যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ‘ভূমিকম্প’ সৃষ্টি করেছে ট্রাম্পের জয়

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ‘ভূমিকম্প’ সৃষ্টি করেছে ট্রাম্পের জয়
ছবিসূত্র: এএফপি

ট্রাম্পের জয়ের অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি ‘ভূমিকম্প’ সৃষ্টি করা। এমনটাই বলা হয়েছে আলজাজিরার একটি প্রতিবেদনে। নাটকীয় এক প্রত্যাবর্তন হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। হোয়াইট হাউস ছাড়ার চার বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন তিনি।

মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেই অঙ্গরাজ্যগুলোতে হয়েছে, সেসব অঙ্গরাজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ভোটারদের অনেকেই ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার পেছনে অর্থনীতি ও অভিবাসনের মতো বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন।

এদিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেছেন, ট্রাম্পের জয় এবং কংগ্রেসে তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি ‘ভূমিকম্প’ সৃষ্টি করবে এবং বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তর ও বহির্বিশ্ব—দুই জায়গাতেই ব্যাপক পরিবর্তন আনবে।

বিশারা বলেন, ‘আমরা এমন এক প্রেসিডেন্টের কথা বলছি, যার দল সিনেট নিয়ন্ত্রণ করছে এবং তার নিয়োগ করা বিচারকরা সুপ্রিম কোর্টে আছেন।

এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন কিছু করতে সক্ষম হবেন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বেশির ভাগ প্রেসিডেন্টের পক্ষেই অসম্ভব ছিল।’ 

বিশারার মতে, ট্রাম্প ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে ছাড় দেওয়ার জন্য চাপ দিতে পারেন। বৈশ্বিক বাণিজ্যে আরো বাড়তি শুল্ক আরোপের পক্ষে অবস্থান নিতে পারেন। অবশ্য ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘটতেই দিতেন না।

ক্ষমতায় এসে তিনি এই যুদ্ধ বন্ধ করবেন।

তবে মারওয়ান বিশারার কথা থেকে এটি স্পষ্ট যে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে নিকট ইতিহাসে এক নজিরবিহীন সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন। মানে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী প্রশাসনে এই বিবেচনায় তিনি একপ্রকার একচ্ছত্র আধিপত্য পেতে যাচ্ছেন। আর এ বিষয়ে জাতীয় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সব বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ‘আপার হ্যান্ড’ অর্থাৎ সুবিধাজনক অবস্থানে রাখবে। তাই যুক্তরাষ্ট্রের বিগত কয়েক দশকের ইতিহাসে ট্রাম্পই এমন প্রেসিডেন্ট, যার হাতের মুঠোয় যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, বন্দি থাকবে সারা বিশ্বের রাশ।

আরো পড়ুন
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৪০

লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৪০

 

ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়া অনেকটা সুকুমার রায়ের ‘পাগলা দাশু’র নাট্যমঞ্চে প্রত্যাবর্তনের গল্পের সঙ্গে মিলে যায়। প্রাক-নির্বাচনী পর্বের সব নাটক সাঙ্গ হওয়ার পর এবার যেন ‘দাশু’র মতোই প্র্যাবর্তন হলো ট্রাম্পের। দাশুর সঙ্গে ট্রাম্পের চারিত্রিক মিলও আছে। তিনি নিজেই নিজেকে ‘পাগলাটে’ বলে থাকেন। দ্বিতীয় মেয়াদে কেমন হবে ট্রাম্পের শাসন, তা নিয়ে আগে থেকেই জল্পনা চলছিল।

কারণ ২০২০ সালে ট্রাম্প যখন ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন, তখনকার যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আজকের যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তর ফারাক। এই সময়ের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ হয়েছে। ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রত্যক্ষ সহায়তা করছেন ইউক্রেনকে। মধ্যপ্রাচ্যেও বিরাজ করছে অস্থিরতা।

এখন দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প কি আগের মতো ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বা আমেরিকাই প্রথম নীতিতে চলবেন, নাকি ভিন্ন পথে হাঁটবেন তা নিয়ে আরো আগে থেকেই শুরু হয়েছিল জল্পনা-কল্পনা। অবশ্য দ্বিতীয় দফায় বাড়তি সুবিধা পাবেন ট্রাম্প। কারণ কেবল প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই নয়, ট্রাম্পের দল এবার বাজিমাত করেছে দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেসেও। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পথে তার দল।

যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৮ বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এক মেয়াদের বিরতিতে দ্বিতীয়বারের মতো দোর্দণ্ড প্রতাপে হোয়াইট হাউসের মসনদে ফিরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিসের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার আশায় গুড়েবালি দেখল বিশ্ব আর শীর্ষ ক্ষমতাধর দেশটিতে নতুন ইতিহাস গড়লেন রিপাবলিকান দলের নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প।

শুধু তাই নয়, মার্কিন সিনেটে এরই মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছে রিপাবলিকান পার্টি। দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ৫১টি আসন এরই মধ্যে পেয়ে গেছে। নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পথে আছে দলটি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২১৮টি আসনের মধ্যে এরই মধ্যে রিপাবলিকানরা ২০০টি আসন নিশ্চিত করেছে। অনুমান করা হচ্ছে, এখানেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে ট্রাম্পের দল।

সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা, এনবিসি

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ফের খুলছে গাজার রাফা সীমান্ত ক্রসিং

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ফের খুলছে গাজার রাফা সীমান্ত ক্রসিং
গাজা উপত্যকায় মিসরের সঙ্গে রাফা সীমান্ত ক্রসিংয়ের গেট। ফাইল ছবি : এএফপি

গাজা উপত্যকার রাফা সীমান্ত ক্রসিং শনিবার আবারও খুলবে, যা মিসরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে চতুর্থ দফার বন্দি ও জিম্মি বিনিময় সম্পন্ন হওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এক হামাস কর্মকর্তা ও আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এএফপি শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে।

রাফা সীমান্ত ছিল গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অন্যতম প্রধান পথ।

তবে গত বছরের মে মাসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনি পাশ দখলে নেওয়ার পর থেকে এটি বন্ধ রয়েছে। মিসরসহ বিভিন্ন দেশ ও ত্রাণ সংস্থাগুলো একাধিকবার এর নিন্দা জানিয়েছে।  

হামাস কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মধ্যস্থতাকারীরা হামাসকে জানিয়েছে, ইসরায়েল রাফা সীমান্ত শনিবার খুলতে সম্মত হয়েছে, বন্দি বিনিময়ের চতুর্থ দফা শেষ হওয়ার পর।’

সূত্রটি আরো জানিয়েছে, গাজায় আহতদের সরিয়ে নেওয়ার কাজও এই সীমান্ত দিয়ে সম্পন্ন হবে, যা গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তির অংশ।

 

এদিকে হামাসশাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রথম দফায় অসুস্থ ব্যক্তিদের একটি দল শনিবার চিকিৎসার জন্য মিসরে পাঠানো হবে।  

গত সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাফা সীমান্তে তাদের পর্যবেক্ষণ মিশন আবারও শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই মিশনে ১৮ জন ইউরোপীয় ও স্থানীয় কর্মকর্তা এবং ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সের একটি নিরাপত্তা পুলিশ দল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইতালির সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই মিশন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অনুরোধে চালু করা হয়েছে এবং মিসর একে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে।

এর প্রধান লক্ষ্য প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০০ আহত ও অসুস্থ ব্যক্তির পারাপার সমন্বয় ও সহায়তা করা।’  

১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে হামাস গাজা থেকে জিম্মিদের মুক্তি দিতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) মাধ্যমে ১৫ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যার বিনিময়ে শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।  

শনিবার যে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে, তারা হলেন ইয়ারদেন বিবাস, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বধারী কিথ সিগেল ও ফরাসি নাগরিকত্বধারী ওফের কালদেরন। বিনিময়ে ইসরায়েল ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে, যাদের মধ্যে ৯ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বলে ফিলিস্তিনি বন্দিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনার্স ক্লাব জানিয়েছে।

মন্তব্য

ভোটের পাঁচ দিন আগে নতুন চাপে কেজরির দল

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ভোটের পাঁচ দিন আগে নতুন চাপে কেজরির দল
অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ফাইল ছবি : এএফপি

হাতে গোনা আর পাঁচ দিন বাকি দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের। তার আগেই ধাক্কা অরবিন্দ কেজরিওয়াল শিবিরে। শুক্রবার একসঙ্গে আম আদমি পার্টি (আপ) ছাড়লেন সাত বিধায়ক। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুসারে, দলের আহ্বায়ক কেজরিওয়ালকে চিঠি লিখে দলের সদস্য পদ ছাড়ার কথা জানিয়েছেন বিধায়করা। এ পদক্ষেপের কারণ হিসেবে দলত্যাগী বিধায়ক ভাবনা গৌর জানিয়েছেন, কেজরিওয়াল ও আপের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলায় এই সিদ্ধান্ত।

তবে আপের এক সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না পেয়েই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিধায়করা। ভাবনা ছাড়াও আপ ছাড়ার সিন্ধান্ত নিয়েছেন আদর্শ নগরের বিধায়ক পবন শর্মা, মেহরৌলীর বিধায়ক নরেশ যাদব, ত্রিলোকপুরীর বিধায়ক রোহিত কুমার, জনকপুরীর বিধায়ক রাজেশ ঋষি, কস্তুরবা নগরের বিধাক মদন লাল ও বিজিওসানের বিধায়ক বি এস জুন।

আরো পড়ুন
১৯৯৩ সালের পর দিল্লি বিধানসভায় বিজেপি আর জেতেনি কেন

১৯৯৩ সালের পর দিল্লি বিধানসভায় বিজেপি আর জেতেনি কেন

 

গত নির্বাচনে ভাবনা পালাম থেকে লড়েছিলেন। জিতে বিধায়ক হন। তবে আপ এবার আর ওই কেন্দ্রে তাকে প্রার্থী করেনি। শুক্রবার পদত্যাগী চিঠিতে ভাবনা টিকিট না পাওয়ার কথা উল্লেখ করেননি।

তবে দল ছাড়ার কারণ হিসেবে কেজরিওয়ালের প্রতি বিশ্বাস হরানোর কথা বলেছেন। একই কারণ দেখিয়েছেন মদনও।

কেজরিওয়াল এবার এই সাত বিধায়ককে ভোটে টিকিট না দিয়ে নতুন মুখ এনেছেন। আদর্শ নগর থেকে টিকিট দেওয়া হয়েছে মুকেশ গোয়েলকে। জনকপুরীর আপ প্রার্থী প্রবীণ কুমার, বিজিওসান থেকে সুরেন্দ্র ভরদ্বাজকে টিকিট দিয়েছেন কেজরি।

আর পালামে ভাবনার জায়গায় এবার আপের টিকিটে লড়ছেন যোগিন্দর সোলাঙ্কী।

মন্তব্য
রুশ দাবি

ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে দখলকৃত গ্রামে নিহত ২২

ধর্ষণের পর ৮ নারীকে হত্যা
অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে দখলকৃত গ্রামে নিহত ২২
ইউক্রেনীয় সেনা সদস্য। ফাইল ছবি : এএফপি

মস্কো শুক্রবার ইউক্রেনীয় সেনাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার দখলে থাকা একটি গ্রামে ২২ জনকে হত্যার অভিযোগ এনেছে। নিহতদের মধ্যে আটজন নারীও ছিলেন, যাদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

গত আগস্টে আকস্মিক আক্রমণের মাধ্যমে ইউক্রেন পশ্চিম রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের বেশ কয়েকটি সীমান্তবর্তী বসতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। তারা বলছে, এখনো প্রায় দুই হাজার বেসামরিক নাগরিক দখলকৃত এলাকায় বসবাস করছে।

তবে রাশিয়া ইতিমধ্যে কয়েকটি শহর পুনর্দখল করেছে।

এর আগে রাশিয়ার তদন্ত কমিটি ১৯ জানুয়ারি জানিয়েছিল, তারা ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রাসকোয়ে পোরেচনোয়ে গ্রামে ‘অন্তত সাতজন বেসামরিক নাগরিক’ হত্যার ঘটনা তদন্ত করছে।

এবার সংস্থাটি শুক্রবার জানায়, তারা এখন ওই গ্রামে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে ‘২২ জন বাসিন্দাকে’ হত্যার অভিযোগ তদন্ত করছে।

এ ছাড়া তদন্ত কমিটি বলছে, নিহতদের মধ্যে আটজন নারী ছিলেন, যাদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।

তাদের মরদেহ বেশ কয়েকটি বাড়ির বেইসমেন্ট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। স্বাধীনভাবে তাদের এ দাবি যাচাই করা যায়নি এবং ইউক্রেনের পক্ষ থেকেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ অভিযোগ করেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাশিয়ার দাবির প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অগ্রাহ্য করার প্রবণতা ও এসব নৃশংসতার প্রতি মনোযোগ না দেওয়ার প্রবৃত্তির পরও এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলা দরকার, দেখানো দরকার।

রুশ তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পাঁচজন ইউক্রেনীয় সেনা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং ইভগেনি ফাবরিসেঙ্কো নামের তাদের একজন কুরস্ক অঞ্চলে সংঘর্ষের সময় আটক হন। তদন্ত কমিটি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে তিনি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

শুক্রবার এক ব্রিফিংয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘প্রথমে মানুষদের নির্যাতন ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে, তারপর তাদের হয় গুলি করে, নয়তো বিস্ফোরণে উড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

রাশিয়া ও ইউক্রেন একে অপরের বিরুদ্ধে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিক হত্যার অভিযোগ করে আসছে। রুশ বাহিনী কিয়েভের উপকণ্ঠে বুচা শহরে শত শত বেসামরিক নাগরিক হত্যার অভিযোগের মুখে পড়েছে।

এএফপিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা সেখানে গিয়ে ইউক্রেনীয় বেসামরিকদের মরদেহ দেখেছেন এবং ছবি তুলেছেন, যাদের মধ্যে অনেকের হাত বাঁধা ছিল।

অন্যদিকে মস্কো এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং কিয়েভকে ঘটনাটি সাজানোর জন্য দায়ী করেছে—যা এএফপিসহ বেশ কয়েকটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা ও গণমাধ্যম প্রত্যাখ্যান করেছে।

সূত্র : এএফপি

মন্তব্য

অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে জার্মানিতে প্রস্তাব পাস, বিক্ষোভে হাজারো মানুষ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে জার্মানিতে প্রস্তাব পাস, বিক্ষোভে হাজারো মানুষ
সিডিইউর সদর দপ্তরের সামনে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়ে বিক্ষোভ দেখায়। ছবি : এএফপি

অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে জার্মানির রাজনৈতিক দল সিডিইউর এক প্রস্তাবনা দেশটির সংসদে পাস হয়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন আলোচনার মাঝেই পাস হলো এই প্রস্তাব।

সংসদে রক্ষণশীল দল সিডিইউর আনা প্রস্তাবে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে, বিশেষ করে অনিয়মতে পথে জার্মানিতে প্রবেশ ঠেকাতে এবং যাদের আশ্রয় আবেদন বাতিল হযেছে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে।

বুধবার সংসদের প্রস্তাবটির পক্ষে ৩৪৮টি এবং বিপক্ষে ৩৪৫টি ভোট পড়ে। ১০ জন সংসদ সদস্য ভোট দানে বিরত থাকেন।

চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজের এসপিডি ও গ্রিন পার্টির বিরোধিতা সত্ত্বেও কট্টর ডানপন্থী দল এএফডি ও এফডিপির সমর্থন থাকা সংসদে পাশ হয় আইনটি।

সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরে হামলার ঘটনার জেরে এমন প্রস্তাবনা দিয়েছে দলটি।

গত কয়েক মাসে বিভিন্ন শহরে হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়ছে। এসব ঘটনায় অভিবাসীদের জড়িত থাকার বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে আসছে নির্বাচনে জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে করা জনমত জরিপে প্রথম স্থানে রয়েছে ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের সিডিইউ/সিএসইউ।

প্রস্তাবনায় দেশটির সীমান্ত সুরক্ষিত করতে ও বেআইনি প্রবেশ ঠেকাতে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্তে স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ আরোপ, শেঙেন জোনে মুক্ত চলাচল বন্ধ করা এবং বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যারা জার্মানিতে প্রবেশ করেছে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাবাসন। 

প্রস্তাবনায় আরো রয়েছে, আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়ার পর যাদের দেশত্যাগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে তাদের আটক করা এবং যেসব অভিবাসী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তাদের বসবাসের অনুমতি সীমিতকরণ। 

কট্টর ডানপন্থী দল এএফডির সমালোচনা করেছে সিডিউ/সিএসইউ। দলটি বলছে, ‘জেনোফোবিয়া ও ষড়যন্ত্র উসকে দিতে গণহারে অভিবাসনের জন্য তৈরি হওয়া সমস্যাটির অপব্যবহার করছে এএফডি।

বিক্ষোভ
এদিকে প্রস্তাব পাসের পর সিডিইউ সদর দপ্তরের বাইরে প্রতিবাদ করেছে কয়েক হাজার মানুষ। বৃহস্পতিবার দলটির সদর দপ্তরের সামনে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়ে বিক্ষোভ দেখান। অতি ডানপন্থীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজের অভিযোগে সিডিইউর বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ তাদের। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ১৩ হাজার মানুষ প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল। অন্যদিকে পুলিশ জানায়, ছয় হাজার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ
এএফডির সাহায্য নিয়ে খসড়া বিল পাস করানোর পর সিডিইউয়ের প্রবল সমালোচনা করেন চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ। গ্রিন পার্টি ও অনেকগুলো মানবাধিকার সংগঠন ও চার্চও এর সমালোচনা করেছে। তাদের বক্তব্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমঝোতা হয়েছিল, অতি ডানপন্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করে কেউ চলবে না। সেই সমঝোতা ভেঙেছেন ম্যার্ৎস।

এখনো পর্যন্ত জার্মানির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এই সমঝোতা মেনে চলেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হাতিয়ার করে নাৎসিদের উত্থানের কথা মাথায় রেখে তারা এই সমঝোতা করে।

‘ডাপন্থীবিরোধী জোট’ বৃহস্পতিবারের প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল। তাদের দাবি, এএফডির সঙ্গে কোনো সহযোগিতা নয়।

এই বিক্ষোভের সংগঠক ক্যারোলিন মোসার ম্যার্ৎসকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, তিনিই এএফডির অতি ডানপন্থাকে সামাজিক দিক থেকে গ্রহণযোগ্য করে দিচ্ছেন।

ম্যার্ৎসের জনসভায় বিক্ষোভ
অন্যদিকে ড্রেসডেনে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী ম্যার্ৎসের জনসভায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে। ম্যার্ৎস সেখানে নির্বাচনী প্রচারের জন্য গিয়েছিলেন।

বিক্ষোভকারীরা ড্রেসডেনের রাস্তায় স্লোগান দেন, ম্যার্ৎস হলেন গণতন্ত্রের বিপদের কারণ, তার লজ্জিত হওয়া উচিত।

সূত্র : ইনফোমাইগ্রেন্টস, ডয়চে ভেলে

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ