আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ৫ আগস্ট-পরবর্তী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনো সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে দেশে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা বাড়ছে। রাজনৈতিক, সামাজিক অস্থিরতা, পারিবারিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে এখন দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সব মিলিয়ে দেশের পরিবেশ-পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই, যার সুযোগ নিচ্ছে কেউ কেউ। এতে ঘরে-বাইরে সব ক্ষেত্রে অপরাধ বাড়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে সব কিছু নেই।
যদিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে, তবে সেই চেষ্টা আরো বাড়াতে হবে এবং কঠোর হতে হবে।
একই সঙ্গে তদন্তকাজে পক্ষপাতিত্ব ও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দূরে থাকতে হবে। বর্তমানে যারা সহিংসতা করছে, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং আগেও যারা রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন সহিংসতায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
তবে সব ধরনের অপরাধ কেন হচ্ছে, কোন কোন এলাকায় হচ্ছে—এগুলো বিশ্লেষণ করে সেভাবে কাজ করতে হবে। কারণ দেশের একেক এলাকায় একেক ধরনের অপরাধ বেশি ঘটে।
তবে আমাদের দেশে জনসংখ্যার তুলনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সংখ্যা, বিশেষ করে পুলিশ সদস্য খুব কম। আমাদের পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশেও জনসংখার তুলনায় আমাদের চেয়ে অনুপাতে তাদের পুলিশ সদস্য বেশি। তাই সরকারের উচিত জনসংখ্যার বিবেচনায় বাহিনীতে আরো লোক যুক্ত করা। একই সঙ্গে সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ফেরানো।
এখন প্রায়ই শোনা যাচ্ছে, নানা সংগঠন, ছাত্র সমন্বয়ক, রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি চাঁদাবাজি ও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে।
এখন কে কোন সংগঠন, রাজনৈতিক দল বা সমন্বয়ক, কার কী পরিচয়—এগুলো বিবেচনা না করে যে অপরাধ করছে, তাকে শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। অপরাধী যে-ই হোক, তার দল, মত কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় এখন বিবেচনায় নেওয়া উচিত নয়।
বিশেষ করে কমিউনিটি পুলিশ ব্যবস্থাকে কার্যকর করার মাধ্যমে সামাজিকভাবে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করা যেতে পারে, অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করা হবে না। অন্যদিকে কেউ অপরাধ করলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।
এভাবেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সব ধরনের সহিংসতা রোধে কাজ করতে পারে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে উঠান বৈঠক করে নতুন করে জানান দিতে হবে আইন সবার জন্য সমান এবং এই নীতিতে সরকার চলছে। অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পারিবারিকসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সচেতনতামূলক বিভিন্ন ধরনের সভা ও সেমিনার নিয়মিত করতে করতে পারে। কারণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানও অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ,
মাওলানা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়