইজিপি সারা দেশে চলমান বিশেষ অভিযান আরো জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।

আড়াই হাজার গ্রেপ্তারেও বেপরোয়া সন্ত্রাসীরাসাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে।

গত শনিবার বিকেলে এখানে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল কিশোর রহমত ওরফে সার্জন। গতকাল সকাল ৮টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে এলাকাটিতে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হলো। তাদের মধ্যে নারী, শিশুও রয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা নিরসন করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বজায় রাখতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বদ্ধপরিকর।

পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তদন্তে উঠে এসেছে, মাদক কারবারিরা ব্যাপকভাবে জেনেভা ক্যাম্পে প্রভাব বিস্তার করে আছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকার পরিবর্তনের পর তারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। প্রায়ই ক্যাম্পের ভেতরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

আরো পড়ুন
রিজার্ভে ঢুকছে সাড়ে ১৭ বিলিয়ন ডলার

রিজার্ভে ঢুকছে সাড়ে ১৭ বিলিয়ন ডলার

 

এরপর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

গতকাল জেনেভা ক্যাম্প এলাকা থেকে ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। এ নিয়ে এই এলাকায় সাম্প্রতিক অভিযানে অপরাধে জড়িত অভিযোগে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলো।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক বিশেষ অভিযানে (২৭ অক্টোবর পর্যন্ত) দুই হাজার ৪৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ ও ডাকাত ২০০ জন; তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ১৬ জন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলায় অভিযুক্ত এক হাজার ১৪০ জন, মাদকদ্রব্য উদ্ধার সংক্রান্ত ঘটনায় এক হাজার ১৪৪ জন এবং অবৈধ অস্ত্রধারী ৫৫ জন রয়েছে।

গতকাল বিকেলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, গত ২৭ অক্টোবর দিন ও রাতে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান ও জেনেভা ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে খুনের আসামি, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যসহ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে জেনেভা ক্যাম্প মাদকচক্রের দুজন শীর্ষ মাদক কারবারি, ১০ জন ছিনতাইকারী এবং কিশোর গ্যাংয়ের সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরো পড়ুন
নিম্নমুখী দেশের পোশাক রপ্তানি, আয় কমেছে ৩৬ শতাংশ

নিম্নমুখী দেশের পোশাক রপ্তানি, আয় কমেছে ৩৬ শতাংশ

 

আইএসপিআর জানায়, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণের জানমাল ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড রোধ ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে দেশব্যাপী নিরপেক্ষতা ও পেশাদারির সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। গত দুই দিনের বিশেষ অভিযানে বেশ কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ গ্রেপ্তার হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় নিমজ্জিত মোহাম্মদপুরবাসীর মনে স্বস্তি ফিরে আসছে।

বিশেষ অভিযান জোরদারের নির্দেশ আইজিপির

সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, মাদক কারবারি, কিশোর গ্যাং ইত্যাদির বিরুদ্ধে ১৮ অক্টোবর থেকে চলমান বিশেষ অভিযান আরো জোরদার করতে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানকে গতকাল এক বিশেষ বার্তায় নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম। 

অভিযানে অপরাধপ্রবণ এলাকায় কম্বিং অপারেশন পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশের স্থায়ী ও অস্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পুলিশি টহল জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মোবাইল ও মোটরসাইকেল প্যাট্রল টিম বাড়ানো হয়েছে। ডিএমপি এলাকায় ১৫০টি স্থায়ী ও মোবাইল চেকপোস্ট, ৩০০টি মোটরসাইকেল টিম ও ২৫০টি টহল টিম কার্যকর রয়েছে।

আরো পড়ুন
উৎপাদনে ধারাবাহিক ধস, বড় প্রভাব জিডিপিতে

উৎপাদনে ধারাবাহিক ধস, বড় প্রভাব জিডিপিতে

 

পুলিশ সদর দপ্তরের (এআইজি মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় যারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা, গ্রেপ্তারসহ আইনি পদক্ষেপ চলমান।

ক্যাম্পে বিশেষ অভিযানে পুলিশ

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকার সুযোগে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ৫ আগস্টের পর মোহাম্মদপুর থানায় এ পর্যন্ত ১০টি হত্যা মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৭ আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। একই সময় দুটি ডাকাতি মামলা হয়েছে। এতে ১৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ আরো বলেছে, এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় ফুট প্যাট্রল চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে নিয়মিত ব্লক রেইড, চেকপোস্ট পরিচালনা করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মোহাম্মদপুর থেকে বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার এবং এসংক্রান্ত ঘটনায় ১৭ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে ২০ রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, দুটি পিস্তল, আটটি রামদা, পেট্রলবোমা তৈরির কাচের বোতল ১৫টি, পেট্রল ১০ লিটার, ছয়টি চায়নিজ কুড়াল, একটি টেঁটা, আটটি ছুরি ও পাঁচটি বড় চাপাতি। থানা এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটটি মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১৭ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের কাছ থেকে একটি অটোরিকশা, একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা, চারটি চাপাতি, দুটি সামুরাই ও দুই হাজার ১৬০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

আরো পড়ুন
উচ্চমূল্য গুনতে হচ্ছে বেশির ভাগ পণ্যে, ঝাঁজ বেশি পেঁয়াজের

উচ্চমূল্য গুনতে হচ্ছে বেশির ভাগ পণ্যে, ঝাঁজ বেশি পেঁয়াজের

 

এ সময় মোহাম্মদপুর থানায় চারটি অপহরণ মামলাও হয়েছে জানিয়ে ডিসি তালেবুর বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার এবং তাদের কাছ থেকে চারজন ভিকটিমকেই উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান গতকাল দুপুরে মোহাম্মদপুর থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদপুর থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির মামলা আছে। ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনাগুলোর সঙ্গে তাদের যোগসাজশ পাওয়া যাচ্ছে। মোহাম্মদপুরে ছিনতাই ও ডাকাতির ছোট ছোট দল রয়েছে।

যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের অনেকেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুহুল কবীর বলেন, যখন অভিযান চালানো হয়, তখন চিহ্নিত ও অভ্যাসগত অপরাধীর বাইরেও কেউ কেউ আটক হয়। এ ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাইয়ের পর নির্দোষ কাউকে পাওয়া গেলে তাকে মুচলেকা নিয়ে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। চলমান অভিযানে এমন দুজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছিল। যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন জরুরি

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন জরুরি

 

সম্প্রতি মোহাম্মদপুরে ছিনতাই, ডাকাতি ও খুনখারাবি বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসমুক্ত মোহাম্মদপুরের দাবিতে এলাকাবাসী গত শনিবার মোহাম্মদপুর থানার সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এমন অবস্থার জন্য তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে দায়ী করেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দৃশ্যমান অগ্রগতির জন্য তারা পুলিশকে তিন দিনের সময় বেঁধে দেয়। এরপর শনিবার রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল আরো ৩৪ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানাল পুলিশ।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বও পেলেন খলিলুর রহমান

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বও পেলেন খলিলুর রহমান

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে খলিলুর রহমানকে এই নতুন দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন।

এখন থেকে খলিলুর রহমানের পদবি হবে ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটি’।

পাশাপাশি তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনেও সহযোগিতা করবেন।

২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে নিয়োগ পান খলিলুর রহমান।

ড. খলিলুর রহমান ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পররাষ্ট্র) কাডারে যোগদান করেন। ১৯৮৩-৮৫ সময়কালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৫ সালে তাকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে বদলি করা হয়। সেখানে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অর্থনৈতিক ও আর্থিক কমিটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মুখপাত্র হিসেবে এ কমিটি ও জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে দায়িত্ব পালন করেন।

খলিলুর রহমান ১৯৯১ সালে জেনেভায় জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনে (আংকটাড) বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে জাতিসংঘ সচিবালয়ে যোগ দেন। জাতিসংঘে পরবর্তী ২৫ বছরে তিনি নিউইয়র্ক ও জেনেভায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন।

 

২০০১ সালে খলিলুর রহমান তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেন। তিনি ঢাকায় অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

মন্তব্য

সৌদির বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সৌদির বিদায়ী রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)-এর সঙ্গে সৌদি আরবের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বিন আলদুহাইলানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি জনশক্তি নিতে সৌদি রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। 

বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে সচিবালয়ে এ আহ্বান জানানো হয়।

বৈঠকে সৌদি আরবে বসবাসরত বৈধ পাসপোর্টবিহীন ৬৯ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকদের অনুকূলে পাসপোর্ট ইস্যু/রি-ইস্যুসংক্রান্ত বিষয়াদিসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম বৃহৎ অংশীদার। একক দেশ হিসেবে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কাজ করছে। বর্তমানে সৌদি আরবে ৩.২ মিলিয়ন বাংলাদেশী বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত রয়েছে। এটিকে চার মিলিয়নে উন্নীত করতে তিনি রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন।

বাংলাদেশের উন্নয়নে সৌদি আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, জনশক্তি রপ্তানির পাশাপাশি দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন ও সংস্কৃতি সহবিভিন্ন খাতে প্রভূত সহায়তা বিদ্যমান। তিনি বলেন, সৌদি আরব সবসময় বাংলাদেশের পাশে ছিল, অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, রাজকীয় সৌদি সরকারের গৃহীত নীতি অনুযায়ী সেদেশে বসবাস ও চাকরি করা সহআইনগত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য বৈধ পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক। সৌদি সরকারের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশি পাসপোর্ট/ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে সেদেশে প্রবেশ করেছেন কিন্তু বর্তমানে কোন বৈধ পাসপোর্ট নেই এমন লোকের সংখ্যা আনুমানিক ৬৯ হাজার।

সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় ৬৯ হাজার ব্যক্তির পাসপোর্ট ইস্যু /নবায়নের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল।

উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিলো এবং এতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
 

মন্তব্য

মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত, ১৮ জনই বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত, ১৮ জনই বিএনপির
সংগৃহীত ছবি

দেশে গত মার্চ মাসে ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের এ সংখ্যা গত ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এর মধ্যে সহিংসতার ৮৮টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে। বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য দলের সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে ১৮ জন বিএনপি নেতা, কর্মী ও সমর্থক।

মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার সংস্থাটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

এক মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসেও মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা ছিল হতাশাজনক। পবিত্র মাহে রমজান মাসে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দ্রব্যমূল্য ও ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

আরো পড়ুন
ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না : ভারত

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না : ভারত

 

মার্চে ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়ে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭৩৩ জন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধ পরায়ণতা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নিহত ২৩ জনের মধ্যে বিএনপির ১৮ জন, আওয়ামী লীগের ৩ জন এবং ইউপিডিএফের ২ জন রয়েছেন।

৯৭ টি সহিংসতার ঘটনার ৮৮টিই ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ও বিএনপির সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসে সহিংসতার ৯৭টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ৬৪টি ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ৫০২ জন।

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ১১টি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ৫২ জন আহত হয়েছেন। আর বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ১০টি সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ৮১ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া বিএনপি-এনসিপির মধ্যে ৩টি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় কিছুটা কমলেও নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০৪টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ৭৫৫ জন আহত হয়েছিলেন।

এতে বলা হয়, মার্চে রাজনৈতিক মামলায় কমপক্ষে ১ হাজার ৬৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী অন্তত ১ হাজার ৬৪৪ জন। ওই সময় সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের উপর কমপক্ষে ৩টি হামলার ঘটনায় ২ জন আহত এবং ২টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।

কমপক্ষে ২৮৪ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১৩৩ জন, যাদের মধ্যে ৩০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন ২ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার ১৩৩ জনের মধ্যে ৮৩ জন ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু। প্রতিবেদনে মাগুরায় ৮ বছরের এক শিশুকে তার বোনের শ্বশুর কর্তৃক ধর্ষণ এবং শিশুটি ৮ দিন পর চিকিত্সাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়।

এইচআরএসএস’র তথ্য অনুযায়ী, গেল মাসে অন্তত ২৯টি ঘটনায় কমপক্ষে ৪১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ সকল ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ২৩ জন সাংবাদিক। এছাড়া ৩টি মামলায় ৭ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মার্চে গণপিটুনির অন্তত ৪০টি ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছেন।

একই সময়ে ২১টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় ৭ জন নিহতের তথ্য জানানো হয়। এর মধ্যে ১ জন শিশু গৃহকর্মী মালিকের নির্যাতনে নিহত হয়। এছাড়া মার্চ মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৬টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ২ জন বাংলাদেশি নিহতের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে এইচআরএসএস’র নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক। নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন, সাংবাদিক নিপীড়নও তুলনামুলক বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ব্যত্যয় হলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

চট্টগ্রামের কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগে আগ্রহী ডিপি ওয়ার্ল্ড

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
চট্টগ্রামের কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগে আগ্রহী ডিপি ওয়ার্ল্ড

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক বন্দর পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড-এর গ্রুপ চেয়ারম্যান ও সিইও সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম।

বুধবার (৯ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তাদের এই সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাৎকালে উভয়ের মধ্যে কৌশলগত বিনিয়োগের সুযোগ, বিশেষ করে দেশের বন্দর এবং লজিস্টিক অবকাঠামো নিয়ে আলোচনা হয়।

ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রস্তাবিত বিনিয়োগের লক্ষ্য চট্টগ্রাম বন্দরে যানজট কমানো, কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং বাংলাদেশের মূল সমুদ্র প্রবেশপথের দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এটি সুযোগের ভূমি। আপনারা বাংলাদেশে আসুন। আসুন, এটি বাস্তবায়িত করি।

সুলতান আহমেদ বিন সুলায়েম তার কম্পানির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা এই অংশীদারির জন্য উন্মুখ। আপনার সমৃদ্ধি আমাদের সমৃদ্ধি। চট্টগ্রাম থেকে দুবাই থেকে আফ্রিকা—এটি আমাদের ভাগ করা স্বপ্ন।’

প্রধান উপদেষ্টা মৎস্য, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং হালাল মাংস রপ্তানিসহ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান খাতে বৃহত্তর সহযোগিতা বিবেচনা করার জন্য ডিপি ওয়ার্ল্ডের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য যথাযথ দক্ষতা উন্নয়ন নিশ্চিত করার গুরুত্বের ওপরও জোর দেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান করা আমাদের দায়িত্ব এবং আমরা তা নিশ্চিত করব।’

ডিপি ওয়ার্ল্ডের প্রধান ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ ভিসা সুবিধা ও সার্বিক সহায়তা, বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষ কর্মীদের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।’

তিনি চীনা ও ভারতীয় ট্রেড মার্টগুলোর সাফল্যের পর তাদের দেশে একটি ‘বাংলাদেশ মার্ট’ চালু করা নিয়ে ডিপি ওয়ার্ল্ডের পরিকল্পনাও প্রকাশ করেন।

ডিপি ওয়ার্ল্ডের প্রধান বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশি পণ্য—কাঠ, মার্বেল, কৃষি পণ্য—প্রদর্শন করতে এবং বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চাই।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ