রকিব নাম শুনলেই ভেসে ওঠে মাঠের বাঁ পাশ দিয়ে ছুটে চলা এক ফুটবলারের ছবি। কিন্তু সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে জানা গেল, তিনি নাকি ডান পায়েরই খেলোয়াড়। অনুশীলনে রপ্ত করেন বাঁ পায়ে খেলা। যেমন জানা গেল, উইঙ্গার হিসেবেও তিনি রূপান্তরিত।
অনেক কিছুকে এখনকার ফুটবলাররা ভাববে বানিয়ে বলছি
notdefined

প্রশ্ন : রকিব হোসেন মানেই তো মাঠের বাঁ প্রান্ত দিয়ে বাঁ পায়ে বল নিয়ে ছুটে চলা এক ফুটবলারের ছবি। প্রথমেই জানতে চাই, আপনি কি সহজাতভাবেই সব কিছু বাঁ পায়ে, বাঁ হাতে করেন?
রকিব হোসেন : না। আমি গ্রামের ছেলে।
প্রশ্ন : তাই! তাহলে বাঁ পায়ের ফুটবলার হিসেবে রূপান্তরটা কিভাবে?
রকিব : আমি যখন আবাহনী মাঠে টিটু ভাই, জুয়েল রানাদের সঙ্গে অনুশীলন করতাম, তখন অনেক বকা খেতাম।
প্রশ্ন : শুধু অনুশীলনেই ডান পায়ের আপনি হয়ে গেলেন বাঁ পায়ের খেলোয়াড়। অনুশীলনকে খুব গুরুত্ব দিতেন নিশ্চয়ই?
রকিব : খুবই। যখন আমি ঢাকার মাঠে পুরোদস্তুর ফুটবল খেলছি, তখনো শ্যামলীতে এখন যেখানে শিশুমেলা, সেখানে চলে যেতাম। শিশুমেলা তখনো হয়নি, বাউন্ডারি দেওয়া ছিল। শ্যামলীর বাড়ি থেকে হেঁটে সেখানে চলে যেতাম পকেট ভর্তি চকোলেট নিয়ে। টোকাইদের তা দিয়ে ওদের সঙ্গে খেলতাম। ওরা ছয়-সাতজন এক দলে; আমি একা এক দলে। দেয়ালে ইট দিয়ে লাল গোল এঁকে দূর থেকে শট অনুশীলন করতাম। বল সুইং করিয়ে যেন ঠিক ওই দাগের ভেতর নিতে পারি। এগুলো বললে এখনকার যুগের ফুটবলাররা মনে করবে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলছি।
প্রশ্ন : ফুটবলের প্রতি এমন ভালোবাসা শৈশব থেকেই?
রকিব : হ্যাঁ। আমার জন্ম ১৯৭৩ সালের ১০ মার্চ, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে। বাবা আব্দুল খালেক হাওলাদার, মা বেগম সায়েদুন্নেসা। বাবা ছিলেন কৃষক। পাঁচ ভাই, তিন বোনের মধ্যে আমি সাত নম্বর। তখন তো সারা দেশেই ফুটবলের ক্রেজ। বড় ভাই, মেজ ভাইরা ফুটবল খেলতেন। তাঁদের সঙ্গে আমিও মাঠে যেতাম। সবাই উৎসাহই দিতেন।
প্রশ্ন : বাবা কৃষক ছিল বললেন। তাঁকে সাহায্য করতে ফসলের ক্ষেতে যেতে হতো না?
রকিব : ওহ্, না না। কৃষক বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝি—খুব দরিদ্র, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ফসল ফলাচ্ছেন—আমাদের ব্যাপার তেমন নয়। বাবা কৃষক মানে গেরস্তি ছিল তাঁর। বিশাল গেরস্তি। দাদার কাছ থেকে পেয়েছিলেন। অনেক জমিজমা ছিল। হাজার হাজার মণ ধান, পাট, মরিচ হতো ক্ষেতে। অনেক স্কুল-কলেজ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত করেছে আমাদের পরিবার। গ্রামে প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল, মাদরাসায় নতুন কোনো শিক্ষক বা ছাত্র এলে আগে উঠতেন আমাদের বাড়িতে। পরে কারো বাড়িতে জায়গিরের ব্যবস্থা হলে চলে যেতেন। তাতে দেখা যেত, আমাদের কাছারি ঘরে সব সময় ১৫-২০ জন মানুষ থাকতেনই। এই যে মোহাম্মদপুরের যে বাসায় বসে আপনার সঙ্গে কথা বলছি, এটি মায়ের মরিচ বিক্রির টাকায় কেনা। সেই ১৯৭৮ সালে কেনা হয়েছে পাঁচ কাঠার এই জায়গা।
প্রশ্ন : জিজ্ঞেস না করলে তো জানাই হতো না এটি। বাবাকে অবলীলায় শুধু ‘কৃষক’ বললেন...
রকিব : আসলে তো কৃষকই। এ নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের কিছু নেই। এই দেশ বাঁচিয়ে রেখেছেন কৃষকরাই। তাদের প্রতি অমন মনোভাব দেখলে কষ্ট লাগে। আমার তাই বাবাকে কৃষক হিসেবে পরিচয় দিতে কোনো লজ্জা নেই। ভেদরগঞ্জ উপজেলায় গিয়ে এখনো যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন, হাওলাদার বাড়ি কোথায়? দেখিয়ে দেবে। আর আমার বাবার নামে এখন তো একটি গ্রামই আছে—খালেক হাওলাদার কান্দি। কান্দি মানে গ্রাম।
প্রশ্ন : ফুটবলার যে হতেই হবে, সেটি প্রথম মনে হয় কবে?
রকিব : মনু ভাইয়ের সেই গোল দেখে...
প্রশ্ন : মানে ১৯৮৫ সালে আবাহনীর বিপক্ষের গোলটির কথা বলছেন?
রকিব : ঠিক তাই। এমনিতে আমি আবাহনীর সমর্থক। ১৯৮৫ সালে ছিল প্রিয় দলের হ্যাটট্রিক লিগ শিরোপা জয়ের সুযোগ। কিন্তু মোহামেডানের কাছে হেরে যায় দল। মনু ভাই অসাধারণ এক গোল করেন। শুধু যে গোলের কারণে এটি আমার মনে প্রভাব ফেলেছে, তা নয়। মনু ভাইয়ের জেলা ছিল আমাদের শরীয়তপুরে। কিন্তু কখনো উনি গ্রামে গিয়েছেন কি না, জানা নেই। তবু শরীয়তপুরের সবাই বলাবলি করত, মনু আমাদের ফুটবলার। আবাহনী-মোহামেডানের সেই খেলা টিভিতে দেখেছিলাম। ওনার গোল দেখার পর মনে হয়, আমি যদি এমন বড় দলে খেলতে পারি, এমন গোল দিতে পারি, এমনভাবে টিভিতে আমার খেলা দেখায়—তাহলে তো শরীয়তপুরের সবাই আমাকে নিয়েও গর্ব করবে। সেই থেকে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নটা বাড়ে।
প্রশ্ন : তখন আপনার বয়স?
রকিব : খুব বেশি না। ক্লাস এইটে পড়ি।
প্রশ্ন : খেলাটি কি শরীয়তপুরের বাসায় বসে টিভিতে দেখেছিলেন?
রকিব : না, ঢাকায়। তত দিনে মা-বাবা দুজনই মারা গিয়েছেন। যখন ক্লাস টুতে পড়ি, তখন মা; ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় বাবা। ঢাকায় আরো দুই ভাইয়ের সঙ্গে থাকতাম। ওরা ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ভর্তি হবে ভার্সিটিতে। আমাকে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় কাকলী স্কুলে। তিন ভাই থাকতাম মোহাম্মদপুর বাঁশবাড়ি রোডে। বিকেলে হেঁটে আবাহনী ক্লাবে গিয়ে অনুশীলন দেখতাম। কিন্তু নিজে তো খেলতে পারতাম না। ঢাকায় কোনো বন্ধু-বান্ধবও নেই। গ্রামের খোলা পরিবেশে বড় হওয়া আমার জন্য মানিয়ে নেওয়া তাই ছিল খুব কঠিন। বছরখানেক থেকে তাই ফিরে যাই ভেদরগঞ্জে।
প্রশ্ন : আবার ফেরেন কবে?
রকিব : কিছুদিন পর। ঢাকায় থাকতে থাকতে মনু ভাইয়ের ওই গোল দেখেছি টিভিতে। আমার মাথায় সারাক্ষণ ঘোরে, ফুটবলার হতে হবে। ওদিকে বড় বোন তখন থাকেন শরীয়তপুর সদরে। বাড়ি থেকে ঠিক হয়, আমাকে ওখানে পাঠিয়ে দেওয়া হবে পড়ালেখার জন্য। আমি বলি, ‘না, আমি শরীয়তপুর যাব না। ঢাকায় গিয়ে ফুটবলার হব।’ শুনে বড় ভাই মোহাম্মদ আমিন বললেন, ‘এক শর্তে তোকে ঢাকায় যেতে দিতে পারি। স্কুলে তোকে সব বিষয়ে শতকরা ৭৫ ভাগ নম্বর পেতে হবে। পাশাপাশি ফুটবল খেলবি, ভালো কথা। আমাদের পরিবারে তো কোনো ফুটবলার নেই।’ তত দিনে ঢাকায় থাকা দুই ভাইয়ের একজন চলে গেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে; আরেকজন ঢাকা কলেজের হোস্টেলে। ওদিকে ছোট বোন চলে এসেছে ঢাকায়। এই বোন-দুলাভাইয়ের সঙ্গে থাকার জন্য ঢাকা ফিরি। এই ফেরাটা আমার ফুটবল ক্যারিয়ারের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন : সেটি কেমন?
রকিব : বোন-দুলাভাইয়ের সঙ্গে থাকি তখন লালমাটিয়া হাউজিং কোয়ার্টারে। যথারীতি বিকেলে হেঁটে চলে যাই আবাহনী ক্লাবে। ওখানে বড় বড় তারকারা অনুশীলন করেন। পাশাপাশি সাইফুল বারী টিটু ভাই, জুয়েল রানাদের মতো ছোটরাও। খুব ইচ্ছা হতো, ওদের সঙ্গে ফুটবল খেলার। বলার সাহস পেতাম না। পরে একদিন জুয়েলকে বলেই ফেলি। ও খুব আগ্রহের সঙ্গে আমাকে অনুশীলনে আসতে বলে। এই আমার ফুটবলার হয়ে ওঠার পথ তৈরি হয়।
প্রশ্ন : এরপর? বিভাগীয় ফুটবলে খেলা শুরু কিভাবে?
রকিব : তত দিনে বোনের সঙ্গে মিরপুর চলে গেছি। দুলাভাই তো হাউজিংয়ে চাকরি করতেন, অনেক কন্ট্রাক্টর পরিচিত ছিলেন। একজনকে বলেন, ‘আমার শালার ফুটবলে আগ্রহ আছে। দেখো তো কিছু করা যায় কি না।’ ১৯৮৬ সালে আমি সিটি ক্লাবের জুনিয়র দল এমএসপিসিসি’তে পাইওনিয়ার লিগ খেলি। পরের দুই বছর খেলি সিটি ক্লাবের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগে। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে পিডাব্লিউডিতে প্রথম খেলি প্রথম বিভাগ। বাউন্ডিংসের খেলোয়াড় হিসেবে।
প্রশ্ন : পারিশ্রমিক পেতেন?
রকিব : পাইওনিয়ারে না। দ্বিতীয় বিভাগে প্রথম মৌসুমেও না। দ্বিতীয় মৌসুমে বোধ হয় ১০-১২ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। পরে পিডাব্লিউডিতে গিয়ে ২৫-৩০ হাজার টাকার মতো।
প্রশ্ন : তত দিনে তো পুরোপুরি বাঁ পায়ের ফুটবলার হয়ে উঠেছেন?
রকিব : হ্যাঁ, তবে উইঙ্গার হয়ে উঠিনি।
প্রশ্ন : মানে!
রকিব : শুনলে একটু অবাক হতে পারেন, প্রথম বিভাগের আগ পর্যন্ত ক্যারিয়ারে আমি পুরোপুরি স্ট্রাইকার। ব্রাদার্সের সেলিম ভাই ছিলেন সিটি ক্লাবের কোচ। আমাকে খুব পছন্দ করতেন। মহসিন ভাইও সাংগঠনিকভাবে জড়িত ছিলেন ওই ক্লাবের সঙ্গে। তিনিও আমার খেলা পছন্দ করতেন খুব। পরে প্রথম বিভাগের দল পিডাব্লিউডিতে গিয়ে উইঙ্গার হিসেবে খেলা শুরু। কারণ ওই ক্লাবে গাউস, রেজাদের মতো ফরোয়ার্ড ছিল। ওদিকে কোচ আমাকে পারফরম্যান্সের কারণে বাদও দিতে পারেন না। সে কারণে আউটে খেলানো শুরু করেন।
প্রশ্ন : মেনে নিতে, মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়নি?
রকিব : নাহ্। ফুটবল খেলতেই আমার মজা লাগে; তাই সমস্যা হয়নি। পিডাব্লিউডিতে দুই মৌসুম খেলার পর প্রস্তাব আসে মোহামেডানে খেলার। ব্রাদার্সেও। এটি ১৯৯৩ সালের কথা। আমি ভেবে দেখলাম, মোহামেডানে গেলে নিয়মিত খেলার সুযোগ না-ও পেতে পারি। নিজের সিদ্ধান্তে ব্রাদার্সে যাই।
প্রশ্ন : আর পরের বছরই যে মুক্তিযোদ্ধায় গেলেন, সেটিও নিজের সিদ্ধান্ত?
রকিব : সিদ্ধান্ত তো অবশ্যই আমার। আবাহনী-মোহামেডান-ব্রাদার্স থেকে যারা মুক্তিযোদ্ধায় গিয়েছি, সবাই নিজেদের সিদ্ধান্তে গিয়েছি। তবে আমাদের ওই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছিলেন তিন ক্লাবের কর্মকর্তারা।
প্রশ্ন : আপনি প্রস্তাবটি পান কার কাছ থেকে?
রকিব : তার আগে একটা কথা বলি। খেলোয়াড়ি জীবনে আমি কখনো টাকার পেছনে ছুটিনি। আমার শখ ছিল, অফিশিয়ালরা টাকা নিয়ে আমার পেছনে দৌড়াবে। আমি টাকার পেছনে দৌড়াব না। আবাহনী-মোহামেডান-ব্রাদার্স তিন ক্লাব মিলে ‘জেন্টলম্যান অ্যাগ্রিমেন্ট’ করে আমাদের টাকা কমিয়ে দেওয়ার কারণেই তো সবাই মুক্তিযোদ্ধায় যাই। আমি কিন্তু ওই বছর মুক্তিযোদ্ধা দল না গড়লেও ব্রাদার্স ছাড়তাম।
প্রশ্ন : কেন?
রকিব : ছোট এক দলের কাছে সেবার আমরা কোনো এক ম্যাচ হেরে যাই। ব্রাদার্সের অফিশিয়ালরা মহা খাপ্পা। মিটিং বসে। সেখানে ফুটবলারদের যাচ্ছেতাই বলা হয়। আমাকে আলাদা করে বলেন, ‘তুমি নিজেকে কী মনে করো? ব্রাদার্সে এমন রকিব কতজন আসবে-যাবে। ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয় না।’ এটি আমার খুব লাগে। আমি মিটিংয়ে বলে আসি, ‘এ মৌসুম শেষ হলে আমি আর ব্রাদার্সে খেলব না। সেটি যত টাকাই দেন।’ এরপর তো মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন হলো। আমার ব্রাদার্স ছাড়াটা সহজ হয়ে যায় তাতে।
প্রশ্ন : কিভাবে পান প্রস্তাবটা?
রকিব : আমি আর গাউস তখন একই পজিশনে খেলি। মুক্তিযোদ্ধা শুরুতে চায় গাউসকে। কিন্তু আবাহনী ছাড়তে ওর দ্বিধা ছিল। এরপর একদিন রাত ২টার সময় মনজুর কাদের, জুয়েল রানা, নকীব ও আতা আসে আমার শ্যামলীর বাসায়। ওরা বিস্তারিত বলে, কোন কোন ফুটবলার যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধায়; কত টাকা করে পাব; এখন আমি যোগ দেব কি না। আমি এক কথায় রাজি। ওই রাতেই ওদের সঙ্গে বেরিয়ে যাই। গুলশানের এক গেস্ট হাউসে আমাদের কয়েক ফুটবলারকে লুকিয়ে রাখা হয়। পরে দলবদলে নাম লেখাই মুক্তিযোদ্ধায়। এখানেই আমি লেফট আউটে খেলা শুরু করি পুরোপুরি। কোচ সালাউদ্দিন ভাই আমাকে বোঝান, এই একটি পজিশনেই আমি থিতু হতে পারি। তত দিনে আমি স্ট্রাইকার, মিডফিল্ডার, প্লে-মেকার রাইট উইঙ্গার, লেফট উইঙ্গার সব পজিশনে খেলেছি। আমার কোনো অসুবিধা তাই ছিল না।
প্রশ্ন : মুক্তিযোদ্ধা তখন প্রায় জাতীয় দল। তবু সেবার লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। কেন?
রকিব : দুটি কারণে। প্রথমত, ওই তিন ক্লাবের কর্মকর্তাদের যে রাগ ছিল আমাদের ওপর, সে ঝাল ঝাড়েন রেফারিদের দিয়ে। আমাদের বিপক্ষে বাঁশি বাজাতেন তাঁরা। এ ছাড়া সমর্থকদেরও খুব রাগ ছিল। মাঠে সারাক্ষণ আমাদের গালিগালাজ করা হতো। খেলার শুরুতে বা শেষে মাঠে যাওয়া-আসার সময় বাসে সবাই মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে বসে থাকতাম। কখন আবাহনী-মোহামেডান-ব্রাদার্সের সমর্থকরা ঢিল ছুড়ে বসবে, তাতে না আহত হই—এ ভয়ে। তবে আমার কাছে মনে হয়, মূলত রেফারিদের কারণেই সেবার আমরা লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। আমাদের অনেক পয়েন্ট কেড়ে নিয়েছে তাঁদের ভুল বাঁশি।
প্রশ্ন : দুই মৌসুম পর তো দেশের দুই জনপ্রিয় দলের একটি আবাহনীতে খেলতে গেলেন আপনি অবশেষে। এটি কতটা রোমাঞ্চকর ছিল?
রকিব : হ্যাঁ, ১৯৯৬ সালে। আমি, মামুন জোয়ার্দার, বরুণ ও মিজান একসঙ্গে যাই মুক্তিযোদ্ধা থেকে। তবে সত্যি বলতে কী, ভীষণ রোমাঞ্চকর যে ছিল, তা বলব না। আগেই বলেছি, ছোটবেলার প্রিয় দল আবাহনী। কিন্তু খেলোয়াড়ি জীবনে কোনো ক্লাবের প্রতিই আলাদা দুর্বলতা ছিল না। সব মিলিয়ে যখন যে ক্লাবের প্রস্তাব যথাযথ মনে হয়েছে, সেখানেই গিয়েছি। এ কারণে আমার গায়ে দেখবেন কোনো ক্লাবের সিল লাগেনি।
প্রশ্ন : ঠিক এ প্রশ্নটাই করতে চাইছিলাম। বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রায় সব ফুটবলারের গায়েই ওই সিলটা রয়েছে। মোহামেডানের সাব্বির-কায়সার, আবাহনীর মুন্না-আসলাম। আপনার গায়ে যে তেমন কোনো সিলমোহর লাগেনি, সে জন্য খেলোয়াড় হিসেবে প্রাপ্য স্বীকৃতি পাননি বলে মনে হয়?
রকিব : হয়তো। কিন্তু তাতে কিছু যায়-আসে না। এটিতে আমার ঔদ্ধত্য বলতে পারেন। আমি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি ও বাংলাদেশ ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থার বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছি। সে খবর পরদিনের সংবাদপত্রে এসেছে স্ট্যাম্প সাইজের ছবিতে। অন্যদের ছবি এসেছে অনেক বড় করে। আমি কিছু মনে করিনি। আমার কাছে খ্যাতির বিড়ম্বনা ভালো লাগত না। যেখানে যাই সবাই আমাকে চিনবে, আমার কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেবে, আমার সঙ্গে কথা বলবে—এটি ছিল তীব্র অপছন্দ। নিজেকে চিড়িয়াখানার প্রাণী মনে হতো। বরং মনে হতো, আমাকে মানুষ যত কম চেনে, তত ভালো। গণমাধ্যমও তাই কিছুটা এড়িয়ে চলতাম।
প্রশ্ন : কলকাতায় ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে খেলতে গিয়েছিলেন। ওই গল্পটি একটু যদি বলেন...
রকিব : এখানেও একই কথা। আইএফএ শিল্ডের সেমিফাইনালে আমার গোলে মোহনবাগানকে হারিয়ে ইস্ট বেঙ্গল ওঠে ফাইনালে। এরপর স্টেডিয়াম থেকে বেরোতে পারি না। সমর্থকরা হাত ধরে টানছে, পায়ে প্রণাম করছে, গালে চুমু দিচ্ছে—এটি তো যেকোনো ফুটবলারের জন্যই দারুণ ব্যাপার। কিন্তু আমার বিরক্ত লাগত। আমি কলকাতায় থাকাকালীন কোনো সাক্ষাৎকার দিইনি। ও না, একবার শুধু দিয়েছিলাম; সল্ট লেকে যাঁর বাড়িতে থাকতাম, সেই বিপ্রদাশ চ্যাটার্জি দাদার অনুরোধে আনন্দবাজার পত্রিকায়। ফটোগ্রাফাররা আমার ছবি তোলার জন্য এসে বসে থাকত। আমি ছবি তুলতাম না। ওনারা বলতেন, ‘দাদা, মুন্নাদার মতো ফুটবলারের সঙ্গে আমাদের এত খাতির; আপনি কেন ছবি তোলেন না? সাক্ষাৎকার দেন না?’ আমি আসলে অমনই ছিলাম। নিজেকে ‘সেল’ করতে ভালো লাগত না।
প্রশ্ন : ইস্ট বেঙ্গলে যাওয়ার প্রস্তাব পান কিভাবে?
রকিব : মুন্না ভাইয়ের মাধ্যমে। উনি তো ওখানে আগে থেকেই খেলেন। আর কলকাতায় খেলতে গিয়ে দেখেছি তাঁর জনপ্রিয়তা। রাস্তায় হাঁটলে এমন কেউ নেই, যে মুন্না ভাইকে চিনত না। ১৯৯৫ মাদ্রাজ সাফ গেমসের পর আমাকে ও মিজানকে উনি নিয়ে যান ইস্ট বেঙ্গলে খেলার জন্য।
প্রশ্ন : খুব বেশি সময় তো কলকাতায় খেলেননি?
রকিব : না, ফেডারেশন কাপ ও আইএফএ শিল্ড। দুটি টুর্নামেন্ট খেলেছি শুধু।
প্রশ্ন : কেন?
রকিব : ওদের কোচ নইমুদ্দিনের কোচিং পছন্দ হয়নি। এর চেয়েও বড় কথা, বিদেশি খেলোয়াড়দের প্রতি ওদের আচরণ আমার কাছে ভালো লাগেনি। ফেডারেশন কাপ খেলে ফেরার সময় মাদ্রাজ থেকে কলকাতায় আমাদের পাঠানো হয় ট্রেনে। অথচ চুক্তি অনুযায়ী প্লেনে পাঠানোর কথা ছিল। হাওড়া স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে ইস্ট বেঙ্গলের সেক্রেটারি পল্টু দাশকে বলেছিলাম, ‘বাংলাদেশে গিয়ে দেখে আসুন, বিদেশি ফুটবলারদের কিভাবে সম্মান দেওয়া হয়।’ মুন্না ভাইকে বলেছিলাম, ‘আপনি এখানে খেলেন, অসুবিধা নেই। আমাকে আপনি নিয়ে এসেছেন, ধন্যবাদ। কিন্তু কলকাতায় আমি খেলব না। ওদের আগে বলুন, বিদেশি ফুটবলারদের সম্মান দিতে।’ হাওড়া স্টেশন থেকে সরাসরি বিমান অফিসে যাই দেশে ফেরার টিকিটের জন্য। কিন্তু পরের কয়েক দিনের টিকিট নেই। পরে মুন্না ভাই আমার ব্রেন ওয়াশ করলেন; পল্টুদা, বিপ্রদাশ দাদারাও বোঝালেন। তাতে আইএফএ শিল্ড খেলতে রাজি হই। ওখানে দলকে চ্যাম্পিয়ন করানোর পর ফিরে আসি বাংলাদেশে। লিগ খেলিনি।
প্রশ্ন : এত বছর পর কী মনে হয়, লিগটা খেললেই পারতেন?
রকিব : অবশ্যই আমার খেলা উচিত ছিল। মুন্না ভাইয়ের কথাই ঠিক, সব কিছু মনমতো কখনো হবে না। কিন্তু তখন উঠতি বয়স, গায়ের রক্ত গরম—সে কারণে খেলব না বলেছি তো খেলবই না। খেললে আমার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো হতো। হ্যাঁ, এত বছর পর সত্যি মনে হয়, ইস্ট বেঙ্গলে আমার খেলা উচিত ছিল।
প্রশ্ন : ওখানে খেলে কত টাকা পেয়েছেন?
রকিব : ম্যাচপ্রতি সম্ভবত ৫০০ ডলার করে।
প্রশ্ন : ঢাকায় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পেয়েছেন কত?
রকিব : সাত-আট লাখ টাকা। আবাহনীতে, ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে।
প্রশ্ন : মোহামেডানেও পরবর্তী সময়ে খেলেছেন আপনি। কবে?
রকিব : আবাহনীতে তখন এক মৌসুম খেলেছি। ওখানে ক্লাব-তাঁবুতে থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। যা আমার পছন্দ ছিল না। এক মৌসুম পর মুক্তিযোদ্ধায় চলে যাই। ওখানে দুই মৌসুম খেলি; লিগ চ্যাম্পিয়ন হই। এরপর মোহামেডানে।
প্রশ্ন : প্রতিনিয়তই দল বদলেছেন আপনি...
রকিব : মোহামেডানে দুই মৌসুম খেলার পর আবার যাই মুক্তিযোদ্ধায়। এরপর আবার আবাহনী। ২০০৩-০৪ মৌসুমে আবাহনীর হয়েই শেষ খেলি। মুন্না ভাই সব সময় বলতেন, ‘তোমার একটি নির্দিষ্ট ক্লাবে খেলা উচিত। বারবার দলবদল কোরো না। আবাহনীর রকিব বা মোহামেডানের রকিব পরিচয়টা প্রয়োজন।’ কিন্তু তখন এসব ভাবিনি। যে কারণে বারবার দল বদলেছি।
প্রশ্ন : এবার একটু জাতীয় দলের কথা শুনি। বাংলাদেশ দলে প্রথম ডাক পান কবে?
রকিব : ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সবুজ দলে ডাক পাই। ১৯৯৩ সাল থেকে মূল জাতীয় দলে। কোচ ওল্ডরিখ সোয়ার আমাকে খুব পছন্দ করতেন। তখন আমি স্ট্রাইকার হিসেবে খেলি বেশি। উনি যাওয়ার সময় বলে যান, ‘তুমি যেহেতু পুরো মাঠ জুড়ে খেলতে চাও, তোমার মিডফিল্ডে খেলা উচিত।’ পরে তো সালাউদ্দিন ভাই মুক্তিযোদ্ধায় লেফট উইঙ্গার বানিয়ে দেন।
প্রশ্ন : সাফ গেমস খেলেছেন কটি?
রকিব : দুটি। ১৯৯৩ ও ১৯৯৫ সালে।
প্রশ্ন : ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো সাফ গেমসে স্বর্ণপদক পায় বাংলাদেশ। সেই দলে সুযোগ পাননি?
রকিব : সুযোগ পেয়েছি, কিন্তু খেলিনি।
প্রশ্ন : কেন?
রকিব : কেন খেলিনি? কোনো কারণ নেই। আমার মনে হয়েছে, জাতীয় দলের আমাকে আর প্রয়োজন নেই। যখন আমি অবসরের চিঠি দিতে ফেডারেশনে যাই, বাদলদা (বাদল রায়) বলেছিলেন, ‘তুই অবসর নিলে হবে? কয়েক দিন সময় নে। থাইল্যান্ড যা, কক্সবাজার যা—কয়েক দিন ঘুরে আয়। পরে এসে দলের সঙ্গে যোগ দে।’ কোচ সামির শাকিরও বলেছিলেন, আমাকে তাঁর প্রয়োজন। কিন্তু আমার মনে হয়েছে খেলব না, তো খেলবই না।
প্রশ্ন : ইস্ট বেঙ্গলে না খেলার মতো?
রকিব : (হাসি) হ্যাঁ।
প্রশ্ন : সে সিদ্ধান্তটি তো ভুল ছিল স্বীকার করেছেন। এখন কি মনে হয়, জাতীয় দলে না খেলার সিদ্ধান্তটিও ভুল?
রকিব : হ্যাঁ, ভুল। খেললে সাফ গেমস ফুটবলে বাংলাদেশের প্রথম স্বর্ণপদকজয়ী দলের অংশ থাকতে পারতাম। জুয়েল রানাও কিন্তু অবসরের চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু পরে সবার অনুরোধে ও জাতীয় দলে ফেরে। অধিনায়ক হিসেবে জেতে সাফের শিরোপা। আমার মনে হয়েছে, ১৯৯২ সাল থেকে দেশের হয়ে খেলেছি, কী দিয়েছি দেশকে? এক মিয়ানমারের ওই টুর্নামেন্টের শিরোপা ছাড়া। ১৯৯৫ সাফের ফাইনালটা খুব মনে আছে। সেন্টার লাইন থেকে বল নিয়ে ড্রিবলিং করে চার-পাঁচজনকে কাটিয়ে ওদের গোলরক্ষকের সামনে চলে যাই। কিন্তু গোল করতে পারিনি। গোলটি করলে পারলে ’৯৫ সালেই আমরা সাফে স্বর্ণপদক পেতাম; আমি হতে পারতাম ‘গোল্ডেন বয়’। সেটি হয়নি। সব মিলিয়েই ’৯৯ সাফে খেলিনি। খেললে ভালো হতো।
প্রশ্ন : শেষ দিকে চলে এসেছি। আপনার ক্যারিয়ারের সেরা কয়েকটি ম্যাচের কথা একটু জানতে চাই?
রকিব : জিততে না পারলেও ’৯৫ সাফের ফাইনাল আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা। মিয়ানমারে চার জাতি টুর্নামেন্টের ফাইনালও স্মরণীয়। ওদের কাছে প্রথম ম্যাচে চার গোলে হেরেছিলাম। ফাইনালে মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়েই জিতি ট্রফি। মামুন ও নকীব গোল দুটি করে আমার পাস থেকে। ১৯৯৭ সালে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে সৌদি আরবের বিপক্ষেও খুব ভালো খেলেছিলাম। এ ছাড়া আবাহনীর হয়ে মোহামেডানের বিপক্ষে গোল করেছি; মোহামেডানের হয়ে আবাহনীর বিপক্ষেও। এগুলোও স্মরণীয়।
প্রশ্ন : সমসাময়িক ফুটবলারদের মধ্যে সেরা মনে হয়েছে কাকে?
রকিব : স্ট্রাইকার হিসেবে নকীব। মিডফিল্ডে আরমান, জাকির। ডিফেন্সে জুয়েল রানা। তবে একজনের কথা বলতে গেলে মুন্না ভাইয়ের কথা বলব। আমার কাছে মনে হয়েছে, তিনি শুধু বাংলাদেশ না, ওই সময়ে এশিয়ারই অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার ছিলেন। পরে আমার সঙ্গে বাড়ি লেগে ব্যথা পেয়েই মুন্না ভাইয়ের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধার হয়ে আবাহনীর বিপক্ষে ছিল সে খেলা।
প্রশ্ন : মোনেম মুন্না তো আপনার কেমন আত্মীয়ও হন, তাই না?
রকিব : হ্যাঁ, আমার ভাগ্নি জামাই। তাঁর স্ত্রী সুরভি আমার আপন চাচাতো বোনের মেয়ে। ও তো আমার কাছ থেকেই মুন্না ভাইয়ের ফোন নম্বর নিয়েছিল। বলেছিল, ভক্ত হিসেবে কথা বলতে চায়। পরে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক হয়ে যায়। সম্পর্কটা সুরভির পরিবার মেনে নিতে পারেনি শুরুতে। এ নিয়ে পারিবারিক সালিসও হয়েছে অনেক। দোষারোপ করা হয় আমাকেও। কিন্তু ওরা যখন পরস্পরকে পছন্দ করেছে, তখন কী আর করা! মুন্না-সুরভির বিয়ে দিই পারিবারিকভাবে।
প্রশ্ন : মুন্নার মৃত্যুর খবর পান কিভাবে?
রকিব : আমি তখন কানাডায়। পুশকিন ফোন করে খবরটি দেয়। এত খারাপ লাগে যে, কী বলব!
প্রশ্ন : কানাডা চলে যান কবে? কেন?
রকিব : ২০০৪ সালে কানাডা যাই। বলতে পারেন, রাগ করেই গিয়েছিলাম। সে মৌসুমে আমি আবাহনীর অধিনায়ক। গ্রোয়েন ইনজুরির কারণে কিছু ম্যাচ খেলতে পারিনি। পরে ফেরার পর দেখি, আমাকে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড দেয় না। মাঠে আমি কিন্তু অধিনায়কত্ব করে জয়। আসলে তখন ক্লাব পলিটিকসের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম। চুন্নু ভাই এসব করিয়েছেন। সব মিলিয়ে ভাবি, দূর আর ফুটবলই খেলব না। কারণ কারো দয়ায় আমি কখনো ফুটবল খেলিনি। খেলা ছেড়ে তাই কানাডা চলে যাই। ২০০৬ সালে ফিরেছিলাম একবার। আগে থেকেই তো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। স্বেচ্ছাসেবক লীগের ক্রীড়া সম্পাদক হয়েছিলাম। ফেরার পর সাড়ে চার মাসের মতো থাকি। পরে আর থাকলাম না। চলে যাই কানাডায়।
প্রশ্ন : যেসব কোচের অধীনে খেলেছেন, তাঁদের মধ্যে সেরা কে?
রকিব : বিদেশিদের মধ্যে ওল্ডরিখ সোয়ার, ১৯৯৩ সাফে জাতীয় দলের কোচ। আর দেশিদের মধ্যে হাসানুজ্জামান বাবলু ভাই।
প্রশ্ন : সেরা বিদেশি ফুটবলার?
রকিব : ঝুকভ। আবাহনীতে ওর খেলা ছিল অবিশ্বাস্য।
প্রশ্ন : একটু পারিবারিক কথা জানতে চাই। বিয়ে করেন কবে?
রকিব : ২০০৪ সালে। স্ত্রীর নাম জিহান সাজেদ। জুয়েল রানার বউয়ের বান্ধবী ও। আমাদের দুই ছেলে। বড়টি জিনান পড়ছে গ্রেড ওয়ানে। আর ছোট ছেলে রায়েফের বয়স মোটে আট মাস।
প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন। সব মিলিয়ে জীবন নিয়ে, ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার তৃপ্তি কতটা?
রকিব : সবচেয়ে বড় তৃপ্তি, খেলাধুলার মাধ্যমে আমার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছি। এই যে আমি কিছুদিনের জন্য দেশে এলাম, ঠিকই আমাকে খুঁজে আপনি সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য চলে এসেছেন। আমি যদি ডাক্তার হতাম বা ইঞ্জিনিয়ার হতাম, তাহলে কি এটা করতেন? করতেন না। আমি আগেই বলেছি, খ্যাতিটা আমার পছন্দের না। কিন্তু তবু যে অনেকে আমাকে ফুটবলার রকিব হিসেবে মনে রেখেছেন, তাতে ভালো লাগে। আর জীবন নিয়ে আমি বেশ সন্তুষ্ট। একটাই আক্ষেপ, যে বিদেশ আমার কখনোই ভালো লাগে না, সেখানেই আমাকে এখন থাকতে হচ্ছে। কী আর করা! জীবনে যা চাই, সব তো আর পাওয়া সম্ভব না।
সম্পর্কিত খবর

টিভিতে

৩০.৩.২৫ (রবিবার)
ফুটবল
লা লিগা, বার্সেলোনা-জিরোনা
সরাসরি, রাত ৮-১৫ মিনিট, জিও সিনেমা
অ্যাথলেতিক বিলবাও-ওসাসুনা
সরাসরি, রাত ১০-৩০ মিনিট, জিও সিনেমা
রিয়াল বেতিস-সেভিয়া
সরাসরি, রাত ১টা, জিও সিনেমা
বুন্দেসলিগা, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড-মেইঞ্জ
সরাসরি, রাত ৯-৩০ মিনিট, টেন ১
এফএ কাপ, বোর্নমাউথ-ম্যানচেস্টার সিটি
সরাসরি, রাত ৯-৩০ মিনিট, টেন ২
৩১.৩.২৫ (সোমবার)
ফুটবল
লা লিগা, সেল্তা ভিগো-লাস পালমাস
সরাসরি, রাত ১টা, জিও সিনেমা
১.৪.২৫ (মঙ্গলবার)
ফুটবল
ইপিএল, আর্সেনাল-ফুলহাম
সরাসরি, রাত ১২-৪৫ মিনিট
স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১/২
নটিংহাম ফরেস্ট-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
সরাসরি, রাত ১টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১/২
২.৪.২৫ (বুধবার)
ফুটবল
ইপিএল, ম্যানচেস্টার সিটি-লিস্টার সিটি
সরাসরি, রাত ১২-৪৫ মিনিট
স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১/২
লিভারপুল-এভারটন
সরাসরি, রাত ১টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১/২
ক্রিকেট
নিউজিল্যান্ড-পাকিস্তান, দ্বিতীয় ওয়ানডে
সরাসরি, ভোর ৪টা, টেন ১
।
টি স্পোর্টস

৩০.৩.২৫ (রবিবার)
ক্রিকেট
আইপিএল, দিল্লি-হায়দরাবাদ
সরাসরি, বিকেল ৪টা
রাজস্থান-চেন্নাই
সরাসরি, রাত ৮টা
৩১.৩.২৫ (সোমবার)
ক্রিকেট
আইপিএল, মুম্বাই-কলকাতা
সরাসরি, রাত ৮টা
১.৪.২৫ (মঙ্গলবার)
ক্রিকেট
আইপিএল, লখনউ-পাঞ্জাব
সরাসরি, রাত ৮টা
২.৪.২৫ (বুধবার)
ক্রিকেট
আইপিএল, বেঙ্গালুরু-গুজরাট
সরাসরি, রাত ৮টা
।
বিশেষ
অবিশ্বাসের ক্রীড়াঙ্গন
সাইদুজ্জামান

কেউ কাউকে কনফিডেন্সে নিচ্ছেন না। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংস্কারের হুংকার দিয়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সার্চ কমিটি গঠন করে। এই কমিটির প্রত্যেক সদস্য দেশের ক্রীড়া কর্তৃপক্ষের আস্থাভাজন। তেমনটাই হওয়ার কথা।
পেশাগত কারণে সার্চ কমিটির সবার সঙ্গে কমবেশি পরিচয় আছে। কমিটি গঠনের পর তাঁদের মধ্যে যথারীতি ক্রীড়া কল্যাণে ভূমিকা রাখতে পারার রোমাঞ্চ। কিন্তু মাস না গড়াতেই সেই কমিটির একাধিক সদস্য দেখি ফুঁসছেন! কী ব্যাপার? ব্যাপার কিছু না, পুরনো রোগ।
বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আর গোপন নেই।
এটা নজিরবিহীন। অবশ্য অনুমেয়ই ছিল। একটি ফেডারেশনে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন নিয়ে প্রথম মনোমালিন্যের শুরু মন্ত্রণালয় ও সার্চ কমিটির। এরপর কমিটি জমা পড়ে, কিন্তু ঘোষণা হয় না। আবার ঘোষিত কমিটিতে কিছু কাটাছেঁড়া থাকে। সব মিলিয়ে অনেক দিন ধরেই ফুঁসছিল সার্চ কমিটি, যার বিস্ফোরণ ঘটেছে আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক পদে ওলটপালট ঘটিয়ে। এই প্রথম একটা ‘রাউন্ড’ জিতল সার্চ কমিটি। কমিটির তালিকায় রাজীব উদ্দীন আহমেদ ছিলেন না। কিন্তু সরকারিভাবে ঘোষিত অন্তর্বর্তী কমিটিতে তাঁকে সাধারণ সম্পাদক পদে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করে সার্চ কমিটি। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সার্চ কমিটির দাবি মেনে রাজীবকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন একজনকে আর্চারির সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
এতে কী সমস্যার সমাধান হয়ে গেল? মনে হয় না। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সঙ্গে সার্চ কমিটির বিরোধ এখন প্রকাশ্য। মতবিরোধ আর বিরোধ দুটো ভিন্ন জিনিস। মতবিরোধ আলোচনায় চুকিয়ে ফেলা যায়। কিন্তু ক্রীড়া পরিষদ ও সার্চ কমিটির মধ্যে অবিশ্বাসের যে মেঘ জমেছে, তা সরবার নয়। থেমে থেমে কখনো বৃষ্টি কিংবা ঝড়ও হতে পারে।
তো নতুন ক্রীড়া ব্যবস্থায় আমরা কী পেলাম? এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যৎ বলবে। তবে অন্তর্বর্তী কমিটি গঠন নিয়ে অযথা কালক্ষেপণ এবং প্রকাশ্য দ্বন্দ্বকে ‘শুভ সূচনা’ বলা যাবে না। এর মধ্যে আবার শ্যুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের কমিটি ঝুলে আছে। এই ফেডারেশনের অন্তর্বর্তী কমিটি নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে বাজারে। আর্চারির পর শ্যুটিংয়ের কমিটি নিয়েও হুলুস্থুল হবে না তো ক্রীড়াঙ্গনে?
তবে আশা করব, যেন সে রকম কিছু না হয়। তবে হতে পারে। কারণ দীর্ঘদিনের চর্চায় সব কিছুর আগে নিজেকে জুড়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা গড়ে উঠেছে। দেশের সমৃদ্ধি স্রেফ একজনের কারণে—রাজনীতির এমন সস্তা প্রচারণা ছড়িয়ে পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনে। ফেডারেশন কিংবা জেলা ও বিভাগীয় সংস্থার নির্বাহী কমিটিতে নাম থাকলেই পরিচিতি, সেই সুবাদে ব্যবসা-বাণিজ্যে বাড়তি সুবিধা মেলে। আবার কিছু পেলে দিতেও তো হবে। প্রত্যাশীরা সোৎসাহে দেন। কী দেন, কাকে দেন—সেসব উহ্য থাক।
ক্রীড়াঙ্গনের সংস্কার প্রক্রিয়ায় দারুণ কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে। যেমন—বটবৃক্ষ হয়ে গেঁড়ে বসা যাবে না ফেডারেশনে। একইভাবে নিয়মিত খেলা আয়োজন না করলে বাদ পড়তে হবে। ঠিক আছে। যদিও অদ্ভুত এক যুক্তিতে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া কমিটিতে সাংবাদিক কোটা রাখা হয়েছে। কমিটিতে ক্রীড়া সাংবাদিক থাকলে নজরদারি ভালো হবে। যদিও একজন ক্রীড়া সাংবাদিকের কাজই ক্রীড়াঙ্গনের সত্যিকারের ছবি তুলে ধরা। বরং সেই তিনি যদি কোনো ক্রীড়া কমিটিতে যুক্ত থাকেন, তা স্পষ্টতই ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’। আর নীতিনির্ধারকরা কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে কমিটির ‘ওয়াচডগ’ হতে পারেন শুধুই একজন ক্রীড়া সাংবাদিক?
যাই হোক, আর্চারি ফেডারেশন দিয়েই শেষ করি। এই ফেডারেশনের যাত্রার ঘোষণা শুনে ক্রীড়াঙ্গনে বলাবলি হচ্ছিল, অনুদান মেরে খাওয়ার জন্য আরেক ‘দোকান’ খোলা হয়েছে! পরে রাজীব উদ্দীন আহমেদ সিটি গ্রুপকে যুক্ত করেন এর পৃষ্ঠপোষকতায়। বাকিটুকু ইতিহাস—রোমান সানা সরাসরি অলিম্পিকে। এসব বিবেচনায় হয়তো টিকে গিয়েছিলেন তিনি। আবার সার্চ কমিটির ক্ষোভের পর রাজীবকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তো কে জিতল? অবিশ্বাস, তাই না?

শেফিল্ড শিল্ড

২৯ বছর পর শেফিল্ড শিল্ডের শিরোপা জিতেছে সাউথ অস্ট্রেলিয়া। চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ায় রেকর্ড গড়ে তারা হারিয়েছে কুইন্সল্যান্ডকে। অ্যাডিলেডের ক্যারেন বোল্টন ওভালের ফাইনালে ২৭০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ২৮ রানে তিন উইকেট হারানোর পর অ্যালেক্স কেরির ১০৫ এবং জেসন সাঙ্গার ১২৬* রানের সেঞ্চুরি ৪ উইকেটের জয় এনে দেয় সাউথ অস্ট্রেলিয়াকে। এপি
।