<p>চমচম বলতে বাঙালি বুঝে নেয় টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর প্রসিদ্ধ চমচমকেই। টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনী বাজারের মিষ্টিপট্টিতে টাঙ্গাইলের প্রসিদ্ধ চমচম পাওয়া গেলেও এর উৎপত্তিস্থল টাঙ্গাইল শহর থেকে চার কিলোমিটার পশ্চিমে ধলেশ্বরীর শাখা নদী এ্যালনজানীর তীর ঘেঁষে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী ইউনিয়নের পোড়াবাড়ী গ্রাম। এই গ্রামের প্রতিটি ঘরে চমচম তৈরি হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মাত্র ১০-১২টি বাড়িতে এখন চমচম তৈরি হয়।</p> <p><img alt="পোড়াবাড়ীর চমচমের শুরুটা যেখানে" height="320" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12 December/26-12-2024/Rif/28-12-2024-p12-5.jpg" style="float:left" width="450" /></p> <p>অতীতে প্রমত্তা ধলেশ্বরীর বাম তীরে চারাবাড়ী এলাকায় গড়ে ওঠে জমজমাট ব্যবসাকেন্দ্র। নোঙর করা লঞ্চ-স্টিমার থেকে নেমে দেশি-বিদেশি মানুষ চারাবাড়ী ও টাঙ্গাইল শহরে কেনাকাটা করতেন। পাশের পোড়াবাড়ীতেই তৈরি হতো প্রসিদ্ধ চমচম, যা কিনতেন ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা। স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় পোড়াবাড়ীর এই চমচমই অবিভক্ত ভারতবর্ষসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে টাঙ্গাইলকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়।</p> <p>পোড়াবাড়ীতে চমচম তৈরির সঙ্গে বংশ পরম্পরায় জড়িত দীনেশ গৌড় বলেন, ‘আমরা শত বছরের ওপরে চমচম তৈরি ও বিক্রি করে থাকি। প্রসিদ্ধ চমচম তৈরিতে ধলেশ্বরী নদীর পানি, গরুর খাঁটি দুধ, দেশি চিনি, লাকড়ির চুলা ইত্যাদি উপকরণ লাগে।’</p> <p>সরেজমিন দেখা যায়, বর্তমানে পোড়াবাড়ীতে চারটি ও চারাবাড়ীতে পাঁচটি মিষ্টির দোকান রয়েছে। পোড়াবাড়ী গ্রামে মাত্র ১০-১২টি পরিবার মিষ্টি তৈরির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কালিপদ ঘোষ, নারু ঘোষ, দিলীপ ঘোষ, মদন গৌড়, সাধন গৌড়,  প্রদীপ গৌড় এবং দীনেশ গৌড় চমচম তৈরি এবং বিক্রি করে থাকেন। কেজি প্রতি ২৫০-৩৫০ টাকা বিক্রি হয় তাদের চমচম।</p> <p>পোড়াবাড়ীর চমচম বিক্রেতা দীনেশ চন্দ্র গৌড় বলেন, ‘১০০ বছর ধরে আমাদের পরিবার চমচম শিল্পের সঙ্গে জড়িত। দাদুর কাছে চমচম তৈরিতে হাতেখড়ি। দাদুর দেওয়া দোকান আদি পোড়াবাড়ী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার পরিচালনা করি। বাজার খারাপ হওয়ায় দোকানের অর্ধাংশ রেখে বাকি অর্ধাংশে মুদি দোকান করেছি।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘এখানে ক্রেতারা আসতে চান না। তাঁরা শহর থেকেই চমচম কিনে নেন। আগে প্রতিদিন দুই-তিন মণ চমচম বিক্রি করতাম। বর্তমানে প্রতিদিন ১০-১৫ কেজি চমচম বিক্রি করাও দুরূহ।’</p> <p>মদন গৌড় বলেন, ‘চমচমের আগের বাজার নেই। এখানে চমচম তৈরি একসময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’</p> <p>টাঙ্গাইল সদর ইউএনও নাহিদা আক্তার বলেন, ‘পোড়াবাড়ীর চমচম তৈরির কারিগরদের সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’</p> <p> </p>
