বিশেষ লেখা

তুলসী গ্যাবার্ড, ইসলামী খেলাফত এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

  • অদিতি করিম
শেয়ার
তুলসী গ্যাবার্ড, ইসলামী খেলাফত এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের একটি বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশে তোলপাড় চলছে। তুলসী গ্যাবার্ড গত ১৭ মার্চ ভারত সফরকালে সেখানকার গণমাধ্যম এনডিটিভিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় সঞ্চালক বিষ্ণু সোমের এক প্রশ্নের উত্তরে তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান বলেছেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অনেক দিন ধরে নিপীড়ন, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে আসছে এবং এটি আমেরিকান সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বব্যাপী ইসলামপন্থী, সন্ত্রাসবাদ দমন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন নতুন ক্যাবিনেট এরই মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তুলসী গ্যাবার্ড তাঁর বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বক্তব্য শেষ করেন এভাবে যে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই মতাদর্শ ও উদ্দেশ্য অনুসরণ করে, এটি মূলত একটি ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।

তার এই বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রতিবাদ দেওয়া হয়।

এই প্রতিবাদে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, তাঁর বক্তব্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এবং সুনামের জন্য ক্ষতিকর। এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনও তুলসী গ্যাবার্ডের এই বক্তব্যকে আপত্তিকর বলে নাকচ করে দেন। মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের বক্তব্য সরকারের ভেতর উত্তেজনা এবং তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
শুধু সরকার নয়, সরকারবিরোধী মহলেরও এ ধরনের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া লক্ষণীয়। বিশেষ করে কিছু কিছু মহল এই বক্তব্যকে পুঁজি করে সরকারকে কোণঠাসা করার চেষ্টায় ব্যস্ত। অনেকে মনে করছেন, এই বক্তব্য এবং পাল্টা বক্তব্য বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন টানাপড়েনের সূচনা। যদিও অর্থ উপদেষ্টা দাবি করেছেন, এটি দুই দেশের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে না। তুলসী গ্যাবার্ডের এই বক্তব্যের মধ্যে নতুন কী আছে? তিনি কী বলেছেন এবং বাংলাদেশ কেন তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে এত উচ্চমাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, সে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা দরকার।

প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধানের বক্তব্য বিশ্লেষণের আগে আমাদের একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে। দেখতে হবে যে তুলসী গ্যাবার্ড আসলে কে? তুলসী গ্যাবার্ডের নিয়োগ ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বড় চমক। গ্যাবার্ডের গোয়েন্দা প্রধান হওয়ার ঘটনাটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই অনেকে বিস্মিত হয়েছিলেন। তুলসী একজন দক্ষ ও সাহসী সেনা কর্মকর্তা। মার্কিন সেনা হিসেবে তিনি ইরাক ও কুয়েতের যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদায় অবসরে যান। চাকরি শেষে প্রথমে তিনি ডেমোক্রেটিক দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। পরে রিপাবলিকান দলের সদস্য পদ লাভ করেন। তুলসীর বাবা মাইক গ্যাবার্ড একজন ক্যাথলিক খ্রিস্টান ছিলেন। তাঁর মা ক্যারল গ্যাবার্ড প্রথমে খ্রিস্টান ছিলেন, পরে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁদের পরিবার মূলত ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) বা হরে কৃষ্ণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। মূলত এ সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁরা কৃষ্ণভক্তিতে আকৃষ্ট হন। ভক্তি, জয়, আরিয়ান ও বৃন্দাবন নামে তুলসীর আরো চার ভাই-বোন আছে। তিনি একজন ইসকন ভক্ত হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তিনি ব্যক্তি জীবনেও একজন নিরামিষভোজী। তাঁর সামরিক জীবন যেমন বর্ণাঢ্যময়, তেমনি রাজনৈতিক জীবনেও তিনি কট্টর ইসলামবিদ্বেষী এবং কট্টর সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদ হিসেবে পরিচিত। তুলসী গ্যাবার্ড খুব সম্ভবত সেই বিরল একজন ইসকনভক্ত এবং হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী, যার মা-বাবা দুজনের কেউ-ই ভারতীয় বংশোদ্ভূত না হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজেকে একজন হরে কৃষ্ণ ভক্ত মনে করেন। একই সঙ্গে ভারতকে তিনি তাঁর মাতৃভূমি মনে করেন।

হিন্দুস্থান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তুলসী বলেছেন, যখনই তিনি ভারতে এসেছেন, তখনই তাঁর মনে হয়েছে তিনি যেন মাতৃভূমিতে এসেছেন। শুধু ধর্মীয় কারণে তিনি ভারতের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করেন বলেও তিনি ওই সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন। এবার ভারতে আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে একটি গঙ্গাজল কুম্ভ উপহার দিয়েছেন। তুলসী গ্যাবার্ডের ইসলামী উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং হিন্দু ধর্মের প্রতি নমনীয় অবস্থানটি আমাদের বিশ্লেষেণ করতে হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প জেনে-বুঝেই তাঁকে গোয়েন্দা প্রধান করেছেন। ইসলামের নামে উগ্র সন্ত্রাসবাদ দমনের মিশনে তুলসী তাঁর অন্যতম হাতিয়ার। কাজেই তুলসী গ্যাবার্ডের যেকোনো বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করার আগে এসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান থেকেই তুলসী গ্যাবার্ডের নিয়োগ। তুলসী গ্যাবার্ড একজন কট্টর হিন্দুত্ববাদী এবং ইসকনভক্ত, ভারতের প্রতি তাঁর একটি আলাদা আবেগ রয়েছে। তুলসী গ্যাবার্ড ভারতে বসে বক্তব্য দেওয়াতেই বিষয়টি বেশি স্পর্শকাতর হয়েছে বলে অনেকে মনে করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা জানি যে ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক একটি টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ভারতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনাটি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বেশ দূরত্ব এবং মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। যদিও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করছেন ইদানীং। বিশেষ করে তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলোতে তিনি সেভেন সিস্টারকে বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি নতুন চিন্তা এবং তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তিনি এটাও বলেছেন যে ভারতের সঙ্গে কিছু সম্পর্কের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে কিছু ভুল তথ্য এবং অপপ্রচারের কারণে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ৫ আগস্টের পর থেকে ভারতের কিছু কিছু গণমাধ্যম প্রচুর অপতথ্য প্রচার করছে।

এখন যদি আমরা বিশ্লেষণ করে দেখি যে তুলসী গ্যাবার্ড যে বক্তব্য দিয়েছেন তার মধ্যে নতুন কী আছে? তুলসী গ্যাবার্ড যে বক্তব্যটি দিয়েছেন তার মধ্যে ইসলামী খেলাফত ছাড়া নতুন কিছু নেই; বরং বাংলাদেশ সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য কিছুদিন ধরে আন্তর্জাতিক মহলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দিচ্ছেন। যাঁরাই বাংলাদেশ সফরে আসছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত্ করছেন, তাঁরাই বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের উত্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের জায়গা নেই। এটাকে কঠোরভাবে দমন করা হবে। কদিন আগেই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের পক্ষ থেকে একটি সমাবেশ ডাকা হয়েছিল। এই সমাবেশের মাধ্যমে তাঁরা ইসলামী খেলাফত কায়েমের জন্য ঘোষণা দিয়েছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান ঘোষণা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কয়েকজন হিযবুত তাহরীরের সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের ৫ আগস্টের আগে থেকেই বিভিন্ন তৎপরতা এবং কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা যায়। প্রথমদিকে সরকার তাঁদের কর্মকাণ্ড উপেক্ষা করলেও এখন সরকার তাঁদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে তুলসী গ্যাবার্ডের এই বক্তব্য নিয়ে যখন বাংলাদেশে হৈচৈ চলছে, ঠিক তখন মায়ানমার সেনাবাহিনীর আতঙ্কের নাম হিসেবে পরিচিত আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁর এই গ্রেপ্তারের ঘটনায় এই অঞ্চলে নতুন করে জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের আলোচনা হচ্ছে। আতাউল্লাহ একজন উগ্র জঙ্গিবাদী নেতা হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে যে ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, তার বিরুদ্ধে মূলত তুলসী গ্যাবার্ড কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে ইসলামী খেলাফত উত্থানকে প্রতিহত করা হবে। এর সঙ্গে সরকারের বিরোধটা কোথায়, সেটিই আসলে ভেবে দেখার বিষয়। সরকার কি না বুঝে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য নিয়ে অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল কি না সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ তুলসী গ্যাবার্ড যে বক্তব্যগুলো বলেছেন, সেই বক্তব্য গত পাঁচ মাসে একাধিক ব্যক্তি উচ্চারণ করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন ব্যক্তি এই ধরনের কথা বলেছেন। সম্প্রতি একজন মার্কিন জনপ্রতিনিধি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। তাঁর কাছেও প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নিপীড়নগুলো হচ্ছে, তা ধর্মীয় নয়, সেটি রাজনৈতিক।

বাংলাদেশকে কতগুলো বাস্তবতা স্বীকার করতে হবে। প্রথমত, ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উগ্র জঙ্গিবাদী হিযবুত তাহরীরের মতো উগ্র জঙ্গিবাদীগোষ্ঠী মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। একটা বিপ্লবের পর এটা করার চেষ্টা করাটাই স্বাভাবিক। এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থানও খুব সুস্পষ্ট। সরকার এ ধরনের খেলাফতের উত্থানকে প্রতিহত করার অঙ্গীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থানও স্পষ্ট। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে যে জঙ্গিবাদকে জায়গা দেওয়া উচিত না, সে ব্যাপারে সব সরকারও একমত। কাজেই তুলসী গ্যাবার্ড সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে বা বিরুদ্ধপক্ষ হিসেবে কোনো বক্তব্য দেননি; বরং তিনি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষেই একটি অবস্থান গ্রহণ করেছেন। মার্কিন গোয়েন্দা প্রধানের এই বক্তব্যটিকে আত্মস্থ করে তার তাৎপর্য অনুধাবন করে বাংলাদেশের ব্যবস্থা গ্রহণ করাটাই সঠিক ও সমীচীন। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত করার জন্য হিযবুত তাহরীরসহ বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠন তৎপর। বাংলাদেশে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) তৎপরতাও নতুন করে উদ্বেগ জাগাচ্ছে। এসব সন্ত্রাসবাদ এবং উগ্রবাদকে প্রতিহত করতে গেলে আন্তর্জাতিক সাহায্য লাগবে। মার্কিন সহায়তা তো অবশ্যই লাগবে। তুলসী গ্যাবার্ড যেহেতু মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান, অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর গোয়েন্দা তথ্য তাঁর কাছে আছে। এ রকম একটা দায়িত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি যখন একটি বক্তব্য দেন, তখন নিশ্চয়ই সেই বক্তব্যের গুরুত্ব বিবেচনা করা উচিত। বক্তব্যটিকে রাজনৈতিক আবরণে না দেখে কোথায় বক্তব্যটি দিলেন না ভেবে এর পুরো তাৎপর্য অনুধাবন করা উচিত। এ বিষয়টি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা এবং বাংলাদেশে সাম্ভাব্য জঙ্গিবাদ এবং ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার যে প্রচেষ্টা তাঁকে সর্বাত্মকভাবে প্রতিহত করার জন্য কার্যকর এবং দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকারকে এই বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের একজন। ড. ইউনূস যথার্থ বলেছেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁরা সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চান। আমরা বিশ্বাস করি যে বর্তমান সরকার ইসলামী খেলাফত এবং উগ্রবাদকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেবে না এবং সমর্থন করবে না। এ রকম বাস্তবতায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করে বাংলাদেশে যেন এ ধরনের উগ্র সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রবাদী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে হবে। বৈশ্বিক ঐক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদমুক্ত একটি রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে নিতে হবে। সেটি হবে একটি দায়িত্বশীল আচরণ। শুধু যে কোনো বক্তব্যকে একটি রাজনৈতিক চরিত্র দিয়ে তার প্রতিবাদ করাটা কখনোই ইতিবাচক কূটনীতির লক্ষণ নয়।

 

অদিতি করিম, নাট্যকার ও কলাম লেখক

ইমেইল : auditekarim@gmail.com

 

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ভোট বিলম্বিত হবে না : ড. ইউনূস

    বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছর : উপদেষ্টা পরিষদ
বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
ভোট বিলম্বিত হবে না : ড. ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং কোনো দাবির কারণে ভোট বিলম্বিত হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বৃহস্পতিবার  ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ড. কমফোর্ট ইরো।

প্রতিনিধিদলকে অধ্যাপক ইউনূস নিশ্চিত করেছেন সরকার নির্বাচনের জন্য দুটি সম্ভাব্য সময়সূচি নির্ধারণ করেছে।

এই তারিখ পরিবর্তন করা হবে না।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে সীমিতসংখ্যক সংস্কার চায়, তাহলে নির্বাচন এই বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি বৃহত্তর সংস্কার কার্যক্রম প্রয়োজন হয়, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের কোনো কারণ নেই।

আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।

আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দলটিকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মধ্যে যাঁরা হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত, তাঁদের বাংলাদেশের আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

ঐকমত্য কমিশন বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকারের নীতিগুলো নির্ধারণে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করে স্বাক্ষরের পরিকল্পনা রয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের কর্মকর্তারা এই সপ্তাহে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী নেতা আতাউল্লাহর গ্রেপ্তারের প্রশংসা করেন এবং এটিকে শরণার্থী ক্যাম্পে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ হিসেবে দেখেছেন।

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা ৭ বছর : বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলায় সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর নির্ধারণ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এটি পাস হয়।

পরে রাজধানীর হেয়ার রোডে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এসব তথ্য জানান।

শফিকুল আলম বলেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ মামলাগুলোর ক্ষেত্রে নতুন কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আগের আইনে নতুন কিছু সেকশন সংযুক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছর করা হয়েছে। এ ছাড়া এই মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আরো যেসব পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব ছিল, সেগুলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনী পাস করেছে। এই বিষয়ে আইন উপদেষ্টা সম্প্রতি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এরপর আমরা নারী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলাপ করেছি এবং তাদের মতামত আইনে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই আলোচনার ভিত্তিতে আজকের বৈঠকে সংশোধনী পাস হয়েছে।

প্রেস সচিব জানান, আইনে বলাত্কার-এর নতুন সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের মামলাগুলোর জন্য ডিএনএ টেস্টের বিলম্ব একটি বড় সমস্যা ছিল, সেই বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, এটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আওতায় থাকবে। তবে এটি একটি পৃথক সেকশনে বিচার হবে। এটি আলাদা অপরাধ নয়, একই অপরাধের আওতায় পৃথকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডিএনএ টেস্ট দ্রুত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অধ্যাদেশের সংশোধনী অনুমোদন : প্রেস সচিব জানান, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অধ্যাদেশের সংশোধনী অনুমোদন পেয়েছে। সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এবং সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য এই সংশোধনী আনা হয়েছে। প্রাক্কলিত মূল্যের ১০ শতাংশের কম হলে টেন্ডার বাতিলের যে বিধান ছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। আগের কাজের মূল্যায়নের জন্য যে ম্যাট্রিক্স ছিল, যা একই প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ পেতে সহায়তা করছিল, তা পরিবর্তন করে নতুন সক্ষমতা ম্যাট্রিক্স চালু করা হবে। এতে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হবে।

বর্তমানে ৬৫ শতাংশ কাজের দরপত্র বা টেন্ডার অনলাইনে হয় এবং এটি শতভাগে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্তরা আগে নিজ নামে নামজারি করতে পারতেন না, সেই অসুবিধা দূর করতে আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে।

সরকারি ছুটি ও অন্যান্য সিদ্ধান্ত : শফিকুল আলম জানান, জনসাধারণের সুবিধার্থে ৩ এপ্রিল এক দিন ঈদের ছুটি বাড়ানো হয়েছে। ফলে এবার ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। চৈত্রসংক্রান্তিতে নির্বাহী আদেশে তিন পার্বত্য জেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সাঁওতাল, গারো, খাসিয়া, জৈন্তাসহ সমতলের বাঙালি ছাড়া অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীও এই ছুটির আওতায় থাকবে।

ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো : প্রেস সচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এই সাত মাসে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আরো বেড়েছে। আমাদের সম্পর্ক ভালো, তবে ভিসার বিষয়ে কিছু জটিলতা আছে, যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানাতে পারে। তবে আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই এবং সেটি অবশ্যই ন্যায্যতা, সমতা ও মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক হতে হবে।

চীনে প্রধান উপদেষ্টার সফর ঐতিহাসিক হতে যাচ্ছে : শফিকুল আলম বলেন, চীনে প্রধান উপদেষ্টার সফর একটি ঐতিহাসিক সফর হতে যাচ্ছে। চীন আমাদের তিনটি কৃষিপণ্য আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানি করতে চায়। আমরা আশা করছি, চীনে রপ্তানির জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

তিনি বলেন, আমের মান নিশ্চিত করতে এফএও বাংলাদেশকে চার মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে। রপ্তানির জন্য কিছু স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখতে তারা আমাদের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের আম চীনে ব্যাপকভাবে রপ্তানি করা যাবে।

শফিকুল আলম বলেন, প্রফেসর ইউনূস চাচ্ছেন চীনের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে এসে বিনিয়োগ করুক, যাতে আমাদের দেশে উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়।

বিভিন্ন কমিশনের রিপোর্ট : সংবাদ সম্মেলনে ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, শনিবার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন তাদের রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেবে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট আশা করছি এই মাসেই অথবা প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর শেষে জমা হবে।

 

মন্তব্য

ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগের শঙ্কা

জহিরুল ইসলাম
জহিরুল ইসলাম
শেয়ার
ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগের শঙ্কা

ঈদের আনন্দ উদযাপনে রাজধানীবাসী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রিয়জনের কাছে ছুটে যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এবার পবিত্র ঈদুল ফিতরে এক কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ রাজধানী ছেড়ে প্রিয়জনের কাছে যেতে পারে। তবে এবারের ঈদ যাত্রায়ও সড়কে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার একদিকে রয়েছে যানজটের ভোগান্তি, অন্যদিকে নিরাপত্তাঝুঁকি তো আছেই।

    

বিশেষ করে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেটসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ১৫৯টি স্পটে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর বাইপাইল ও চন্দ্রা মোড়ে যানবাহনের প্রচণ্ড  চাপে রাজধানীর প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে তীব্র যানজটে ঈদ যাত্রার ভোগান্তি আরো বাড়তে পারে।

তবে যানজট নিরসনে জননিরাপত্তা বিভাগ ঈদের আগে ও পরে  চিহ্নিত স্পটগুলোয় বিশেষ নজরদারি রাখতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ করিডরগুলোর সড়ক ঈদের সাত দিন আগেই মেরামত কিংবা সংস্কার করতে বলা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা-বাইপাস (মদনপুর-ভুলতা-ভোগড়া-এন-১০৫), নবীনগর-চন্দ্রা (এন-৪৫০), ঢাকা-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ (এন-৩), ঢাকা-জয়দেবপুর (এন-৩), ঢাকা (ভোগড়া)-চন্দ্রা-এলেঙ্গা, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-গোপালগঞ্জ-খুলনা, ভাঙ্গা-বরিশাল। একই সঙ্গে রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটির আওতায় থাকা সড়কগুলো।

জননিরাপত্তা বিভাগের তথ্যানুযায়ী, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩৮ থেকে ৩৯টি সড়কের অবস্থা যথেষ্ট খারাপ, যা দ্রুত মেরামত প্রয়োজন। প্রতিবছর ঈদুল ফিতরে এক কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ রাজধানী ছাড়ে, আর প্রায় ৩০ লাখ মানুষ রাজধানীতে প্রবেশ করে।

এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এবারের ঈদ যাত্রায়ও দুর্ভোগের শিকার হতে পারে যাত্রীসাধারণ।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক সূত্র জানায়, যানজটের আশঙ্কা করা চিহ্নিত ১৫৯টি স্পটের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে রয়েছে ৪৯টি স্পট। ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে রয়েছে ৫৪টি স্পট। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রয়েছে ছয়টি স্পট। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রয়েছে ৪২টি স্পট এবং ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কে রয়েছে আটটি স্পট।

এর মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বেশি যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রায় ৭০০ পুলিশ সদস্য কাজ করবে। তবে ৩৮ থেকে ৩৯টি সড়কের অবস্থা বেশ খারাপ। যেগুলো দ্রুত মেরামত করা দরকার।

ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে সম্প্রতি আয়োজিত এক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ঈদে এক কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ রাজধানী ছেড়ে যাবে আর ৩০ লাখের মতো মানুষ রাজধানীতে আসবে। এই দেড় কোটি মানুষের ঈদের আনন্দের যাতায়াত যানজটসহ নানা কারণে নিরানন্দের হয়ে যায়। এসব বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম বলেন, ভাঙ্গা সড়ক আর যানজট আমরা প্রত্যাশা করি না। যানজটে যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি আমাদেরও ক্ষতি হয়। যানজট বেশি হলে ট্রিপ কমে যায়। ফলে শুরু থেকে আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বলে আসছি সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে।

 

 

 

উত্তরের পথে ১৩ কিলোমিটারের যানজটের আশঙ্কা

উত্তরের পথে ১৩ কিলোমিটারের যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত এবারও যানজট হতে পারে। কারণ, এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে উন্নয়নকাজ এখনো শেষ হয়নি। মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ফলে যানজটে ভোগান্তির আশঙ্কা থাকছেই। আবার উত্তরবঙ্গসহ ময়মনসিংহের প্রায় ২৩ জেলার পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করে এই মহাসড়কে। স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন ১৮-২০ হাজার ছোট-বড় যান যমুনা সেতু দিয়ে পারাপার করে। তবে ঈদে যানবাহনের সংখ্যা দুই থেকে তিনগুণ বেড়ে ৫০ হাজার অতিক্রম করে। এতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, মহাসড়কে যান বিকল এবং দুর্ঘটনার কারণে ভোগান্তি তৈরি হয়।

তবে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ প্রশাসন ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত টাঙ্গাইল অংশে ৭ শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

 

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটের যেসব স্থানে যানজটের আশঙ্কা

ঢাকা-উত্তরবঙ্গ রুটের বাইপাইল মোড়, চন্দ্রা মোড়, গোড়াই মিলগেট, যমুনা সেতু পশ্চিম গোলচত্বর, ফেন্সিগেটের আগের অংশ, ফেন্সিগেট সার্ভিস লেন, মুলিবাড়ী আন্ডারপাসের আগে, কড্ডা ফ্লাইওভারের পশ্চিমে, কোনাবাড়ী আন্ডারপাসের আগে, হাটিকুমরুল পাঁচলিয়া বাসস্ট্যান্ড, হাটিকুমরুল ধোপাকান্দি ব্রিজ, হাটিকুমরুল গোলচত্বর, হাটিকুমরুল বাজার, ঘুরকা বেলতলা, ভূঁইয়াগাতী বাসস্ট্যান্ড, হোটেল হাইওয়ে অভি ভিলা, ষোলোমাইল, সিরাজগঞ্জ বাইপাস, জমজম দইঘর, বগুড়া বাজার থেকে সীমাবাড়ী কলেজ, পেন্টাগন হোটেল, ফুড ভিলেজ হোটেল, দাদপুর জামাই রোড, নিউ পাপিয়া হোটেল থেকে চাচা-ভাতিজা হোটেল, জোড়া ব্রিজ, চান্দাইকোনা গরুর হাট পর্যন্ত।

 

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের যেসব স্থানে যানজটের আশঙ্কা

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের কাচিকাটা টোলপ্লাজা, বনপাড়া বাইপাস, বনপাড়া বাজার, রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের বানেশ্বর বাজার, রাজশাহী, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা বটতলা থেকে মোনায়েম কন্সট্রাকশন, ছনকা বাজার, শেরপুর মডেল মসজিদের সামনে, নয়ামাইল বাজার, মাঝিরা বাজার, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানার বনানী বাসস্ট্যান্ড, শাকপালা, বগুড়া জেলার সদর থানার জিয়া মেডিক্যাল কলেজ গেটের সামনে, তিন মাথা রেল ক্রসিং, চার মাথা ফ্লাইওভার ব্রিজের নিচে, বারোপুর বাসস্ট্যান্ড, মাটিডালি বিমানবন্দর মোড়, টিএমএসএসের সামনে, শিবগঞ্জ থানার মহাস্থান বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মোকামতলা বাসস্ট্যান্ড ফ্লাইওভারের নিচে, মায়ামনি চৌরাস্তা মোড় থেকে গোবিন্দগঞ্জ ব্র্যাক অফিস, গাইবান্ধা, পলাশবাড়ী উপজেলা পোস্ট অফিস এবং শিল্পী রেস্তোরাঁ থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর পর্যন্ত পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা, পীরগঞ্জ উপজেলা বাস স্টপেজ থেকে সাসেক প্রকল্পের নির্মাণাধীন আন্ডারপাসের উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত, বিশ মাইল, পীরগঞ্জ, রংপুর, বড় দরগাহ্ আন্ডারপাস, পীরগঞ্জ, রংপুর, শঠিবাড়ী আন্ডারপাস, শঠিবাড়ী বাজার এবং বাস স্টপেজ এলাকা, মিঠাপুকুর, রংপুরকে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের যানজটের গুরুত্বপূর্ণ স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ভোগাবে সিঙ্গেল লেন

দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ১৮ কিলোমিটার এলাকা পড়েছে রূপগঞ্জ অংশে। এ ১৮ কিলোমিটার এলাকায় স্বাভাবিক সময়েও দীর্ঘ যানজট থাকে। ঈদ যাত্রা শুরু হলে যানবাহন চলাচল কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় যানজটও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এবারও সড়কের এই অংশের যানজটে ঈদ যাত্রায় চরম ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সিঙ্গেল লেনের রাস্তা। চালকরা নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানোয় যানজট লেগে থাকে।

অন্যদিকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ অংশেও যানজটে ভোগান্তির আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের গাড়িগুলো টার্মিনালে না রেখে রাস্তার ওপরে রেখে যাত্রী ওঠানামা করানোয় এবং তিন চাকার বাহন মহাসড়কে চলাচল করায় যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যস্ততম এই মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ থেকে দেবিদ্বার অংশে ঈদের সময় যানজট প্রকট আকার ধারণ করে।

ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশেও যানজটে ভুগতে হতে পারে যাত্রীদের। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে কাজ বন্ধ থাকায় ভাঙাচুরা অংশে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে যানজট শুরু হয়েছে। তারাবো বিশ্বরোড, পাঁচদোনা, ভেলানগর, ইটাখোলা, ভৈরব চৌরাস্তা, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড, মাধবপুর, ওলিপুর রেলগেট, হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, দেবপাড়া বাজার, আউশকান্দি, শেরপুর ও গোয়ালাবাজার এবং শেরপুর টোলপ্লাজা এলাকায় প্রায় প্রতিদিন যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী অংশে সাধারণত তুলনামূলক কম যানজট হয়। তবে এবার ছয় লেন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় মাধবদী, পাঁচদোনা, ভেলানগর, ইটাখোলা, মরজাল ও বারৈচাএই সাতটি পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ অংশের প্রায় ২২ কিলোমিটারজুড়ে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ড, তারাবো বিশ্বরোড গোলচত্বর, রূপসী বাসস্ট্যান্ড, বরপা, গার্মেন্টসের মোড় ও গাউছিয়া স্ট্যান্ডে যানজট পরিস্থিতির আরো জটিল হতে পারে।

ঈদ যাত্রায় যানজটের ভোগান্তির বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদ যাত্রায় যাতে মানুষের ভোগান্তি কম হয় সে চেষ্টা সব সময় আমাদের থাকে। এবারও আমরা সেই চেষ্টা করছি।

 

(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও রূপগঞ্জ প্রতিনিধি।)

মন্তব্য

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশের পদক্ষেপে আশ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্র

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশের পদক্ষেপে আশ্বস্ত যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্র আস্থায় নিতে পেরেছে। ওয়াশিংটনে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। 

উল্লেখ্য, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ফের বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।

দেশটির স্থানীয় সময় বুধবার ব্রিফিংয়ের সময় এক সাংবাদিক বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের সাম্প্রতিক মন্তব্য ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে কি নাএসব বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন।

ওই প্রশ্নকারী বলেন, মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থার ক্রমবর্ধমান হুমকি ও একটি ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে তিনি (তুলসী) মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি দায়ী করেননি, ইউনূস সরকারও এসব উদ্বেগকে তীব্রভাবে অস্বীকার করেছেএগুলোকে অসত্য বলেও অভিহিত করেছে। এ ছাড়া বুধবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাফতপন্থী বিশাল একটি শোভাযাত্রা  হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রশ্নকারী।

ওই সাংবাদিক আরো বলেন, মার্কিন সরকারের চলমান উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে, যুক্তরাষ্ট্র কি ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বিবেচনা করছে?

জবাবে ট্যামি ব্রুস বলেন, আমরা যেকোনো দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা বা বৈষম্যের ঘটনাকে জোরালোভাবে নিন্দা করি। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। আমরা পরিস্থিতি নজরদারি করছি, এবং আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার এই প্রচেষ্টা যেন অব্যাহত থাকে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তুলসী গ্যাবার্ড ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে দাবি করেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং দেশটিতে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদের হুমকি ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার আদর্শ ও লক্ষ্য থেকে উৎসারিত।

মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান আরো বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে আলোচনা মাত্র শুরু হয়েছে, তবে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি এখনো মূল উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দু

গ্যাবার্ডের এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে এই মন্তব্যগুলো দেশের ভাবমূর্তি এবং সুনামের জন্য বিভ্রান্তিকর ও ক্ষতিকারক।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, সামাজিক সংস্কার ও অন্যান্য সন্ত্রাসবিরোধী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। সূত্র : এপি

 

 

মন্তব্য

কাগজ আমদানিতে সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
কাগজ আমদানিতে সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব

মিথ্যা ঘোষণা ও চোরাচালানের মাধ্যমে আমদানি এবং বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের কারণে দেশীয় কাগজশিল্পে অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। ৮০টি কাগজ মিল বন্ধ হয়ে গেছে, বাকি ২৬টি ধুঁকছে। এমন প্রেক্ষাপটে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক মওকুফের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, বন্ডের অপব্যবহার রোধ ও বিভিন্ন ধরনের কাগজ আমদানিতে সর্বোচ্চ হারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের আগে অংশীজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।

বিপিএমএ জানায়, দেশের অর্থনীতিতে কাগজশিল্প এখন আমদানি বিকল্প, রপ্তানিমুখী ও পরিবেশবান্ধব শিল্পে পরিণত হয়েছে। দেশের পেপার মিলগুলো বছরে ১৬ লাখ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদনে সক্ষম। ৯ লাখ মেট্রিক টন কাগজ দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিশ্বের ৪০টি দেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। প্রতিবছর সরকারকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দেওয়ার পাশাপাশি এর ফলে সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা।

এই খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৩০০টি সংযোগ শিল্প। এই খাতের সুরক্ষায় কাগজ আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ককাঠামো বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে বিপিএমএ। দাবিতে আরো বলা হয়েছে, বন্ড সুবিধায় আমদানি করা কাগজ ও বোর্ড খোলাবাজারে বিক্রি হওয়ায় কাগজ উৎপাদনকারীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি শিল্প খাত বিপর্যস্ত হচ্ছে।

তাই প্রাপ্যতার অতিরিক্ত আমদানি বন্ধ করা ও খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধে তদারকি করতে হবে।

মাইক্রো ক্যাপসুল, কালার ডেভেলপার, থেমাল কোটিং স্লারি, কাওলিন ক্লে আমদানিতে সিডি ও আরডি প্রত্যাহারের দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেসপ্রুফ পেপার, গ্লাসিনি পেপার, থেমাল পেপার ও লিনার পেপার আমদানিতে সর্বোচ্চ হারে সিডি, আরডি ও ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের দাবি জানানো হয়েছে।

একই দিনে উচ্চ করহার নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করে উল্লেখ করে কোনো শর্ত ছাড়া করহার ২.৫০ শতাংশ হারে কমিয়ে প্রাইভেট লিমিটেড কম্পানির জন্য ২৫ শতাংশ করা ও পাবলিক ট্রেডেড কম্পানির জন্য ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। এ ছাড়া সংগঠনটি  করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ টাকা করা, সরবরাহ পর্যায়ে উৎস কর কমানো, রপ্তানি আয়ের উৎস কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫০ শতাংশ করা, রপ্তানির ক্ষেত্রে এইচএস কোড-সংক্রান্ত জটিলতা দূর করার প্রস্তাব করেছে।

সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, গ্রস প্রফিট খাতভিত্তিক নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, যা যুক্তিসংগত নয়। আবার গ্রস প্রফিট কমে গেলে বা ব্যবসায় লস হলে বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এমনকি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বিক্রি কম হলেও কর কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনায় নেয় না। এটি নিষ্পত্তি প্রয়োজন। ব্যবসায় ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও টার্নওভার কর নির্ধারণ করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য বোঝা।

সংগঠনগুলোর প্রস্তাব শুনে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ভ্যাট আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করে না। তারা প্রকৃত তথ্য লুকায়, আমরাও চেপে ধরি। এভাবে চলতে পারে না। পোশাক খাত দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ কর সুবিধা পেয়ে আসছে। এখন তাদের রেগুলার রেটে আসা উচিত।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ