ঝিনাইদহ যেন আবারও আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত সাড়ে পাঁচ মাসে এই জেলায় ১১টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর এলাকায় সন্ত্রাসীরা চরমপন্থী নেতাসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করে।
জানা যায়, এদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে চরমপন্থী নেতা হানিফ আলী ওরফে হানেফকে হরিণাকুণ্ডুর বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে তিনিসহ তাঁর দুই সঙ্গীকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
তাঁদের মাথায় ও বুকে গুলি করা হয়। শুধু এ ঘটনাই নয়, সামপ্রতিক সময়ে ঝিনাইদহ যেন সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়তই ঘটছে অস্ত্রের মহড়া, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, খুন, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতিসহ অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ড।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও ঝিনাইদহে পুরোপুরি সক্রিয় হতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন।
পুলিশের আগের মতো টহল ও অভিযান দেখা যায় না। এ ছাড়া কারাগারে থাকা বেশ কয়েকজন চরমপন্থী নেতা জামিনে বেরিয়ে এসেছে। একই সঙ্গে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরাও এলাকায় ফিরেছে। সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধীরা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেলে মহড়া দেয় তারা। যাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৬ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি ও মাদক কারবারেও জড়িয়ে পড়েছে তারা। এসব কারণে জেলাজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটছে।
এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে হরিণাকুণ্ডুর হাকিমপুর গ্রামে সামাজিক বিরোধের জেরে মোশাররফ হোসেন নামের এক আইনজীবীর সহকারীকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকরা।
গত ১৮ জানুয়ারি সদর উপজেলার বাদপুকুরিয়া গ্রামের যুবক রুবেল হোসেনকে হত্যা করে তাঁর বাড়ির পাশে সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে ফেলে রাখে দুর্বৃত্তরা। ১৫ জানুয়ারি সকালে কোটচাঁদপুরের চাঁদপাড়া গ্রামে কাওসার আলী নামের পুলিশের এক সোর্সকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
জেলা বিএনপির সহসভাপিত এনামুল কবির মুকুল বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভূমিকা রহস্যজনক। তারা কোনো বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এমনটা করছে কি না তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। জনমানুষের নিরাপত্তা দিতে না পারলে তাঁদের সব অর্জনই ম্লান হয়ে পড়বে।’
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অপরাধীরা পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। তবে প্রতিটি ঘটনাতেই তাঁদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’