‘দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০২৪’ পাচ্ছেন ২০ গুণীজন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
‘দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০২৪’ পাচ্ছেন ২০ গুণীজন
সংগৃহীত ছবি

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা কাজ করছেন তাদের সম্মানীত করতে বিগত বছরের মতো এবারও ‘দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০২৪’ প্রদান করবে দেশ পাবলিকেশন্স। এ লক্ষ্যে পাণ্ডুলিপি আহ্বান করেছিল দেশ। এ আহ্বানে দুই শতাধিক পাণ্ডুলিপি জমা হয়। এরই মধ্য থেকে জুরি বোর্ডের মাধ্যমে প্রতিটি বিষয়ে দুই প্রজন্মের দুজন করে ১০ বিষয়ে ২০ জনকে চূড়ান্ত নির্বাচন করা হয়।

 

সম্প্রতি ‘দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০২৪’ ঘোষণা করা হয়। এ বছর পুরস্কারের জন্য বিভিন্ন শাখায় মনোনীত হয়েছেন ২০ গুণীজন। বিজ্ঞপ্তিতে একজন করে দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও পরে ১০টি বিষয়ে ২০ গুণীজনকে পুরস্কার দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। এবার দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার দেওয়া হবে উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, গবেষণা, মৌলিক প্রবন্ধ, অনুবাদ, থ্রিলার, রহস্য উপন্যাস, নাটক ও কিশোর উপন্যাস, শিশুতোষ গল্প এবং ছড়া।

এবার যারা পুরস্কার পাচ্ছেন সেই গুণীজনরা হলেন— ‘অর্ধশতদল' কবিতার পাণ্ডুলিপির জন্য পুরস্কার পেয়েছেন কবি রহমান হেনরী। ‘হাতিমের শহর’-এর পাণ্ডুলিপির জন্য ফেরদৌস মাহমুদ। প্রবন্ধে পেয়েছেন দুই প্রজন্মের দুই প্রবন্ধকার ‘কবিতা নিয়ে আলাপ’ তারেক রেজা, ‘কথাসাহিত্যে আন্তর্জাতিকতা’ শাহমুব জুয়েল। কথাসাহিত্য বিভাগে উপন্যাস ‘বাউল’ সৈয়দা আঁখি হক, ‘হেরেমের আধেক চাঁদ’ মাইনুল ইসলাম মানিক।
কথাসাহিত্য ছোটগল্প ‘পরিযায়ী প্রাণ’ রুমা বসু, ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ছোটগল্প পাণ্ডুলিপির জন্য নূরে জান্নাত। গবেষণায় পেয়েছেন দুই গবেষক ‘গোয়ালগ্রাম গণহত্যা’ পাণ্ডুলিপির জন্য ইমাম মেহেদী এবং ‘চল্লিশের দশকের লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতি’ পাণ্ডুলিপির জন্য বঙ্গ রাখাল। অনুবাদ সাহিত্য সাকার বেইট, মূল : আইজাক আসিমভ, অনুবাদ : সোহরাব সুমন ও প্রিটি লিটল কিলার, মূল : সিডনি অ্যালান, অনুবাদ : সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি। 

বর্তমান পাঠকের আগ্রহ থ্রিলারে। তাই এবার নতুন যুক্ত করা হয়েছে এই বিভাগ।

থ্রিলার উপন্যাস ‘কাজলরেখা রহস্য’ বিশ্বজিৎ দাস, ‘পরীতমা’ ফরিদুল ইসলাম নির্জন। এবার নাটকে পেয়েছেন দুই প্রজন্মের দুই নাট্যকার ‘একগুচ্ছ শ্রুতিনাটক’ স্বপন ভট্টাচার্য, ‘বুক পকেটে জীবন ও অন্যান্য নাটক’ আহমেদ তাওকীর। শিশুসাহিত্য কিশোর উপন্যাস ‘কুটিচাচার গোয়েন্দা অভিযান’ দীপু মাহমুদ ও ছোটগল্প ‘স্কুলে জাদুকর এসেছিল’ নুরুল ইসলাম বাবুল। ছড়া উপন্যাস ‘লাল বক সাদা বক’ মাসুম আওয়াল। ছড়ার পাণ্ডুলিপি ‘আলোর পাখি নাম জোনাকি’ দেওয়ান বাদল। 

সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রকাশক অচিন্ত্য চয়ন বলেন, ‘জানুয়ারিতে ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণবশত হয়নি। সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’ 

দেশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম ঘোষণা করে তিনি আরো বলেন, ‘চেতনায় ঐতিহ্য’— এ স্লোগান ধারণ করে সুনামের সঙ্গেই যুগ পেরিয়ে তেরো বছরে পদার্পণ করেছে ‘দেশ’। এ সময়ের মধ্যেই প্রকাশনাশিল্পে পাণ্ডুলিপির নান্দনিক পরিচর্যায় একটি স্বতন্ত্রধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের সহযাত্রী হতে আমাদের এ প্রয়াস। আগামী মাসে দেশ সাহিত্য উৎসবে মনোনীতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। দেশ পাবলিকেশন্স সব সময় তরুণদের নিয়ে কাজ করছে, আগামীতেও করতে চায়। আরেকটি বিষয় জানিয়ে রাখছি, আগে যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তাদের পুরস্কার চলতি বছরের সঙ্গে প্রদান করা হবে। সবাই পাশে থাকবেন আশা করছি। দেশ এগিয়ে দেতে চায় আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনাদের পরামর্শ আমাদের পথ চলাকে আরো সুগম করবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্বরণ

পল্লীকবির ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
পল্লীকবির ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
সংগৃহীত ছবি

পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৪ মার্চ)। ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পৈতৃক নিবাস একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। পিতা আনসারউদ্দীন মোল্লা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক।

 

পল্লীকবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর কমলাপুরে তাঁর বাড়িতে বক্তৃতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আয়োজিত এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি শাহজাহান আবদালী।  আলোচনা সভায় পল্লীকবির কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা করেন দেশের নবীন-প্রবীণ কবি-সাহিত্যিকসহ শিক্ষাবিদগণ।

আরো পড়ুন
গলায় ছুরি ধরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

গলায় ছুরি ধরে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

 

শৈশবে ফরিদপুর হিতৈষী স্কুলে জসীমউদ্দীনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়।

তারপর ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ ও বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি এমএ পাস করেন।

জসীমউদ্দীনের কর্মজীবন শুরু হয় পল্লীসাহিত্যের সংগ্রাহক হিসেবে। স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে দীনেশচন্দ্র সেনের আনুকূল্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক এ কাজে তিনি নিযুক্ত হন। এমএ পাস করার পর থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত তিনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ীর গবেষণা সহকারী ছিলেন।

আরো পড়ুন
আলু বোঝাই ট্রাকের চাপায় নিহত ১

আলু বোঝাই ট্রাকের চাপায় নিহত ১

 

১৯৩৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেকচারার পদে যোগদান করেন। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত চাকরি করার পর ১৯৪৪ সাল থেকে তিনি প্রথমে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকার এবং পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে এখান থেকে ডেপুটি ডাইরেক্টর হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন।

জসীমউদ্দীনের কবিত্ব শক্তির প্রকাশ ঘটে ছাত্রজীবনেই। কলেজজীবনে ‘কবর’ কবিতা রচনা করে তিনি বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তার এ কবিতাটি প্রবেশিকা বাংলা সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়।

তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাখালী’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। তার প্রধান গ্রন্থগুলো হলো: নকশী কাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট, রঙিলা নায়ের মাঝি, মাটির কান্না, সুচয়নী, পদ্মা নদীর দেশে, ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে, পদ্মাপার, বেদের মেয়ে, পল্লীবধূ, গ্রামের মায়া, ঠাকুর বাড়ির আঙিনায়, জার্মানির শহরে বন্দরে, বাঙালির হাসির গল্প, ডালিম কুমার ইত্যাদি।

তার নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যটি দ্য ফিল্ড অব অ্যামব্রয়ডার্ড কুইল্ট এবং বাঙালির হাসির গল্প গ্রন্থটি ফোক টেলস অব ইস্ট পাকিস্তান নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। বাংলা কবিতার ধারায় জসীম উদ্দীনের স্থানটি বিশিষ্ট। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ও লোকজীবন জসীম উদ্দীনের কবিতায় নতুন রূপ লাভ করেছে। তার কবিতায় দেশের মাটির সাক্ষাৎ উপলব্ধি ঘটে। এ জন্য ‘পল্লীকবি’ হিসেবে তার বিশেষ ও স্বতন্ত্র পরিচিতি রয়েছে।

আরো পড়ুন
শাহরুখের ‘কিং’-এ অভিষেকের নতুন রূপ, আসছে বড় ধামাকা

শাহরুখের ‘কিং’-এ অভিষেকের নতুন রূপ, আসছে বড় ধামাকা

 

জসীম উদ্দীন বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে (মরণোত্তর, ১৯৭৮) ভূষিত হন। 

এদিকে ফরিদপুরে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকাল ১০টায় কবির বাড়ির আঙ্গিনায় জেলা প্রশাসন ও জসিম ফাউন্ডেশনের আয়োজনে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। 

এর আগে, কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন। 

ফরিদপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিন্টু বিশ্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন, জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যা, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল জলিল, কবিপুত্র খুরশিদ আনোয়ার প্রমুখ।

এ সময় কবিকে স্মরণীয় করে রাখতে তার গল্প, কবিতা, উপন্যাস চর্চার তাগিদ দেন বক্তারা। পরে কবির রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

মন্তব্য
স্বরণ

সাহিত্যিক সমরেশ বসুর প্রয়াণ দিবস আজ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সাহিত্যিক সমরেশ বসুর প্রয়াণ দিবস আজ
সংগৃহীত ছবি

সমরেশ বসু ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক। তার জন্মনাম সুরথনাথ বসু, কিন্তু সমরেশ বসু নামেই লেখক পরিচিতি সমধিক। তিনি কালকূট ও ভ্রমর ছদ্মনামেও উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচনা করেছেন। তার রচনায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, শ্রমজীবী মানুষের জীবন এবং যৌনতাসহ বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সুনিপুণ বর্ণনা ফুটে উঠেছে।

১৯২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর জন্মগ্রহন করেন সমরেশ বসু। তিনি ১৯৮০ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ (আজকের দিনে) তিনি মারা যান।

তার শৈশব কাটে বাংলাদেশের বিক্রমপুরে আর কৈশোর কাটে ভারতের কলকাতার উপকণ্ঠ নৈহাটিতে।

বাবার নাম মোহিনীমোহন বসু, মা শৈবালিনী বসু। বিচিত্র সব অভিজ্ঞতায় তার জীবন ছিল পরিপূর্ণ। তিনি একসময় মাথায় ফেরি করে ডিম বেচতেন।

১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ইছাপুর বন্দুক কারখানায় চাকরি করেছেন সমরেশ বসু।

এই সময়পর্বের মধ্যেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। বিচিত্র বিষয় এবং আঙ্গিকে নিত্য ও আমৃত্যু ক্রিয়াশীল লেখকের নাম সমরেশ বসু। 

দেবেশ রায় তার মৃত্যুতে লেখা রচনাটির শিরোনামই দিয়েছিলেন, 'জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি লেখক এবং পেশাদার লেখক' (প্রতিক্ষণ, ৫ম বর্ষ, ১৭ সংখ্যা, ২–১৬ এপ্রিল ১৯৮৮)। লিখেছিলেন, 'তিনি আমাদের মতো অফিস-পালানো "কেরানি লেখক" ছিলেন না, যাঁদের সাহস নেই লেখাকে জীবিকা করার অথচ ষোল আনার ওপর আঠারো আনা শখ আছে লেখক হওয়ার।'

১৯৪৩ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইছাপুরের বন্দুক ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন।

ট্রেড ইউনিয়ন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। এ কারণে তাকে ১৯৪৯-৫০ সালে জেলও খাটতে হয়। জেলখানায় তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘উত্তরঙ্গ’ রচনা করেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

কালকূট মানে 'তীব্র বিষ'। এটি ছিল তার ছদ্মনাম। বহমান সমাজ থেকে বাইরে গিয়ে একান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন আর সে অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন ভ্রমণধর্মী উপন্যাস। হিংসা, মারামারি আর লোলুপতার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকে যে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে তিনি অমৃতের সন্ধান করেছেন। তাই কালকূট নাম ধারণ করে হৃদয়ের তীব্র বিষকে সরিয়ে রেখে অমৃত মন্থন করেছেন উপন্যাসের মধ্য দিয়ে।

লেখকের প্রকৃত নাম ছিল সুরথনাথ বসু। "সমরেশ" নাম দিয়েছিলেন তার শ্যালক, দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়। আজীবন সাহিত্যসৃষ্টি করে গিয়েছেন সেই নামেই। প্রথম উপন্যাস "নয়নপুরের মাটি"। যদিও গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ছিল "উত্তরঙ্গ"। লেখক হিসেবে সমরেশ আমৃত্যু যে লড়াই করেছেন, তার কোনো তুলনা নেই। তার নিজের জীবনই আরেক মহাকাব্যিক উপন্যাস।

'চিরসখা' নামের প্রায় ৫ লাখ শব্দের বিশাল উপন্যাসে সেই লড়াইকে স্মরণীয় করে রেখেছেন তারই পুত্র নবকুমার বসু। ছোটদের জন্যে তার সৃষ্ট গোয়েন্দা গোগোল অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। গোগোলকে নিয়ে বহু ছোটগল্প ও উপন্যাস লিখেছেন যা শিশুসাহিত্য হিসেবে সমান জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গোগোলের দুটি কাহিনি গোয়েন্দা গোগোল ও গোগোলের কীর্তি নামে চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। গোয়েন্দা গোগোলের পাশাপাশি বড়দের জন্য অশোক ঠাকুর নামক একটি গোয়েন্দা চরিত্র তিনি সৃষ্টি করেন। সমরেশ বসু প্রণীত উপন্যাসের সংখ্যা ১০০।

১৯৫৯ ও ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। কালকূট ছদ্মনামে লেখা "শাম্ব" উপন্যাসের জন্য ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

সমরেশ বসু ১৯৮৮ সালের ১২ মার্চ (আজকের দিনে) মারা যান। মৃত্যুকালেও তার লেখার টেবিলে ছিল দশ বছরের অমানুষিক শ্রমের অসমাপ্ত ফসল শিল্পী রামকিংকর বেইজের জীবনী অবলম্বনে উপন্যাস দেখি নাই ফিরে। এই উপন্যাসের চিত্রাঙ্কন করেন প্রচ্ছদ শিল্পী বিকাশ ভট্টাচার্য।

কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় সমরেশ বসুর ভক্ত ছিলেন। সমরেশ বসুর প্রয়াণের পর তিনি একটি কবিতা লেখেন - দেখি নাই ফিরে - সমরেশদার স্মৃতিতে । তাতে শক্তি লিখেছেন -

"দেখি নাই ফিরে-তুমি লিখেছিলে।
কিছু দেখা যায়?
এখন কি দেখতে পারো আমরা কীরকমভাবে বেঁচে আছি
প্রতিটি দরজায় যদি কড়া নাড়ি, তুমি বুঝতে ঠিক-
মন ভালো নেই বলে ছেলেটা এসেছে।

মন্তব্য

নারী তুমি জীবনের ধারক, সর্বংসহা

সোফানা হোসেন
সোফানা হোসেন
শেয়ার
নারী তুমি জীবনের ধারক, সর্বংসহা
সংগৃহীত ছবি

ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে আসছি, আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর তাঁর সঙ্গী হিসেবে হাওয়া (রা.)-কে সৃষ্টি করেছেন। তবে আমার ভাবনায়  বারবার আসে, আদমকে সৃষ্টির পর স্রষ্টা হয়তো উপলব্ধি করেছিলেন,  পৃথিবীতে আরো উন্নত, আরো সংবেদনশীল এবং আরো শক্তিশালী স্বত্ত্বার উপস্থিতি প্রয়োজন। নারীরা শুধু সৃষ্টির অংশ নন, তারা সৃষ্টিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল চালিকাশক্তি বৈকি। পাখি থেকে শুরু করে মানুষ অবধি—জীবনের ধারক স্ত্রী প্রজাতিরা।

 

আমরা প্রায়শই নারীর ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করি। কিন্তু ইতিহাস কী বলে? ইতিহাসে নারীদের অসংখ্য ঘটনা আছে। মেরি কুরি বিজ্ঞানের ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তি যিনি দুটি ভিন্ন বিষয়ে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র একজন বিজ্ঞানী ছিলেন না, তিনি ছিলেন নারীশক্তির প্রতীক।

তার গবেষণা আজও চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অবদান রেখে চলেছে।

ইসলামের ইতিহাসও নারীদের অবদান ভুলে যায়নি। খাওলা বিনতে আল-আযওয়ার—একজন মহান মুসলিম যোদ্ধা, যিনি পুরুষ সৈনিকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন। যখন তার ভাই বন্দি হন, তখন তিনি পুরুষের পোশাক পরে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করেন এবং শত্রু বাহিনীকে পরাস্ত করেন।

ইসলামের ইতিহাসে নারীরা শুধু ঘর-সংসারে সীমাবদ্ধ ছিলেন না; তারা ছিলেন জ্ঞানী ও নেতৃত্বের প্রতীক।

আমরা নারীরা কতটা শক্তিশালী, তা যেন ভুলে না যাই। মনে রাখি, একজন সফল পুরুষের পেছনে যেমন তার মা-বাবা কিংবা জীবনসঙ্গিনীর সমর্থন থাকে, তেমনি একজন সফল নারীর গল্পেও বাবা-মা অথবা স্বামীর ভূমিকা অনস্বীকার্য।

কর্মক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা ও চ্যালেঞ্জ
আমাদের সমাজে কর্মজীবী নারীদের অবস্থান অনেকটাই অদৃশ্য পরীক্ষার মতো। প্রতিনিয়ত প্রমাণ করতে হয় যে আমরা যোগ্য, আমরা সক্ষম, আমরা মানিয়ে নিতে পারি।

১৬ বছরেরও বেশি সময়ের কর্পোরেট ক্যারিয়ারে আমি দেখেছি, এই পথচলাটা সহজ নয়। তবে একবার যদি নিজের লক্ষ্য  স্থির করে নেওয়া যায়, তবে সবকিছু সম্ভব।

আমরা ছোটবেলা থেকেই শিখি—স্কুলে প্রথম হতে হবে, পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো করতে হবে। কর্মক্ষেত্রেও সেই দৌড় থামে না। তবে প্রশ্ন হলো—আমরা কী জন্য ছুটছি? কিসের জন্য এই প্রতিযোগিতা?

একজন নারী হিসেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়। আপনি হয়তো কর্মজীবন শুরু করেছেন, কিন্তু সংসার বা সন্তান আসার পর সবকিছু বদলে গেছে। হয়তো সমাজের চাপ আপনাকে বলে দেয় 'তোমার তো এখন সংসারে মন দেওয়া উচিত'। কিন্তু নিজের অগ্রাধিকার আপনি ছাড়া কেউ ঠিক করতে পারবে না।

আপনি কী চান? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাটা সবচেয়ে জরুরি। একজনকে দেখলাম প্রতি বছর পদোন্নতি পাচ্ছেন, কেউ কেউ প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে বেতন দ্বিগুণ করছেন। এগুলো আপনার ধ্যান-জ্ঞান হলে অন্য বিষয়। কিন্তু অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করতে গিয়ে এসব প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়া আপনার শান্তিই নষ্ট করবে। 

আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন নারী যদি চায় তাহলে সে একইসঙ্গে একজন দক্ষ কর্মী, আদর্শ মা, দায়িত্বশীল মেয়ে এবং সফল উদ্যোক্তা হতে পারে। তবে তার জন্য পরিকল্পনা থাকতে হবে, ধৈর্য রাখতে হবে এবং সবচেয়ে বড় কথা—নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে।

নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব
নারী হওয়া মানেই প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রমাণ করার দৌড়ে থাকা। কিন্তু এই দৌড়ে আমরা প্রায়শই নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভুলে যাই। পৃথিবীতে কেউ-ই সমস্যা ছাড়া চলতে পারেন না। কিন্তু একজন নারীকে তার দৈনন্দিন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে শরীর, মন ও আবেগগত পরিবর্তনগুলোর সঙ্গেও মানিয়ে নিতে হয়।

একজন পুরুষ কখনো পুরোপুরি বুঝতে পারবে না—পিরিয়ডজনিত অসুবিধা, সন্তান জন্মের পর হরমোন পরিবর্তন, ওজন বৃদ্ধির দুশ্চিন্তা, নিদ্রাহীন রাতের কষ্ট, কিংবা মেনোপজের প্রভাব। এগুলোর মধ্য দিয়েও একজন নারী নিজের কাজ, সংসার, সমাজের প্রত্যাশা সবকিছু সামলে নেয়।

তবে এই কঠিন পথচলায় নারীদের একে অপরের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। সহকর্মী নারীকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববেন না—বরং তাকে বন্ধু ভাবুন। আপনার জীবনে কোনো না কোনো সময় এমন কেউ আসবে যে আপনার পাশে দাঁড়াবে, আপনাকে বুঝবে। আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে চাপে থাকি, তাই নিজেদের পারস্পরিক সমর্থন দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সবার আগে নিজেকে ভালো রাখতে হবে—আপনার নিজের জন্য, আপনার পরিবারের জন্য।

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস 
প্রতি বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়। এর পেছনে লুকিয়ে আছে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস।

১৮৫৭ সালে নিউইয়র্কে সুতা কারখানার একদল নারী শ্রমিক মজুরি বৈষম্য, কর্মঘণ্টার নির্দিষ্টতা এবং অমানবিক কাজের পরিবেশের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন। এরপর ১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলনে ক্লারা জেটকিন প্রতি বছর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব দেন। ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়।

কিন্তু নারী দিবস কি শুধুই একটি দিন? এই দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে সমান অধিকার এখনো পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। নারীরা এখনো কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হন, গৃহস্থালির দায়িত্ব এককভাবে পালন করেন, সামাজিক ও পারিবারিক চাপ সামলান। বাংলাদেশে ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন: নারী ও কন্যার উন্নয়ন”। এটি শুধুই একটি স্লোগান নয়—এটি আমাদের বাস্তবতা গঠনের আহ্বান। নারীরা যেন তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন, যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারীরা অযাচিত-অনাকাঙ্ক্ষিত বাধার মুখোমুখি না হন, সেটি নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

এখন সময় এসেছে, আমরা নারীরা নিজেদের শক্তি ও সক্ষমতাকে উপলব্ধি করি।

* যখন আপনি কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্বে থাকেন-নিজের সিদ্ধান্তে আত্মবিশ্বাসী হোন।
* যখন আপনি সংসার সামলান—নিজের কাজের মূল্য সম্পর্কে সচেতন হোন।
* যখন আপনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন—নিজেকে মনে করিয়ে দিন, আপনি পারেন|

নারী দিবস মানে কেবল ফুল আর শুভেচ্ছা বিনিময় নয়, এটি নারীর প্রতি শ্রদ্ধা, সমান অধিকারের দাবি এবং ভবিষ্যতের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া।
আমরা সবাই যদি নিজেদের অবস্থান থেকে নারীদের অধিকার, সমতা ও  ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করি, তাহলে আমাদের সমাজে নারীরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন, নিজেদের জায়গা তৈরি করতে পারবেন। কারণ নারী মানেই শক্তি, নারী মানেই সম্ভাবনা। 

kk  লেখক: সিনিয়র ম্যানেজার, এন্টারপ্রাইজ বিজনেস সল্যুশন, বাংলালিঙ্ক
 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

পৃথিবীতে ‘আঁচড়’ রেখে যেতে চান নজর-ই-জ্বিলানী

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
পৃথিবীতে ‘আঁচড়’ রেখে যেতে চান নজর-ই-জ্বিলানী
নজর-ই-জ্বিলানী

বিইউবিটির সিভিল ক্লাবের সেমিনারে একজন ভদ্রলোকের কথায় আমি একটু আটকে গেলাম। করপোরেট জগতের নানা সেমিনারে আমি বক্তাদের কথা শুনি। কাগজে টুকে নিই তাদের কথা। কিছু কিছু কথা কাগজে টুকে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না, সেগুলো মাথায় গেঁথে যায়।

আমি ভদ্রলোকের কথা শুনছিলাম। করপোরেট জগতের একজন মানুষ বাংলা, ইংরেজি থেকে শুরু করে আরবি সাহিত্যের রেফারেন্স দিয়েও রূপক ব্যবহার করে সম্পূর্ণ বক্তব্যকেই পরিষ্কার করে দিচ্ছেন দেখে আমি বেশ আশ্চর্য হলাম। বক্তব্যের একেবারে শেষ লাইনে ভদ্রলোক বললেন, ‘আমরা সবাই একদিন চলে যাব এর মধ্যে কোনো সন্দেহই নেই। কিন্তু যাওয়ার আগে সবাই যেন নিজের একটা আঁচড় পৃথিবীতে রেখে যাওয়ার চেষ্টা করি।
সবার হাততালির বাহ্বা দেওয়ার উচ্ছ্বাসিত সেই ইভেন্টে ভদ্রলোকের সাথে আমার পরিচয় হওয়ার সুযোগ হলো।’

নজর-ই-জ্বিলানী স্যার। বাংলাদেশের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা একজন অন্যতম সফল মানুষ। জীবনজুড়ে তিনি যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, তার যতটা সম্ভব তিনি রেখে যেতে চান পৃথিবীতে।

তারই ধারাবাহিকতায় স্যার তিনটি বই লিখেছেন। প্রথমটি, রোড ট্যু বিকামিং আ সিইও, দ্বিতীয় বইয়ের নাম, এক্সিকিউটিভ ট্যু এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং তৃতীয়টি, ফাউযান আজীম। মাঝে মাঝেই সেসব নিয়ে আলোচনা করা হয়। রোড ট্যু বিকামিং আ সিইও বইটি লেখার পেছনে স্যারের একটি আক্ষেপের গল্প আছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ চাকরির সিইও পর্যায়েই আমাদের পাশের দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশের আধিপত্য বেশি।
বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী বেশ ভালো অবস্থানে থাকলেও সিইও বা টপ লেভেলে বেশ কম। কেনো আমাদের এই গ্যাপ এবং কিভাবে আমরা সেটিকে পেরিয়ে যেতে পারি; সেসব বিবেচনায় স্যার বইটি লিখেছেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, স্যার তার ক্যারিয়ার শুরু করেন একজন এক্সিকিউটিভ হিসেবে। শেষ করেন এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে। এই সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতার যাত্রা দিয়ে পূর্ণ করা বই, এক্সিকিউটিভ ট্যু এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর।

আরো কিছু গুরুত্বপুর্ণ বিষয় আছে এই বইটিতে। যে যে যোগ্যতা থাকলে পেশাজীবনে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে চূড়ায় পৌঁছানো সম্ভব তাই দিয়ে বইটি সাজানো। ১২ মাসের জন্য ১২টি বিষয় নিয়ে লেখা। প্রতি মাসে এক একটি বিষয় নিয়ে পুরো মাস ধরে ওই বিষয়ের ওপর লেখা। উপন্যাসের মতো পড়ে শেষ করার জন্য এই বই নয়। প্রতিদিনের রুটিনের মতো লেখা পরে উপলব্ধি করে সেটি নিজের কর্মে প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে ৩৬৫ দিন শেষ হলে আবার শুরু করতে হবে। একজন মানুষের ত্রান্সফরমেশান আচমকা হয়ে যায় না। এর জন্য সময় দরকার। বইটা আত্মস্থ করলে ছাত্র, পেশাজীবী এমনকি মা-বাবারাও উপকৃত হবেন, এটা জেনে যে তাদের সন্তানদের কিভাবে লেখাপড়ার সাথে সাথে কোন কোন স্কিল শিখাতে হবে।

ফাওযান আজীম স্যারের সম্প্রতি প্রকাশিত বইটি তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সাফল্য দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে পেশাজীবনের সাফল্য এবং তৃতীয় অংশে আখিরাতের সাফল্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে লেখা। বইটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে জীবন এবং জীবিকা নিয়ে। জ্ঞান বিজ্ঞান ভূমধ্যসাগরের পূর্ব থেকে পশ্চিম পাড়ে যাওয়ার পর ইউরোপ ও আমেরিকা অভূতপূর্ব মনোনিবেশ করে উৎকর্ষ অর্জনে এবং তা করেও ফেলে। পশ্চিমাদের ধ্যান জ্ঞান হয়ে দাঁড়ায় মার্কেটিং নাম দিয়ে মানুষকে ঘরের বের ও টাকাকে পকেটের বের করা। আমরা এই টোপ গিলছি আর উপার্জন বাড়াতে জীবনকে অসহনীয় করে তুলছি। বিজ্ঞানের অসৎ ব্যবহার এবং আমাদের আধ্যাত্মিকতা থেকে সরে আসা সফলতার সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছে। সফলতা বলতে আজ শুধুই ধন সম্পদ আর চকমকে জেল্লা বুঝায়। এ পথ লালসার, লোভের যা শান্তি দিতে পারবে না। যে সাফল্যে শান্তি নাই তা কখনই সফলতা না। দুনিয়াবি জীবন এবং আধ্যাত্মিক জীবনে সাফল্যের বীজ বুনতে না পারলে জীবন সফল হবে না। ফাওযান আজীম একজন মানুষের উভয় জীবনে সফল হওয়ার নানা পরামর্শে সাজানো।

শান্ত-শিষ্ট মানুষটিকে দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি বেশ জ্ঞানের অধিকারী মানুষ। আমি সাধারণত অধিকাংশ জানাশোনা মানুষকেই দেখেছি তারা যেকোনো একটি বিষয়ে দক্ষ। জ্বিলানী স্যারকে আমি খুঁজে পেলাম একজন অন্যরকম মানুষ হিসেবে। যিনি একাডেমিক পড়ালেখা করেছেন ইংরেজি সাহিত্যে। ক্যারিয়ার গড়েছেন শুরুতেই ফার্মাসীর জগতে, এরপর গিয়েছে অটোমোবাইল খাতে, ক্যারিয়ার শেষ করেছেন ফুড এন্ড বেভারেজ জগতে। আমি মাঝে মাঝেই স্যারকে জিজ্ঞেস করি, এই ভিন্ন ভিন্ন সেক্টরে কাজের আগ্রহের পেছনে রহস্য কি স্যার? ভদ্রলোক হাসেন। ধানমন্ডির একটি কফিশপে প্রায়ই স্যারের সাথে আমার আড্ডা দেবার সুযোগ হয়। তিনি মুচকি হেসে বলেন, আমার চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোলাগে মিস্টার খশরু। যখন আমার কাছে মনে হয় এই খাতে আমার কাছে আর কোনো চ্যালেঞ্জ নেই, আমি তখন একেবারে ভিন্ন খাতের দিকে যাই। কফির কাপে চুমুক দিয়ে আমার শুধু আশ্চর্য হওয়া ছাড়া আমার আর তেমন কিছুই করার থাকে না।

মো. খশরু আহসান
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ