<p>রাজশাহী ওয়াসা সিটি করপোরেশন থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে ২০১০ সালে। তবে এখনো লাভের মুখ দেখতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। সরকারকে প্রতিবছরই ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। নতুন করে লোকসানের মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে নন-রেভিনিউ ওয়াটার বা সিস্টেম লস। সাধারণত ১০ শতাংশ সিস্টেম লস ধরা হয়। তবে বর্তমানে সেটি আছে তিন গুণের বেশি। গত পাঁচ বছরে ওয়াসা সিস্টেম লসের চক্করে পড়ে রাজস্ব হারিয়েছে ৪১ কোটি ১২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। তবে ওয়াসা বলছে, ডিটেইলড মিটারড এরিয়া (ডিএমএ) সিস্টেম চালু হলে এটি কমে আসবে।</p> <p>রাজশাহী ওয়াসার তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে নন-রেভিনিউ ওয়াটার বা সিস্টেম লস ধরা হয় ৩৩.৫০ শতাংশ। এই অর্থবছরে ওয়াসা সিস্টেম লসের জন্য রাজস্ব হারায় আট কোটি ৭১ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে সিস্টেম লস ধরা হয় ৩২.৯০ শতাংশ। এই অর্থবছরে ওয়াসা সিস্টেম লসের জন্য রাজস্ব হারায় আট কোটি ৮৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সিস্টেম লস ধরা হয় ৩১.৪০ শতাংশ। এই অর্থবছরে ওয়াসা সিস্টেম লসের জন্য রাজস্ব হারায় সাত কোটি ৫৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সিস্টেম লস ধরা হয় ৩০.৬০ শতাংশ। এই অর্থবছরে ওয়াসা সিস্টেম লসের জন্য রাজস্ব হারায় ছয় কোটি ১২ লাখ টাকা।সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিস্টেম লস ধরা হয় ২৯.৪৭ শতাংশ। এই অর্থবছরে ওয়াসা সিস্টেম লসের জন্য রাজস্ব হারায় ৯ কোটি ৮৭ লাখ ৪২ হাজার টাকা।</p> <p>এদিকে ওয়াসা কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারানোর পরও পানির অবৈধ লাইন নেওয়া থেমে নেই। রাজশাহীর বিভিন্ন নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজই হচ্ছে অবৈধ লাইন নিয়ে। নগরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়ও মিলছে অবৈধ লাইন। এসব লাইন থেকেই চলে চায়ের দোকান, খাবার দোকান, এমনকি হোটেল। সরাসরি মাটির নিচের লাইন থেকে নেওয়া হচ্ছে অবৈধ লাইনগুলো।</p> <p>রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকায় ফুটপাতে দোকান চালান মহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পাশে একটি ট্যাপ আছে। সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে আমার পানি ব্যবহার করি। পানি নিতে কোনো সমস্যা হয় না আমাদের। যেহেতু এটি সরকারি লাইন, তাই পানির বিলও দিতে হয় না। রাজশাহীর সব খানেই এমন রাস্তার ধারে ট্যাপ দেখতে পাবেন। এসব ট্যাপ থেকে দোকান চালানো হয়।’ নগরের সাহেববাজার বড় মসজিদ এলাকায়ও দেখা মিলল এমন ট্যাপের। সেখানে চায়ের দোকান চালান মো. রঞ্জু নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘দোকান তো পানি এনে করতে হয়। মন্দিরের ওই খানে একটি ট্যাপ আছে, সেখান থেকেই পানি নিয়ে দোকান চালাই। কোনো বিল দিতে হয় না আমাকে।’</p> <p>রাজশাহী ওয়াসার একজন নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, রাজশাহী ওয়াসার পানি পরিমাপের কোনো যন্ত্র নেই। তবে একটি সঠিক পরিমাপের মাধ্যমে সিস্টেম লস ধরা হয়। স্ট্যান্ডার্ড মাপ হলো ১০ শতাংশ। মূলত অবৈধ লাইন, নির্মাণকাজে অবৈধ লাইন, লাইন ফেটে যাওয়া, লিকেজসহ নানা কারণে এসব হয়ে থাকে।</p> <p>রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকীর হোসেন বলেন, ‘সিস্টেম লস নানা কারণে হয়। পানি তো উৎপাদন করতেই হচ্ছে। আমরা পাম্প ১৬ ঘণ্টা না চালালে পানির প্রেসার হয় না। আধুনিক সিস্টেমে দিতে না পারার কারণে ম্যানুয়ালে করতে হচ্ছে। মূলত পাম্প চালু না করলে গ্রাহকের কাছে পানি পৌঁছায় না। ফলে আমাদের সিস্টেম লস হচ্ছে।’</p> <p>রাজশাহী মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য বরেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইফফাত আরা রাকা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওয়াসার লাইন সংযোগে যে ভোগান্তি এটি একটি বড় ধরনের সমস্যা। টেবিলে টেবিলে ঘুরতে হয় বৈধ লাইন নিতে। অথচ অবৈধ লাইন নিয়ে পানির ব্যবহার সহজ। কারণ কোনো সমস্যা তো হচ্ছে না! এতে করে জনগণের টাকা নষ্ট হচ্ছে। প্রতি তিন মাসে পানির বিল না নিয়ে বছরে একবার নিলে ভালো হয়। লাইন সংযোগ সহজ করতে হবে। অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন করে শাস্তির আওতায় নিতে হবে। ওয়াসার সেবা আরো বাড়াতে হবে।’</p> <p> </p> <p> </p>