শরীরে রক্ত চলাচল বাড়াতে সহায়ক ১৪টি প্রাকৃতিক উপাদান

কালের কণ্ঠ অনলাইন
কালের কণ্ঠ অনলাইন
শেয়ার
শরীরে রক্ত চলাচল বাড়াতে সহায়ক ১৪টি প্রাকৃতিক উপাদান

মানবদেহের ওজনের ৭ শতাংশ আসে রক্ত থেকে। আর এই রক্ত শিরা-উপশিরাগুলোর মাধ্যমে আমাদের দেহে চলাচল করে সারাক্ষণই। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দেহে গড়ে ৪.৫ থেকে ৫.৫ লিটার রক্ত থাকে। তবে লিঙ্গ, ওজন, উচ্চতা এবং সার্কি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ভেদে এতে ভিন্নতাও থাকতে পারে।

মানবদেহের এই লাল তরলটি সত্যিই যাদুকরী নানা উপায়ে এবং আমাদের দেহের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে। আমাদের দেহের নানা অংশে অক্সিজেন বহন করে নিয়ে যাওয়া, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং জীবাণুর সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো কাজ করে রক্ত। ফলে যথাযথভাবে রক্ত চলাচলের গুরুত্ব অপরিসীম। ক্ষুধামান্দ্য, অনবরত নানা অঙ্গের অসাড়তা, হজম প্রক্রিয়ায় অব্যাখ্যাত সমস্যা, প্রায় প্রায়ই ক্লান্তি ও অবসাদ, ত্বকের বিবর্ণতা, চুল ও নখের ভঙ্গুরতা এবং শুষ্কতা প্রভৃতি রক্ত চলাচল ঠিকভাবে না হওয়ার লক্ষণ।

হৃৎপিণ্ড রক্তকে পাম্প করে শিরা-উপশিরাগুলোর মাধ্যমে দেহের নানা অঙ্গে ছড়িয়ে দেয়। হৃৎপিণ্ড এবং শিরা-উপশিরাগুলোই রক্তকে দেহে চলাচলের জন্য সবচেয়ে বগড় ভুমিকা পালন করে। ধমনী হৃদপিণ্ড থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত নিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে দেয়। আর শিরা-উপশিরাগুলো কার্বন ডাই অক্সাইডযুক্ত রক্ত পুনরায় হৃৎপিণ্ডে ফিরিয়ে আনে।

রক্ত চলাচল ব্যাহত হয় যেসব কারণে
শরীরে রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়ার প্রধান একটি কারণ হলো ধুমপান। সিগারেটে থাকা কার্বন মনোক্সাইড রক্তের কোষের স্তর ধ্বংস করে দেয়। ফলে শিরায় প্লাক এবং চর্বি জমে যায়। রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়।

আজকাল আমরা শারীরিকভাবে অনেক বেশি নিষ্ক্রিয় জীবন যাপন করি এবং শরীরচর্চা করার সময়ই পাই না।

শরীরচর্চা না করা এবং সক্রিয়তার অভাবেও রক্ত চলাচল ব্যাহ হয়।

ফাস্টফুড খাওয়ার ফলে স্থুলতায় আক্রান্ত হওয়ার কারণেও রক্তচলাচল ব্যাহত হয়।

উচ্চ/নিম্ন রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলও রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ।

 

কীভাবে রক্ত চলাচল বাড়ানো যাবে

১. মদপান ত্যাগ করুন
অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানে হৃৎপিণ্ডে সমস্যা হয়। সুতরাং আজই মদপান ত্যাগ করুন। তবে রেডওয়াইন জাতীয় হালকা মদ পান করা যেতে পারে। কেননা রেডওয়াইনে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে রেখে রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। তবে পরিমি পরিমাণে রেডওয়াইন খেতে হবে।

২. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
দেহকে সচল রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করতে হবে। পানি আমাদের দেহ থেকে ট্রক্সিন বা বিষ বের করে দিতে সহায়ক। আর দেহকে যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়িয়ে রক্তচলাচল স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

৩. বাদাম খান
কাজুবাদাম এবং আখরোট খেলে রক্ত চলাচল বেগবান হয়। ভিটামিন এ, বি, সি ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ বাদাম এবং ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ বাদাম খেতে হবে। বাদাম ধমনীতে প্রদাহ এবং পঁচনজনিত ক্ষয়রোধ করে রক্ত চলাচল বাড়ায়।

৪. গ্রিন টি
দুধ চা না খেয়ে বরং গ্রিন টি খান। যা আরো বেশি স্বাস্থ্যকর এবং দেহের কার্যক্রমতে উদ্দীপিত করে। গ্রিন টি রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোকে প্রশস্ত করে যার ফলে রক্ত প্রবাহের গতিও বাড়ে।

৫. স্নায়ু উত্তেজক উপাদান এড়িয়ে চলুন
ক্যাফেইন এর মতো স্নায়ু উত্তেজক উপাদান এড়িয়ে চলুন। তাহলে কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই আপনার দেহের সব অংশে রক্তচলাচল করতে পারবে। ক্যাফেইন শরীরকে শুষ্ক করে তোলে। কিন্তু রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য শরীরকে আর্দ্র রাখা জরুরি।

৬. লবণ খাওয়া কমান
অতিরিক্ত লবণ খেলে রক্তচাপ বাড়ে এবং স্ফীতি দেখা দেয়। যার ফলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এজন্য ক্যানজাত খাবারের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফ্রিজে জমাট খাবার, কেচাপ সস বাদ দিতে হবে। কেননা এসবে উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম থাকে।

৭. রসুন, আদা, পেঁয়াজ
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রসুন, আদা এবং পেঁয়াজের পরিমাণ আরেকটু বাড়ান। এসব আপনার রক্ত চলাচল প্র্রক্রিয়ার স্বাস্থ্য উন্নত করবে। এছাড়া এসবে আছে প্রদাহরোধী এবং জীবাণুরোধী উপাদান যা হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। এছাড়া রোগ-জীবাণুর সংক্রমণের বিরুদ্ধেও কাজ করে এবং দেহকে বিষমুক্ত করে এসব উপাদান।

৮. ভেষজ খাওয়া বাড়ান
যে কোনো রোগের চিকিৎসায় ভেষজ অনেক বেশি নিরাপদ এবং কার্যকর। ভেষজ পরিবারেরই সদস্য জিনসেং মূলসমুহ যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে এবং রক্ত চলাচল বাড়ায়।

৯. ডার্ক চকোলেট
এতে আছে কোকোয়া যাতে আছে ফ্ল্যাভোনয়েড। যা রক্ত প্রবাহ উন্নত করে।

১০. গোলমরিচ
গোলমরিচ বিপাকীয় হার বৃদ্ধি করে। এবং ধমনি ও রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোকে শক্তিশালী করে।

১১. সূর্যমুখি বীজ
এই বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে। যা রক্তে জমাটবদ্ধতা প্রতিরোধ করে। এছাড়া জলপাই, বাদাম এবং তরমুজ বীজও উপকারী।

১২. সাইট্রাস ফল
কমলা, লেবু এবং জাম্বুরারে আছে ভিটামিন সি এবং সুগার ও প্রদাহ কমাতে সহায়ক। ফলে রক্ত চলাচল বাড়ে।

১৩. তরমুজ
এতে আছে লাইকোপেন নামের একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তচলাল উন্নত করে। টমেটো, অ্যাপ্রিকট এবং গোলাপি মোসাম্বি লেবুও রক্ত চলাচল অবাধ করে।

১৪. অ্যাভোকাডো
এতে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। যা হৃদযন্ত্রকে সচল রাখে এবং রক্ত প্রবাহের গতি বাড়ায়। এছাড়া কাঁচা চীয়া বীজ এবং শ্বেতবীজেও একই উপকারীতা আছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সুইসাইড ডিজিজ কী, এর ফলে কী হয়

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সুইসাইড ডিজিজ কী, এর ফলে কী হয়
সংগৃহীত ছবি

সুইসাইড ডিজিজ। নাম শুনলে মনে হতে পারে হয়তো কোনো মানসিক রোগ। মানসিক অবসাদের ফলে বারবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করার মতো। তবে বিষয়টা মোটেও তেমন নয়।

বরং এই রোগের সঙ্গে মনের খুব একটা সংযোগ নেই। বিষয়টা একটা দৈহিক রোগ।

এই রোগে আক্রান্ত হলে মুখের এক পাশে শুরু হয় তীব্র ব্যথা। যা কখনো কখনো রীতিমতো অসহনীয় হয়ে ওঠে।

এমনকি কথা বলা, হাসা, খাবার বা পানি খাওয়াটাও হয়ে ওঠে অসহনীয়। মুখে পানির ঝাপটা দেওয়া, শেভ করা, দাঁত ব্রাশ করার সময় হয় ব্যথা। মোট কথা ব্যথায় ব্যথায় অস্থির হয়ে ওঠে জীবন।

প্রতিদিনের স্বাভাবিক কাজের সময়ই ব্যথা শুরু হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যথার ধরন ভীষণ কষ্টদায়ক বলে কেউ কেউ একে সুইসাইড ডিজিজ বলে থাকেন। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় এই রোগের নাম ‘ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া’।

আরো পড়ুন
এসি রুমে বসেই ধূমপান, হতে পারে যে বিপদ

এসি রুমে বসেই ধূমপান, হতে পারে যে বিপদ

 

কী হয় এই রোগের প্রভাবে

মুখের স্বাভাবিকতার জন্য যেসব স্নায়ু কাজ করে, তারই একটি হলো ট্রাইজেমিনাল স্নায়ু। কোনো কারণে এই স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি হলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। হয়তো একটি ধমনি ওই স্নায়ুকে বেশ চেপে রাখে।

সেই চাপের কারণেই তীব্র ব্যথা অনুভব করেন রোগী। কোনো টিউমার যদি স্নায়ুটিকে চাপ দেয়, তাহলেও এমনটা হতে পারে। অন্যান্য কিছু স্নায়বিক রোগেও এমন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

কেন এই স্নায়ুর ওপর অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। নির্দিষ্ট কোনো জীবনপদ্ধতি এর জন্য দায়ী নয়। যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এ রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়।

আরো পড়ুন
সানস্ক্রিন খাবেন, নাকি মাখবেন? কোনটিতে উপকার

সানস্ক্রিন খাবেন, নাকি মাখবেন? কোনটিতে উপকার

 

কী করবেন

ঘরোয়া চিকিৎসায় এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন বিশেষ ধরনের ওষুধ। জীবনধারায় কোনো পরিবর্তন এনে রোগের তীব্রতা কমানো সম্ভব হয় না। সুস্থ থাকতে তাই ওষুধ সেবন ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। মনে রাখবেন এটা এক ধরনের স্নায়ু জনিত রোগ। তাই ফেলে না রেখে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

আরো পড়ুন
বৈশাখে বাড়িতে রান্না করতে পারেন কয়েক পদের ইলিশ

বৈশাখে বাড়িতে রান্না করতে পারেন কয়েক পদের ইলিশ

 

সূত্র : টিভি নাইন বাংলা

মন্তব্য

পপকর্ন লাংস কী, যে কারণে সাবধান হবেন ধূমপায়ীরা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
পপকর্ন লাংস কী, যে কারণে সাবধান হবেন ধূমপায়ীরা
সংগৃহীত ছবি

মাত্র সতেরো বছর বয়স। অথচ এই সময়ে দিনরাত কেশে যাচ্ছে। আবার কখনো কখনো শ্বাসকষ্টও হচ্ছে। কাশির কারণ জানতে ঘন ঘন চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে।

চিকিৎসকও ভুরি ভুরি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েছেন। কেউ দিয়েছেন কফের সিরাপ, আবার কেউ অ্যান্টি অ্যালির্জিক ওষুধ। তাতেও লাভ হয়নি। বারবার পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা যায় হার্টের অসুখ নয়, ‘পপকর্ন লাংস’-এর মতো ফুসফুসের বিরল রোগে ভুগছে সে।
আর এই রোগই এখন চিন্তা বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘পপকর্ন লাংস’ রোগটিকে ‘ব্রঙ্কিওলাইটিস অবলিটেরানস’ বলা হয়। ফুসফুসের বিরল রোগটি ‘পপকর্ন লাংস’ নামে পরিচিতির কারণ হচ্ছে, পপকর্ন মাইক্রোওয়েভে তৈরির সময় ডায়াসিটাইল নামে একটি রাসায়নিক নির্গত হয়। ওই রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করলে ফুসফুসের সংক্রমণ হয়।

তাই এই রোগটি ‘পপকর্ন লাংস’ নামে পরিচিত। চিকিৎসকদের মতে, যারা অতিরিক্ত ধূমপান করেন অথবা ধুলো-ধোঁয়া বেশি রয়েছে এমন জায়গায় থাকেন, তারা এই ধরনের সমস্যায় বেশি ভোগেন।

আরো পড়ুন
গাজর রান্না করে খাওয়া ভালো, নাকি কাঁচা

গাজর রান্না করে খাওয়া ভালো, নাকি কাঁচা

 

পপকর্ন ফুসফুসের লক্ষণ ও উপসর্গ

‘ব্রঙ্কিওলাইটিস ওব্লিটারানস’ (বিও) বা পপকর্ন ফুসফুসের উপসর্গ যেমন কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, বমিভাব, দুর্বলতা ও শ্বাসকষ্ট, এগুলো যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। তাই দেরি না করে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। ভেপিংয়ের ফলে সৃষ্ট লাইপয়েড নিউমোনিয়া সাধারণ নিউমোনিয়া থেকে আলাদা।

এটি ফ্যাটি এসিড সংক্রমণের পরিবর্তে ফুসফুসে প্রবেশ করে।

এই রোগ হলে একজন ব্যক্তি ক্রমাগত কাশি, শ্বাস নিতে অসুবিধা এবং কাশি থেকে রক্ত ​​​​বা রক্তযুক্ত শ্লেষ্মার মতো লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। নিউমোথোরাক্স, বা ফুসফুসের ক্ষতি তখনই ঘটে যখন ফুসফুসে একটি ছিদ্র থাকে, যা অক্সিজেনকে বেরিয়ে যেতে দেয়। ধূমপান ও ভেপিং এক্ষেত্রে ভীষণ ক্ষতিকর।

হার্ভার্ড হেলথের মতে, পপকর্ন ফুসফুসের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, এবং কাশি যা হাঁপানি বা ঠান্ডা লাগার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এই রোগের দ্রুত নির্ণয় জরুরি।

আরো পড়ুন
৬০০ অতিথিকে খাওয়াতে পারবে না কনের পরিবার, বিয়ে ভেঙে দিলেন বর!

৬০০ অতিথিকে খাওয়াতে পারবে না কনের পরিবার, বিয়ে ভেঙে দিলেন বর!

 

কিভাবে এলো এই রোগ

আমেরিকার নেভাডার বাসিন্দা ব্রায়ান কালেন। ১৪ বছর বয়স থেকে সে ই-সিগারেটের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। তার ফলে প্রায় প্রতিদিনই সে ব্যাটারিচালিত যন্ত্রের সাহায্যে ভেপার নিত। ভেপিংয়ের ফলে অ্যাসিটালডিহাইড নামে এক যৌগ তার ফুসফুসে প্রবেশ করত। তার ফলে ক্ষতি হয়েছে ফুসফুসের। সে কারণে এমন বিরল রোগে কিশোরী আক্রান্ত হয়েছে বলেই জানা গেছে।

ফাইবার বা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি এই ব্যাটারিচালিত ই-সিগারেটের মধ্যে একটি প্রকোষ্ঠ থাকে। তার মধ্যে ভরা থাকে বিশেষ ধরনের তরল মিশ্রণ। যন্ত্রটি গরম হয়ে ওই তরলের বাষ্পীভবন ঘটায় এবং ব্যবহারকারী সেই বাষ্প টেনে নেন ফুসফুসে। এই পদ্ধতিকে বলে ‘ভেপিং’। এই বাষ্পেই মিশে থাকে অ্যাসিটালডিহাইড নামে এক ধরনের যৌগ, যা ফুসফুস ছারখার করে দেয়। ই-সিগারেটের তরল মিশ্রণের (ই-লিকুইড) মধ্যে থাকে প্রপেলিন গ্লাইসল, গ্লিসারিন, পলিইথিলিন গ্লাইসল, নানাবিধ ফ্লেভার এবং নিকোটিন, যা ফুসফুসের ক্যানসারের কারণও হয়ে উঠতে পারে।

বলে রাখা ভালো, এর আগে ওই কিশোরী করোনাতেও আক্রান্ত হয়েছিল। সে সময় চিকিৎসক তাকে ই-সিগারেট ছাড়তে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে সে পরামর্শ কানে নেয়নি। সে কারণেই সম্ভবত অতি দ্রুত ফুসফুসের সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করে বলেই দাবি চিকিৎসকদের। তাদের ধারণা, গত তিন বছর ধরেই নীরবে ফুসফুসে বাসা বেঁধেছিল এই বিরল রোগ। এটি কারো কারো ক্ষেত্রে প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে। তাই চিকিৎসকদের মতে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ধূমপানের মতো কুঅভ্যাস ছেড়ে দেওয়াই ভালো।

আরো পড়ুন
বৈশাখে পাতে রাখতে পারেন ভাপা সরষে ইলিশ

বৈশাখে পাতে রাখতে পারেন ভাপা সরষে ইলিশ

 

ঝুঁকি কাদের

ডায়াসিটাইল বা অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিকের আশেপাশে থাকা ব্যক্তিরা, যাদের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে বা শ্বাসযন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণ রয়েছে এবং যাদের অটোইমিউন রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেই এই রোগের ঝুঁকি বেশি।

কখনো কখনো রাসায়নিক এক্সপোজার বা অটোইমিউন রোগসহ বিভিন্ন কারণে ফুসফুসের প্রদাহ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ছোট শ্বাসনালীকে ক্ষতি করে, যা পপকর্ন ফুসফুসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আরো পড়ুন
সানস্ক্রিন খাবেন, নাকি মাখবেন? কোনটিতে উপকার

সানস্ক্রিন খাবেন, নাকি মাখবেন? কোনটিতে উপকার

 

রোগ নির্ণয়

  • পপকর্ন ফুসফুস রোগের চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক রোগ নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • রোগ নির্ণয়ের সর্বপ্রথম ধাপ হলো রোগীর মেডিক্যাল হিস্ট্রি এবং শারীরিক পরীক্ষা শেষ লক্ষণ এবং ক্ষতিকারক পদার্থের সম্ভাব্য এক্সপোজার নিয়ে আলোচনা করা।
  • ফুসফুসের কার্যকারিতা দেখে নিতে ফুসফুসের ক্ষমতা ও বায়ুপ্রবাহের মাত্রার দিকে খেয়াল রাখা।
  • ফোর্সড অসিলোমেট্রি (এফওটি) বা ইমপালস অসিলোমেট্রি পরীক্ষা।
  • ভেতরে কী চলছে, তা বোঝার জন্য বুকের এক্স-রে বা সিটি স্ক্যান করা।
  • বায়োপসির জন্য টিস্যুর নমুনা পরীক্ষা ও সংগ্রহ করতে শ্বাসনালি দিয়ে ক্যামেরাসহ একটি নমনীয় টিউব ঢুকিয়ে ব্রঙ্কোস্কোপি করা হয়।
আরো পড়ুন
ব্রিদিং এক্সারসাইজে কী উপকার

ব্রিদিং এক্সারসাইজে কী উপকার

 

পপকর্ন ফুসফুসের চিকিৎসা

  • চিকিৎসকরা বলছেন, ওষুধ থেকে শুরু করে অক্সিজেন থেরাপি পর্যন্ত বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে পপকর্ন ফুসফুসের রোগের চিকিৎসা করা যেতে পারে।
  • ফোলা কমাতে প্রিডনিসোনের মতো ওষুধ লাগবে।
  • অ্যালবুটেরলের মতো ইনহেলার রোগীকে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করে।
  • অক্সিজেন থেরাপি রোগীকে নিঃশ্বাসের কষ্ট লাঘব করবে।
  • খুব গুরুতর ক্ষেত্রে রোগীর ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে, কিন্তু এটি শুধু রোগীর জীবনের শেষ পর্যায়ে দাঁড়িয়েই করা হয়।
আরো পড়ুন
পুরনো ও গুরুত্বপূর্ণ মেইল সহজে খুঁজে বের করবে জিমেইল

পুরনো ও গুরুত্বপূর্ণ মেইল সহজে খুঁজে বের করবে জিমেইল

 

সূত্র : আনন্দবাজার, হিন্দুস্তান টাইমস।

মন্তব্য

ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু
ফাইল ছবি

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরো ২২ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

আজ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৩ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩ জন রয়েছে।

মৃত দুজন বরিশাল বিভাগের। এ সময় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী।

চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মোট ২ হাজার ৭৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ৬২ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ শতাংশ নারী।

হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ১ হাজার ৯৫৬ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৬ জন।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন এবং মারা গেছে ৫৭৫ জন।

মন্তব্য

কিডনিতে পাথর হয়েছে বুঝবেন লক্ষণে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
কিডনিতে পাথর হয়েছে বুঝবেন লক্ষণে
সংগৃহীত ছবি

প্রাকৃতিক খনিজ উপাদান নিয়ে প্রকৃতিতে যেমন পাথর তৈরি হচ্ছে, তেমনই মানবদেহের উপাদান ও খনিজ দিয়ে আমাদের শরীরের কয়েকটি অঙ্গে পাথর তৈরি হতে পারে। সাম্প্রতিক ধারণা হলো, প্রস্রাবে দ্রব অত্যধিক ঘন হলে পাথরের কণা বা ক্রিস্টাল তৈরি হয়। এ অবস্থা সৃষ্টি হয় যদি শরীর থেকে প্রতিনিয়ত পানি কমে যায়। কিভাবে বুঝবেন যে আপনার কিডনিতে পাথর হয়েছে—তা জানাতেই আজকের প্রতিবেদন।

চলুন, জেনে নেওয়া যাক।

কিডনিতে পাথরের লক্ষণ 

কিডনির পাথরগুলো মূত্রনালীতে প্রবেশের আগে বোঝা যায় না। যে নালীগুলো আপনার কিডনি ও মূত্রাশয়কে সংযুক্ত করে সেগুলোতে যদি পাথরগুলো আটকে যায়, তখন সেটি প্রস্রাবের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এর ফলে কিডনি বড় হতে পারে এবং মূত্রনালীতে খিঁচুনি হতে পারে, উভয়ই যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।

সেই মুহূর্তে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে—

আরো পড়ুন
ঘন ঘন ওয়েট টিস্যু ব্যবহারে কী ক্ষতি

ঘন ঘন ওয়েট টিস্যু ব্যবহারে কী ক্ষতি

 
  • পাঁজরের খাঁচার ঠিক পিছনে, পাশে ও পিছনে তীক্ষ্ণ অস্বস্তি
  • তলপেটে ও কুঁচকিতে বিকিরণকারী ব্যথা
  • গোলাপি, লাল বা বাদামি প্রস্রাব
  • মেঘলা প্রস্রাব 
  • বমি ও বমি বমি ভাব

কিডনি পাথর মূত্রনালীর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় যে ব্যথা অনুভূত হয় তা পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত হওয়া বা তীব্রতা বেড়ে যাওয়া।

কিডনিতে পাথরের চিকিৎসা

কিডনিতে পাথরের চিকিৎসা পাথরের ধরন ও কারণের ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। 

আরো পড়ুন
আম তো খাবেনই, এর পাতারও রয়েছে নানা উপকারিতা

আম তো খাবেনই, এর পাতারও রয়েছে নানা উপকারিতা

 

ন্যূনতম উপসর্গসহ ছোট পাথর

তরল গ্রহণ বাড়ান : প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে সাড়ে ৩ লিটার পানি পান করুন।

এর ফলে আপনার প্রস্রাব পাতলা থাকবে এবং পাথর গঠন রোধ করবে। ডাক্তারের পরামর্শ না পাওয়া পর্যন্ত পরিষ্কার বা প্রায় পরিষ্কার প্রস্রাবের জন্য পর্যাপ্ত তরল, বিশেষত পানি খাওয়ার দিকে লক্ষ্য রাখুন।

ব্যথা উপশম ব্যবহার করুন : মূত্রনালী দিয়ে ছোট পাথর পাস হওয়া অস্বস্তিকর হতে পারে। হালকা ব্যথা উপশম করার জন্য চিকিৎসক আইবুপ্রোফেন (অ্যাডভিল, মট্রিন আইবি) বা নেপ্রোক্সেন সোডিয়ামের (আলেভ) মতো ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথা উপশমকারীর পরামর্শ দিতে পারেন।

চিকিৎসা থেরাপি : চিকিৎসক আপনার কিডনি পাথরের উত্তরণ সহজতর করার জন্য ওষুধ লিখে দিতে পারেন।

এই ওষুধগুলো আপনার মূত্রনালীতে পেশীগুলোকে শিথিল করে। এ ছাড়া পাথরটি আরো দ্রুত ও কম ব্যথার সঙ্গে বের করতে সহায়তা করে।

আরো পড়ুন
ব্রিদিং এক্সারসাইজে কী উপকার

ব্রিদিং এক্সারসাইজে কী উপকার

 

বড় পাথর ও বেশি উপসর্গ

এক্সট্রাকর্পোরিয়াল শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি (ESWL)

এই চিকিৎসা কিডনি পাথর ভেঙ্গে শব্দ তরঙ্গ তৈরি করে। আকার ও অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট ধরনের পাথরের জন্য এটি সুপারিশ করা হয়। ESWL শক ওয়েভ তৈরি করে, যা পাথরকে ছোট ছোট টুকরো করে দেয় এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়।

পদ্ধতিটি ৪৫ থেকে ৬০ মিনিট স্থায়ী হয়। এতে অবসাদ বা হালকা অ্যানেশেসিয়া থাকতে পারে। সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রস্রাবে রক্ত, ক্ষত ও পাথরের টুকরো মূত্রনালীর মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে অস্বস্তি। এ ছাড়া আরো বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে।

আরো পড়ুন
হজমশক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে ওজনও কমাবে পুদিনা পাতা

হজমশক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে ওজনও কমাবে পুদিনা পাতা

 

কিডনিতে পাথর নির্ণয়

চিকিৎসক যদি মনে করেন যে আপনার কিডনিতে পাথর আছে, তাহলে আপনাকে নিম্নলিখিত ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাগুলো করতে বলতে পারেন—

রক্ত পরীক্ষা : রক্ত ​​পরীক্ষার ফলে আপনার রক্তে ক্যালশিয়াম বা ইউরিক এসিডের অতিরিক্ত পরিমাণ রয়েছে কি না বোঝা যাবে। রক্ত পরীক্ষার ফলাফল কিডনির স্বাস্থ্য নিরীক্ষণ করতে সাহায্য করে এবং অন্য চিকিৎসার প্রয়োজন থাকলে তাও জানা যেতে পারে।

প্রস্রাব পরীক্ষা : ২৪-ঘণ্টার প্রস্রাব সংগ্রহের পরীক্ষাটি প্রকাশ করতে পারে যে আপনি হয় অনেক বেশি পাথর-গঠনকারী খনিজ নিঃসরণ করছেন বা পর্যাপ্ত পাথর প্রতিরোধকারী রাসায়নিক নেই। এই পরীক্ষার জন্য পরপর দুই দিনে দুটি প্রস্রাবের নমুনা সংগ্রহ করার পরামর্শ দিতে পারেন চিকিৎসক।

ইমেজিং : মূত্রনালীর ইমেজিং পরীক্ষা কিডনিতে পাথর প্রকাশ করতে পারে। এমনকি ছোট পাথর উচ্চ-গতি বা দ্বৈত-শক্তি কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি (সিটি) ব্যবহার করে সনাক্ত করা যেতে পারে।

আরো পড়ুন
গাজর রান্না করে খাওয়া ভালো, নাকি কাঁচা

গাজর রান্না করে খাওয়া ভালো, নাকি কাঁচা

 

কিডনিতে পাথর বা কিডনিতে কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শও নিতে পারেন। যিনি আপনাকে একটি খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়তা করতে পারেন। যার ফলে আপনার কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমাতে পারে।

সূত্র : কেয়ার হসপিটাল

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ