মুসলিমজীবনের জন্য অপরিহার্য মহাগ্রন্থ আল-কোরআন

শাইখ মুহাম্মাদ জামাল উদ্দীন
শাইখ মুহাম্মাদ জামাল উদ্দীন
শেয়ার
মুসলিমজীবনের জন্য অপরিহার্য মহাগ্রন্থ আল-কোরআন

জ্ঞানগর্ভ ও উপদেশে ভরা আল-কোরআন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি গাইড বই। মানুষ কোথায় কখন কী করবে, কেন করবে, কিভাবে করবেসব বিস্তারিত বলে দেওয়া হয়েছে কোরআনে। আল-কোরআন তথা আল্লাহ প্রদত্ত আসমানি কিতাবের হিদায়াতের বাইরে কোনো জীবনদর্শন নেই, কোনো ধর্মদর্শন নেই, কোনো মুক্তির পথ নেই। মানবজাতির সূচনালগ্নেই এ কথাটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাবা আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.)-কে আল্লাহ যখন পৃথিবীতে বিচরণের জন্য পাঠিয়েছেন, তখন আল্লাহ জনিয়ে দিয়েছেন, আমি তাদের বলেছিলাম, তোমরা সবাই এখান থেকে দুনিয়ায় যাও। তারপর তোমাদের মঙ্গলের জন্য আমি অবশ্যই যুগে যুগে সত্যপথের দিকনির্দেশনা প্রেরণ করব। তখন যারা এই দিকনির্দেশনা অর্থাৎ কিতাবের বিধি-বিধান অনুসরণ করবে, তাদের কোনো ভয় বা দুঃখ থাকবে না। আর যারা এই কিতাবের নৈতিক বিধি-বিধান অস্বীকার করবে, তারাই জাহান্নামের আগুনে পুড়বে।
সেখানেই থাকবে তারা চিরকাল। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত ৩৮-৩৯)

তার মানে দুনিয়ার জীবনে শান্তি আর আখিরাতের জীবনে মুক্তির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যুগে যুগে হিদায়াত এসেছে। সেই হিদায়াত যারা মেনে চলবে, তাদের কোনো ভয় নেই। আর যারা অস্বীকার করবে, তাদের কোনো রক্ষা নেই।

উম্মতে মুহাম্মদির জন্য সর্বশেষ আসমানি হিদায়াতের নাম আল-কোরআন। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জীবনে ন্যায়-ইনসাফ-শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কোরআনের বিকল্প নেই। একইভাবে আখিরাতের মুক্তির জন্য মানুষের কাছে কোরআন এক অপরিহার্য গ্রন্থ। আল্লাহ বলেন, হে নবী! এই কোরআন অনুসরণ যিনি তোমার ওপর ফরজ করেছেন, তিনি অবশ্যই তোমাকে চূড়ান্ত গন্তব্যে ফিরিয়ে আনবেন। যারা সত্য অস্বীকার করছে তাদের বলো, আমার প্রতিপালক খুব ভালো করে জানেন, কে সত্য ধর্ম নিয়ে এসেছে আর কে সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে লিপ্ত।

(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৮৫)

কোরআন অনুসরণ শুধু আল্লাহ ফরজই করেননি; এই ফরজ কে কতটুকু আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেছে, সেটাও কিয়ামতের দিন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন। এর পরই ফয়সালা হবে তার জন্য জান্নাত না জাহান্নাম অপেক্ষা করছে। আল্লাহ বলেন, তোমার ওপর যে ওহি নাজিল হয়েছে, তা অনুসরণে অটল থাকো। তুমি সাফল্যের সরলপথেই আছ। নিঃসন্দেহে এই কোরআন তোমার ও তোমার অনুসারীদের জন্য অত্যন্ত সম্মানের বিষয়। কিন্তু সময় হলে তোমাদের অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এই কোরআন নিয়ে তোমরা কী করেছ।

(সুরা : জুখরুফ, আয়াত : ৪৩-৪৪)

মানুষ অজ্ঞ। সে নিজের পরিচয়ই জানে না। মানুষ অন্ধ। সে নিজের স্রষ্টাকেই চেনে না। কোরআন মানুষের চোখ খুলে দেয়। তাকে জানিয়ে দেয় তার পরিচয়। জানিয়ে দেয় প্রভুর পরিচয়। তার গলায় পরিয়ে দেয় ঈমানের মালা। যুগে যুগে রাসুলদের দাওয়াতি মিশন ছিল এটাই। আল্লাহকে চেনানো। কোরআনে আল্লাহ বলেনরাসুলরা বলল, আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্বের বিষয়ে কি কোনো সন্দেহ থাকতে পারে? যিনি মহাকাশ ও পৃথিবীর সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা? তিনি তোমাদের ডাকছেন, যাতে তিনি তোমাদের অতীতের সব পাপ মোচন করতে পারেন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ভালো কাজ করার সুযোগ দিতে পারেন। (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ১০)

কোরআনের দাওয়াত খুব জটিল কোনো বিষয় নয়; বরং মানুষ যেন মানুষ হতে পারে, তার জীবনে যেন কোনো বিকৃতি না আসে অথবা যে বিকৃতি এসেছে সেটা যেন সংশোধন হয়ে যায়এটাই কোরআনের উদ্দেশ্য। ফলে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনের জন্যও কোরআন অপরিহার্য। আল্লাহ বলেন, আসলে বিবেক প্রয়োগ করে সত্য না জানার কারণে সীমালঙ্ঘনকারীরা নিজেদের কামনা-বাসনার অনুসরণ করে। এ কারণে আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট হতে দেন, কে তাকে সৎপথ দেখাবে? ওরা কারো সাহায্যও পাবে না। অতএব হে বিশ্বাসীরা! তোমরা সকল মিথ্যা পরিত্যাগ করে একনিষ্ঠভাবে ধর্মের ওপর নিজেদের কায়েম রাখো। আল্লাহ যে প্রকৃতিতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, সেই সৎ প্রকৃতির অনুসরণ করো। আল্লাহর সৃষ্ট এই প্রকৃতিকে দূষিত-বিকৃত কোরো না। এটাই সত্য ধর্ম, সর্বোচ্চ ধর্মবিধান। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই তা জানে না।

(সুরা : রুম, আয়াত : ২৯-৩০)

আল-কোরআনের প্রথম আয়াত নাজিল হয় ৬১০ সালে আর শেষ আয়াত ৬৩২ সালে। ধাপে ধাপে খণ্ডে খণ্ডে দীর্ঘ ২৩ বছরে পরিপূর্ণতা পায় আল-কোরআন। প্রথম আয়াত নাজিল হওয়ার পরই স্পষ্ট হয়ে ওঠে এর আকর্ষণী ক্ষমতা। অবিদ্যা বা জাহিলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষগুলো আলোর সন্ধান পায়। সেই আলোয় বদলাতে শুরু করে তারা। পিতৃপুরুষের হাজার বছরের সংস্কার ও ধর্মান্ধতার বৃত্ত ভেঙে তারা লাভ করে মুক্ত বিশ্বাস ও সঠিক জীবনদৃষ্টি।

আল-কোরআন কেবল ব্যক্তিজীবনকেই পরিশুদ্ধ করে না, জাতিকেও বিশ্বের দুয়ারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে ভূমিকা রাখে। কোরআনের প্রথম আয়াত নাজিল হওয়ার ৫০ বছরের মধ্যে মুসলমানরা তদানীন্তন পরাশক্তি রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যকে নিশ্চিহ্ন করে পরিণত হয় তখনকার একমাত্র পরাশক্তিতে। আলিফ-লাম-মীম। রোমানরা নিকটবর্তী অঞ্চলে পরাজিত হয়েছে। কিন্তু এই পরাজয় সত্ত্বেও কয়েক বছরের মধ্যে ওরা বিজয়ী হবে। পূর্বের ও পরের সকল ফয়সালার এখতিয়ার শুধু আল্লাহর। একদিন আল্লাহর দেওয়া বিজয়ে বিশ্বাসীরা আনন্দিত হবে। তিনি যাকে ইচ্ছা বিজয় দান করেন। তিনি মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু। আল্লাহ বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ কখনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষই তা বোঝে না। ওরা পার্থিব জীবনের দৃশ্যমান বিষয়েই শুধু জানে। কিন্তু চূড়ান্ত নিগূঢ় সত্য সম্পর্কে ওদের কোনো জ্ঞানই নেই। (সুরা : রুম, আয়াত : ১-৭)

ইতিহাস সাক্ষী! কোরআন ছাড়া আর কোনো গ্রন্থই প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের হৃদয়ে এত আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারেনি, এত দ্রুত মানুষকে এমনভাবে বদলে দিতে পারেনি। কোরআন সরাসরি যাদের সামনে নাজিল হয়েছিল তাঁরাই শুধু আলোকিত হননি; ধর্মান্ধতা ও পাশবিকতার পরিবর্তে ধর্ম, মানবিকতা ও মুক্তবুদ্ধির এই স্রোত প্রবাহিত হয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্মে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। ধর্ম, মানবিকতা ও মুক্তবুদ্ধির এই স্রোত ইতিহাসের মধ্যযুগে সৃষ্টি করেছিল এক আলোকোজ্জ্বল সভ্যতা। কোরআনের অনুসারীরা যখন শিল্প-সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় অবগাহন করছিল, তখন ইউরোপ ডুবে ছিল অজ্ঞতা ও ধর্মান্ধতার অন্ধকার যুগে। প্রাচ্যের এই আলোকোজ্জ্বল সভ্যতা থেকেই ইউরোপের দেশে দেশে কোরআনের মানবিকতা ও মুক্তবুদ্ধির বাণী পৌঁছতে থাকে বিভিন্নভাবে। ইউরোপে সূচনা হয় রেনেসাঁ বা মুক্তবুদ্ধির জাগরণ। নতুনভাবে শুরু হয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা। এগোতে থাকে বিজ্ঞান। তাই নিঃসংশয়ে বলা যায়, কোরআন যে মানবিকতা, জ্ঞানচর্চা ও মুক্তবুদ্ধির শিক্ষা দিয়েছে, তারই ফল্গুধারায় লালিত হয়ে বিশ্ব প্রবেশ করেছে বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে। তাই অকপটে বলা যায়, জীবন-সভ্যতা ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে কোরআনের ভূমিকা অপরিসীম।

 

লেখক : চেয়ারম্যান, জামালী তালিমুল কোরআন ফাউন্ডেশন ও খতিব

রূপায়ণ টাউন সেন্ট্রাল মসজিদ

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পব, ৭৪৫
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : ‘তারা বলে, এ কেমন রাসুল যে আহার করে, হাটে-বাজারে চলাফেরা করে; তাঁর কাছে কোনো ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হলো না, যে তাঁর সঙ্গে থাকত সতর্ককারীরূপে? অথবা তাঁকে ধন ভাণ্ডার দেওয়া হয় না কেন? ...দেখ, তারা তোমার কী উপমা দেয়! তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, ফলে তারা পথ পাবে না। কত মহান তিনি, যিনি ইচ্ছা করলে তোমাকে দিতে পারেন এর চেয়ে উত্তম বস্তু—উদ্যানগুলো, যার নিম্নদেশে নদী-নালা প্রবাহিত এবং তিনি দিতে পারেন তোমাকে প্রাসাদগুলো!’

(সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৭-১০)

আয়াতগুলোতে মহানবী (সা.)-এর ব্যাপারে অবিশ্বাসীদের আপত্তির উত্তর দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, মহানবী (সা.) মাটির তৈরি রক্ত-মাংসের মানুষ। মক্কার মুশরিকরা যা অসম্ভব মনে করত।

২. ধন-সম্পদ ও সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি ধর্মীয় নেতৃত্ব নির্বাচনের মানদণ্ড হতে পারে না। তার ভিত্তি হবে আল্লাহভীতি ও উত্তম গুণাবলি।

৩. ঈমান-ইসলামের ওপর চলা লোকদের নির্বোধ ও বোকা মনে করা অবিশ্বাসীদের পুরনো রীতি।

৪. আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও দ্বিনকে নিয়ে মন্দ উপমা দেওয়া, উপহাস করা কাফির-মুশরিকদের বৈশিষ্ট্য।

৫. মুমিন পার্থিব জীবনে সম্পদহীন থাকাকে দোষের মনে করে না। কেননা সে বিশ্বাস করে তার জন্য চিরস্থায়ী জান্নাত প্রস্তুত আছে।

(আত-তাহরির ওয়াত-তানভির : ১৮/৩২৬)

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

রাগ স্বাস্থ্য ও আমলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে

মুফতি সাইফুল ইসলাম
মুফতি সাইফুল ইসলাম
শেয়ার
রাগ স্বাস্থ্য ও আমলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে

মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। রক্ত, মাংস আর শিরা-উপশিরায় তৈরি এই মানবদেহ এমন সূক্ষ্মাতি-সূক্ষ্ম অনুভূতিবোধ দিয়ে তৈরি, যেখানে সামান্য কিছুতেই মানুষ খুশি হয়, রাগ হয়, সুখ অনুভব করে ও কষ্ট পায়। কাজেই এ কথা অবলীলায় বলা যায় যে রাগ মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু রাগ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন তা নিজ শরীর বা পরকালীন

আমলনামা—সর্বত্রই বিপদের কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়।

হাদিস শরিফে অনিয়ন্ত্রিত রাগকে শয়তানের প্রভাবের ফল হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, রাগ হলো শয়তানি প্রভাবের ফল। শয়তানকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৪)

শয়তানের প্রভাবে যখন মানুষ প্রভাবিত হয়, তখন তার মাধ্যমে এমন কাজ সংঘটিত হওয়া স্বাভাবিক, যা তার আমল ও জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এ জন্যই হয়তো প্রিয় নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘রাগ কোরো না।’ আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত যে এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, তুমি রাগ কোরো না। লোকটি কয়েকবার তা বললেন, নবী (সা.) প্রতিবারই বললেন, রাগ কোরো না।
(বুখারি, হাদিস : ৬১১৬)

অপর এক হাদিসে এসেছে—‘প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সে-ই আসল বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।’

(বুখারি, হাদিস : ৬১১৪)

অনিয়ন্ত্রিত রাগ মানুষকে শারীরিক অনেক ক্ষতির মধ্যে ফেলতে পারে, যা কখনো কখনো জীবনও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাপত্র নিশ্চিত করেছে যে ‘রাগ হূিপণ্ডের কার্যকারিতা ধ্বংস করে দেয় এবং রাগের পরের দুই ঘণ্টার মধ্যে মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আট গুণেরও বেশি বৃদ্ধি করে।’ সেখানে গবেষকরা বলছেন, একবার রেগে গেলে আপনার হূত্স্পন্দন দ্রুত হয়, রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, জমাট বাঁধা বৃদ্ধি পায়, রক্তনালি সংকুচিত হয় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিওফ্রে টফলার বলেছেন, ‘মানুষের প্রতি আমাদের বার্তা হলো তাদের সচেতন থাকা উচিত যে তীব্র রাগ বা উদ্বেগের বিস্ফোরণ করোনারি রোগের কারণ হতে পারে, তাই যেখানে সম্ভব প্রতিরোধমূলক কৌশলগুলো বিবেচনা করুন।’

ওই গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা রাগ না করার পরামর্শ দিয়েছেন। আর যদি রাগ এসেই যায়, তাহলে হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার জন্য রাগ নিয়ন্ত্রণে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন—দাঁড়ানো থাকলে বসে যাওয়া, মুখে কিছু পানি ঢালা এবং রাগের কারণ ভুলে যাওয়ার জন্য রাগ নিয়ন্ত্রণে হাদিসের নির্দেশনাও একই রকম। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কারো যদি দাঁড়ানো অবস্থায় রাগের উদ্রেক হয়, তাহলে সে যেন বসে পড়ে। এতে যদি তার রাগ দূর হয় তো ভালো, অন্যথায় সে যেন শুয়ে পড়ে।’

(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৮২)

এসব হাদিসে এ কথার প্রমাণ বহন করে যে নবী (সা.) রাগকে যেকোনো উপায়ে হলেও দমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।

আমরা সামাজিক জীব হিসেবে সমাজের নানা আচারে বিচরণের ক্ষেত্রে রাগান্বিত হতেই পারি, মন্দ অনুভূতির সম্মুখীন হতেই পারি। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। সব চেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে প্রতিপক্ষকে ক্ষমা করে দেওয়া। যেমন—মহান আল্লাহ তাআলা সুরা শুরায় খাঁটি মুমিনের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘যারা মহাপাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকে এবং ক্রোধান্বিত হলে ক্ষমা করে দেয়।’

(সুরা : শুরা, আয়াত : ৩৭)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে দুনিয়ার জীবনে সুস্থতা ও পরকালীন জীবনে মুক্তির জন্য হলেও নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে খাঁটি মুমিনের দলভুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও মুহাদ্দিস

saifpas352@gmail.com

 

মন্তব্য

বিক্রয়কর্মী অতিরিক্ত মুনাফা নিতে পারবেন?

মুফতি আবদুল্লাহ নুর
মুফতি আবদুল্লাহ নুর
শেয়ার
বিক্রয়কর্মী অতিরিক্ত মুনাফা নিতে পারবেন?

বিক্রয়কর্মী কম্পানির নিযুক্ত ওয়াকিল বা প্রতিনিধি। প্রতিনিধির দায়িত্ব হলো তাঁকে যিনি নিযুক্ত করেছেন তাঁর নির্দেশনা অনুসারে কাজ করা। সুতরাং বিক্রয়কর্মীর জন্য কম্পানির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে পণ্য বিক্রি করা বৈধ নয়। আর যদি কম্পানি পণ্য নির্ধারণ করে দিয়ে না থাকে, তবে বিক্রয়কর্মী অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারেন।

তবে উভয় অবস্থায় অতিরিক্ত মূল্য বা অর্থ কম্পানিই লাভ করবে। বিক্রয়কর্মীর জন্য তা গ্রহণ করা জায়েজ হবে না। কেননা বিক্রয়কর্মী মূলত কম্পানির পক্ষ থেকে বিক্রয় করেন এবং অর্জিত মুনাফার শতভাগ মালিকও কম্পানি।

উরওয়া (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) তাঁকে তাঁর জন্য একটি ছাগল কিনতে এক দিনার দেন।

উরওয়া (রা.) এক দিনার দিয়ে তাঁর জন্য দুটি ছাগল কেনেন। তারপর একটি ছাগল এক দিনারে বিক্রি করে দেন এবং এক দিনার ও একটি ছাগল নিয়ে নবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর জন্য বরকতের দোয়া করেন। এরপর থেকে উরওয়া (রা.) মাটি কিনলে তাতে লাভবান হতেন।
(বুখারি, হাদিস : ৩৬৪৩)

এ ক্ষেত্রে উরওয়া (রা.) নবী (সা.)-এর নিযুক্ত ক্রয় প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি ক্রয়-বিক্রয়ে লাভ করতে পেরেছিলেন। লাভটা ছিল নবী (সা.)-এর জন্য। লাভ যদি উরওয়া (রা.)-এর জন্য হতো তাহলে নবী (সা.) তা গ্রহণ করতেন না।

যদি কম্পানি একটি মূল্য নির্ধারণ করে দিয়ে বলে আপনি বেশি দামে বিক্রি করলে লাভটা আপনার জন্য।

তখন অতিরিক্ত মুনাফার মালিক হবেন বিক্রয়কর্মী।

(আল মুগনি : ৭/৩৬১)

 

মন্তব্য

মানুষের গোটা জীবনই পরীক্ষাস্বরূপ

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
শেয়ার
মানুষের গোটা জীবনই পরীক্ষাস্বরূপ

সম্প্রতি দেশে শুরু হয়েছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা। পরীক্ষা ঘিরে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। পরীক্ষার বহু আগে থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দিন-রাত পরিশ্রম করে ভালো ফলের জন্য। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য।

মহান আল্লাহ সব পরীক্ষার্থীকে কৃতকার্য হয়ে দেশ-জাতি ও ইসলামের পক্ষে কাজ করার জন্য কবুল করুন।

এই পরীক্ষাগুলো মুমিনদের জীবন-পরীক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষই পরীক্ষার্থী। গোটা পৃথিবীটাই একটি পরীক্ষাগার।

মহান আল্লাহ এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বানিয়েছেন তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, তিনি (আল্লাহ) সেই সত্তা, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। আর তাঁর আরশ ছিল পানির ওপর, যেন তিনি যাচাই করতে পারেন, তোমাদের মধ্যে কে কর্মে শ্রেষ্ঠ...। (সুরা : হুদ, আয়াত : ৭)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলেন, পৃথিবীতে যা কিছু আছে, আমি তা তার জন্য শোভা বানিয়েছি, যেন আমি পরীক্ষা করতে পারি মানুষের মধ্যে আমলে কে শ্রেষ্ঠ।

(সুরা : কাহফ, আয়াত : ৭)

পৃথিবীতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য বহু নিয়ামত সৃষ্টি করেছেন। এই নিয়ামতগুলো ভোগ করার নিয়ম-কানুন দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি পরীক্ষা করছেন, কারা এগুলোর ভেতর থেকেও দুনিয়াপ্রীতি সংবরণ করে মহান আল্লাহর নির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করে। আর কারা এগুলোর লোভে পড়ে আল্লাহর হুকুম থেকে দূরে সরে যায়।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এই পরীক্ষার ব্যাপারে তাঁর উম্মতদের সাবধান করেছেন।

তিনি বলেছেন, হে মুমিনগণ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আর আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগে। কেন না তখন সে বলবে, হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো কিছুকাল পর্যন্ত অবকাশ দিতেন, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম। আর সত্ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। আর আল্লাহ কখনো কোনো প্রাণকেই অবকাশ দেবেন না, যখন তার নির্ধারিত সময় এসে যাবে। আর তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। (সুরা : মুনাফিকুন, আয়াত : ৯-১১)

আমাদের নবীজি (সা.)-ও তাঁর উম্মতদের দুনিয়ার এই পরীক্ষা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। একদিন তিনি তাঁর এক ভাষণে বলেছেন, নিশ্চয়ই দুনিয়া সবুজ-শ্যামল ও লোভনীয়। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ায় তোমাদের খলিফা (প্রতিনিধি) বানিয়েছেন। তিনি দেখবেন যে তোমরা কেমন কাজ করো। সাবধান! দুনিয়া সম্পর্কে সতর্ক হও এবং নারীদের সম্পর্কেও সতর্ক হও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০০০)

এ জন্য প্রত্যেক মুমিনের উচিত দুনিয়ার চাকচিক্যের মোহে পড়ে তাদের আসল কাজ ভুলে না যাওয়া। পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া, যে কালের শুরু আছে শেষ নেই। ক্ষুদ্র এই জীবনকে সাজাতে গিয়ে অসীম জীবনের সফলতা থেকে বঞ্চিত না হওয়া। প্রত্যেক মানুষের জীবনই পরীক্ষাস্বরূপ। জন্ম থেকে মৃত্যুর এই মধ্যবর্তী সময়টা মানুষ কিভাবে কাটায় মহান আল্লাহ তা যাচাই করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, তিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য। কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।

(সুরা : মুলক, আয়াত : ২)

দুনিয়ার পরীক্ষায় একবার অকৃতকার্য হলে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আছে, কিন্তু এই পরীক্ষা একবারই হয়। দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত সময় থাকতে নিজেদের সব পাপ থেকে বিরত হয়ে আল্লাহর পথে ধাবিত হওয়া। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, প্রত্যেকের জন্যই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, সেদিকেই সে মুখ করে। কাজেই তোমরা সত্ কাজের দিকে ধাবমান হও। যেখানেই তোমরা অবস্থান করো, আল্লাহ তোমাদের সবাইকে একত্র করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বস্তুর ওপর ক্ষমতাবান।

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৪৮)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমাদের সব পাপ ও উদাসীনতা ক্ষমা করুন। আমিন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ