নদী বিনাশী কোনো প্রকল্পে প্রকৃত উন্নয়ন হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেছেন, ‘দেশের নদী ধ্বংস করে কখনো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায় না। বরং নদীই কর্মসংস্থান তৈরি করে দেয়। অথচ নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন করেছে।
কিন্তু নদী রক্ষার ক্ষেত্রে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে।
আরো পড়ুন
দেশীয় অস্ত্র ও গুলিসহ সাবেক ছাত্রদল নেতা আটক
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের নদ-নদীর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ধরা’র সহ-আহ্বায়ক এম এস সিদ্দিকী।
ধরা’র সদস্য সচিব শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (এনআরসিসি)’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার।
সভায় বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মোহাম্মদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোশাহিদা সুলতানা, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মো. নূর আলম শেখ, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল, রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, সাংবাদিক অনির্বান শাহরিয়ার, বুড়িগঙ্গা নদীমোর্চার সদস্য জাহাঙ্গীর আদেল, বালু নদীমোর্চার জান্নাতী আক্তার রুমা, তুরাগ নদীমোর্চার আমজাদ আলী লাল প্রমুখ।
আরো পড়ুন
বাড়ির ভেতরে খালি পায়ে হাঁটলে উপকার নাকি ক্ষতি
সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, নদীর বিপদ মানে বাংলাদেশের বিপদ। নদী না থাকলে বাংলাদেশ থাকবে না। নদীর বিপন্নতার তিনটি মূল কারণের প্রথমটি হলো উজানের দেশ ভারত।
তাদের সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। জাতিসংঘের পানি কনভেশনে বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষর করেনি এই ভারতকে খুশি রাখতে। দ্বিতীয় কারণ হলো সরকার নিজেই। সরকারের প্রতিষ্ঠান এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নদীর বিনাশ করছে। আর তৃতীয় কারণ হলো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও সমাজের প্রভাবশালী গোষ্ঠী।
নদী বাঁচাতে তিনি জাতীয় ঐক্যমত্যের আহবান জানিয়ে আনু মুহাম্মদ বলেন, এই নদীকৃত্য দিবসেই সরকারকে জাতিসংঘের ১৯৯৭ সালের পানি কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করতে হবে। সরকারের নদী বিনাশী সকল সিদ্ধান্ত ও প্রকল্পসমূহকে বাতিল করে নদী কমিশনের প্রণীত সুপারিশ অনুযায়ী দখল উচ্ছেদ করতে হবে এবং নদী রক্ষায় ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ পুনঃবিশ্লেষণ করে নতুন করে প্রণয়ন করতে হবে।
মূল বক্তব্যে ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, নদী হলো পাবলিক প্রপার্টি, আর সেই নদীকে রক্ষা করা মানুষের দাবি। নদী ধ্বংস করা ফৌজদারি অপরাধ। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এখনো অপ্রতিরোধ্য গতিতে নদী দখল চলছে। নদীর কোন দল নাই, কোন ধর্ম নাই। নদী সবার জন্য। নদী, পানি ও পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। নদী রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। নদী একটি জীবন্ত সত্ত্বা। একে গলা টিপে হত্যা করা যাবে না। নদীর জমি কখনো খাস হয় না। নদীর জমি নদীকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে দখলদারদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নদীভিত্তিক গবেষণা হতে হবে এবং নদী বাঁচাতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানতে হবে।
আরো পড়ুন
অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে মন্তব্য করায় দিল্লিকে কড়া বার্তা দিল ঢাকা
ধরা’র সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, দেশের কোন নদী ভালো নেই। ভারত একতরফাভাবে উজানের নদীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে। নদীগুলোকে প্লাবন এলাকার দিকে যেতে দিতে হবে। উচ্ছেদ পরে করেন, আগে নদী দখল বন্ধ করেন। নদীকে বাঁচতে দিন। বিভাগ, জেলা, উপজেলা নদী রক্ষা কমিটিগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শক্তিশালী ও কার্যকর নদী কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি।