রাজধানীর মুগদা ও খিলগাঁও এলাকায় পৃথক ঘটনায় পাঁচ কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। এজাহারে নাম থাকা মূল চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অনত একজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
রাজধানীর মুগদা ও খিলগাঁও এলাকায় পৃথক ঘটনায় পাঁচ কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। এজাহারে নাম থাকা মূল চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অনত একজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মুগদা ও খিলগাঁও থানা পুলিশ কালের কণ্ঠকে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
গ্রেপ্তার চারজন হলেন জব্বার (৪০), পিন্টু চন্দ্র দাস, সিয়াম (১৮) ও আলামিন (২৮)।
পুলিশের তথ্য মতে, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার চারজন দোষ স্বীকার করেছেন। তাঁদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে আরো আট জেলায় পাঁচজনকে ধর্ষণ এবং পাঁচজনকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মুগদা থানার ওসি সাজেদুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, ভুক্তভোগী তিন কিশোরীর পরিবারের পৃথক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মূল তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান।
খিলগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) ইসমাইল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ধর্ষণের পৃথক দুটি ঘটনায় পরিবার থেকে মামলা করা হয়। এর মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অন্যজন পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মুগদা থানাধীন এলাকায় গত ১৯ মার্চ ইফতারের পর নিজ বাসায় প্রতিবেশী জব্বার নামের এক ব্যক্তি ১২ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়। গত ১৮ মার্চ ১৩ বছরের অন্য এক কিশোরীকে পূর্বপরিচিত প্রতিবেশী পিন্টু চন্দ্র দাস ছাদে নিয়ে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এ সময় কিশোরীর বাবা ও মা দুজনই বাইরে ছিলেন। গত ১৮ মার্চ ১৫ বছরের কিশোরীকে তার পূর্বপরিচিত সিয়াম নামের এক যুবক ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে খিলগাঁও থানা এলাকায় ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার এজাহারে বলা হয়, পাশের বাসার পূর্বপরিচিত আলিফ সিয়াম ফুসলিয়ে ১৫ বছরের ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাসা থেকে নিয়ে যান তিনি। এ ঘটনায় কিশোরীর পরিবার থানায় অভিযোগ করে। এতে বলা হয়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কিশোরীকে ফুসলিয়ে ওই যুবক ধর্ষণ করেন। এ ছাড়া গতকাল ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় একই বাসার ভাড়াটিয়া আলামিন ১১ বছরের এক কন্যাশিশুকে বাথরুমে নিয়ে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০টায় একজন, সকাল ১১টায় দুজন এবং দুপুর পৌনে ১২টায় দুজন কিশোরীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আনা হয়। তাদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়।’
আরো ৫ জনকে ধর্ষণ : আরো আট জেলায় পাঁচজনকে ধর্ষণ এবং পাঁচজনকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় পৃথক মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
তাদের মধ্যে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় কিশোরীকে ১৮ দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানার পর গতকাল কুড়িগ্রাম ক্যাম্প সেনাবাহিনীর একটি দল অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী কিশোরীকে উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে দিয়েছে।
সেনাবাহিনী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলায় গোকুণ্ডা ইউনিয়নের চড়গকুণ্ডা গ্রামের ফজলুল হক (৪৮) গত ২ মার্চ কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের মধ্য সুলতান মাহমুদ গ্রামের এক কিশোরীকে অপহরণ করে নিয়ে যান। কিশোরীকে ১৮ দিন ধরে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করে রাখার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী কিশোরী অভিযোগ করে বলে, ‘ফজলুল হক ও তার স্ত্রী আমাকে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দিয়ে আসছে অনেক দিন ধরে। রাজি না হওয়ায় তারা আমাকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর জোরপূর্বক ধর্ষণ করে ভিডিও করে রাখে। কাউকে এ কথা জানালে ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ : বগুড়ার ধুনট উপজেলায় নববিবাহিত কিশোরী বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মা বাদী হয়ে ছেলে সুজন মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগীর বড় ভাইকে গতকাল গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সুজন মণ্ডল উপজেলার গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের চুনিয়াপাড়া আশ্রয়ণপল্লীর বাসিন্দা। গত বুধবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে।
চাচার বিরুদ্ধে ভাতিজি ধর্ষণের অভিযোগ : কুমিল্লার চান্দিনায় নারী এনজিওকর্মীকে যৌন নির্যাতনের রেশ কাটতে না কাটতে এবার চাচার বিরুদ্ধে ১১ বছরের আপন ভাতিজিকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। টাকার লোভ দেখিয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীকে এক বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আবু সাঈদের (২১) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় চান্দিনা থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর মা।
আট বছরের শিশুকে ধর্ষণ : রাজশাহীর বাঘায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা করা হয়েছে। গত বুধবার উপজেলার চকছাতারী গ্রামের জয় হোসেন (১৮) শিশুটিকে বাড়িতে একা পেয়ে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
যুবককে পিটুনি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে আব্দুল খালেদ (২৫) নামের এক যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গুরুতর আহত ওই যুবক এখন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গত বুধবার রাতে উপজেলার বিটঘর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আটক খালেদ বিটঘর গ্রামের আনিছ মিয়ার ছেলে।
মুয়াজ্জিন গ্রেপ্তার : শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে হায়াতুল ইসলাম (২৬) নামের একজন মুয়াজ্জিনকে গত বুধবার রাতে ফুলপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে গ্রেপ্তার করেছে ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানা পুলিশ। গতকাল তাঁকে ময়মনসিংহ আদালতে পাঠানো হয়।
লক্ষ্মীপুরে দুই শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা, গ্রেপ্তার ২ : লক্ষ্মীপুরে পৃথক স্থানে ছয় বছর বয়সী দুই শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় মনির হোসেন ও রিপন হোসেন নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল সদর মডেল থানা ও রায়পুর থানা পুলিশ তাঁদের লক্ষ্মীপুর আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাঁদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
মাদরাসাছাত্র আটক : সিরাজগঞ্জের তাড়াশে শিশু ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ১২ বছর বয়সী এক মাদরাসাছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। আটক ওই কিশোর উপজেলার দেশিগ্রাম ইউনিয়নের আড়ংগাইল গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা ও আড়ংগাইল দাখিল মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
বৃদ্ধ গ্রেপ্তার : সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ৯ বছরের মাদরাসাছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ৬৫ বছর বয়সী হাজি আব্দুস সালামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উপজেলার কামারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন আমাদের প্রতিনিধিরা]
সম্পর্কিত খবর
ঢাকার চকবাজার ও কেরানীগঞ্জে গতকাল শুক্রবার ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে আরো দুজন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চকবাজার চম্পাতলী সোয়ারীঘাট এলাকায় এক ছিনতাইকারী নিহত হয়।
চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, কেরানীগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় ছিনতাই করার সময় স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দেয়। এ সময় ছিনতাইকারী দলের এক সদস্য পালিয়ে যায়। অন্য তিনজন নদীতে ঝাঁপ দেয়। তারা সাঁতার কেটে চকবাজার চম্পাতলী ঘাটে এলে স্থানীয় জনতা তাদের পিটুনি দেয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. আবুল খায়ের বলেন, সিআইডির সহযোগিতায় জানা গেছে, নদীর এপারে মারা যাওয়া একজনের নাম আসিফ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কেরানীগঞ্জে পিটুনিতে একজন নিহত : গণপিটুনি দিয়ে বুড়িগঙ্গা পানিতে ফেলে দেওয়ার পর হাসান মাঝি নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে বরিশুর নৌ পুলিশ। নিহত হাসান বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সুলতানি গ্রামের মানিক মাঝির ছেলে।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জিনজিরা নামাবাড়ি এলাকায় নাদু ব্যাপারীর ঘাট থেকে লাশটি উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বরিশুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোক্তার হোসেন জানান, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করি। সুরতহালের সময় লাশের গায়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গণপিটুনির একটা ঘটনার কথা শুনেছি তবে কেউ সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় কৃষকের আলু রাখছেন না হিমাগার মালিকরা। কারসাজির মাধ্যমে নামে-বেনামে, আত্মীয়-স্বজন ও পরিজনদের নামে আগে থেকেই স্লিপ কেটে রেখেছেন মালিকরা। ফলে কৃষক আলু রাখতে গেলে তাঁদের বলা হচ্ছে হিমাগারে জায়গা নেই। হিমাগারে জায়গা না থাকায় গুটিকয়েক ব্যবসায়ী ছাড়া কোনো ক্রেতা আলু কিনতেও পারছেন না।
এভাবেই সারা দেশে হিমাগার মালিকদের স্লিপ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন লাখো আলু চাষি। অবশ্য দিশাহারা কৃষকদের পাশে কৌশলে দাঁড়াচ্ছেন হিমাগারের কর্মকর্তারা। তাঁরা গোপনে বলে দিচ্ছেন, ‘অমুকের স্লিপ নেওয়া আছে, সেখানে আলু বিক্রি করতে পারবেন।’ আসলে অমুক ব্যক্তিটাই হলো হিমাগার মালিকের এজেন্ট।
কুড়িগ্রাম জেলা শহরের আলু চাষি মকবুল আলমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এ মৌসুমে আলু তোলা হয়েছে এক হাজার ২০০ বস্তা। কিন্তু তিনি আলু রাখতে পেরেছেন মাত্র ৬০০ বস্তা।
নাম প্রকাশ না করে এক চাষি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিটি কোল্ড স্টোরেজের মালিক নামে-বেনামে স্লিপ দিয়ে জায়গা দখল করে রাখেন। পরে হয় তাঁরা নিজেরাই আলু রাখেন, না হয় বস্তাপ্রতি বেশি দাম রাখেন। কারণ আলু রাখতে পারলেই লাভ। আবার এটা অঘোষিত নিয়ম হয়ে গেছে, হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা যতটুকু তার ১০ শতাংশ বস্তা মালিকরা নিজের নামে রাখে।’
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে আলুর ফলন ভালো হলেও হতাশ চাষিরা। একদিকে তাঁরা আলুর ভালো দাম পাচ্ছেন না, অন্যদিকে হিমাগারে সিন্ডিকেট করে নেওয়ার কারণে জায়গার সংকট। সব মিলিয়ে প্রান্তিক কৃষকের গলার কাঁটা মাঠের আলু। এবারে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে বাজারে আলুর দাম কমে গেছে। এ ছাড়া হিমাগারে কৃষকরা আলু রাখতে না পারার কারণে একই সঙ্গে বাজারে আলুর সরবরাহ বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতি কেজি আলু ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। অথচ তাঁদের উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৯-২০ টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন লক্ষামাত্রা এক কোটি ১৩ লাখ ৮৭ হাজার টন, যা গত অর্থবছরে ছিল এক কোটি ৯ লাখ ৬৫ হাজার টন।
আলুর কম দামের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবেন হিমাগার মালিকরা। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক কেজি আলু যেখানে রাখতে হিমাগারে খরচ হয় ৪.৫ থেকে ৬ টাকা, সেই আলু রাখার জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ৬.৭৫ টাকা। এর পরও হিমাগারে জায়গা পাচ্ছেন না কৃষক। কারসাজির মাধ্যমে হিমাগার ভরে গেছে দেখিয়ে কম দামে আলু কিনছেন মূলত হিমাগার মালিকরা। এসব আলু ক্রয়মূল্যসহ তিন মাস পরেই অফ সিজনে ন্যূনতম ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারবেন তাঁরা। অথচ হিমাগার মালিকদের সব ধরনের খরচ মিলিয়ে মোট খরচ হবে ২২ থেকে ২৫ টাকা। আর যদি অফ সিজনে আলুর দাম আরো বেশি ওঠে তাহলে হিমাগার মালিকরা লালে লাল হবেন।
সরেজিমনে রংপুর বিভাগের একাধিক আলু হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, হিমাগারগুলোর সামনে সারি সারি আলুভর্তি বস্তা। তবে হতাশা কৃষকের মুখে। তার অন্যতম প্রধান কারণ কৃষকরা তাঁদের প্রয়োজন মতো আলু হিমাগারে রাখতে পারছেন না। ফলে তাঁদের বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী মারুফ আহমেদ বলেন, ‘হিমাগারগুলোর মধ্যে এখনো কিছু জায়গা খালি আছে। কিন্তু তারা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম কমানোর জন্য কূটকৌশল করছেন এবং এই সুবাদে তাঁরা কিছু মাল কিনে কোল্ড স্টোরেজে কম্পানির নামে মাল রাখার ধান্দা করছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখনো ৬.৭৫ পয়সা ভাড়া মানি না। সামনে বড়সড় আন্দোলনে যাব।’
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাবর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ম্যানেজার শামীম আল মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কোল্ড স্টোরেজের ধারণক্ষমতা ১১ হাজার মেট্রিক টন, যা পুরোপুরি বুকিং হয়েছে। আমরা সবাইকে স্লিপ দিয়েছি। কে কৃষক কে ব্যবসায়ী আমরা তা দেখিনি।’
মোস্তফা হিমাগারের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কুড়িগ্রামের চারটি হিমাগারের মোট আলু সংরক্ষণক্ষমতা ৪৮ হাজার টন। কিন্তু এ বছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেককে আলু ফেরত নিয়ে যেতে হচ্ছে।’
রাজধানীর মিরপুরে পল্লবী এলাকায় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সেলিম (৩৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। নিহত সেলিম পোশাকের কারচুপির কারখানায় কাজ করতেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেলিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিক্যালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. ফারুক বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহতের আত্মীয় আশিকুর রহমান জানান, গতকাল ইফতারের পর সেলিম বাড়ির পাশে ওয়াপদা বিল্ডিংয়ের পাশের মাঠে যান। সেখানে শত্রুতার জেরে সেলিমকে কুপিয়ে ফেলে রাখা হয়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের খালা ইয়াসমিনের ভাষ্য, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী পারভিন, রনি, জনি, সীমা, রানীসহ আরো বেশ কয়েকজন শত্রুতার জেরে সেলিমকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
নিহত সেলিম এক সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুর-১১ পল্লবীর বিহারি ক্যাম্প ওয়াপদা কলোনি বিল্ডিংয়ে থাকতেন। ঘটনার পর ঘটনাস্থলে যান পুলিশ কর্মকর্তারা।
পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে গেছেন।
রায়পুরায় আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে গুলি, নিহত ২ : রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই প্রবাসফেরত ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক নারীসহ চারজন আহত হয়েছে। গতকাল ভোরে উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন মোহিনীপুর এলাকার খোরশেদ মিয়ার ছেলে আমিন মিয়া ও আব্দুল বারিকের ছেলে বাশার মিয়া।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মোহিনীপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম ও চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সামসু মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। ছয় মাস আগে সংঘর্ষের পর সালামের অনুসারীরা এলাকা ছেড়ে পাশের একটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে তারা বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিলে সামসু মেম্বারের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সালামের অনুসারী আমিন ও বাশার মারা যান।
নিহত আমিনের বাবা খোরশেদ মিয়ার অভিযোগ, ‘সামসু মেম্বারের হামলা ও নির্যাতনের ভয়ে আমরা গ্রাম ছেড়েছিলাম। ঈদের আগে বাড়ি ফিরতে গেলে তারা হামলা চালায়। আমার ছেলের বাঁ পায়ে গুলি করে এবং শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। এ সময় আমার স্ত্রী আহত হয়।’
বাশারের স্বজনরা জানায়, ঘটনার আগে রাতে সামসু মেম্বারের অনুসারীদের মধ্যে দুজন হামলা করতে এসে অস্ত্রসহ আটক হয়। পরে তাদের ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরই ভোরে সালামের অনুসারীদের ওপর হামলা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাশার মারা যান।
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাবেয়া সুলতানা জানান, মৃত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়। আমিনের বাঁ পায়ে এবং বাশারের বুক, পাসহ শরীরে গুলির আঘাত ছিল।
এ বিষয়ে চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সামসু মিয়া বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় আমার পক্ষের তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। প্রতিপক্ষের দুজন নিহত হয়েছে বলে শুনেছি।’
রায়পুরা থানার ওসি আদিল মাহমুদ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনো নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি।