আওয়ামী লীগ আমলে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রাজনীতি ছিল সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আবুল কালাম আজাদ পরিবারের হাতে জিম্মি। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদও অর্জন করেছে পরিবারটির সদস্যরা। নানা অপকর্মে জড়িত আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে হামলার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে দেবিদ্বারের বরকামতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একটি ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম।
২০১৬ সালের আগস্টে তিনি বরকামতা ইউপির চেয়ারম্যান হন।
এরমধ্যে ২০২১ সালে দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নুরুলের ছেলে আবুল কালাম আজাদ চেয়ারম্যান হন। অন্যদিকে, ২০২২ সালে নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ইউপি চেয়ারম্যান হন নুরুল।
২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে সংসদ নির্বাচন করে সংসদ সদস্য (এমপি) হন আবুল কালাম আজাদ।
২০২৪ সালের ২৯ মে তাঁর ভাই মামুনুর রশিদ দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ আমলের শেষ চার বছরে নুরুল ইসলামের পরিবার থেকে প্রথমে ইউপি চেয়ারম্যান, তারপর সংসদ সদস্য এবং সবশেষে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়।
এভাবে দেবিদ্বারে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয় আজাদ পরিবার। নানা অপকর্মে জড়িয়ে তারা হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে।
আজাদের হাত থেকে দলীয় নেতাকর্মীরাও বাদ যাননি। তাদের ওপরও দমন-পীড়ন করেন আবুল কালাম আজাদ।
গেল বছর ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনাসভা শেষে আজাদের নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ম. রুহুল আমিনের গাড়িতে হামলা হয়। ওই হামলায় জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাজীবসহ আরো কয়েকজন মারাত্মকভাবে আহত হন। এ ঘটনায় জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে আজাদকে অব্যাহতি দেয় আওয়ামী লীগ।
এদিকে, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে হামলার একাধিক মামলার আসামি আবুল কালাম আজাদ ও তার ভাই মামুনুর রশিদ। আন্দোলন চলাকালে আব্দুর রাজ্জাক রুবেল নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগে আবুল কালাম আজাদ, তার ছোট ভাই মামুনুর রশীদসহ ২০০ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২০ আগস্ট কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কামাল হোসেনের আদালতে মামলা হয়।
এ ছাড়া আন্দোলন চলাকালে দেবিদ্বার সরকারি কলেজ রোডে সশস্ত্র হামলা ও কুপিয়ে আবু বকর নামে এক তরুণকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আজাদ ও মামুনুরসহ ৭৩ জনের নামে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর আমলি আদালতে ৫ সেপ্টেম্বর মামলা হয়।
জানা গেছে, নামে-বেনামে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন আবুল কালাম আজাদ। নামসর্বস্ব কম্পানি ঢাকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজাদ অবৈধ টাকার বিনিময়ে এমপি হয়েছিলেন। একাধিক নারীর সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপনেরও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
দুর্নীতির টাকায় রাজধানীর গুলশান, বনানী এবং উত্তরা এলাকার অভিজাত স্থানে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট কিনেছেন আজাদ। সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদককে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা দিয়ে নিজের অপকর্ম ঢেকে রাখতেন তিনি।