জরিমানার বদলে ‘পুরস্কার’ পাচ্ছে ৮ প্রকল্প

এম আর মাসফি
এম আর মাসফি
শেয়ার
জরিমানার বদলে ‘পুরস্কার’ পাচ্ছে ৮ প্রকল্প

ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে নদীর পানির ব্যবহার বাড়াতে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্পটি চার হাজার ৫৯৭ কোটি টাকায় শুরু হয় ২০১৫ সালে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে পাঁচ বছরে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছিল বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ওয়াসা। তবে ১০ বছরে কাজ হয়েছে ৯ শতাংশ। অর্থ খরচ হয়েছে ২ শতাংশ।

তবে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে চার গুণ। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধিত ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকায়। নতুন করে প্রকল্পটিতে ব্যয় বাড়ছে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষের অজুহাত, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার হাড়িয়া (মেঘনা নদীর ডান তীর) থেকে প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু নানা জটিলতায় মেঘনার পানি ঢাকায় আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

আজ রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) ওই প্রকল্পসহ মোট আট প্রকল্প সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। আট প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে ১০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। অথচ প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়িত হলে জনগণের দেওয়া করের টাকা অন্য উন্নয়নকাজে লাগতে পারত।

প্রকল্পগুলো নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় কারো কোনো জবাবদিহিও নেই। উল্টো তাদের এই বাড়তি টাকা উপহার হিসেবে দিয়ে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের দেশে কাজে অবহেলার কারণে দেরি হলে যে জবাবদিহি করা হবে, বিচারের আওতায় আনা হবে, সেই সংস্কৃতিই গড়ে ওঠেনি। তাই যে যার মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তিন বছরের প্রকল্প ১০ বছর লাগলে বাস্তবায়নকারী সংস্থার পকেট গরম থাকে।

এখন প্রকল্পে স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টানার সময় হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক সচিব মো. মামুন আল রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, সব প্রকল্পেই বাস্তবায়নকারী সংস্থা একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন প্ল্যান দেয়। তারাই বলে দেয় ওই প্রকল্প তিন বছর বা পাঁচ বছরে শেষ করবে। কিন্তু দেখা যায়, ১০ বছরেও শেষ হয় না। প্রকল্পের ব্যয় নানা কারণে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। জনগণের করের টাকা নষ্ট হয়।

জবাবদিহির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দেষে সেই সংস্কৃতিই গড়ে ওঠেনি। প্রকল্প বাস্তবায়নে এই ধীরগতির অবহেলার দায় বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে না। বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রধানের দায়িত্ব থাকে নিয়মিত মনিটরিংয়ের। কিন্তু তাঁরা সেটা করেন না। প্রকল্পের তিন মাস পর পর মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্টিয়ারিং কমিটির সভা হওয়ার কথা, কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে খোঁজ রাখে না।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, একনেক সভায় আটটি প্রকল্প সংশোধনসহ ১৫টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। এসব প্রকল্পে মোট ব্যয় ৩৮ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। তবে আজকের একনেকে নতুন করে ২০ হাজার ২৭০ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হবে। এ ছাড়া তিনটি প্রকল্প শুধু চতুর্থবারের মতো মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য একনেক সভায় অবহিত করা হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্পে ৯১১ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে। আড়াই বছরের প্রকল্পটির মেয়াদ সাত বছরে গড়াচ্ছে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পে ৮২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে। মেয়াদ বাড়ছে দুই বছর। বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পে ৩৯৭ কোটি টাকা ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে এক হাজার ৭০০ কোটিতে। অথচ তিন বছরের প্রকল্পটি ৭৯৬ কোটি টাকায় বাস্তবায়নের কথা ছিল। অথচ এখন ১২ বছর লাগছে। ডিজিটাল কানেক্টিভিটি শক্তিশালীকরণে সুইচিং ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটির ব্যয় না বাড়লেও তৃতীয়বারের মতো মেয়াদ বাড়ছে। দুর্ভোগ বাড়ছে জনগণের। পঞ্চবটী থেকে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তার নির্মাণ প্রকল্পে ৬৫৯ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে। ঢাকা শহরের সন্নিকটবর্তী এলাকায় ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পে ৫৩ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে। তিন বছরের প্রকল্পটিতে লাগছে ১০ বছর। নির্দিষ্ট কাজ শেষ না হওয়ায় স্মার্ট প্রি-পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ইন ডিস্ট্রিবিউশন জোনস অব বিপিডিবি প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে ১৫১ কোটি টাকা।

মামুন আল রশিদ বলেন, প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ার বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করায় অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি। প্রকল্প বাস্তবায়নে এটা প্রথম বাধা। দ্বিতীয়ত, প্রকল্প পরিচালকদের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। তৃতীয়ত, প্রকল্পে কেনাকাটার ক্ষেত্রেও তাঁদের কারিগরি জ্ঞান খুব সীমিত।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ১৪২টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পেয়েছে, যার মধ্যে বাস্তবায়ন তদারকি ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ১৩৬টির মেয়াদ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৪৫টি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়, আগের অর্থবছরে মেয়াদ বাড়ানো হয় ৪২৯ প্রকল্পের।

বিআইডিএসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ৯৫ শতাংশ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। এসব প্রকল্পের মেয়াদ বারবার বাড়িয়ে শেষ করতে হয়। এতে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে গড়ে ব্যয় বাড়ে প্রায় ২৬ শতাংশ। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ৮০ শতাংশ প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। বারবার মেয়াদ বাড়ানোয় বাস্তবায়নে ব্যয় বাড়ে প্রায় ৫৬ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে প্রায় ২৭ শতাংশ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। কাজের পরিধি পরিবর্তনের কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে ৪৯ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রকল্প কর্তৃপক্ষের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বৃদ্ধি অনুরোধ অনুমোদন করা মানেই শেষ পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধির দিকে ধাবিত হওয়া। এ ধরনের প্রস্তাবগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতাকে বৈধতা দেয়। একই সঙ্গে বাড়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন খরচ। প্রকল্পগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পাশাপাশি কী কারণে একই ধরনের প্রকল্পে বারবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, এর সঠিক মূল্যায়ন জরুরি।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

শেয়ার
পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
গাজীপুরের টঙ্গীতে গতকাল সকালে বেতন-বোনাসের দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করে কারখানার সামনে নিয়ে যান। তখন মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য
মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ

পুনর্বিবেচনার আবেদন পদোন্নতিবঞ্চিত শতাধিক কর্মকর্তার

উবায়দুল্লাহ বাদল
উবায়দুল্লাহ বাদল
শেয়ার
পুনর্বিবেচনার আবেদন পদোন্নতিবঞ্চিত শতাধিক কর্মকর্তার

গত বৃহস্পতিবার রাতে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন প্রশাসনের ১৯৬ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিসিএস ২৪তম ব্যাচের পদোন্নতিযোগ্য ৩২০ জনের মধ্যে পদোন্নতি পেয়েছেন ১৩৭ জন। বাদ পড়েছেন ১৮৩ জন। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনই রবিবার সকালে দল বেঁধে মন্ত্রিপরিষদসচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে দেখা করে পদোন্নতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন দিয়েছেন।

এ সময় উভয় সচিবই বঞ্চিতদের দাবি মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বলে বঞ্চিতদের অনেকে কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রশাসনে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পান ১৯৬ জন উপসচিব। এর মধ্যে স্বাস্থ্য, খাদ্য ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টার একান্ত সচিবসহ (পিএস) ২১ জন জেলা প্রশাসকও (ডিসি) রয়েছেন।

এ ছাড়া পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকায় সালমান এফ রহমানের পিএস ও শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী সাবেক কয়েকজন ডিসিও রয়েছেন। প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পদোন্নতি পাওয়া শেখ হাসিনা আমলের প্রভাবশালীদের মধ্যে রয়েছেন সালমান এফ রহমানের পিএস আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ; দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থাকা এ কে এম মনিরুজ্জামান, সাবেক ডিসি সাহেলা আক্তার, শ্রাবস্তী রায় ও অলিউর রহমান প্রমুখ। এ ছাড়া পদোন্নতি পেয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা পিএস আবুল হাসান, খাদ্য উপদেষ্টার পিএস মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পিএস ড. মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম। এ ছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক ও এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের পিএস কামরুল হাসান ও আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর পিএস আমিনুর রহমানও।
তবে আগের সরকারের মন্ত্রীদের পিএস ও ডিসিসহ এই ব্যাচের অন্তত ১৮৩ জন কর্মকর্তা এবার পদোন্নতি পাননি।

পদোন্নতির পর প্রথম কর্মদিবস রবিবার সকাল ৯টায় বঞ্চিত কর্মকর্তারা দল বেঁধে প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পরে মন্ত্রিপরিষদসচিবের কাছে যান। তাঁরা এসএসবির প্রভাবশালী দুই কর্মকর্তার কাছেই যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি তাঁরা প্রত্যেকে আলাদাভাবে পদোন্নতি পুনর্বিবেচনার আবেদন দেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।

একাধিক বঞ্চিত কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, দুই স্যারই আমাদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেছেন।

মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেছেন, তিনিও একসময় বছরের পর বছর বঞ্চিত ছিলেন। বঞ্চনার বেদনা তিনি বোঝেন। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়কে জানাবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৪ ব্যাচের একজন বঞ্চিত কর্মকর্তা জানান, যেখানে অন্যান্য ব্যাচের যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার হার কমবেশি ৭০ শতাংশ, অথচ আমাদের ব্যাচের এই হার মাত্র ৪২.৮১ শতাংশ। সালমান এফ রহমানের পিএস যদি পদোন্নতি পান, তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএস কি দাবি করতে পারেন না? সে ক্ষেত্রে আমাদের অপরাধটা কী? যে বৈষম্যের অবসানের জন্য জুলাই বিপ্লব হলো, এ সরকারের আমলে তা যদি আরো প্রকট হয়, তাহলে তা হবে চরম হতাশার। আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাই। আমরা বলেছি যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নেই, দুর্নীতির মামলা তো দূরের কথা, কোনো অভিযোগও নেই, এসিআরের নম্বর ভালো ও বিরূপ কোনো মন্তব্য নেই, শিক্ষাগত যোগ্যতায় রেজাল্ট ভালো, তাঁরা কেন বঞ্চিত হবেন? তাঁদের যেন সঠিক জাজমেন্ট হয়।

 

 

 

মন্তব্য

সুন্দরবনে ১৯ বছরে ৩০ বার আগুন, জ্বলছে নতুন এলাকা

    নাশকতা আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে
বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী, বাগেরহাট
বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী, বাগেরহাট
শেয়ার
সুন্দরবনে ১৯ বছরে ৩০ বার আগুন, জ্বলছে নতুন এলাকা

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের টেপার বিলে জ্বলতে থাকা আগুন নেভার আগেই নতুন করে শাপলার বিল এলাকা আগুনে পুড়ছে। নতুন স্থানে আগুনের ভয়াবহতা অনেক বেশি।

গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাগেরহাট জেলাধীন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির শাপলার বিল এলাকায় গহিন বনে আগুন দেখতে পায় বন বিভাগ। কলমতেজি ক্যাম্পের টেপার বিল এলাকায় যেখানে শনিবার সকালে আগুন দেখা গেছে, সেখান থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে এই শাপলার বিল এলাকা।

তবে টেপার বিল এলাকায় জ্বলতে থাকা আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ করা হয়েছে বলে বন বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান। এক দিনের ব্যবধানে সুন্দরবনের সাত কিলোমিটারের মধ্যে পৃথক স্থানে আগুনের ঘটনায় নাশকতা আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে বন অধিদপ্তর।

 

১৯ বছরে ৩০ বার আগুন

বন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনে গত ১৯ বছরে ৩০ বার আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুড়েছে প্রায় ৯০ একর বনভূমি।

এর আগে ২০২৪ সালের ৪ মে চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া ফরেস্ট ক্যাম্পের লতিফের ছিলা নামক স্থানে আগুনে ৭.৯৮ একর বনভূমি পুড়ে যায। তখনকার কমিটি আগুন লাগার সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে পারেনি। ২০২১ সালের ৩ মে দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগে। ২০১৭ সালের ২৬ মে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের আবদুল্লাহর ছিলায় আগুনে প্রায় পাঁচ একর বনভূমির ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় প্রতিবারই বন বিভাগ তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু কমিটির প্রতিবেদন সুপারিশ কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে, কাজের কাজ কিছুই হয় না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। গত ২০২৪ সালের মে মাসের আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি সুন্দরবনের ২৪, ২৫ এবং ২৭ নম্বর কম্পার্টমেন্টে মধু আহরণের পাস (অনুমতি) বন্ধ রাখার জন্য সুপারিশ করেছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হবে।

এবারও টেপার বিল এলাকায় আগুনের পর গতকাল তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ।

এই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভায়ীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও)।

গত দুই দিনের দুটি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী জানিয়েছেন।

 

শাপলার বিলে আগুন

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, আগুন যাতে বনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এ জন্য ফায়ার লাইন কাটা হচ্ছে। কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের ভোলা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে আগুন নেভানো হবে।

চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপেন চন্দ্র দাস জানান, আগুনের খবর পাওয়ার পর ড্রোনের মাধ্যমে বনের গহিনে তারা আগুন দেখতে পান। এরপর তাঁরা দ্রুত ফায়ার লেন কাটতে থাকেন। কিন্তু এর মধ্যেই কয়েকটি স্থানে আগুন ফায়ার লেন অতিক্রম করে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ফায়ার লেন কাটার কাজ চলছে। লেন কাটা শেষ হলেই ভোলা নদী থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হবে। কিভাবে আগুন লেগেছে তার কারণ জানাতে পারেননি তিনি।

বাগেরহাট ফায়ার স্টেশনের ডিএডি সাকরিয়া হায়দার জানান, আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিতে তাঁরা সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। খুলনা, বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোল্লাহাট এবং শরণখোলার ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

 

টেপার বিলের আগুন নির্বাপণ

বাগেরহাট জেলার শরণখোলায় সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজি ক্যাম্পের টেপার বিল এলাকার আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ করা হয়েছে। ভোলা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর আগেই ওই এলাকায় প্রায় চার একর বনভূমি পুড়ে গেছে। 

বাগেরহাট ফায়ার স্টেশনের ডিএডি সাকরিয়া হায়দার জানান, গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ করা হয়।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, সুন্দরবনের টেপার বিলে এখন আগুনের অস্তিত্ব নেই। কোথাও ধোঁয়াও দেখা যাচ্ছে না। এর পরও বন বিভাগের স্টাফরা আগামী ২৪ ঘণ্টা সেখানে পর্যবেক্ষণে থাকবেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।

ডিএফও নুরুল করিমের ধারণা, মৌসুম শুরুর আগেই অবৈধভাবে কোনো মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারেন। মৌয়ালের মশাল অথবা বিড়ি-সিগারেটের অংশ থেকে সুন্দরবনে আগুন ধরতে পারে। এ ছাড়া আইন ভঙ্গ করে কোনো কোনো রাখাল ভোলা নদী পাড়ি দিয়ে তাদের গবাদি পশু নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। ওই রাখালদের ফেলে রাখা বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকেও সুন্দরবনে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে।

 

নাশকতার আশঙ্কা

প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, এক দিনের ব্যবধানে দুটি পৃথক স্থানে আগুনের ঘটনায় নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। নাশকতামূলকভাবে কেউ সুন্দরবনে আগুন দিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

 

মন্তব্য

জি এম কাদের ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জি এম কাদের ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ
জি এম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) ও তাঁর স্ত্রী শেরিফা কাদেরের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। গতকাল রবিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) দেশের সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে তাঁদের হিসাব জব্দ করতে বলা হয়েছে।

সিআইসি সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখায় পরিচালিত হিসাবগুলো থেকে অর্থ উত্তোলন বা স্থানান্তর স্থগিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ জন্য দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আরেকটি চিঠিতে জি এম কাদের, তাঁর স্ত্রী শেরিফা কাদের, মেয়ে ইশরাত জাহান কাদের ও ভাই মাহফুজ আহমেদের ব্যাংক হিসাব বিবরণী পাঠাতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে করদাতার একক বা যৌথ নামে অথবা তাঁর মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত যেকোনো মেয়াদি আমানত হিসাব, এফডিআর, এসটিডি, যেকোনো মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভল্ট, সঞ্চয়পত্র বা অন্য কোনো ধরনের সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা ডিপোজিট স্কিমের হালনাগাদ বিবরণী ও ঋণের বিপরীতে রক্ষিত জামানতের বিবরণী সাত দিনের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ করা হলো। এই সময়ের মধ্যে বা আগে হিসাব শুরু হয়ে তা বন্ধ হয়ে গেলে অথবা শেষ হয়ে গেলে বা সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও তথ্য পাঠাতে হবে।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এনবিআরকে সহযোগিতা করেনি বলে উল্লেখ করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য না দিলে এবং তথ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে আয়কর আইনের বিধান অনুযায়ী এককালীন ৫০ হাজার টাকা ও পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ৫০০ টাকা হারে জরিমানা আরোপ করা হবে। এ ছাড়া অর্থদণ্ডের ও কারাদণ্ড আরোপের জন্য প্রয়োজনীয় ফৌজদারি কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে জাতীয় পার্টি সব সময়ই একটি সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। ভোট কারচুপি ও আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে এই দলটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

এখন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ