<p>যে ছেলেটির দুচোখে ছিল গণতন্ত্রের স্বপ্ন, সমাজ বিনির্মাণের চিন্তা। পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে সেই ছেলেটি এখন সব হারিয়ে নিঃস্বপ্রায়। তার চোখে এখন অন্ধকার। ঝাপসা চোখে চেয়ে চেয়ে দেখেন আর মনে মনে বলেন, ‘এ রকমই কি সমাজ দেখতে চেয়েছিলাম?’ কথাগুলো বলছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মিরপুর-১০-এ গুলিতে আহত যুবক সাব্বির হোসেন (২১)। নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন মুন্সির ছেলে সাব্বির হোসেন। তিনি মিরপুরে বি সিক্স নামের একটি ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ছিলেন।</p> <p>জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন সময় তিনি অংশ নেন। বাবা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কারণে বরাবরই আওয়ামী লীগবিরোধী একটা অবস্থান ছিল তার। সে কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং কোটার দাবিতে ন্যায়সংগত আন্দোলনে অংশ নেন। গত ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় ঢাকার মিরপুর-১০-এ আন্দোলনে অংশ নেন তিনি। এ সময় পুলিশ গুলিবর্ষণ শুরু করলে সাব্বিরের  বাঁ চোখসহ মুখে, মাথায়, বুক ও হাতে ১০ থেকে ১২টি গুলি লাগে। আহত অবস্থায় তার বন্ধু ও সহকর্মীরা তাকে জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেন। সেখানে পুলিশি হয়রানির ভয়ে বেশিদিন রাখতে পারেনি। পরে তার বন্ধু ও বড় ভাইদের অনুুরোধে চার দিন পরে তার বাঁ চোখ থেকে শুধু গুলিটি বের করে নেওয়া হয়। অন্যান্য গুলি তার শরীরের মধ্যেই থাকে। গ্রেপ্তারের ভয়ে কাউকে কিছু না বলে নাটোর সদরের লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া গ্রামে ফিরে আসেন তিনি। এরপর গোপনে নাটোরের একটি ক্লিনিক থেকে তার গুলিগুলো অপসারণ করা হয়।</p> <p>সাব্বিরের বাবা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে  ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আমার ছেলেকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চোখে অপারেশন করা হয়, কিন্তু গুলি লাগা বাঁ চোখ দিয়ে দেখতে পারে না সে। ছেলের জন্য লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছি, কিন্তু কোনো সরকারি বা দলীয় সহায়তা পাইনি। এখন ছেলের চিকিৎসা করানোর মতো অর্থ আমার কাছে নেই।’</p> <p>সাব্বির হোসেন জানান, চোখ ও শরীরে বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগার পরে তার বড় ভাইদের সহায়তায় তাকে চক্ষু ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। জ্ঞান ফিরে তিনি জানতে পারেন ডাক্তার তার অপারেশনে রাজি নন। তারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, প্রশাসন অনুমতি দিলে তার চোখের অপারেশন হবে। পরে তার বন্ধুদের অনুরোধে একজন ডাক্তার তার বাঁ চোখ থেকে অপারেশনের মাধ্যমে গুলি করে দেন। এর পরে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি বাড়ি চলে আসেন।</p> <p> </p>