<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আয়ের চাকা না ঘুরলেও ব্যয়ের চাকা ঠিকই খুব দ্রুত ঘোরে। এক বছরের ব্যবধানে বেতনের টাকা বাড়েনি, কিন্তু অনেকটাই বেড়েছে খরচ। অথচ আয়কর দিতে হচ্ছে আগের সমানই। কথাগুলো বলছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আকরাম হোসেন (ছদ্মনাম)। তিনি মূল্যস্ফীতির বাজারে হাবুডুবু খাওয়া একজন সাধারণ করদাতা। বছর শেষে রিটার্ন জমা দিয়েছেন ঋণ করে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন জমা পড়েছে ১৯ লাখ ৫০ হাজার ২০৮টি। এই রিটার্নদাতাদের মধ্যে আকরাম হোসেন একজন। শুধু তিনিই নন, মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে পিষ্ট এমন করদাতার সংখ্যা অনেক। সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর নানা উদ্যোগ নিলেও তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রভাব পড়েনি আকরামদের ক্ষেত্রে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চলতি বছর এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৯ লাখ রিটার্ন জমা পড়লেও এর আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৩৬ লাখ ৬২ হাজার। তার এক বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ২৮ হাজার। রাজস্ব আদায় ও কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি ৪৪টি সেবা নিতে গেলে রিটার্ন জমার সনদ বাধ্যতামূলক করেছিল এনবিআর। এই কৌশলে রিটার্ন জমার সংখ্যা বেড়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চলতি বছর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা কালের কণ্ঠকে বলেন, সাধারণত প্রতিবছরই শেষ দিকে আয়কর রিটার্ন জমার পরিমাণ অনেক গুণে বৃদ্ধি পায়। বিভিন্নভাবে রিটার্ন জমার প্রক্রিয়া সহজ করার ফলে এ বছর রিটার্ন জমার পরিমাণ ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি ৩৮টি সেবা নিতে গেলে রিটার্ন জমার সনদ বাধ্যতামূলক ছিল। পরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আরো ছয়টি সেবার বিপরীতে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। মূলত এ কারণেই হু হু করে বেড়েছে রিটার্ন জমাদাতা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরো তিনটি নতুন খাত যুক্ত করা হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রিটার্ন জমাকারীর সংখ্যা বাড়লেও দেশে বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির জেরে সক্ষমতা হারিয়েছেন অনেক সক্ষম করদাতা। আলোচ্য সময়ে একদিকে স্বাভাবিক রিটার্ন জমাদাতার সংখ্যা বাড়লেও সক্ষম করদাতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এনবিআরকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাড়তি ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আয়কর আদায় করতে হবে। এনবিআরের রোডম্যাপ অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বাড়তি রাজস্বের ২২ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা বা ৮৫ শতাংশ উৎস কর হিসেবে আদায় করতে চায় সংস্থাটি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবশ্য বাকি তিন হাজার ৭১০ কোটি টাকা সাধারণ করদাতার কাছ থেকেই আদায় করতে চায় এনবিআর। এ জন্য করমুক্ত আয়সীমা স্থির রেখে সর্বোচ্চ করের হার ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে উন্নীত করেছে সংস্থাটি। অবশ্য উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে মানুষের প্রকৃতপক্ষে আয় কমে যাওয়ার পরও করমুক্ত আয়সীমা স্থির রাখায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মূল্যস্ফীতি বাড়ায় মানুষের প্রকৃত আয় অনেক কমে গেছে এটা যেমন সত্য, তেমনি আয়করের সঙ্গে প্রকৃত আয় সমন্বয়েরও কোনো সুযোগ নেই। ভ্যাট কিংবা আয়কর কোথাও এটা হিসাব করে না। তবে করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ টাকা করলে হয়তো রাজস্ব আদায়ে খুব বেশি ক্ষতি হতো না। দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হলে সাধারণত নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে ক্ষেত্রে তারা একটু হলেও স্বস্তি পেত।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইনফরমাল সেক্টর বড় হওয়ায় অনেক করদাতাই এখনো করের আওতার বাইরে। তাদের এখনো করজালে আনতে পারেনি এনবিআর। দেশে শীর্ষ ১০ শতাংশ মানুষের নিয়ন্ত্রণে দেশের মোট আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ। এই শীর্ষ ১০ শতাংশ মানুষ যদি ১৫ শতাংশও কর দেয় তাহলে তা জিডিপির ৬ শতাংশ হওয়া উচিত শুধু আয়করে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে প্রকৃতপক্ষে করদাতার সংখ্যা অনেক বেশি। সংখ্যার হিসাবে তা দুই কোটিরও বেশি। তাদের করের আওতায় আনতে এনবিআর কাজ করছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p>