ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজা সিটির পূর্বাংশে একটি বহুতল আবাসিক ভবনে কমপক্ষে ২৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি স্থানীয় হাসপাতাল। হামাস নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার সকালে শুজাইয়ার আল-হাওয়াশি মসজিদের কাছে এই হামলা চালানো হয়।
সংস্থাটি আরো জানায়, নিহতদের মধ্যে আটটি শিশু রয়েছে, আহত হয়েছে ৬০ জনের বেশি এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেক মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুজাইয়া থেকে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, ধুলামাখা ছোট ছোট শিশুর মরদেহ অসহায় স্বজন ও উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে নিয়ে আসছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা ‘একজন শীর্ষস্থানীয় হামাস সন্ত্রাসীকে’ লক্ষ্য করে আঘাত হেনেছে, যিনি ওই এলাকায় হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন। তারা আরো দাবি করে, বেসামরিক লোকজনের ক্ষতি কমাতে ‘নির্ভুল অস্ত্র’ ব্যবহারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
এ ছাড়া সেনাবাহিনী হামাসকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করে বলেছে, হামাস ইচ্ছাকৃতভাবে সাধারণ জনগণকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। হামাসও বলেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘একটি রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
’
২৬ বছর বয়সী আয়ুব সালিম এএফপিকে বলেন, যে ভবনটিতে হামলা করা হয়েছে, সেটি ছিল অতি জনাকীর্ণ একটি এলাকা, যেখানে তাঁবু, বাস্তুচ্যুত মানুষ ও ঘরবাড়িতে পূর্ণ ছিল। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে এবং সব দিকে তার ধাতব টুকরা ছড়িয়ে পড়ে। ধুলা ও বিশাল ধ্বংসযজ্ঞে এলাকা ঢেকে গিয়েছিল, কিছুই দেখা যাচ্ছিল না, শুধু মানুষের চিৎকার আর আতঙ্ক। এটি নিঃসন্দেহে এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শুজাইয়া ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর হাজার হাজার মানুষ ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। সেনাবাহিনী বলেছিল, তারা ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংসে শক্তি প্রয়োগ করছে।’
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার সকালে জানায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছে। এতে গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল ফের হামলা শুরুর পর থেকে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৮২ জনে।
এ ছাড়া গত তিন সপ্তাহে আরো তিন লাখ ৯০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নির্দেশ অনুযায়ী গাজার দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা এখন ‘নো-গো জোন’ বা খালি করার আওতায় পড়েছে।
এদিকে চলমান মধ্যস্থতার অংশ হিসেবে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চলছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ বাড়াতে রাজি না হওয়ায় এবং তাদের হাতে থাকা ৫৯ জন জিম্মির মধ্যে আর কাউকে মুক্তি না দেওয়ায় তারা আবার হামলা শুরু করেছে। ধারণা করা হয়, ওই ৫৯ জনের মধ্যে ২৪ জন জীবিত। আর হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল মূল চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে জীবিত সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল এবং যুদ্ধ স্থায়ীভাবে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণে নজিরবিহীন হামলা চালালে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত এবং ২৫১ জন জিম্মি হয়। তার পর থেকেই ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করতে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫০ হাজার ৮৪০ জন নিহত হয়েছে।