<p style="text-align:justify">‘কয় দিন ধরে ঠাণ্ডা বাতাস। খুব শীত লাগে। বাড়িতে মানুষের দেওয়া পাতলা দুটি কম্বল আছে। এই কম্বলে শীত যাইতে চায় না। স্বামী কাজকর্ম করতে পারে না। করলেও মানুষ দাম কম দেয়। ল্যাপ বানানোর ট্যাকা নাই। খুব কষ্ট হইতেছে। তাই সবাইরেই কইছিলাম একটা কম্বল দেয়ার জন্য। আমার চাওয়া পূরণ করছে এই ছেলেগুলো। অনেক মোটা একটা কম্বল দিছে। আর শীতে আমাগো স্বামী-স্ত্রীর কষ্ট হবে না। ছেলেগুলা খুব ভালো। এদের মঙ্গল হোক।’ এভাবেই শুভসংঘের কম্বল পেয়ে আবেগঘন কথাগুলো বলেন মাফিয়া খাতুন। ভূমিহীন মাফিয়া ও তার স্বামী ফনিস দম্পতি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস করেন।</p> <p style="text-align:justify">একই গ্রামের বাসিন্দা ক্যান্সারে আক্রান্ত ছাবদার হোসেন। সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার। অভাবের সংসার চালাতে অসুস্থ শরীরেও ভ্যানে যাত্রী পরিবহন করেন তিনি। তবে বেশিরভাগ দিন তাকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়। হাসপাতালে ভর্তি হলেই বাড়ি থেকে লেপ নিয়ে যান হাসপাতালে। এতে শীত নিবারণে লেপ ও কম্বলের কষ্টে রাত কাটে বাড়িতে থাকা পরিবারের অন্য সদস্যদের।</p> <p style="text-align:justify">আজ মঙ্গলবার শুভসংঘের কম্বল পেয়ে ছাবদার হোসেনের পরিবার খুব খুশি। ছাবদার হোসেন বলেন, অসুস্থ হয়ে শরীরটা ভালো নেই। এর ওপর শীতে পরিবারের লোকজন কষ্ট পাচ্ছিল। এই কম্বল পেয়ে কিছুটা হলেও পরিবারের শীতের কষ্ট দূর হলো।’</p> <p style="text-align:justify">মঙ্গলবার উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের মাফিয়া-ফনিস দম্পতি ও সাবদার হোসেনের মতো আরো ১৫টি দুস্থ ও অসহায় পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">উপজেলার অষ্টমীণীষা ইউনিয়নের বিশাকোল গ্রামের ৮০ বছর বয়সের বৃদ্ধ তাজু মোল্লা। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাড়ে স্ত্রী নিয়ে বসবাস তার। সন্তানরা থাকলেও কেউ দেখাশোনা করেন না। গ্রামের সচ্ছল ব্যক্তিদের কাছে কম্বল পাওয়ার জন্য নিয়মিত আবদার ছিল তার। অবশেষে শুভসংঘের সদস্যরা গত সোমবার বিশাকোল গ্রামে গিয়ে তাজু মোল্লার হাতে কম্বল তুলে দেন। এ দিন তাজু মোল্লা সহ ওই গ্রামের আরো ৯টি দুস্থ ও অসহায় পরিবারকে কম্বল পৌঁছে দেওয়া হয়।</p> <p style="text-align:justify">উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের বৃদ্ধ রহমত আলী। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন। এর ওপরে টিনের ঘরে বসবাস তার। শীত এলেই তিনি কাবু হয়ে পড়েন। এক লেপে শীত যায় না তার। তাই শুভসংঘের কম্বল পেয়ে এবছর তার শীতে কষ্ট কমবে বলে আশা করছেন। রহমত আলীর মতো ভবানীপুর ও কলকতি গ্রামের আরো ৭টি পরিবারকে কম্বল দেওয়া হয়। কম্বল পেয়ে এসব পরিবারের মানুষের মুখে উষ্ণতার হাসি ফোটে।</p> <p style="text-align:justify">শুভসংঘের ভাঙ্গুড়া শাখার উপদেষ্টা প্রকৌশলী ড. জাহিদ হাসানের সার্বিক সহযোগিতায় শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক শাকিব খান, দপ্তর সম্পাদক রাকিব হাসান ও সদস্য আবদুল মালেক মধুসহ শুভসংঘের ভাঙ্গুড়া শাখার সদস্যরা গত কয়েক দিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৩১টি দুস্থ ও অসহায় পরিবারের মাঝে কম্বল পৌঁছে দেন।</p> <p style="text-align:justify">সাধারণ সম্পাদক শাকিব খান বলেন, ‘শুভসংঘের সঙ্গে থেকে মানুষের জন্য কাজ করে মনের তৃপ্তি পাই। তাই শুভসংঘের সকল সদস্য ভালো কাজের মাধ্যমে সবার পাশে থাকতে চান।’</p> <p style="text-align:justify">ভাঙ্গুড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহবুব উল আলম বলেন, ‘শুভসংঘ একটি সামাজিক ও মানবিক সংগঠন। ভাঙ্গুড়ায় শুভসংঘ মানুষের জন্য কাজ করছে। আমি তাদের এসব ভালো কাজের প্রশংসা করি এবং ভবিষ্যতেও তারা তাদের এই কাজ অব্যাহত রাখবে বলে আশা করি।’</p>