উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা লাগাম টানা গেছে গত মাসে। শাক-সবজিজাতীয় পণ্যের দাম কিছুটা সহনীয়। তবে এই আত্মতৃপ্তির মধ্যেই নীরবে উত্তাপ ছড়াচ্ছে চালের দাম। বিশেষ করে মিনিকেট হিসেবে পরিচিত চালের দাম এক লাফে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা লাগাম টানা গেছে গত মাসে। শাক-সবজিজাতীয় পণ্যের দাম কিছুটা সহনীয়। তবে এই আত্মতৃপ্তির মধ্যেই নীরবে উত্তাপ ছড়াচ্ছে চালের দাম। বিশেষ করে মিনিকেট হিসেবে পরিচিত চালের দাম এক লাফে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাবুবাজার, বাড্ডা বাজার ও জোয়ারসাহারা বাজার এবং দুই জেলা নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার বড় পাইকারি মোকামে খোঁজ নিয়ে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে দুই সপ্তাহ আগেও ভালো মানের মিনিকেট চাল খুচরায় প্রতি কেজি ৮৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৫ টাকায়। তবে মানভেদে কিছু মিনিকেট চাল ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল মানভেদে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মোটা চাল ব্রি-২৮ ও পাইজাম কেজি ৬২ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকার বাড্ডার পিরোজপুর রাইস এজেন্সির ম্যানেজার শাহ আলম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মিল পর্যায়ে মিনিকেট চালের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। রোজার শুরুতে মোজাম্মেল মিনিকেট চালের বস্তার (৫০ কেজি) দাম ছিল চার হাজার ১২০ থেকে চার হাজার ১৩০ টাকা। সেই চালের দাম বেড়ে হয়েছে চার হাজার ৬৪০ টাকা। মাত্র দুই সপ্তাহের
ব্যবধানে বস্তায় বেড়েছে ৫১০ থেকে ৫২০ টাকা, অর্থাত্ কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ টাকার মতো। অবিশ্বাস্য হারে দাম বাড়ার কারণে মিনিকেট চালের বিক্রি কমে গেছে। মোটা চালের মধ্যে ব্রি-২৮ বস্তাপ্রতি ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে দুই হাজার ৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের বিক্রেতা মো. নজরুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও ভালো মানের মোজাম্মেল মিনিকেট চাল প্রতি কেজি ৮৫ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন আমাদেরই কিনতে হচ্ছে ৯২ টাকা কেজি দরে। হঠাত্ পাইকারিতে ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি সাত টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এখন পরিবহন খরচ ও দোকান খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি ভালো মানের মিনিকেট চাল ৯৫ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, রমজান মাসে শুধু চাল ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। বরং কিছু পণ্যের দাম আগের তুলনায় কমেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা ভোজ্যতেলের সংকটও এখন অনেকটাই কেটে গেছে বলেও তিনি জানান।
কারওয়ান বাজারের মেসার্স ঢাকা রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী মো. সায়েম হোসেন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন করে শুধু মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে, পাইকারিতে অন্যান্য চালের দাম তেমন বাড়েনি। মূলত মিনিকেট চালের ধানের সংকটের কারণে এখন এই চালের দাম বেড়েছে। মিনিকেট চালের ধান প্রতিবছর বৈশাখ মাসে উৎপাদন হয়, এখন শেষ পর্যায়ে হওয়ায় বাজারে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে, যার ফলে মিলাররা তাঁদের চাহিদামতো ধান পাচ্ছেন না। যেসব ধান কিনছেন সেগুলোও বাড়তি দরে কিনছেন। মূলত এসব কারণে মিল পর্যায়ে নতুন করে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে। তবে এক মাস পর নতুন মিনিকেট চালের ধান উৎপাদন শুরু হবে, তখন আবার দাম কমে আসবে।’
এ বিষয়ে রাজধানীর বাবুবাজার পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের বাজারে মিনিকেট চালের ধান শর্ট, যার কারণে এই চালের দাম বাড়তি। এবার চালের দাম বাড়ার আর অন্য কোনো কারণ নেই। পাইকারি পর্যায়েই গত এক মাসে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে মোটা চাল ও নাজির চাল আমদানি হওয়ার কারণে বাজারে অন্যান্য চালের কোনো সংকট নেই। তাই শুধু মিনিকেট চালের দাম বাড়লেও অন্যান্য চালের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। বৈশাখ মাসে মিনিকেট চালের ধানের উৎপাদন শুরু হবে, তখন আবার চালের দাম নেমে যাবে।’
কুষ্টিয়ার প্রগতি রাইস মিলের মালিক হযরত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চালের দাম বাড়লেই আপনারা মিল মালিকদের দোষারোপ করেন। বাজারে যে ধান পাওয়া যাচ্ছে না বা বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে সেটা তো আপনারা দেখেন না। গত ১৫ দিনে সব ধরনের ধানের দাম প্রতি মণে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা বেড়েছে। তা-ও পাওয়া যাচ্ছে না।’ বর্তমানে তাঁর মিলসহ কুষ্টিয়ার খাজানগরের কোনো মিলেই কোনো চিকন ধান বা চাল নেই বলেও তিনি জানান।
এদিকে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত বছরের নভেম্বর মাসে আমদানির ওপর ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর রেখে বাকি আমদানি শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আশানুরূপ আমদানি না হওয়ায় চালের দামে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
নওগাঁ : ধানসমৃদ্ধ এলাকা নওগাঁয়ও মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে চিকন (মিনিকেট) চালের দাম কেজিতে চার টাকা বেড়েছে। প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় প্রায় ২০০ টাকা দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু দেশে উৎপাদিত চিকন চালের দামই বেড়েছে। আমদানীকৃত চালের দাম আগের অবস্থাতেই আছে। নওগাঁ পাইকারি বাজারে দেশি কাটারি (নাজির) দুই দিন আগে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে প্রকারভেদে তিন হাজার ৬০০ থেকে তিন হাজার ৭০০ টাকা দরে। গতকাল নওগাঁ বাজারে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা প্রকারভেদে দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার ৯০০ টাকা দরে। এদিকে আমদানীকৃত চিকন কাটারি চাল ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে এক হাজার ৬৫০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা দরে।
নওগাঁ পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ী উত্তম কুমার সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, স্থানীয়ভাবে বা দেশে উৎপাদিত চালের দামই শুধু বেড়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাজারে স্থানীয় চিকন জাতের চালের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম হওয়ায় মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
নওগাঁর একাধিক চাল ব্যবসায়ী জানান, এবার সময়মতো বিদেশ থেকে চাল আমদানি না হলে স্থানীয় জাতের চিকন চালের পাশাপাশি মোটা চালে মূল্য আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
কুষ্টিয়া : গত পনেরো দিনের ব্যবধানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই-তিন টাকা বেড়েছে। আর খুচরা বাজারে মিনিকেট নামধারী চালসহ সব ধরনের চিকন চালের দামও কেজিপ্রতি বেড়েছে চার-পাঁচ টাকা। এতে করে ১ মার্চ কুষ্টিয়ার খুচরা বাজারে মিনিকেট নামধারী যে চালের দাম ছিল ৭৮ থেকে ৭৯ টাকা কেজি, গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা কেজি। ৯৫ টাকার বাসমতী গতকাল বিক্রি হয়েছে ৮৯ থেকে ১০০ টাকা কেজি। ৫৪ টাকার ২৮ চালসহ সব ধরনের মোটা চাল গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। মিল মালিকরা বলছেন, গত ১৫ দিনে পাঁচবার ধানের দাম বাড়ছে। আমাদের কী করার আছে।
শহরের পৌর বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা মনজুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মিল গেট থেকে আমরা যে দামে কিনে আনছি তা থেকে দুই টাকা বেশি দামে বিক্রি করছি। গতকাল আমরা মিনিকেট ৮৪ থেকে ৮৬ এবং বাসমতী ৯৮ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করেছি।’
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ওয়াজিউর রহমান বলেন, ১ মার্চ থেকে শুধু চিকন চালের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। আবার বাজারে ধানের সংকটও রয়েছে। তবে অযৌক্তিকভাবে চালের দাম বাড়ানো হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে চালকল মালিকদের ধান ও চালের মজুদের বিষয়ে কোনো গরমিল পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে রোজা ঘিরে বাজার আরো অস্থির হবে বলে আশঙ্কা করা হলেও শেষ পর্যন্ত বাজার বেশ স্বস্তিরই ছিল। টমেটো, আলুর দর নেমে এসেছে হাতের নাগালে। পেঁয়াজের দামেও ছিল স্বস্তি। এ ছাড়া সব ধরনের সবজির দামও বেশ কমে আসে। এ ধারা এখনো বজায় রয়েছে। রোজার পণ্যের দরও তেমন বাড়েনি। বরং এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ কেজি মানভেদে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, ছোলা মানভেদে কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, চিনি কেজি ১২০ টাকা, আলু কেজি ২০ টাকা, দেশি আদা কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, দেশি নতুন রসুন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা এবং আমদানীকৃত রসুন কেজি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রোজার শুরুতে মুরগি কিছুটা চড়া দামে বিক্রি হলেও এখন অনেকটাই কমে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি কেজি মানভেদে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা রোজার শুরুতে বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকায়। তবে সোনালি মুরগির দাম যে হারে কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম সেই হারে কমেনি। কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমে ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক (কুষ্টিয়া) ও নওগাঁ প্রতিনিধি]
সম্পর্কিত খবর
দুই দশক আগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে পৃথক আবেদন (লিভ টু আপিল) করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এসব আবেদন গতকাল বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য ছিল বলে সাংবাদিকদের জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরের আইনজীবী ছিলেন তিনি।
গত বছর ১ ডিসেম্বর বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রায়ে বলা হয়, আইনের ভিত্তিতে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়নি। ফলে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ। তাই বিচারিক আদালতের ডেথ রেফারেন্স নাকচ এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করা হলো। এ রায়ের ফলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরসহ বিচারিক আদালত যাঁদের সাজা দিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে খালাস দেওয়া হয়।
খালাসের এ রায়ের বিরুদ্ধে ‘আপিল করা উচিত’ বলে সেদিন মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের দাবি, এ হামলা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।
সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নেবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। লিখিত মতামত পাওয়ার পর অন্য দলগুলোকে সংলাপে ডাকবে কমিশন। তবে এখনো বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকে লিখিত মতামত জমা দেয়নি বলে জানা গেছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার কালের কণ্ঠকে জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার থেকে আনুষ্ঠানিক সংলাপ শুরু হচ্ছে। সংসদ ভবনের এলডি হলে এই সংলাপে প্রথম দিনে অংশ নেবে এলডিপি। আগামী শনিবার দুটি এবং রবিবার একটি দল সংলাপে অংশ নেবে। পর্যায়ক্রমে সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সংস্কার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মতামত চাওয়া হয়েছে। কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে আমাদের পার্টি ফোরামে আলোচনা হয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে মতামত দেওয়ার বিষয়ে এরই মধ্যে কমিশনকে জানিয়েছি।’ জোটগতভাবে সংলাপে অংশগ্রহণের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে পাঠানো সুপারিশগুলোর বিষয়ে লিখিতভাবে মতামত জানানো হবে।’
সূত্র মতে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। তারা সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদনগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ চিহ্নিত করে। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত ৭০টি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন-সংক্রান্ত ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ রয়েছে। ওই সুপারিশগুলো ছক আকারে বিন্যস্ত করা হয়েছে। ওই ছকগুলো গত ৬ মার্চ ৩৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১২টি দল নিবন্ধিত নয়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৯। কমিশনের পক্ষ থেকে আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দল এবং জোটগুলোকে তাদের মতামত জানানোর জন্য বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে সাতটি দল মতামত দিলেও পরবর্তী সময়ে আরো আটটি দল মতামত জমা দিয়েছে। অন্যরা অতিরিক্ত সময় নিয়েছে।
কমিশন সূত্র জানায়, ঐকমত্য কমিশনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির পক্ষ থেকে এখনো কিছুই জানানো হয়নি। এ পর্যন্ত মতামত জমা দেওয়া ১৫টি দল হলো এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), আমজনতার দল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), নাগরিক ঐক্য, জাতীয় গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ জাসদ।
মতামত দেওয়ার জন্য সময় নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি), জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ১২ দলীয় জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় নজর দেওয়া হবে। পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা ভাতা বাড়ানো হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আগামী বাজেটে ব্যক্তি খাতের করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকার করার প্রস্তাব দিয়েছেন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও টেলিভিশনের শীর্ষ নির্বাহীরা। একই সঙ্গে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাজেট বক্তব্যের কলেবর কমানো, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং নির্ভুল ডাটা-পরিসংখ্যান তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছেন তাঁরা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাজেট দিয়ে যেতে চাই যেটি পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সরকার যে-ই আসুক, যেন ছুড়ে ফেলে দিতে না পারে, আমরা সেভাবেই একটি বাজেট দিতে চাই। আগামী বাজেটে আমরা প্রবৃদ্ধির দিকে নজর দিচ্ছি না, বরং আমরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছি। আমরা দেশীয় শিল্প সুরক্ষার একটি বাজেট দিতে চাই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদনমুুখিতাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ফিন্যানশিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, ‘সামনেই তো নির্বাচন। আর জুনে নতুন বাজেট। ফলে আপনারা যে বাজেট দিতে যাচ্ছেন সেটা পরবর্তী সরকারের জন্য কতটা সহায়ক হবে?’ যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার বলেন, ‘বিপর্যস্ত অর্থনীতি সামলাতে আপনি সফল হয়েছেন। এ জন্য ধন্যবাদ আপনি পেতেই পারেন। আগামী বাজেট সত্যিই আপনার জন্য চ্যালেঞ্জ।
সিনিয়র সাংবাদিক শওকত হোসেন মাসুম বলেন, ‘একটি অর্থবছরে প্রকৃতপক্ষে কতসংখ্যক কর্মসংস্থান হয় সে হিসাবটা কখনো আমরা পাইনি। এবার আপনারা সে হিসাব দেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা। ১৫ বছরে গণমানুষের প্রকৃত আয় বাড়েনি। আপনারা একটা মেকানিজম করে এই হিসাবটা বের করুন যে এক অর্থবছরে কতসংখ্যক কর্মসংস্থান হয়। সবখানে সংস্কার হচ্ছে, আপনারা বাজেট বত্তৃদ্ধতার আকারে সংস্কার আনুন। ঢাউস আকৃতির বাজেট বত্তৃদ্ধতার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা কমিয়ে আনুন। বাস্তবমুখী বাজেট দিন। ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে যে বাজেট দেওয়া হতো সেটা ছিল অহেতুক। বাজেট উপস্থাপনের নামে দেখানো হতো এক রকমের প্রামাণ্যচিত্র।’
ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অ্যাসোসিয়েট এডিটর শামীম জাহেদী বলেন, ‘কালো টাকা বৈধ করার ক্ষেত্রে কর সমান হবে কি না সেটায় আপনারা নজর দেবেন। দেশে এতগুলো টেলিভিশন আছে, দেড় হাজার কেবল অপারেটর আছে, সারা দেশে সাড়ে তিন কোটি বাড়ি আছে। এর ৫৪ শতাংশ বাড়িতে টেলিভিশন দেখা যায়। প্রত্যেকে ৩০০/৫০০ টাকা দিয়ে সংযোগ নেন। এখানকার টাকাটা আমরা এক টাকাও পাই না। সরকার পায় কি না আমি জানি না। এখানে একটা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাহলে আমরা কিছু টাকা পাব। সরকারও রাজস্ব পাবে।’
সময়ের আলোর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শাহনেওয়াজ করিম বলেন, সবার জন্য সুখবর ও স্বস্তিদায়ক বাজেট দিন। করদাতাদের জন্য ট্যাক্স কার্ড প্রবর্তন করা যায় কি না ভেবে দেখুন। এটা করতে পারলে তাঁরা সম্মানিত বোধ করবেন।
ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিফলন বাজেটে থাকবে বলে আমার প্রত্যাশা। করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ করা হোক। বেকারত্ব কমনোর উদ্যোগ নেওয়া হোক। এ জন্য এসএমই উদ্যোক্তাদের যথেষ্ট সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ভাতা বাড়ানো প্রয়োজন। নয়তো বন্ধ করে দিন। এটা মিনিমাম পাঁচ হাজার টাকা হওয়া উচিত। টেলিভিশনে কোনো ওয়েজ বোর্ড নেই। একটি ওয়েজ বোর্ড এখানেও থাকা প্রয়োজন। ভারতীয় চ্যানেলগুলো এখানে দেদার চলছে, আমাদের কোনো চ্যানেল ভারতে চলে না। এখানেও কাজ করা প্রয়োজন।’
এটিএন বাংলার হেড অব নিউজ মনিউর রহমান বলেন, করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ করা হোক। বাজেট বাস্তবায়ন কতটুকু হলো সেটা দেখা দরকার।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ চান না বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিক। প্রথমত, দলের ভেতরে যারা অন্যায়ের জন্য দায়ী, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। গত ১৭ মার্চ দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম আরো বলেছেন, নতুন দলের চ্যালেঞ্জ নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ নিয়ে।
আন্দোলন থেকে সরকারে, তারপর আবার রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে ‘বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট’কে নাহিদ ইসলাম বলেন, একটি সরকারকে বাইরে থেকে দেখা আর ভেতর থেকে দেখা সম্পূর্ণ আলাদা অভিজ্ঞতা। অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখন বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত সংকটপূর্ণ সময় ছিল। এটি আমার জন্যও চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি সময়ের দাবিতেই পদত্যাগ করে মূলধারার রাজনীতিতে ফিরেছি।
নিজের দল এনসিপি সম্পর্কে নাহিদ বলেন, এনসিপি একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল এবং আমরা এই আদর্শ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য হলো নতুন কণ্ঠস্বর, বিশেষ করে তরুণ এবং সব সামাজিক শ্রেণির ব্যক্তিদের জন্য জায়গা তৈরি করা, যারা বছরের পর বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী রাজনীতি থেকে বাদ পড়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, এনসিপি এবং জামায়াতে ইসলামী সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং আমাদের এজেন্ডাও সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের মধ্যে কোনো সংযোগ নেই। কিছু দাবিতে মিল থাকতে পারে, যেমন আমরা সাংবিধানিক সংস্কার ও গণপরিষদ গঠনের পক্ষে। কিন্তু আমাদের আদর্শিক অবস্থান ভিন্ন এবং উগ্রবাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
নির্বাচন প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম।
সূত্র : বাংলাদেশ ডিপ্লোম্যাট