<p style="text-align:justify">রাহুল গান্ধী দুই সাংসদকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন বলে পুলিশে অভিযোগ করেছে বিজেপি। তার এমন আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই দিনে বিজেপি সাংসদদের বিরুদ্ধেও ধাক্কা মারার অভিযোগ করেছেন কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়গে।</p> <p style="text-align:justify">গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ ভবন চত্বর ছিল ঘটনাবহুল। সকাল ১০টার পর থেকে নতুন সংসদ ভবনের মূল প্রবেশপথ মকর দ্বারে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিজেপি সাংসদরা। তার থেকে কিছুটা দূরে বাবাসাহেব আম্বেডকরকে অমিত শাহ অপমান করেছেন অভিযোগ করে প্রতিবাদ দেখাতে থাকেন কংগ্রেস সাংসদরা।</p> <p style="text-align:justify"><strong>কী হয়েছিল?</strong></p> <p style="text-align:justify">পৌনে ১১টা নাগাদ কংগ্রেস সাংসদরা সিদ্ধান্ত নেন, তারা এবার মকর দ্বার দিয়ে নতুন সংসদ ভবনে ঢুকবেন। রাহুল গান্ধীসহ কংগ্রেস সাংসদরা মকর দ্বারে যান। তারপর সেখানে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি।</p> <p style="text-align:justify">বিজেপির অভিযোগ, ভেতরে ঢোকার জন্য পাশ দিয়ে একটা জায়গা করে রেখেছিলেন নিরাপত্তাকর্মীরা। কিন্তু রাহুল গান্ধী বিজেপির বিক্ষোভের মাঝ দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। তখনই ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। রাহুল বিজেপি সাংসদ মুকেশ সেনাপতিকে ধাক্কা দেন। তিনি পড়ে যান বর্ষীয়ান সাংসদ প্রতাপ ষড়ঙ্গীর ওপর। একজনের মাথার পেছনে, অন্যজনের মাথার সামনে আঘাত লাগে। রক্ত পড়তে থাকে।</p> <p style="text-align:justify">রাহুল তখন ষড়ঙ্গীকে দেখতে তার কাছে যান। সে সময় বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে চিৎকার করে বলেন, ‘'রাহুল, আপনার এ রকম ব্যবহার করার জন্য লজ্জা পাওয়া উচিত ‘ রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমাকেই ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল।’</p> <p style="text-align:justify">বিজেপির দুই আহত সাংসদকে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক জানান, দুজনের মাথায় চোট আছে। স্পিকার ওম বিড়লা সাংসদদের দেখতে হাসপাতালে যান। প্রধানমন্ত্রী ফোন করে তাদের খবর নেন।</p> <p style="text-align:justify">পরে সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ অনুরাগ ঠাকুর, বাঁসুরী স্বরাজ ও হেমাঙ্গ জোশী পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় গিয়ে রাহুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। অনুরাগ জানিয়েছেন, রাহুলের বিরুদ্ধে সাংসদদের নিগ্রহ করা, উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুনের চেষ্টার ধারাও প্রথমে যোগ করা হয়েছিল। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। এই অভিযোগে রাহুলকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পুলিশের আছে।</p> <p style="text-align:justify">নাগাল্যান্ডের বিজেপি সাংসদ ফাংনন কনিয়াক রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করে বলেছেন, রাহুল গান্ধী তার খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলেন। এর ফলে তার খুবই অস্বস্তি হচ্ছিল। রাহুল চিৎকার করে দুর্ব্যবহার করেছেন বলেও তার অভিযোগ। ধনখড় জানিয়েছেন, তিনি অভিযোগ খতিয়ে দেখে তার সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>রাহুলের বক্তব্য</strong></p> <p style="text-align:justify">সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘আপনাদের ক্যামেরায় সবকিছু নিশ্চয়ই আছে। আমি সংসদ ভবনের ভেতরে ঢুকতে গেছিলাম। বিজেপি সাংসদরা আমাকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা আমাকে ধাক্কা মারে। হুমকি দেয়। তাই এটা হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘ওটা সংসদ ভবনে ঢোকার দরজা। সংসদ ভবনে ঢোকার অধিকার আমাদের আছে। বিজেপি সাংসদরা আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিতে চায়নি। মূল ঘটনা হলো, তারা সংবিধানকে আক্রমণ করছে, আম্বেডকরজিকে অপমান করছেন।’</p> <p style="text-align:justify">সংবাদ সম্মেলনে রাহুল বলেন, ‘কংগ্রেসসহ ইন্ডিয়া জোটের দলগুলো অম্বেডকরকে অপমান করার জন্য অমিত শাহের ইস্তফার দাবি জানাচ্ছিল। আর বিজেপি সেই দাবি থেকে নজর সরানোর জন্য এই কাজ করল। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যাচ্ছিলাম। বিজেপি সাংসদরা দরজাজুড়ে দাঁড়িয়েছিল। তারা আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিতে চাননি।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>মল্লিকার্জুন খড়গেকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ</strong></p> <p style="text-align:justify">কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি সাংসদরা কংগ্রেস সভাপতি ও দলিত নেতা মল্লিকার্জুন খড়গেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। খড়গে সিঁড়িতে বসে পড়েন। তিনি পায়ে আঘাত পেয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি লিখে খড়গে অভিযোগ করেছেন, ইন্ডিয়া দলগুলোর এমপিদের সঙ্গে তিনি যখন মকর দ্বারে আসছিলেন, তখন বিজেপি সাংসদরা তাকে ধাক্কা মারেন। তিনি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন ও সিঁড়িতে বসে পড়েন। তার হাঁটুতে আঘাত লাগে। হাঁটুতে আগে অপারেশন হয়েছে। তারপর কংগ্রেস সাংসদরা একটা চেয়ার জোগাড় করে আনলে তিনি বসে পড়েন। তারপর অনেক কষ্ট করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তিনি রাজ্যসভায় যান।</p> <p style="text-align:justify">খড়গে লিখেছেন, ‘আমি চাই, এই ঘটনার তদন্ত হোক। এটা শুধু আমার ওপর নয়, বিরোধী নেতা ও কংগ্রেস সভাপতির ওপরেও হামলা।’</p> <p style="text-align:justify">পরে কংগ্রেস সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারির নেতৃত্বে কংগ্রেস সাংসদরা পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। তারা বলেছেন, ৮৪ বছর বয়সী কংগ্রেস সভাপতি ও দলিত নেতাকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। বিজেপি সাংসদরা এই কাজ করেছেন। তারা বিজেপি সাংসদদের বিরুদ্ধে এফআইআরের দাবি করেন।</p>