জুনেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্ভব : সংস্কার কমিশন

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
জুনেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্ভব : সংস্কার কমিশন
সংগৃহীত ছবি

সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একসঙ্গে করার প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। এ ছাড়া আগামী জুনের মধ্যে দেশের সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব বলে জানিয়েছে তারা। গতকাল শনিবার কমিশনের প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্টে এসব সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশে বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশে কার্যত কোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নেই।

এই মুহূর্তে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব। আগামী জুনের মধ্যে সব সমতল ও পাহাড়ের ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।

আরো পড়ুন
জমি বর্গা না দেওয়ায় পেঁয়াজের ক্ষেতে বিষ দেওয়ার অভিযোগ

জমি বর্গা না দেওয়ায় পেঁয়াজের ক্ষেতে বিষ দেওয়ার অভিযোগ

 

সুপারিশে আরো বলা হয়, বর্তমানে নতুন একটি স্বচ্ছ ক্যানভাসে নতুন ছবি আঁকা সম্ভব। নতুবা নির্বাচনের আগে অনেক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আইনি জটিলতার উদ্ভব হতে পারে।

স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় সংসদীয় পদ্ধতি চালু করার আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে জনপরিসরে থাকলেও কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি।

এখন সে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী মার্চ-এপ্রিলের (২০২৫) মধ্যে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি একীভূত এই স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। গত ১৮ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনসহ আরো পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।

আরো পড়ুন
‘নৈশভোটের’ সহযোগী এসপিরা পেয়েছেন দ্রুত পদোন্নতি

‘নৈশভোটের’ সহযোগী এসপিরা পেয়েছেন দ্রুত পদোন্নতি

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদকে প্রধান করে এই সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। তাঁর নেতৃত্বে কাজ করেছেন সাতজন সদস্য।

একই সঙ্গে ভোট, আইন একীভূত করার সুপারিশ 

সংস্কারের সুপারিশে বলা হয়, একই তফসিলে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন অংশগ্রহণ করবে। প্রতিজন ভোটার নিজ নিজ ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটির ওয়ার্ডের জন্য একটি ব্যালট পেপার, উপজেলার জন্য একটি এবং জেলার জন্য একটি ব্যালট পেপার পাবেন। তিনটি ব্যালটে তিনটি বা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) একাধিক ভোট দিয়ে তাঁদের ভোট শেষ করবেন।

আরো পড়ুন
ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’, বেশি দূষণ যেখানে

ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’, বেশি দূষণ যেখানে

 

সুপারিশে বলা হয়, ১৯৭২ সালের পর পাঁচটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য পারস্পরিক সম্পর্কবিহীন যে পাঁচটি পৃথক আইন ও অসংখ্য বিধিমালা বিভিন্ন সময় জারি করা হয়েছে, সে সব আইন ও বিধিসমূহ বাতিল করে সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ দুটি একীভূত ও একক স্থানীয় সরকার আইন ও প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করে সব পরিষদের মধ্যে আন্ত প্রতিষ্ঠান সম্পর্ক ও সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এ রকম দুটি আইন করা হলে ওই আইন বলে পাঁচটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো হবে একই ধাঁচের সংসদীয় পদ্ধতির। তখন নির্বাচনব্যবস্থাটিও হবে সহজ, ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী।

থাকবে স্থানীয় সরকার সার্ভিস

গ্রাম ও নগরের সর্বত্র সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো হবে সমরূপ। স্থানীয় সরকারের ‘স্থানীয় সরকার সার্ভিস’ নামে একটি নিজস্ব সার্ভিস কাঠামো থাকবে। সেই সার্ভিসের অধীন জনবলের ঊর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী পদায়নের সুযোগ থাকবে। কর্মচারীদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত অভিগম্যতা থাকলে পদোন্নতি ও পদায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। মন্ত্রণালয়ের নামও পরিবর্তন ‘স্থানীয় সরকার, জনসংগঠন ও জনপ্রকৌশল সেবা’ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

পৃথক অধিদপ্তর গঠনের সুপারিশ 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন৷ স্থানীয় সরকার বিভাগে বর্তমানে কার্যরত পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন অধিদপ্তরকে অধিকতর শক্তিশালী করে একটি পুনর্গঠিত নতুন অধিদপ্তর গঠন করার সুপারিশ করা হয়েছে৷ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত সব প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম এই অধিদপ্তরের আওতাধীন হবে।

বিভাগীয় কমিশনার অফিসের পরিচালক স্থানীয় সরকার এবং ডেপুটি কমিশনার অফিসের সঙ্গে সংযুক্ত উপপরিচালক স্থানীয় সরকারের পদসমূহ বিলুপ্ত হবে। একজন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার অধীনে অন্যূন ১০ জনের একটি সংগঠন ওপরে বিবৃত অধিদপ্তরের অধীনে প্রতিটি জেলায় কাজ করবে।

স্থানীয় সরকারের স্তর কমানোর সুপারিশ

আগামী ১০ বছরের মধ্যে স্থানীয় সরকারের স্তরসংখ্যা হ্রাস করে গ্রাম-শহরের পার্থক্য কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক নতুন পদ্ধতির অধীনে নিম্নলিখিত তিনটি নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয় সুপারিশে। বর্তমানে ১৯৬০-এর দশকের (পাকিস্তান আমলের) জেনারেল আইয়ুব খান প্রবর্তিত রাষ্ট্রপতিব্যবস্থার আদলের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংসদীয় পদ্ধতির আদলে পুনর্বিন্যস্ত করা হবে।

তিনটি পৃথক আইনের বদলে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদকে একটি একক আইনের অধীনে আনা হবে। একইভাবে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনগুলোকে ভিন্ন একটি একক আইনের অধীনে আনা হবে। বর্তমানে বিরাজিত পাঁচটি পৃথক আইনের স্থলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুটি মৌলিক আইনের অধীনে আনা যেতে পারে।  নতুন আইনের অধীনে একই তফসিলে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির অধীনে আনয়নের সুপারিশ করা হয়।

স্থানীয় সরকারকে সংসদীয় আদলে পরিচালনার সুপারিশ 

জাতীয় সংসদে যেমন নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা থাকেন সব সংসদীয় কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু, গ্রাম ও নগর নির্বিশেষে সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সদস্য বা কাউন্সিলররা হবেন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রধান নিয়ামক। সুপারিশে বলা হয়েছে, গ্রাম-নগর নির্বিশেষে প্রতিটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংগঠন কাঠামো দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত থাকবে, (১) বিধানিক অংশ এবং (২) নির্বাহী অংশ।

বিধানিক অংশের প্রধান হবেন ‘সভাধ্যক্ষ’ (জাতীয় সংসদের স্পিকারের অনুরূপ) এবং নির্বাহী অংশের প্রধান হবেন ‘চেয়ারম্যান’ বা ‘মেয়র’। তিনি পরিষদ বা কাউন্সিল নেতা হিসেবেও থাকবেন। সভাধ্যক্ষ জাতীয় সংসদের স্পিকারের অনুরূপ দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরামর্শক্রমে পরিষদের সভা-অধিবেশন আহবান করবেন। সব সদস্য-সদস্যা যাতে তাঁদের মতামত দিতে পারেন, কোনো বিশেষ বিষয়ে বিতর্কে অংশ নিতে পারেন, সেসব বিষয় তিনি নিশ্চিত করবেন।

তেমনিভাবে সব স্থায়ী কমিটি গঠন ও সভা নিয়মিত অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সভাধ্যক্ষকে সহায়তা করবেন একজন পূর্ণকালীন ‘সচিব’ এবং পাঁচ সদস্যের একটি সচিবালয়। সাধারণ নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশন কর্তৃক গেজেট প্রকাশের পর সদস্যরা আইনে নির্ধারিত একটি শপথনামা উপস্থিত একটি ভোটার সমাবেশে নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে একে একে উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করে সেটিতে স্বাক্ষর করবেন এবং সদস্যদের জন্য রক্ষিত আসনে আসন গ্রহণ করবেন।

পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট সাংবিধানিক মর্যাদাসম্পন্ন একটি স্থায়ী ‘স্থানীয় সরকার কমিশন’ গঠন করার সুপারিশ করা হয়।

সব উপজেলায় পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত স্থাপনের সুপারিশ

সুপারিশে আরো বলা হয়েছে, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের পাশাপাশি একই পদমর্যাদায় প্রতিটি উপজেলায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একজন সিনিয়র সহকারী জজ এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির পূর্ণাঙ্গ কার্যালয় স্থাপন করা।

ইউনিয়ন পরিষদের অধীন গ্রাম আদালত বিলুপ্ত করে ওয়ার্ড পর্যায়ে সালিসি ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দান এবং সালিসসমূহের তত্ত্বাবধান, সালিসকারদের প্রশিক্ষণ ও সালিসের আপিল শুনানির জন্য এডিআর আদালতের বিচারকের এখতিয়ার ও প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঈদ শেষে ফিরতি যাত্রায়ও স্বস্তি, এখনো ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঈদ শেষে ফিরতি যাত্রায়ও স্বস্তি, এখনো ঢাকা ছাড়ছে মানুষ
ছবি: কালের কণ্ঠ

পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। দুর্ভোগহীন অন্য রকম এক ঈদ যাত্রায় স্বস্তিতে বাড়ি ফিরেছিল ঘরমুখো মানুষ। একইভাবে স্বস্তিতে ঢাকায় ফিরছে তারা।

তবে সরকারি দীর্ঘ ছুটি থাকায় এখনো জমে ওঠেনি ফিরতি যাত্রা।

বাস-ট্রেনে যাত্রী থাকলেও নেই আগে ফেরার প্রতিযোগিতা। তবে বুধবারও (২ এপ্রিল) অনেককে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে।

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে টানা ৯ দিনের ছুটি চলছে। সরকারি ছুটি অনুযায়ী, আগামী শনিবার (৫ এপ্রিল) পর্যন্ত ছুটি উপভোগ করবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ট্রেনে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ, ফিরছেও : বুধবার কমলাপুর রেলস্টেশন ও বিমানবন্দর স্টেশনে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। অনেক কর্মজীবী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। ঈদের সময় প্রিয়জনের কাছে যাওয়ার সময়-সুযোগ করতে না পারা অনেকে এখন বাড়ি ফিরছেন। ফিরতি ট্রেনগুলোর বেশির ভাগ আসন পূর্ণ থাকলেও তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে চাপ কম।

বুধবার কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীর তেমন ভিড় দেখা যায়নি। বেশির ভাগ ট্রেন খালি আসন নিয়েই ছেড়ে গেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফিরতি যাত্রা এখনো স্বস্তিদায়ক থাকলেও আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চাপ বাড়তে শুরু করবে।

যাত্রীরা জানিয়েছেন, এবারের ব্যবস্থাপনা আগের চেয়ে অনেক ভালো ছিল। স্টেশনে আগেভাগে এলেও অতিরিক্ত ভিড় বা বিশৃঙ্খলার মুখে পড়তে হয়নি।

বুধবার কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের এক যাত্রী দুপুর ১টায় ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ফয়সাল মাহমুদ নামের ঢাকাগামী ওই যাত্রী জানান, গত ২৭ মার্চ তিনি বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। আসার সময় তেমন ঝামেলায় পড়তে হয়নি। ফিরতি যাত্রায়ও ট্রেন অনেকটা ফাঁকাই দেখছেন।

কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের এক যাত্রী বলেন, ‘ভাবছিলাম ট্রেন পেতে কষ্ট হবে, কিন্তু স্টেশনে এসে দেখলাম পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ট্রেনে উঠতে কোনো ঝামেলা হয়নি, সময়মতো ছাড়ার বিষয়টিও স্বস্তিদায়ক।’
কমলাপুর রেলস্টেশনের মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবারের ঈদ যাত্রায় ট্রেন চলাচল স্বস্তিদায়ক ছিল। তবে শেষ দিকে পোশাক কারখানাগুলো ছুটি হওয়ায় স্টেশনে উপচে পড়া ভিড় ছিল। ট্রেন ছাড়তে দেরি বা কোনো ধরনের ভোগান্তি হয়নি যাত্রীদের।’

সড়কে চাপ নেই : ঈদের চাপ কেটে গেছে। রাজধানীর প্রবেশপথ ও বহির্মুখগুলোতে নেই যাত্রীদের চিরচেনা উপচে পড়া ভিড়। বরং এখনো অনেকে যেমন ঢাকা ছাড়ছেন, আবার কেউ কেউ ঈদ শেষে ঢাকায় ফিরছেন।

বুধবার সকালে রাজধানীর অন্যতম প্রবেশমুখ হিসেবে পরিচিত গাবতলী বাস টার্মিনাল ও এর আশপাশের এলাকায় দেখা যায়, স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে ঢাকায় ফিরছেন অনেক কর্মজীবী। গ্রাম থেকে ঢাকায় প্রবেশ করা গাড়িগুলো থেকে বেশ ভালোই যাত্রী নামতে দেখা গেছে। একইভাবে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলোর আসনও তেমন ফাঁকা থাকছে না।

রাজদূত পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের এক কর্মী বলেন, ‘আমাদের ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলোর কোনোটারই সিট ফাঁকা যাচ্ছে না। আবার ঢাকামুখো গাড়িও সব আসনে যাত্রী নিয়েই ফিরছে।’

রাজাপুর ট্রাভেলসের টিকিট বিক্রেতা কামাল বলেন, কাঙ্ক্ষিত যাত্রী আছে। তবে ঈদের আগের দিনের মতো উপচে পড়া ভিড় নেই। মানুষ স্বস্তিতে যাওয়া-আসা করছে।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে তিশা প্লাস কাউন্টারের আব্দুল হাকিম নামের একজন জানান, ঈদের আগের তুলনায় এখন যাত্রী ভালো আছে। ঢাকা ছাড়ার গাড়িতেও সিট ফাঁকা থাকছে না, ঢাকায় ফেরার গাড়িতেও সিট ফাঁকা নেই।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক কাজী মো. জুবায়ের মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবারের ঈদ যাত্রায় বাস মালিক সমিতির অবস্থা তেমন ভালো না। ঈদ যাত্রার যাত্রী নামিয়ে ফিরতি যাত্রায় বাস খালি আসায় অনেক লস গুনতে হয়েছে মালিকদের। তার পরও যাত্রীদের স্বস্তির যাত্রা উপহার দিতে পেরে আমরা সন্তুষ্ট।’

গণপরিবহনে যাত্রী কম : ঢাকার রাস্তাগুলো এখনো বেশ ফাঁকা। যাঁরা ঢাকায় আছেন, যানজটহীন পরিবেশ উপভোগ করছেন। গণপরিবহনগুলোর যাত্রীসংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কম।

যাত্রীরা বলছেন, তাঁরা এখন এক থেকে দেড় ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে পারছেন ১৫ মিনিটেই। অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, এত অল্প যাত্রীতে তেলের খরচই উঠবে না।

সরেজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদগেট, ধানমণ্ডি, কারওয়ান বাজার ও বাংলামোটর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই দিনের তুলনায় সড়কে পথচারী চলাচল ও যানবাহন বেড়েছে। তবে বেশির ভাগ গণপরিবহনে আসন ফাঁকা থাকছে।

মন্তব্য

ইউনূস-মোদির বৈঠক হচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ইউনূস-মোদির বৈঠক হচ্ছে
সংগৃহীত ছবি

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের (সিএও) একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বাসসকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রোহিঙ্গা সংকট ও সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বুধবার (২ এপ্রিল) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে এই বৈঠক (দুই দেশের নেতাদের মধ্যে) আয়োজনের অনুরোধ করেছি... এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ড. খলিলুর বলেন, বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নেতারা সংস্থাটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করবেন, তাই অধ্যাপক ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠক হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আগামী ৪ এপ্রিল অধ্যাপক ইউনূসকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।

বিমসটেক সম্মেলন ২ থেকে ৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মন্তব্য

কালুরঘাটে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ১৪ মে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
কালুরঘাটে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ১৪ মে
সংগৃহীত ছবি

কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাটে আগামী ১৪ মে নতুন রেল ও সড়ক সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক)। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কালুরঘাট সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলেও জানান তিনি।

বুধবার (২ এপ্রিল) চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ইঞ্জিনিয়ার ওমরের কবর জিয়ারত ও ওমরের পরিবারের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন উপদেষ্টা। শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে তিনি এ কথা বলেন।

ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘আগামী ১৪ মে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আসবেন চট্টগ্রামের সন্তান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। খুব সম্ভাবনা রয়েছে এ সময় তিনি এই সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন।’

তিনি বলেন, ‘শহীদ পরিবার তাদের প্রিয়জনকে আর ফিরে পাবেন না, তবে আমরা তাদের পাশে আছি। অন্যায় করলে বিচার হবে না, এমনটি হতে পারে না।

আমরা যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত না করি, তাহলে কিভাবে ন্যায়ের সমাজ গড়ে উঠবে? ন্যায়ের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আরো কত মানুষকে আত্মত্যাগ করতে হবে? তাই অবশ্যই গণহত্যাকারীদের বিচার হতে হবে।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ, বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম সারোয়ার, উপজেলা জামায়াতের আমির ডা. খোরশেদুল আলম ও নায়েবে আমির ডা. আবু নাছের প্রমুখ।

মন্তব্য

ভারতের সংখ্যালঘু অধিকার লঙ্ঘনের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে : দেবপ্রিয়

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ভারতের সংখ্যালঘু অধিকার লঙ্ঘনের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে : দেবপ্রিয়

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘নয়াদিল্লির মনে রাখা উচিত তাদের দেশে মুসলিমসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে।’

ভারতের পাক্ষিক ম্যাগাজিন ফ্রন্টলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) ম্যাগাজিনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

ফ্রন্টলাইনের এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, ‘সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা গণনার একাধিক উপায় আছে।

কেউ অস্বীকার করে না যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিদায়ের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। পুলিশ বাহিনী বিপর্যস্ত ছিল। কিছু সময়ের জন্য নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর হাতে চলে গিয়েছিল, তবে পরিস্থিতি অস্থির ছিল।’

উপরন্তু বাংলাদেশের অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু ঐতিহাসিকভাবে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে।

সুতরাং কিছু ক্ষেত্রে কোনো হিন্দু ব্যক্তির ওপর হামলা তার ধর্মের কারণে ছিল নাকি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমর্থক হওয়ার কারণে ছিল, তা আলাদা করা কঠিন। তবে আরেকটি দিক বিবেচনা করার আছে। বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা—যেমন হিন্দু ও বৌদ্ধরা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ। একইভাবে ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা—যেমন মুসলমানরা বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ।

সুতরাং ভারত যখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে হওয়া আচরণ নিয়ে মন্তব্য করে, তখন দেশটিকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে তার নিজের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কী আচরণ হচ্ছে, সেটাও অন্যরা খতিয়ে দেখছে।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন সদস্য হয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশে নিরাপদ কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি হয়তো এ প্রশ্নের জন্য সেরা উদাহরণ নই। আমি দুইবার ভারতে শরণার্থী হয়েছিলাম। প্রথমবার, ১৯৬০-এর দশকের দাঙ্গার পর—১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়বার ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়। কিন্তু আমার মা-বাবা কখনোই বাংলাদেশ ছেড়ে যাননি।

আমি ফিরে এসেছি, আমার মাতৃভূমিতে বিনিয়োগ করেছি এবং এখানেই আমার জীবন গড়েছি। আমি আমার দেশের জন্য অবদান রাখতে গিয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পদ ছেড়ে দিয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার পরিবারের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচার বিভাগীয় ইতিহাসে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। আমার মা আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য ছিলেন এবং আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। কিন্তু এই ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো আমার পেশাদারি এবং তথ্যভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে না।’

ব্যক্তিগতভাবে আমি বাংলাদেশে থাকার ঝুঁকিগুলো মেনে নিয়েছি। তবে আমি বিশ্বাস করি যে পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি যেখানে একটি ভূমিকা রাখে, এমন যেকোনো দেশের যেকোনো নাগরিকের জন্যই এ ধরনের ঝুঁকি বিদ্যমান। আমি আরো বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার এবং সব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের—হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সংখ্যালঘু এবং সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর—সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্ভুক্তির প্রতি এই অঙ্গীকারই জাতি গঠনের মূল ভিত্তি।

বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিগুলোর মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে বহুত্ববাদকে প্রতিষ্ঠিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আলোচনার টেবিলে। এই পর্যায়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো অপরিণত কাজ হবে, কারণ এটি এখনো পর্যালোচনাধীন।’

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ