খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার পেলেন কবি হাসান হাফিজ

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
শেয়ার
খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার পেলেন কবি হাসান হাফিজ
ছবি: কালের কণ্ঠ

বাংলা কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য ২৮তম খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার পেলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ।

আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়ার বকুলতলায় খালেকদাদ চৌধুরী মুক্ত মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস। নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সভাপতি ম. কিবরিয়া চৌধুরী হেলিমের সভাপতিত্বে ও সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক তানভীর জাহান চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ারুল হক, মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক, প্রফেসর ননী গোপাল সরকার, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মরিুজ্জামান দুদু, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ফাহিম খান পাঠান প্রমুখ।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কবি হাসান হাফিজ বলেন, লোকসাহিত্যের উৎসের আখড়া হচ্ছে গণসংগীত। আমাদের সংস্কৃতির নিজস্ব পরিচয় ও সভ্যতার ঐতিহ্য রয়েছে। এদিক থেকে নেত্রকোনা খুবই সমৃদ্ধ। এই ভাটি অঞ্চলের ঘরে ঘরে গানের চর্চা হয়।

নেত্রকোনা সংস্কৃতির রাজধানী হতে পারে। এ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানান।

আরো পড়ুন
‘দ্রুত নির্বাচন দিন, আমরা প্রস্তুত’

‘দ্রুত নির্বাচন দিন, আমরা প্রস্তুত’

 

নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক তানভীর জাহান চৌধুরী বলেন, নেত্রকোনার কৃতি সন্তান দুই বাংলার প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রয়াত খালেকদাদ চৌধুরীর নামে ১৯৯৬ সাল থেকে এ উৎসবের আয়োজন ও পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এবারের পুরস্কৃত প্রিয় কবি হাসান হাফিজ।

তিনি দেশ বরেণ্য কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক। তাঁকে পুরস্কৃত করতে পেরে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত।

এর আগে সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে এ উৎসবের উদ্বোধন করবেন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন। উদ্বোধনের পর শহরে আনন্দ শোভাযাত্রা, শিশুদের চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা, কবিতা পাঠের আসরসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন হয়।

আরো পড়ুন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সভা শনিবার

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সভা শনিবার

 

কবি হাসান হাফিজ সোনারগাঁও উপজেলার এলাহিনগর গ্রামে ১৯৫৫ সালের ১৫ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন।

পড়াশোনা হোসেনপুর হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাংবাদিকতা পেশায় ৪৬ বছর ধরে যুক্ত রয়েছেন তিনি। দৈনিক বাংলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। কাজ করেছেন কলকাতার সাপ্তাহিক দেশ, দৈনিক আমাদের নতুন সময়, দৈনিক জনকণ্ঠ, বৈশাখী টিভি, আমার দেশ, পাক্ষিক অনন্যা, হ্যাপিনেস টিভিতে। বর্তমানে তিনি দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক। হাসান হাফিজের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৯০ (মৌলিক ও সম্পাদিত)।

তার কবিতা অনূদিত হয়েছে ইংরেজি, ফরাসি, হিন্দি, আরবি, উর্দু, ফারসি ও চাকমা ভাষায়। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হচ্ছে এখন যৌবন যার, অবাধ্য অর্জুন, অপমানে বেজে উঠি, জলরেখায় শব্দজোড়, হয়তো কিছু হবে, কবিতাসমগ্র ১-৩, ছড়াসমগ্র, রূপকথা সমগ্র ১-৪, বিদেশিনী বধূ, রবীন্দ্রনাথঃ দেশে ভাষণ, টাকডুম টাকডুম বাজে, ছড়ার গাড়ি দূরের পাড়ি, জোড়া হাতি রিমান্ডে, সত্যি সেলুকাস, ফুল পাখি নদীও বিপদে ইত্যাদি।

নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজ ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতিবছর পহেলা ফাগুনে একজন বরেণ্য লেখক, কবি, সাহিত্যিককে খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে থাকে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

গীতিকবি সিকান্দার আবু জাফরের জন্মদিন আজ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
গীতিকবি সিকান্দার আবু জাফরের জন্মদিন আজ

প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও গীতিকবি সিকান্দার আবু জাফরের আজ জন্মদিন। তার পুরো নাম সৈয়দ আল্ হাশেমী আবু জাফর মুহম্মদ বখ্ত সিকান্দার।

সিকান্দার আবু জাফর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ (আজকের এই দিনে) সাতক্ষীরা জেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের আদি নিবাস ছিল পাকিস্তানের পেশোয়ারে।

সেখান থেকে তাঁর পিতামহ মাওলানা সৈয়দ আলম শাহ হাশেমী ওই গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন।

আরো পড়ুন

জগন্নাথপুর-আউশকান্দি মহাসড়কে ঢাকাগামী ২ বাসে ডাকাতি

জগন্নাথপুর-আউশকান্দি মহাসড়কে ঢাকাগামী ২ বাসে ডাকাতি

 

আবু জাফর স্থানীয় তালাবিদ ইনস্টিটিউট থেকে প্রবেশিকা এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। কলকাতার মিলিটারি অ্যাকাউন্টস বিভাগে তিনি পেশাগত জীবন শুরু করেন এবং পরে সিভিল সাপ্লাই অফিসে চাকরি করেন। সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের ‘গ্লোব নিউজ এজেন্সি’ নামক সংবাদ সংস্থায়ও তিনি কিছুকাল কাজ করেন।

 

আবু জাফর ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন এবং বিভিন্ন সময়ে দৈনিক নবযুগ, ইত্তেফাক, সংবাদ ও মিল্লাত পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। তিনি মাসিক সমকাল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন।

আরো পড়ুন

এতিমের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

এতিমের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

 

ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার যে ধারা গড়ে ওঠে, আবু জাফর ছিলেন তার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও বিপ্লবের চেতনাসম্পন্ন অনেক গান রচনা করেন।

তার রচিত ‘আমাদের সংগ্রাম চলবেই’ গানটি মুক্তিযুদ্ধের সময় জনগণকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। 

তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : 

উপন্যাস পূরবী, নতুন সকাল; ছোটগল্প মাটি আর অশ্রু; কবিতা প্রসন্ন শহর, তিমিরান্তিক, বৈরী বৃষ্টিতে, বৃশ্চিক-লগ্ন, বাংলা ছাড়ো; নাটক সিরাজ-উদ-দৌলা, মহাকবি আলাউল; সঙ্গীত মালব কৌশিক।

তার অনূদিত গ্রন্থ: 

যাদুর কলস, সেন্ট লুইয়ের সেতু, রুবাইয়াৎ : ওমর খৈয়াম ইত্যাদি।

তিনি নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং একুশে পদক (মরণোত্তর) লাভ করেন। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মন্তব্য

‘দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০২৪’ পাচ্ছেন ২০ গুণীজন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
‘দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০২৪’ পাচ্ছেন ২০ গুণীজন
সংগৃহীত ছবি

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা কাজ করছেন তাদের সম্মানীত করতে বিগত বছরের মতো এবারও ‘দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০২৪’ প্রদান করবে দেশ পাবলিকেশন্স। এ লক্ষ্যে পাণ্ডুলিপি আহ্বান করেছিল দেশ। এ আহ্বানে দুই শতাধিক পাণ্ডুলিপি জমা হয়। এরই মধ্য থেকে জুরি বোর্ডের মাধ্যমে প্রতিটি বিষয়ে দুই প্রজন্মের দুজন করে ১০ বিষয়ে ২০ জনকে চূড়ান্ত নির্বাচন করা হয়।

 

সম্প্রতি ‘দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০২৪’ ঘোষণা করা হয়। এ বছর পুরস্কারের জন্য বিভিন্ন শাখায় মনোনীত হয়েছেন ২০ গুণীজন। বিজ্ঞপ্তিতে একজন করে দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও পরে ১০টি বিষয়ে ২০ গুণীজনকে পুরস্কার দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এবার দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার দেওয়া হবে উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, গবেষণা, মৌলিক প্রবন্ধ, অনুবাদ, থ্রিলার, রহস্য উপন্যাস, নাটক ও কিশোর উপন্যাস, শিশুতোষ গল্প এবং ছড়া।

এবার যারা পুরস্কার পাচ্ছেন সেই গুণীজনরা হলেন— ‘অর্ধশতদল' কবিতার পাণ্ডুলিপির জন্য পুরস্কার পেয়েছেন কবি রহমান হেনরী। ‘হাতিমের শহর’-এর পাণ্ডুলিপির জন্য ফেরদৌস মাহমুদ। প্রবন্ধে পেয়েছেন দুই প্রজন্মের দুই প্রবন্ধকার ‘কবিতা নিয়ে আলাপ’ তারেক রেজা, ‘কথাসাহিত্যে আন্তর্জাতিকতা’ শাহমুব জুয়েল। কথাসাহিত্য বিভাগে উপন্যাস ‘বাউল’ সৈয়দা আঁখি হক, ‘হেরেমের আধেক চাঁদ’ মাইনুল ইসলাম মানিক।
কথাসাহিত্য ছোটগল্প ‘পরিযায়ী প্রাণ’ রুমা বসু, ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ছোটগল্প পাণ্ডুলিপির জন্য নূরে জান্নাত। গবেষণায় পেয়েছেন দুই গবেষক ‘গোয়ালগ্রাম গণহত্যা’ পাণ্ডুলিপির জন্য ইমাম মেহেদী এবং ‘চল্লিশের দশকের লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি’ পাণ্ডুলিপির জন্য বঙ্গ রাখাল। অনুবাদ সাহিত্য সাকার বেইট, মূল : আইজাক আসিমভ, অনুবাদ : সোহরাব সুমন ও প্রিটি লিটল কিলার, মূল : সিডনি অ্যালান, অনুবাদ : সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি। 

বর্তমান পাঠকের আগ্রহ থ্রিলারে। তাই এবার নতুন যুক্ত করা হয়েছে এই বিভাগ।

থ্রিলার উপন্যাস ‘কাজলরেখা রহস্য’ বিশ্বজিৎ দাস, ‘পরীতমা’ ফরিদুল ইসলাম নির্জন। এবার নাটকে পেয়েছেন দুই প্রজন্মের দুই নাট্যকার ‘একগুচ্ছ শ্রুতিনাটক’ স্বপন ভট্টাচার্য, ‘বুক পকেটে জীবন ও অন্যান্য নাটক’ আহমেদ তাওকীর। শিশুসাহিত্য কিশোর উপন্যাস ‘কুটিচাচার গোয়েন্দা অভিযান’ দীপু মাহমুদ ও ছোটগল্প ‘স্কুলে জাদুকর এসেছিল’ নুরুল ইসলাম বাবুল। ছড়া উপন্যাস ‘লাল বক সাদা বক’ মাসুম আওয়াল। ছড়ার পাণ্ডুলিপি ‘আলোর পাখি নাম জোনাকি’ দেওয়ান বাদল। 

সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রকাশক অচিন্ত্য চয়ন বলেন, ‘জানুয়ারিতে ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণবশত হয়নি। সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’ 

দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করে তিনি আরো বলেন, ‘চেতনায় ঐতিহ্য’— এ স্লোগান ধারণ করে সুনামের সঙ্গেই যুগ পেরিয়ে তেরো বছরে পদার্পণ করেছে ‘দেশ’। এ সময়ের মধ্যেই প্রকাশনাশিল্পে পাণ্ডুলিপির নান্দনিক পরিচর্যায় একটি স্বতন্ত্রধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের সহযাত্রী হতে আমাদের এ প্রয়াস। আগামী মাসে দেশ সাহিত্য উৎসবে মনোনীতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। দেশ পাবলিকেশন্স সব সময় তরুণদের নিয়ে কাজ করছে, আগামীতেও করতে চায়। আরেকটি বিষয় জানিয়ে রাখছি, আগে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের পুরস্কার চলতি বছরের সঙ্গে প্রদান করা হবে। সবাই পাশে থাকবেন আশা করছি। দেশ এগিয়ে দেতে চায় আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনাদের পরামর্শ আমাদের পথ চলাকে আরো সুগম করবে।

মন্তব্য
স্বরণ

পল্লীকবির ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
পল্লীকবির ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
সংগৃহীত ছবি

পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৪ মার্চ)। ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পৈতৃক নিবাস একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। পিতা আনসারউদ্দীন মোল্লা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক।

 

পল্লীকবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর কমলাপুরে তাঁর বাড়িতে বক্তৃতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আয়োজিত এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি শাহজাহান আবদালী।  আলোচনা সভায় পল্লীকবির কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করেন দেশের নবীন-প্রবীণ কবি-সাহিত্যিকসহ শিক্ষাবিদগণ।

আরো পড়ুন
গলায় ছুরি ধরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

গলায় ছুরি ধরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

 

শৈশবে ফরিদপুর হিতৈষী স্কুলে জসীমউদ্দীনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়।

তারপর ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ ও বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি এমএ পাস করেন।

জসীমউদ্দীনের কর্মজীবন শুরু হয় পল্লীসাহিত্যের সংগ্রাহক হিসেবে। স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে দীনেশচন্দ্র সেনের আনুকূল্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক এ কাজে তিনি নিযুক্ত হন। এমএ পাস করার পর থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত তিনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ীর গবেষণা সহকারী ছিলেন।

আরো পড়ুন
আলু বোঝাই ট্রাকের চাপায় নিহত ১

আলু বোঝাই ট্রাকের চাপায় নিহত ১

 

১৯৩৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার পদে যোগদান করেন। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত চাকরি করার পর ১৯৪৪ সাল থেকে তিনি প্রথমে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকার এবং পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে এখান থেকে ডেপুটি ডাইরেক্টর হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন।

জসীমউদ্দীনের কবিত্ব শক্তির প্রকাশ ঘটে ছাত্রজীবনেই। কলেজজীবনে ‘কবর’ কবিতা রচনা করে তিনি বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তার এ কবিতাটি প্রবেশিকা বাংলা সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়।

তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাখালী’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। তার প্রধান গ্রন্থগুলো হলো: নকশী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, রঙিলা নায়ের মাঝি, মাটির কান্না, সুচয়নী, পদ্মা নদীর দেশে, ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে, পদ্মাপার, বেদের মেয়ে, পল্লীবধূ, গ্রামের মায়া, ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়, জার্মানির শহরে বন্দরে, বাঙালির হাসির গল্প, ডালিম কুমার ইত্যাদি।

তার নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যটি দ্য ফিল্ড অব অ্যামব্রয়ডার্ড কুইল্ট এবং বাঙালির হাসির গল্প গ্রন্থটি ফোক টেলস অব ইস্ট পাকিস্তান নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। বাংলা কবিতার ধারায় জসীম উদ্দীনের স্থানটি বিশিষ্ট। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ও লোকজীবন জসীম উদ্দীনের কবিতায় নতুন রূপ লাভ করেছে। তার কবিতায় দেশের মাটির সাক্ষাৎ উপলব্ধি ঘটে। এ জন্য ‘পল্লীকবি’ হিসেবে তার বিশেষ ও স্বতন্ত্র পরিচিতি রয়েছে।

আরো পড়ুন
শাহরুখের ‘কিং’-এ অভিষেকের নতুন রূপ, আসছে বড় ধামাকা

শাহরুখের ‘কিং’-এ অভিষেকের নতুন রূপ, আসছে বড় ধামাকা

 

জসীম উদ্দীন বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (মরণোত্তর, ১৯৭৮) ভূষিত হন। 

এদিকে ফরিদপুরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকাল ১০টায় কবির বাড়ির আঙ্গিনায় জেলা প্রশাসন ও জসিম ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। 

এর আগে, কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন। 

ফরিদপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিন্টু বিশ্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন, জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল জলিল, কবিপুত্র খুরশিদ আনোয়ার প্রমুখ।

এ সময় কবিকে স্মরণীয় করে রাখতে তার গল্প, কবিতা, উপন্যাস চর্চার তাগিদ দেন বক্তারা। পরে কবির রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

মন্তব্য
স্বরণ

সাহিত্যিক সমরেশ বসুর প্রয়াণ দিবস আজ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সাহিত্যিক সমরেশ বসুর প্রয়াণ দিবস আজ
সংগৃহীত ছবি

সমরেশ বসু ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক। তার জন্মনাম সুরথনাথ বসু, কিন্তু সমরেশ বসু নামেই লেখক পরিচিতি সমধিক। তিনি কালকূট ও ভ্রমর ছদ্মনামেও উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচনা করেছেন। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে।

১৯২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহন করেন সমরেশ বসু। তিনি ১৯৮০ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ (আজকের দিনে) তিনি মারা যান।

তার শৈশব কাটে বাংলাদেশের বিক্রমপুরে আর কৈশোর কাটে ভারতের কলকাতার উপকণ্ঠ নৈহাটিতে।

বাবার নাম মোহিনীমোহন বসু, মা শৈবালিনী বসু। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় তার জীবন ছিল পরিপূর্ণ। তিনি একসময় মাথায় ফেরি করে ডিম বেচতেন।

১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ইছাপুর বন্দুক কারখানায় চাকরি করেছেন সমরেশ বসু।

এই সময়পর্বের মধ্যেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে নিত্য ও আমৃত্যু ক্রিয়াশীল লেখকের নাম সমরেশ বসু। 

দেবেশ রায় তার মৃত্যুতে লেখা রচনাটির শিরোনামই দিয়েছিলেন, 'জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি লেখক এবং পেশাদার লেখক' (প্রতিক্ষণ, ৫ম বর্ষ, ১৭ সংখ্যা, ২–১৬ এপ্রিল ১৯৮৮)। লিখেছিলেন, 'তিনি আমাদের মতো অফিস-পালানো "কেরানি লেখক" ছিলেন না, যাঁদের সাহস নেই লেখাকে জীবিকা করার অথচ ষোল আনার ওপর আঠারো আনা শখ আছে লেখক হওয়ার।'

১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইছাপুরের বন্দুক ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন।

ট্রেড ইউনিয়ন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এ কারণে তাকে ১৯৪৯-৫০ সালে জেলও খাটতে হয়। জেলখানায় তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘উত্তরঙ্গ’ রচনা করেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

কালকূট মানে 'তীব্র বিষ'। এটি ছিল তার ছদ্মনাম। বহমান সমাজ থেকে বাইরে গিয়ে একান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন আর সে অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন ভ্রমণধর্মী উপন্যাস। হিংসা, মারামারি আর লোলুপতার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে যে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তিনি অমৃতের সন্ধান করেছেন। তাই কালকূট নাম ধারণ করে হৃদয়ের তীব্র বিষকে সরিয়ে রেখে অমৃত মন্থন করেছেন উপন্যাসের মধ্য দিয়ে।

লেখকের প্রকৃত নাম ছিল সুরথনাথ বসু। "সমরেশ" নাম দিয়েছিলেন তার শ্যালক, দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়। আজীবন সাহিত্যসৃষ্টি করে গিয়েছেন সেই নামেই। প্রথম উপন্যাস "নয়নপুরের মাটি"। যদিও গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ছিল "উত্তরঙ্গ"। লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন, তার কোনো তুলনা নেই। তার নিজের জীবনই আরেক মহাকাব্যিক উপন্যাস।

'চিরসখা' নামের প্রায় ৫ লাখ শব্দের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু। ছোটদের জন্যে তার সৃষ্ট গোয়েন্দা গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। গোগোলকে নিয়ে বহু ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যা শিশুসাহিত্য হিসেবে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গোগোলের দুটি কাহিনি গোয়েন্দা গোগোল ও গোগোলের কীর্তি নামে চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। গোয়েন্দা গোগোলের পাশাপাশি বড়দের জন্য অশোক ঠাকুর নামক একটি গোয়েন্দা চরিত্র তিনি সৃষ্টি করেন। সমরেশ বসু প্রণীত উপন্যাসের সংখ্যা ১০০।

১৯৫৯ ও ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। কালকূট ছদ্মনামে লেখা "শাম্ব" উপন্যাসের জন্য ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

সমরেশ বসু ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ (আজকের দিনে) মারা যান। মৃত্যুকালেও তার লেখার টেবিলে ছিল দশ বছরের অমানুষিক শ্রমের অসমাপ্ত ফসল শিল্পী রামকিংকর বেইজের জীবনী অবলম্বনে উপন্যাস দেখি নাই ফিরে। এই উপন্যাসের চিত্রাঙ্কন করেন প্রচ্ছদ শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য।

কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় সমরেশ বসুর ভক্ত ছিলেন। সমরেশ বসুর প্রয়াণের পর তিনি একটি কবিতা লেখেন - দেখি নাই ফিরে - সমরেশদার স্মৃতিতে । তাতে শক্তি লিখেছেন -

"দেখি নাই ফিরে-তুমি লিখেছিলে।
কিছু দেখা যায়?
এখন কি দেখতে পারো আমরা কীরকমভাবে বেঁচে আছি
প্রতিটি দরজায় যদি কড়া নাড়ি, তুমি বুঝতে ঠিক-
মন ভালো নেই বলে ছেলেটা এসেছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ