বুধবার রাত ৮টা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টর। সেখানে অন্তত ১১ জনকে প্রকাশ্যে ঘুরে ঘুরে মাদকদ্রব্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। তাদের কাছ থেকে সতর্কতার সঙ্গে কিশোর-তরুণসহ নানা বয়সী মাদকসেবী মাদক কিনছিল।
বুধবার রাত ৮টা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টর। সেখানে অন্তত ১১ জনকে প্রকাশ্যে ঘুরে ঘুরে মাদকদ্রব্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। তাদের কাছ থেকে সতর্কতার সঙ্গে কিশোর-তরুণসহ নানা বয়সী মাদকসেবী মাদক কিনছিল।
পরদিন বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে ১২টায় কারওয়ান বাজার রেলগেট, পান্থপথ ও ফার্মগেটের দিকে যেতে গলির মুখে কিছু অন্ধকার জায়গায় কিশোরদের আড্ডায় প্রকাশ্যে ছোট ছোট দলে মাদক বিক্রি করতে দেখা যায়। এ সময় মুরব্বিসহ অন্য পথচারীরাও চলাচল করছিল। কিন্তু অল্পবয়সী মাদক বিক্রেতারা তাদের থোড়াই কেয়ার করে। এক পথচারী একসময় বলে ওঠেন, ‘দেশটা মাদকে শেষ হয়ে গেল, দেখার কেউ নেই...!’
শুধু এই একটি-দুটি এলাকা নয়, রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি চলছে।
এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এস এম নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলছে।
ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্র বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ৫৮৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার তদন্ত চলছে। এজাহারভুক্ত অনেক আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) সূত্র বলছে, দেশে বর্তমানে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন ৮৩ জন ‘গডফাদার’। তাঁদের শীর্ষ পর্যায়ের সহযোগী রয়েছে এক হাজার ১৮৫ জন।
সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া মাদক ব্যবসায়ীদের তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ বলছে, বর্তমানে হেরোইন ও গাঁজার চালান রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ দিয়ে, বাংলা মদ পাবনা থেকে, ইয়াবা উখিয়া সীমান্ত এবং কক্সবাজার দিয়ে ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহনে জেনেভা ক্যাম্প ও অন্যান্য জায়গার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে।
বেশির ভাগ বিক্রেতা গ্রেপ্তার হয়নি : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএনসির তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বা বিক্রেতা বেশির ভাগ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। দেশে চলমান বিশেষ অভিযানের মধ্যেই তারা বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে।
জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মিরপুর এলাকার বিহারি ক্যাম্পকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসার রমরমা অবস্থা। এসব এলাকায় অন্তত ১৫ জন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে দুই শতাধিক খুচরা মাদক বিক্রেতা রয়েছে। একাধিক গ্রুপে ভাগ হয়ে তারা প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে।
মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পকেন্দ্রিক চক্রটি বেশ বড়। এর মধ্যে অন্যতম বুনিয়া সোহেলের বড় ভাই টুনটুনসহ অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী পিচ্চি রাজা, হিরণ আহমেদ ও আরজু। এদের নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পে শতাধিক খুচরা বিক্রেতা রয়েছে। তারা ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিলসহ অন্তত ৩০ ধরনের মাদক বিক্রি করছে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, মাদকসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চলছে। এর মধ্যে বিহারী ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে অনেক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
সরেজমিনে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, ক্যাম্প ঘিরে থাকা গজনবী রোড, বাবর রোড, শাহজাহান রোড ও হুমায়ুন রোডে রয়েছে পুলিশের ক্যাম্প, তল্লাশি চৌকি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উপস্থিতি। তবে ডরভয়ের তোয়াক্কা করছে না ক্যাম্পের মাদক বিক্রেতারা।
পুরান ঢাকায় অবাধে চলছে বেচাকেনা : পুরান ঢাকার সদরঘাট, বাবু বাজার, মিটফোর্ড, চকবাজারের পেছনে ইসলাম বাগ, চাঁদনিঘাট, সিকশন ঢাল, ঢাকা উদ্যানের বেড়িবাঁধ ও বাসস্ট্যান্ডকে কেন্দ্র করে অন্তত দেড় শতাধিক মাদক বেচাকেনার স্থান রয়েছে। এখানে ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, প্যাথেডিন, গাঁজার তৈরি বিশেষ ধরনের চকোলেট বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এক ধরনের এনার্জি জুসের মাধ্যমে মাদক বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীও রয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও কর্মচারীও এসব মাদকের ক্রেতা বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।
তাদের তথ্য মতে, গাঁজা ৫০ থেকে ১০০ টাকা পুরিয়া, ইয়াবা রকমভেদে প্রতি পিস ২৫০ থেকে ৭০০ টাকা, ফেনসিডিলের বোতল ২৫০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বনস্পতি এনার্জি ড্রিংক নামে এক ধরনের বিশেষ নতুন মাদক বিক্রি হয় এ এলাকায়।
মিল্লাত ক্যাম্পে দিন-দুপুরে মাদক বিক্রি : সরেজমিনে মিরপুর-১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রির দৃশ্য চোখে পড়ে। এ সময় এলাকার এক পিঠা বিক্রেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি মিল্লাত ক্যাম্পের বাসিন্দা। ওই ক্যাম্পে দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হয়। এলাকাবাসী অনেকে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আগে মাদকসেবীরা সেখানে গিয়ে মাদক সংগ্রহ করত। এখন মাদক বিক্রেতারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে পড়েছে যে, মূল সড়কে উঠে এসে তারা পথচারীদের টার্গেট করে মাদক সরবরাহ করছে। আকারে ইঙ্গিতে মাদক বিক্রির কথা জানান দিচ্ছে।
মিরপুর-১২ মিল্লাত ক্যাম্পে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাবা-মেয়েসহ চারজন নিয়ন্ত্রণ করছেন ব্যবসা। তাঁরা হলেন মোস্তাক, আনোয়ারি, জামিলা ও রাজিয়া। মিল্লাত ক্যাম্পে স্থায়ী দুই স্পট (ক্যাম্পের মাঝামাঝি পানির পাম্পের পাশে ও ৪ নম্বর রোডে) মিরপুর-১০ ওয়াপদা বিল্ডিং থেকে মুসলিম ক্যাম্প (মূল হোতা মফিজ) বড় কারবারি।
সরেজমিন মিরপুর-১০ : মিরপুর ১০ নম্বর এ ব্লকের থার্টিনাস ক্যাম্প ও বি ব্লকের পাশে গড়ে ওঠা ডুইপ প্রকল্প এলাকায় সরেজমিনে দিনে-দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, অবাধে সেখানে মাদক বিক্রি হচ্ছে। এক কিশোরকে দেখা গেল এক ব্যক্তিকে ইশারায় কিছু বলছে।
পাশ থেকে এক ব্যক্তি জানান, সে জানতে চাইছে কোন ধরনের মাদক নিতে এসেছেন। এ সময় এক ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রিতা তার কাছে ইয়াবা বিক্রি করে।
পুরো এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নগরের বিভিন্ন চায়ের দোকান ও হোটেলগুলোর আশপাশে এবং খোলা স্থানে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে মাদক বিক্রেতারা। তাদের ঘিরে রয়েছে কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী মাদকসেবী। চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য।
পল্লবী থানায় হালনাগাদ তালিকা : সম্প্রতি পল্লবী থানা মাদক ব্যবসায়ীদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করেছে। তালিকায় মফিজ, জামিলা বেগম, রুবেলসহ ৫০ জনের নাম রয়েছে।
পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। এর মধ্যেও গতকাল ভোরের দিকে পল্লবীতে জসিমউদ্দিন ও শাহিনূর বেগম নামে দুই ভাই-বোনকে গুলি করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সম্পর্কিত খবর
ঢাকার চকবাজার ও কেরানীগঞ্জে গতকাল শুক্রবার ছিনতাইকারী সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে আরো দুজন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে চকবাজার চম্পাতলী সোয়ারীঘাট এলাকায় এক ছিনতাইকারী নিহত হয়।
চকবাজার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, কেরানীগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকায় ছিনতাই করার সময় স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দেয়। এ সময় ছিনতাইকারী দলের এক সদস্য পালিয়ে যায়। অন্য তিনজন নদীতে ঝাঁপ দেয়। তারা সাঁতার কেটে চকবাজার চম্পাতলী ঘাটে এলে স্থানীয় জনতা তাদের পিটুনি দেয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মো. আবুল খায়ের বলেন, সিআইডির সহযোগিতায় জানা গেছে, নদীর এপারে মারা যাওয়া একজনের নাম আসিফ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কেরানীগঞ্জে পিটুনিতে একজন নিহত : গণপিটুনি দিয়ে বুড়িগঙ্গা পানিতে ফেলে দেওয়ার পর হাসান মাঝি নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে বরিশুর নৌ পুলিশ। নিহত হাসান বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সুলতানি গ্রামের মানিক মাঝির ছেলে।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জিনজিরা নামাবাড়ি এলাকায় নাদু ব্যাপারীর ঘাট থেকে লাশটি উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বরিশুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোক্তার হোসেন জানান, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করি। সুরতহালের সময় লাশের গায়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গণপিটুনির একটা ঘটনার কথা শুনেছি তবে কেউ সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়নি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় কৃষকের আলু রাখছেন না হিমাগার মালিকরা। কারসাজির মাধ্যমে নামে-বেনামে, আত্মীয়-স্বজন ও পরিজনদের নামে আগে থেকেই স্লিপ কেটে রেখেছেন মালিকরা। ফলে কৃষক আলু রাখতে গেলে তাঁদের বলা হচ্ছে হিমাগারে জায়গা নেই। হিমাগারে জায়গা না থাকায় গুটিকয়েক ব্যবসায়ী ছাড়া কোনো ক্রেতা আলু কিনতেও পারছেন না।
এভাবেই সারা দেশে হিমাগার মালিকদের স্লিপ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন লাখো আলু চাষি। অবশ্য দিশাহারা কৃষকদের পাশে কৌশলে দাঁড়াচ্ছেন হিমাগারের কর্মকর্তারা। তাঁরা গোপনে বলে দিচ্ছেন, ‘অমুকের স্লিপ নেওয়া আছে, সেখানে আলু বিক্রি করতে পারবেন।’ আসলে অমুক ব্যক্তিটাই হলো হিমাগার মালিকের এজেন্ট।
কুড়িগ্রাম জেলা শহরের আলু চাষি মকবুল আলমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এ মৌসুমে আলু তোলা হয়েছে এক হাজার ২০০ বস্তা। কিন্তু তিনি আলু রাখতে পেরেছেন মাত্র ৬০০ বস্তা।
নাম প্রকাশ না করে এক চাষি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রতিটি কোল্ড স্টোরেজের মালিক নামে-বেনামে স্লিপ দিয়ে জায়গা দখল করে রাখেন। পরে হয় তাঁরা নিজেরাই আলু রাখেন, না হয় বস্তাপ্রতি বেশি দাম রাখেন। কারণ আলু রাখতে পারলেই লাভ। আবার এটা অঘোষিত নিয়ম হয়ে গেছে, হিমাগারে আলুর ধারণক্ষমতা যতটুকু তার ১০ শতাংশ বস্তা মালিকরা নিজের নামে রাখে।’
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে আলুর ফলন ভালো হলেও হতাশ চাষিরা। একদিকে তাঁরা আলুর ভালো দাম পাচ্ছেন না, অন্যদিকে হিমাগারে সিন্ডিকেট করে নেওয়ার কারণে জায়গার সংকট। সব মিলিয়ে প্রান্তিক কৃষকের গলার কাঁটা মাঠের আলু। এবারে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণে বাজারে আলুর দাম কমে গেছে। এ ছাড়া হিমাগারে কৃষকরা আলু রাখতে না পারার কারণে একই সঙ্গে বাজারে আলুর সরবরাহ বেড়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতি কেজি আলু ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। অথচ তাঁদের উৎপাদন খরচ হয়েছে ১৯-২০ টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন লক্ষামাত্রা এক কোটি ১৩ লাখ ৮৭ হাজার টন, যা গত অর্থবছরে ছিল এক কোটি ৯ লাখ ৬৫ হাজার টন।
আলুর কম দামের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবেন হিমাগার মালিকরা। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক কেজি আলু যেখানে রাখতে হিমাগারে খরচ হয় ৪.৫ থেকে ৬ টাকা, সেই আলু রাখার জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ৬.৭৫ টাকা। এর পরও হিমাগারে জায়গা পাচ্ছেন না কৃষক। কারসাজির মাধ্যমে হিমাগার ভরে গেছে দেখিয়ে কম দামে আলু কিনছেন মূলত হিমাগার মালিকরা। এসব আলু ক্রয়মূল্যসহ তিন মাস পরেই অফ সিজনে ন্যূনতম ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে পারবেন তাঁরা। অথচ হিমাগার মালিকদের সব ধরনের খরচ মিলিয়ে মোট খরচ হবে ২২ থেকে ২৫ টাকা। আর যদি অফ সিজনে আলুর দাম আরো বেশি ওঠে তাহলে হিমাগার মালিকরা লালে লাল হবেন।
সরেজিমনে রংপুর বিভাগের একাধিক আলু হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, হিমাগারগুলোর সামনে সারি সারি আলুভর্তি বস্তা। তবে হতাশা কৃষকের মুখে। তার অন্যতম প্রধান কারণ কৃষকরা তাঁদের প্রয়োজন মতো আলু হিমাগারে রাখতে পারছেন না। ফলে তাঁদের বাধ্য হয়ে কম দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী মারুফ আহমেদ বলেন, ‘হিমাগারগুলোর মধ্যে এখনো কিছু জায়গা খালি আছে। কিন্তু তারা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম কমানোর জন্য কূটকৌশল করছেন এবং এই সুবাদে তাঁরা কিছু মাল কিনে কোল্ড স্টোরেজে কম্পানির নামে মাল রাখার ধান্দা করছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এখনো ৬.৭৫ পয়সা ভাড়া মানি না। সামনে বড়সড় আন্দোলনে যাব।’
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাবর কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ম্যানেজার শামীম আল মাসুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কোল্ড স্টোরেজের ধারণক্ষমতা ১১ হাজার মেট্রিক টন, যা পুরোপুরি বুকিং হয়েছে। আমরা সবাইকে স্লিপ দিয়েছি। কে কৃষক কে ব্যবসায়ী আমরা তা দেখিনি।’
মোস্তফা হিমাগারের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কুড়িগ্রামের চারটি হিমাগারের মোট আলু সংরক্ষণক্ষমতা ৪৮ হাজার টন। কিন্তু এ বছর উৎপাদন বেশি হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেককে আলু ফেরত নিয়ে যেতে হচ্ছে।’
রাজধানীর মিরপুরে পল্লবী এলাকায় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সেলিম (৩৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরিবারের দাবি, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। নিহত সেলিম পোশাকের কারচুপির কারখানায় কাজ করতেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেলিমকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মেডিক্যালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. ফারুক বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।
নিহতের আত্মীয় আশিকুর রহমান জানান, গতকাল ইফতারের পর সেলিম বাড়ির পাশে ওয়াপদা বিল্ডিংয়ের পাশের মাঠে যান। সেখানে শত্রুতার জেরে সেলিমকে কুপিয়ে ফেলে রাখা হয়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের খালা ইয়াসমিনের ভাষ্য, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী পারভিন, রনি, জনি, সীমা, রানীসহ আরো বেশ কয়েকজন শত্রুতার জেরে সেলিমকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
নিহত সেলিম এক সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুর-১১ পল্লবীর বিহারি ক্যাম্প ওয়াপদা কলোনি বিল্ডিংয়ে থাকতেন। ঘটনার পর ঘটনাস্থলে যান পুলিশ কর্মকর্তারা।
পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে গেছেন।
রায়পুরায় আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে গুলি, নিহত ২ : রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই প্রবাসফেরত ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক নারীসহ চারজন আহত হয়েছে। গতকাল ভোরে উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন মোহিনীপুর এলাকার খোরশেদ মিয়ার ছেলে আমিন মিয়া ও আব্দুল বারিকের ছেলে বাশার মিয়া।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মোহিনীপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম ও চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সামসু মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। ছয় মাস আগে সংঘর্ষের পর সালামের অনুসারীরা এলাকা ছেড়ে পাশের একটি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে তারা বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিলে সামসু মেম্বারের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে সালামের অনুসারী আমিন ও বাশার মারা যান।
নিহত আমিনের বাবা খোরশেদ মিয়ার অভিযোগ, ‘সামসু মেম্বারের হামলা ও নির্যাতনের ভয়ে আমরা গ্রাম ছেড়েছিলাম। ঈদের আগে বাড়ি ফিরতে গেলে তারা হামলা চালায়। আমার ছেলের বাঁ পায়ে গুলি করে এবং শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। এ সময় আমার স্ত্রী আহত হয়।’
বাশারের স্বজনরা জানায়, ঘটনার আগে রাতে সামসু মেম্বারের অনুসারীদের মধ্যে দুজন হামলা করতে এসে অস্ত্রসহ আটক হয়। পরে তাদের ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পরই ভোরে সালামের অনুসারীদের ওপর হামলা হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাশার মারা যান।
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাবেয়া সুলতানা জানান, মৃত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়। আমিনের বাঁ পায়ে এবং বাশারের বুক, পাসহ শরীরে গুলির আঘাত ছিল।
এ বিষয়ে চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সামসু মিয়া বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় আমার পক্ষের তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। প্রতিপক্ষের দুজন নিহত হয়েছে বলে শুনেছি।’
রায়পুরা থানার ওসি আদিল মাহমুদ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনো নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি।