ঈদুল ফিতরের আনন্দ উপভোগ করতে প্রতি বছরের তুলনায় এবার মানুষের ঢল নেমেছে লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার মেঘনা নদীর পাড়ে। একটু প্রশান্তির আশায় মেঘনার পাড়ে ভিড় করেছেন হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসুরা। রামগতি উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন আলেকজান্ডার মেঘনার পাড়ে এখন দম ফালানোর ফুসরত নেই। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে বিকেল বেলা নদীর হিমেল হাওয়া উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা।
একই চিত্র কমলনগর উপজেলার মাতাব্বরহাট ও মতিরহাটের মেঘনার তীরেও।
গতকাল মঙ্গলবার (১ মার্চ) বিকেলে আলেকজান্ডার মেঘনার পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, দর্শনার্থীদের কেউ ছবি তুলছেন, কেউ নদীতে নৌকায় ঘুরছেন, কেউবা প্রিয়জনকে নিয়ে বাঁধের ওপর হিমেল বাতাসে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বসে বসে গল্প করছেন।
আরো পড়ুন
‘পাইরেসিকে রুখে দিন’, কড়া বার্তা দিলেন শাকিব খান
ঈদের ছুটিতে এ বিনোদনকেন্দ্রে এখন পর্যটকদের ঢল নেমেছে।
নানা বয়সের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ একটু প্রশান্তির আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন মেঘনার পাড়ে। বড়দের মতো ছোট ছোট শিশু-কিশোররাও বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠছে। প্রকৃতির নির্মল বাতাস, নদীর ঢেউ আর সবুজে ঘেরা সৌন্দর্য উপভোগ করেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা।
এ অঞ্চলে রয়েছে বিশাল বিশাল কয়েকটি চর।
ওই চরে রয়েছে শত শত মহিষের পাল। পাওয়া যায় মহিষের দুধের ঐতিহ্যবাহী টক দই। এমনকি প্রায় বিলুপ্ত হওয়া মহাজনী পঙ্খীরাজ নৌকারও দেখা মেলে এখানে। কিন্তু যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে এ উপকূলের সম্ভাবনাময় পর্যটনের বিকাশ ঘটছে না।
স্থানীয়রা জানান, মেঘনার তীরে পাথরে তৈরি ব্লক দিয়ে বাঁধা বেড়িবাঁধকে ঘিরে সবুজ বনায়নের মাধ্যমে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে রামগতি ও কমলনগরের মেঘনা নদীর পাড়ে।
সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিতে পারলে হাজারো প্রকৃতি প্রেমীদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি এখানে সুযোগ সৃষ্টি হবে বিকল্প কর্মসংস্থানের। তবে এখনো গড়ে ওঠেনি হোটেল-মোটেল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিলে মেঘনার তীর হতে পারে দ্বিতীয় সমুদ্র সৈকত-এমনটাই মনে করেন স্থানীয়রা। যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করলে বদলে যেতে পারে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা।
আরো পড়ুন
যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাব মানতে নারাজ রাশিয়া
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেঘনার তীরে নদীর স্বচ্ছ জলরাশি, ঢেউ, হিমেল হাওয়া, চরাঞ্চলের গরু-মহিষের বিচরণের দৃশ্য এবং তাদের সঙ্গে রাখালের বন্ধুত্বের দৃশ্য হয়ে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্র। তবে নিষেধাজ্ঞার সময়ে এ বছর ঈদ হওয়ায় দর্শনার্থীরা রুপালী ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ করতে পারছে না। মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ করতে পারছে না। ঈদের ছুটি যতদিন রয়েছে, ঠিক ততদিন পর্যটকদের এমন ঢল থাকবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা আব্দুল কাইয়ুম রাহুল বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঘুরতে এসেছি, খুব ভালো লাগছে স্থানটি।’
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে আসা রুবেল হোসেন ও জান্নাতুল মাওয়া মিম বলেন, ‘মেঘনা নদী দেখতে ছুটে এসেছি। মুরুব্বিদের থেকে অনেক বার শুনেছি। তাই দ্বিতীয়বারের মতো দেখতে এলাম।’
স্থানীয় শিক্ষক সারোয়ার মিরন বলেন, ‘মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের আওতায় কমলনগরের মতিরহাট থেকে রামগতি বাজার পর্যন্ত প্রায় ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হলে এটি হবে দ্বিতীয় সমুদ্র সৈকত।’
আরো পড়ুন
আজকের নামাজের সময়সূচি, ২ এপ্রিল ২০২৫
রামগতি থানার ওসি মো. কবির হোসেন বলেন, ‘কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে। আমরা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, ‘একদিকে ঈদের ছুটি, অন্যদিকে প্রচণ্ড গরম। একটু প্রশান্তির আসায় মানুষের উপস্থিতি খুব বেশি। তবে উপজেলা প্রশাসন পর্যটকদের সেবা দিতে কাজ করছে। আমি নিজেও বিকাল বেলা ঘুরে ঘুরে দেখি।’