<p> ভারতে মোদি সরকার কাজ শুরু করতেই তাঁর দপ্তরের এক মন্ত্রী ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরসংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা রদ করার বিষয়ে যে মন্তব্য করেন, তাতে জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিতর্কের ঝড় উঠেছে৷ কার্যভার গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদির দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জীতেন্দ্র সিং জম্মু-কাশ্মীর সম্পর্কে এক বিতর্কিত বিবৃতি দিয়ে রীতিমত বিতর্কের ঝড় তুলেছেন। তাঁর কথায়, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নং ধারাটি রদ করা প্রয়োজন। বর্তমানে ঐ ধারা অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীর আলাদা মর্যাদা ভোগ করছে। জীতেন্দ্র সিং মনে করেন, এটা চলতে পারে না।<br /> তাঁর কথায়, ৩৭০ নম্বর ধারা জম্মু-কাশ্মীরে ভালোর চেয়ে যে খারাপ করছে বেশি সেটা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে বুঝতে হবে। এ বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার হুঁশিয়ারি, ৩৭০ নং ধারা রদ করা হলে জম্মু-কাশ্মীর আর ভারতের অঙ্গ হয়ে থাকবে না। কেননা, তাঁর মতে, ভারতের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের সাংবিধানিক সম্পর্ক দাঁড়িয়ে আছে ঐ ৩৭০ নম্বর ধারার ওপর। কাজেই এ ধরনের কথাবার্তা অবান্তর নয়, দায়িত্বজ্ঞানহীন। রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে এবং আমজনতার মধ্যেও এর প্রতিক্রিয়া হয়েছে তীব্র। বিজেপির সহযোগী দল পিডিপি-র নেত্রী মেহবুবা মুফতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই ধরনের চেষ্টা বিঘ্ন সৃষ্টিকারী এবং ক্ষতিকর। তাই মোদি সরকারের উচিত এ থেকে বিরত থাকা।<br /> ঐতিহাসিকরা মনে করেন, এই ধারা একটা অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা। স্বায়ত্তশাষনের ধারা ধীরে ধীরে ক্রমশই ক্ষীণ হয়ে আসছে। তখন কেন্দ্রের হাতে ছিল প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, যোগাযোগ ইত্যাদি। এখন তার পরিসর অনেক ব্যাপক। আইন বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মনে করেন, ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মীরসংক্রান্ত ৩৭০ নম্বর ধারা রদ করার প্রক্রিয়া সহজ নয়। সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা আছে সংসদের। রাষ্ট্রপতি বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা সংশোধন করতে পারেন। অবশ্য তা রাজ্যের গণপরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে। এ ছাড়া এটা কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্কের মৌলিক ভিত্তি, তাই তা সংশোধন করা যাবে না।<br /> কাশ্মীরের বিশিষ্ট আইনবিদ তাসাদাক হোসেনের মতে, ঐ ধারা রদ করতে হলে প্রথমে সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভা এবং উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা উভয় সভাতেই রদ করা সংক্রান্ত প্রস্তাব পাস করাতে হবে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়। তার পর সেই প্রস্তাবটিকে অনুমোদন পেতে হবে জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভায় দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে, যেটা কার্যত অসম্ভব। কোনো রাজ্যের কোনো রাজনৈতিক দল তা করতে চাইলে তাদের অস্তিত্বই হয়ে পড়বে বিপণ্ণ। রাজ্যে জ্বলে উঠবে আগুন।<br /> উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অঙ্গ ছিল না। ছিল মহারাজা হরি সিং এর স্বাধীন রাজতন্ত্র। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর পাকিস্তানি উপজাতি হানাদার বাহিনী কাশ্মীর আক্রমণ করলে, উপয়ান্তর না দেখে রাজা হরি সিং ভারতের কাছে সেনা সাহায্য চান ইনস্ট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন, অর্থাৎ ভারতভুক্তির শর্তে। তাতে জম্মু-কাশ্মীরকে ৩৭০ নম্বর ধারা অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা দেবার সংস্থান রাখা হয়। এর পর ১৯৫০ সালে জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নেহেরু মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়ে দক্ষিণপন্থী প্রজাপরিষদ গঠন করে আন্দোলন শুরু করেন এর বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি ছিল, এক প্রজাতন্ত্রের মধ্যে আরেকটা প্রজাতন্ত্র থাকতে পারে না। রাজ্যের শেখ আবদুল্লা সরকার শ্যামাপ্রসাদকে গ্রেপ্তার করে জেলবন্দি করেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি নাকি বিনা পারমিটে রাজ্যে ঢুকেছেন। সে সময়ে বিনা পারমিটে কাশ্মীরে ঢোকা যেত না। পরবর্তীতে জেলে বন্দি অবস্থায় মারা যান ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।<br /> সূত্র : ডয়চে ভেলে</p>