দেশজুড়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে নেতানিয়াহু। নতুন করে গাজায় অভিযান চালানোর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের সরকার সর্বসম্মতিক্রমে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে। নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, দেশের নিরাপত্তা তথা গোয়েন্দাপ্রধান রনেন বারকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটের প্রধানকে শুক্রবার বরখাস্ত করা হয়েছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে পাঁচ বছরের মেয়াদে নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। আগামী বছরই তার মেয়াদ শেষ করার কথা ছিল।
গোয়েন্দাপ্রধান রনেন বারকে পূর্ববর্তী ইসরায়েলি সরকার নিয়োগ করেছিল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের অভূতপূর্ব হামলার আগেও নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার সম্পর্ক টানাপোড়েনপূর্ণ ছিল, যা গাজায় যুদ্ধের সূত্রপাত করেছিল। ৪ মার্চ হামাসের হামলার নিয়ে অভ্যন্তরীণ শিন বেট প্রতিবেদন প্রকাশের পর সম্পর্ক আরো খারাপ হয়। হামাসের আক্রমণ প্রতিরোধে সংস্থার নিজস্ব ব্যর্থতা স্বীকার করেছে শিন বেট। রনেন বার ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তিনি তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করবেন এবং আক্রমণ প্রতিরোধে তার সংস্থার ব্যর্থতার দায়ভার গ্রহণ করবেন।
সরকারিভাবে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘সর্বসম্মতিক্রমে গোয়েন্দাপ্রধান রনেন বারকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
গত মঙ্গলবার থেকে হাজার হাজার মানুষ ইসরায়েলের রাস্তায় নেমেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে তারা তীব্র বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। অভিযোগ, হামাসের হাত থেকে সব বন্দিকে উদ্ধার না করে নতুন করে গাজায় আক্রমণ চালিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভুল করেছেন। দ্রুত এই অভিযান বন্ধের দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা।
একই সঙ্গে তারা নেতানিয়াহুর একাধিক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। এরই জেরে রনেনকে সরিয়ে দেওয়া হলো বলে মনে করা হচ্ছে। নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে রনেন একটি তদন্তও শুরু করেছিলেন। অভিযোগ, ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করলেও কাতারে তাদের বেআইনি অর্থের লেনদেন আছে।
আরো পড়ুন
রুশ বোমারু বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা, ভয়াবহ বিস্ফোরণ
বৈঠকে রনেন ছিলেন না
যে বৈঠকে রনেনকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে আরো অনেকে থাকলেও রনেন উপস্থিত ছিলেন না। তবে সেখানে তিনি একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। যা এখন ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমে ঘুরছে। রনেন সেখানে লিখেছেন, ‘যে পদ্ধতিতে একজন উচ্চপদস্থ অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা পদ্ধতিগতভাবে ভুল।’
রনেনের অভিযোগ, দেশের স্বার্থে নয়, নেতানিয়াহু এ কাজ করেছেন তার নিজের স্বার্থে।
নেতানিয়াহুর অভিযোগ
এদিকে এক্স হ্যান্ডেলে নেতানিয়াহু দেশজুড়ে বিক্ষোভের দায় চাপিয়ে দিয়েছেন বামপন্থীদের ওপর। বামপন্থী ‘ডিপস্টেট’ চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
বস্তুত, বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর বাড়ির গেট পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাদের আটকাতে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। বহু বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। ডেমোক্র্যাট বিরোধী দলের নেতা ইয়ের গোলানকে পুলিশ ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এক্স হ্যান্ডেলে গোলান অবশ্য লিখেছেন, ‘কয়েকটি ধাক্কা আমায় আটকে রাখতে পারবে না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব এবং বন্দিদের ফিরিয়ে আনব।’
আরো পড়ুন
রেকর্ড তাপমাত্রায় কমেছে বরফ
বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, এখনো গাজায় অন্তত ৫৯ ইসরায়েলি বন্দি আছেন। যাদের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর বন্দি করেছিল সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হামাস। এর মধ্যে ২০ জন এখনো জীবিত আছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নেতানিয়াহু সংঘর্ষ-বিরতির চুক্তি ভঙ্গ করে নতুন করে গাজায় অভিযান চালানোয় জীবিত বন্দিদেরও মেরে ফেলা হবে বলে মনে করছেন বিক্ষোভকারীরা।
বস্তুত, সংঘর্ষ-বিরতি শুরু হওয়ার পর অধিকাংশ বন্দিকেই হস্তান্তর করেছে হামাস। সবাই ফিরে আসার আগেই নেতানিয়াহু নতুন করে আক্রমণ শুরু করায় বিরক্ত দেশের একটি বড় অংশের মানুষ। সম্প্রতি একটি জনমত সমীক্ষাও করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গেছে, দেশের অধিকাংশ মানুষ চান, লড়াই বন্ধ করে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে আরো বেশি আলোচনা চালাক সরকার।
সূত্র : ডয়চে ভেলে বাংলা, এএফপি