দেশের সড়কে গাড়ির গতিসীমা নির্ধারণসহ ঈদযাত্রায় রোডক্র্যাশ কমাতে নয় সুপারিশ করেছে ঢাকা আহসানিয়া মিশন।
তারা বলেছে, বেশিরভাগ রোডক্রাশ সংঘটিত হয় গতির কারণে। তাই দেশের সড়ক ও যানবাহনের পরিস্থিতির কথা ভেবে নিরাপদ গতি নির্ধারণ করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আহ্ছানিয়া মিশন ইয়ুথ ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং এ বিষয়ে তাদের সুপারিশ তুলে ধরে।
সভায় ফোরামের সমন্বয়কারী মারজানা মুনতাহা বলেন, ‘ঈদযাত্রাসহ সারা বছর সড়ক নিরাপদ করতে একটি সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা জরুরি।’
তরুণদের ৯ দফা সুপারিশ
গতি নিয়ন্ত্রণ: দেশের সড়ক ও যানবাহনের উপযোগী নিরাপদ গতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ঈদযাত্রায় গতিসীমা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
হেলমেট বাধ্যতামূলক: মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের মানসম্মত হেলমেট পরা নিশ্চিত করতে হবে এবং দ্রুত এ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।
ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ: অনুপযুক্ত ও অযোগ্য যানবাহনের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
চালকদের বিশ্রাম নিশ্চিত করা: চালকদের জন্য নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা নির্ধারণ ও বিশ্রামের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ক্লান্ত চালক যাত্রীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
অনুপযুক্ত যান চলাচল বন্ধ: ঈদযাত্রায় নছিমন, করিমন, টেম্পো ও ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে।
নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ: মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে গাড়ি চালানো নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি ও আইন প্রয়োগ করতে হবে।
সিটবেল্ট বাধ্যতামূলক: চালকসহ সব যাত্রীর সিটবেল্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং দ্রুত এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
পথচারীদের নিরাপত্তা: ফুটপাত হকারমুক্ত করতে হবে। ফুটওভারব্রিজ পথচারীবান্ধব করতে হবে। জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে।
সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন: বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ‘সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ’ মডেলে সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, গত ঈদুল ফিতরের ১৭ দিনে সারা দেশে ২৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২০ জন নিহত ও ৪৬২ জন আহত হন।
মতবিনিময় সভায় ইয়ুথ ফোরামের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল স্টুডেন্ট সোসাইটির জাকিয়া মাইশা, নিশাত তারান্নুম, এ.এফ.এম সাদমান সাকিব, বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের ইশতিয়াক ইমন, মিশন গ্রিন বাংলাদেশের আহসান রনিসহ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক তরুণ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। তারা এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মরক্কোর মারাকাশে অনুষ্ঠিত চতুর্থ গ্লোবাল মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ২০২৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে একটি সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেন।
ঈদযাত্রায় প্রাণহানি কমিয়ে আনতে এবং সড়ককে নিরাপদ করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন হলে রোডক্র্যাশ অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে আশাবাদী তরুণরা।