ঈদে চাই পাঞ্জাবি

  • ঈদের পাঞ্জাবিতে এবার হাতের কাজ বেশি দেখা যাচ্ছে। রয়েছে রকমারি ছাপা নকশাও। একরঙা পাঞ্জাবিতে নতুনত্ব এসেছে। হালকা ও ভারী—দুই রকম নকশাই বেছে নিতে পারবেন। ঈদের পাঞ্জাবির খোঁজ নিয়েছেন আতিফ আতাউর
শেয়ার
ঈদে চাই পাঞ্জাবি
মডেল :    জারিফ শাবাব ও দিপ পোশাক      :    ইজি কৃতজ্ঞতা      :    দ্য ফুড হল, বসুন্ধরা ছবি   :    শেখ সাদি

এ বছর ঈদুল ফিতর পড়েছে গরমের মধ্যে। তাই ঈদের পোশাকও তৈরি হয়েছে গ্রীষ্মকেন্দ্রিক। পোশাকে আরামের দিকটাই সবার আগে প্রাধান্য দিয়েছে ব্র্যান্ডগুলো। ঈদ পোশাক হিসেবে সবার কাছেই পাঞ্জাবির আবেদন সবচেয়ে বেশি।

ঈদ উপলক্ষে বর্ণিল নকশার পাঞ্জাবি নিয়ে এসেছে ছোট-বড় সব ব্র্যান্ড। তাতে নানা বৈচিত্র্য তুলে ধরেছেন ডিজাইনাররা। ছেলে-বুড়ো সবার কাছেই ব্র্যান্ড কলারের পাঞ্জাবি এখন বেশি জনপ্রিয়। এ জন্য কলারেই বেশি বৈচিত্র্য দেখা যায়।
কয়েক বছর ধরে কলার, কাফ বা হাতায় নকশা করা একরঙা পাঞ্জাবির সমাহার বেশি ঘটে। এই নকশায়ও এসেছে ভিন্নতা। এমব্রয়ডারি, জারদৌসি থেকে শুরু করে কাঁথাস্টিচ, কুরুশকাঁটার কারুকাজ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভেলভেট বা ভিন্ন ধরনের ছাপা নকশার কাপড়জুড়ে দিয়েও গলার নকশা আর কাফে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে।
যাঁরা ব্র্যান্ড কলারের বাইরে কিছু পরতে চান তাঁদের জন্য এসেছে কলারবিহীন বা গোলগলা, স্যাট কলার, কাবলি, হাইনেক, শাহি কলার পাঞ্জাবি। সাদা, কমলা, হলুদ, গোলাপি, নীল, বেগুনির মতো হালকা শেডের রং ব্যবহার করা হয়েছে এসব পাঞ্জাবিতে। গরমে হালকা রঙের গোলগলা পাঞ্জাবিতে ঈদ লুকে সহজেই ভিন্নতা আনতে পারেন।

ঈদে চাই পাঞ্জাবি
ঈদের সংগ্রহের বড় একটি অংশ দখল করে আছে ছাপা নকশার পাঞ্জাবি। পোশাক : সেইলর

প্রতি ঈদেই নতুন নকশার নানা পোশাক নিয়ে আসে ফ্যাশন হাউস ইজি।

এবারও ব্র্যান্ডটিতে হালকা ও ভারী দুই রকম নকশার পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী তৌহিদ চৌধুরী বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই পোশাকে ছাপা নকশা আধিপত্য ধরে রেখেছে। পাঞ্জাবির ক্ষেত্রেও তাই। এবারও আমরা পাঞ্জাবিতে ছাপা নকশা প্রাধান্য দিয়েছি। এ ছাড়া হাতের কাজ, এমব্রয়ডারির সাহায্যে নকশা করা হয়েছে। একরঙা পাঞ্জাবির গলা ও হাতে কারুকাজের নকশা করা হয়েছে।’

ঈদে চাই পাঞ্জাবি
ঈদের দিন রাতে বা দাওয়াতে একটু ভারী কাজ করা জমকালো পাঞ্জাবি বেশি মানানসই। পোশাক : টুয়েলভ

প্রিন্টের ডিজাইন সাধারণত আন্তর্জাতিক ফ্যাশন থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়। এ জন্য তরুণদের মধ্যে ছাপা নকশার জনপ্রিয়তা বেশি। বৈশ্বিক ধারায় গ্রীষ্মের সংগ্রহে নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে টাইডাই। এর রঙিন নকশাটাই তরুণদের বেশি টানে। ঈদের পাঞ্জাবিতে রয়েছে একই ধারা। পুরো পাঞ্জাবিতে ছাপা নকশা চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। তবে ফিবছর অভ্যন্তরীণ কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। এ বছর নকশা হিসেবে ব্যবহূত হয়েছে ফুলেল মোটিফ ও জ্যামিতিক মোটিফের নানা ধরন। এর বাইরে ট্রপিক্যাল বা লতাপাতা, শাখা-প্রশাখাজাতীয় নকশাও রয়েছে।

ঈদে চাই পাঞ্জাবি
ঈদের বিকেলে ঘোরাঘুরি বা আড্ডার জন্য বেছে নিতে পারেন ছিমছাম কাজ করা পাঞ্জাবি।   পোশাক : সেইলর

প্রতিবছরই ভিন্ন ভিন্ন থিমে ঈদ সংগ্রহ সাজায় ফ্যাশন হাউস টুয়েলভ। এবার এথনিক ও ওয়েস্টার্ন দুই বিভাগেই ঋতুকে প্রাধান্য দিয়ে আরামদায়ক ম্যাটেরিয়ালের পাঞ্জাবি এনেছে ব্র্যান্ডটি। জামদানি, পিক্সেল, মুঘল, ফ্লোরাল মোটিফের অনুপ্রেরণায় পাঞ্জাবির নকশা করেছে তারা। প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র ডিজাইনার শুভাগত ভট্টাচার্য বললেন, ‘আদি আমলের মুঘল আমলের তৈজসপত্রের ওপর অলংকৃত নকশা থেকে শুরু করে আমাদের ঐতিহ্য জামদানি কারিগরদের নকশা দেখা যাবে। পাঞ্জাবির হাতায় এবার বোতামের কাজ রেখেছি।’

ঈদে চাই পাঞ্জাবি
তরুণদের কাছে উজ্জ্বল রঙের পাঞ্জাবির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।     পোশাক : টুয়েলভ

ঈদের পাঞ্জাবির বড় অংশ দখল করেছে সুতির ম্যাটেরিয়াল। গরমে আরামে ঘুরে বেড়ানোর জন্যই এমন বন্দোবস্ত। উত্সবের কথা মাথায় রেখে হাফ সিল্ক, ব্লেন্ডেড সিল্ক, মিক্স কটন, জর্জেট ও জ্যাকার্ডের মতো উপকরণও ব্যবহার করা হয়েছে। পাঞ্জাবির ম্যাটেরিয়াল নির্বাচনে সবার আগে ক্রেতাদের আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধকেই প্রাধান্য দিয়েছে ব্র্যান্ডগুলো।

উত্সবের দিনের সাজে একটু ভিন্নতা চান সবাই। এ জন্য অনেকের পছন্দ ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণ। তাদের চাওয়া সামনে রেখে পোশাকের কাট নিয়ে ডিজাইনাররা অনেক ধরনের কাজ করে থাকেন। আগে পাঞ্জাবির বুক ও হাতায় নকশা দেখা যেত। এখন পুরো পাঞ্জাবিতেও নকশা ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। এমব্রয়ডারি,  হাতের বুনন, সূচির কাজের পাশাপাশি পাথর এবং আয়নার ব্যবহারও দেখা যায়। ডিজাইনারা নানা নিরীক্ষায় পাঞ্জাবির ডিজাইন করছেন। যে কারণে উত্সবে নকশাদার পাঞ্জাবি পরতে তরুণরাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

তরুণরা সাদা, কমলা, লাল, হলুদ, গোলাপি, নীল, ধূসর, বাদামি, সবুজ, জলপাই, বেগুনি, ল্যাভেন্ডার ইত্যাদি রং এবং এর বিভিন্ন শেডের পাঞ্জাবি পরছেন। রংগুলো চোখের জন্য আরামদায়ক, তেমনি উত্সব উপযোগীও।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্বেচ্ছাচারী সূর্যের আস্তানায়

    সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে অনেকে কুয়াকাটার গঙ্গামতির চরে যান। তবে আরো নিবিড় করে সূর্যের উদয়-অস্ত উপভোগ করতে চাইলে যেতে হবে গঙ্গামতি চরের বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ, খাল পেরিয়ে তিন কিলোমিটার দূরের কাউয়ার চরে। সেখান থেকে ঘুরে এসে লিখেছেন সৈয়দ রেজওয়ানুল হাসান
শেয়ার
স্বেচ্ছাচারী সূর্যের আস্তানায়
অবশেষে দেখা মেলে কাউয়ার চরের সূর্যোদয়। ছবি : লেখক

শৈত্যপ্রবাহ চলছিল তখন। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের সেই তীব্র শীত গায়ে জড়িয়ে উঠে পড়লাম বরিশালের লঞ্চে। সফরসঙ্গী আদনান। আমাদের গন্তব্য পটুয়াখালী।

লঞ্চ ছাড়ল সন্ধ্যার একটু আগে। চোখের পলকেই পশ্চিম আকাশে হারিয়ে গেল সূর্য। ধীরে ধীরে নেমে এলো মধ্য রাত। ঘুটঘুটে আঁধার, মাঝ নদী আর ঘন কুয়াশা।
সেই খেয়ালি কুয়াশা নদীপথকে যেন ধাঁধায় ফেলে দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, কুয়াশা ভেদ করে আমাদের নৌযানটি কোনো এক অন্ধকার, রহস্যময়, ফ্যান্টাসি জগতে হারিয়ে যাচ্ছে।

পরদিন ভোরে লঞ্চ পৌঁছাল বরিশাল। আমতলী ঘাট থেকে রিকশা ও ভ্যানে করে কয়েক ঘণ্টায় কুয়াকাটা।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সমুদ্রসৈকত ‘সাগরকন্যা’ নামে পরিচিত। ‘কুয়া’ মানে ‘কূপ’। কুয়াকাটা নামের নেপথ্যে রয়েছে এ দেশে আরাকানদের আগমনের ইতিহাস। ১৭৮৪ সালে বর্মী রাজা রাখাইনদের মাতৃভূমি আরাকান দখল করে নেন। প্রাণ বাঁচাতে বড় বড় নৌকায় করে অজানা গন্তব্যে বেরিয়ে পড়ে হাজার হাজার রাখাইন।
সন্ধান পায় বঙ্গোপসাগরের রাঙ্গাবালি দ্বীপের। গড়ে তোলে নতুন বসতি। সুপেয় পানির অভাব মেটাতে তারা সেখানে খনন করে কূপ। সেই থেকে অঞ্চলটির নাম হয়ে ওঠে কুয়াকাটা। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো টিকে আছে প্রাচীন সেই কুয়া। রাখাইনদের বাসস্থল কেরানিপাড়ায় দেখতে পাওয়া যাবে তার দর্শন।

স্বেচ্ছাচারী সূর্যের আস্তানায়

রাখাইনপাড়া ঘোরার সময় একটা ছোট্ট চায়ের দোকানে পরিচয় হলো এক তরুণের সঙ্গে। নাম ঈমান। অল্প সময়ে দারুণ জমে গেল। গল্পে গল্পে তার কাছ থেকে জানতে পারলাম, এক আজব দ্বীপের কথা। পুরো পৃথিবীতে দুটি আর দক্ষিণ এশিয়ায় এমন একটিমাত্র দ্বীপ আছে, যেখানে একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই দ্বীপ থেকে বিস্ময়কর প্রকৃতির সাক্ষী হওয়া যায়। নাম ‘কাউয়ার চর’ বা লোকমুখে ‘সূর্যোদয় দ্বীপ’। কুয়াকাটায় সূর্যোদয় দেখা নতুন কোনো কথা নয়। অনেকে মূল সৈকত থেকে ছয় কিলোমিটার দূরের গঙ্গামতির চরে যায় সূর্যোদয় উপভোগ করতে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরের বুক থেকে সূর্যের একটি আলোক কণাও মিস না করে, পূর্ণাঙ্গ সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখতে যেতে হবে আরো দূরে। মোহনীয় গঙ্গামতি চরের সবুজ বন, খাল পেরিয়ে আরো তিন কিলোমিটার দূরের কাউয়ার চরে। ঠিক করলাম, বিশেষ ওই সূর্যের সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে পরদিনই যাব সেখানে। ঈমান বলল, তাহলে ভোররাতে রওনা দিতে হবে। ঠিক হয় ঈমান রাত ৪টা ৩০ মিনিটে আমাদের নিতে বাইক নিয়ে চলে আসবে।

পরদিন ভোর ৪টা বেজে ২৫ মিনিট। সময়ের আগেই হাজির ঈমান। আমরাও দেরি করলাম না। রওনা হলাম কুয়াকাটা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরের একটি দ্বীপের উদ্দেশ্যে। ভোর ৬টা ১৬ মিনিটের আগে ওখানে পৌঁছাতে হবে। নয়তো সূর্যোদয় দেখা যাবে না। তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কনকনে ঠাণ্ডাও আটকাতে পারছে না আমাদের। না পারছে ঘুটঘুটে অন্ধকার পথ রোধ করতে। চোখজুড়ে মেখে থাকা ঘুম, বাইকের গতির বদৌলতে ভয়ংকর রূপ নেওয়া হিমেল বাতাস আর কাদায় ভরা রাস্তা। এসব প্রাকৃতিক বাধার কোনোটিই কাজে আসছে না আজ। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে, সৈকতের বালুময় পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছি। বাইক যতবার কাদায় আটকে যাচ্ছে, ততবার নামতে হচ্ছে। পথ কোথাও উঁচু-নিচু, কোথাও ভাঙা বা কোথাও অন্ধকার। এসব সঙ্গে নিয়েই শীতে জবুথবু হয়ে ছুটে চলেছি। কান, মাথা, হাত-পা সব জমে আসছে।

প্রায় ছয় কিলোমিটার পেরিয়ে এবার দৃশ্যপটে হাজির হলো সেই গঙ্গামতির খাল। পূর্ব দিকে এই খাল পর্যন্ত এসেই কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত শেষ হয়েছে। শীতের মৌসুমেও বেশ চওড়া সেটি। দেখেই অনুমান করা যাচ্ছে বর্ষায় এটি কী রূপ ধারণ করবে। কিনারে বিশাল আকারের একটি নৌকা বাঁধা। অত ভোরে এক মাঝিও এসে বসে আছে। ঈমান খুব ধীরে ধীরে সাবধানে বাইকটি নৌকায় ওঠাতে লাগল। একটু এদিক-সেদিক হলেই পানিতে পড়ে যাবে। এদিকে আমার মন চিন্তামগ্ন হয়ে আছে। সময়ের আগে পৌঁছাতে পারব তো! এসবের মধ্যেই নৌকা ঘাট ছাড়ল। গঙ্গামতির খালের কুয়াশায় ডুব দেওয়া রূপ, অপার মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিল চারপাশে। ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে আঁধার। সময় ঘনিয়ে আসছে। খাল পার হয়ে আবারও বাইকে গতি তুলল ঈমান। বালিয়াড়ি, গাছগাছালি সব পেছনে ফেলে সূর্যের আগে ছুটছি আমরা।

এটি কোনো সাদামাটা সূর্যোদয় নয়। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত একটি এলাকায়, অনেক দূরের একটি দ্বীপে সূর্য উঠবে। সূর্য উঠবে তার সব কয়টি রং নিয়ে। পসরা সাজিয়ে অকৃপণ হাতে ছড়িয়ে দেবে তার উজ্জ্বলতার শেষ বিন্দুটুকু। যেখানে থাকবে না শহরের সরু জানালার ফাঁক গলে দালানকোঠার বাধা বা দূষিত বাতাসে ধূসর হওয়া আলো। সেই দ্বীপের সূর্য বিশুদ্ধ ও স্বাধীন। যেখানে তাকে দেখা যায় আপন মহিমায়। তার সর্বোচ্চ সৌন্দর্যকে ক্যামেরাবন্দি করতে আমিও প্রস্তুত।

অবশেষে পৌঁছালাম সেই সূর্যের আস্তানায় এবং সময়মতোই। নৈসর্গিক সুন্দর এক দ্বীপ। এক দিক দিয়ে বিশাল সবুজ বন সৈকত ঘেঁষে চলে গেছে আরো অনেক গভীরে। আরেক দিকে বঙ্গোপসাগরের নীলাভ জলরাশি। অবারিত ঢেউ আর নানা রকম পাখির কলকাকলিতে ক্ষণে ক্ষণে নীরবতা ভেঙে যাচ্ছে। চোখ মেলে সবই দেখছি। কিন্তু সূর্য! তার দেখা কখন পাব? গঙ্গামতির খালের সঙ্গে আঁতাত করে তিনিও যে ডুব দিয়েছেন কুয়াশার সাগরে। সময় বয়ে চলেছে। দেখা মিলছে না সুয্যি মামার। কোনো অভিমান নাকি এটি নিছকই তার স্বেচ্ছাচারিতা? ভোর ৬টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ক্যামেরা হাতে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের আলোকচ্ছটার একটি চিহ্নেরও দেখা মিলল না। কি আর করা। মনের সব আশা শূন্যে নেমে এলো। ভাবলাম, দ্বীপটিই না হয় একটু ঘুরে দেখি। শীতের এই ভোরে আশপাশের সৌন্দর্য দেখে হয়তো মনের দুঃখ লাঘব হবে। ৭টা ২২ মিনিটে হঠাত্ই আমাদের হতাশা কাটিয়ে বঙ্গোপসাগরের পুব আকাশে অমোঘ বাধা পেরিয়ে হঠাত্ দেখা দিল এক বিন্দু ‘লাল’ আভা। তা দেখে আমাদের সে কী খুশি! সত্যিই দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সেই দ্বীপের সূর্য আর তাকে দেখতে পাওয়ার আনন্দ, দুটোই অনেক স্পেশাল।

 

যেভাবে যাবেন

ঢাকার সদরঘাট থেকে নৌপথে চলে যাবেন বরিশাল বা পটুয়াখালী। টিকিট পড়বে কমবেশি ১২০০-২৫০০ টাকা। সেখান থেকে বাস বা সিএনজিতে কুয়াকাটা। থাকার জন্য ১৫০০-৩০০০ টাকার মধ্যে ভালো হোটেল পাবেন। দ্বীপে যেতে বাইক ভাড়া ৫০০-৬০০ টাকার মতো। ঢাকা থেকে সড়কপথেও যাওয়া যায় পটুয়াখালী।

 

 

 

 

 

মন্তব্য

ধানমণ্ডিতে আড়ংয়ের সবচেয়ে বড় ক্রাফট স্টোর

শেয়ার
ধানমণ্ডিতে আড়ংয়ের সবচেয়ে বড় ক্রাফট স্টোর

রাজধানীর ধানমণ্ডিতে নতুন ফ্ল্যাগশিপ আউটলেট উদ্বোধন করেছে ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ং। ৬০ হাজার বর্গফুটের চারতলাবিশিষ্ট স্টোরটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রাফট স্টোর বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আউটলেটটি শুধু ক্রয়কেন্দ্র নয়; এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সৃষ্টিশীলতার প্রতীকও। চারতলা উচ্চতাবিশিষ্ট নকশিকাঁথা, মৃশিল্পের দেয়াল, তামা ও পুনর্ব্যবহূত কাঁচের ঝুলন্ত শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো স্টোরটি সহজেই দৃষ্টি কেড়ে নেয়।

এখানে শিশুদের জন্য রয়েছে জাদুকরী বন থিমের প্লে গ্রাউন্ড। সাততলায় রয়েছে বাংলাদেশি ফিউশন খাবারের রেস্টুরেন্ট অরেঞ্জ প্যারট।

মন্তব্য

হোটেলে হোটেলে ইফতার-সাহরি

শেয়ার
হোটেলে হোটেলে ইফতার-সাহরি

র‍্যাডিসন ব্লু

পবিত্র রমজান উপলক্ষে ‘নূর-ই-রমজান’ আয়োজন করেছে রাজধানীর পাঁচতারা হোটেল র‍্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন। আয়োজনে থাকছে ইফতার কাম ডিনার বুফে, রমজান স্টেকেশন প্যাকেজ ও বিশেষ ইফতার টেকঅ্যাওয়ে বক্স। রমজানের বিশেষ মুহূর্ত উপভোগ করতে হোটেলের ‘উত্সব হল’কে তারা সাজিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আদলে। অতিথিরা এখানে উপভোগ করতে পারবেন আট হাজার ৫০০ টাকা নেট মূল্যের ইফতার কাম ডিনার বুফে, যেখানে থাকছে রমজানের ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্বাদের বিশেষ আয়োজন।

বুফেতে রয়েছে গুরমে আরবীয় মেজ্জা, ধীর আঁচে রান্না করা খাসির হালিম, সুগন্ধি চিকেন মান্দি ও লাইভ কার্ভিং স্টেশনে বিশেষভাবে মেরিনেট করা ‘হোল ল্যাম্ব ওউজি’। এ ছাড়া পাওয়া যাবে গ্রিলড সি-ফুড, কাবাবসহ নানা সুস্বাদু পদ। মিষ্টির মধ্যে রয়েছে কুনাফা, উম্মে আলী, পেস্তাবাদাম বাকলাভা ও হাতে তৈরি তুর্কি মিষ্টি। বিশেষ অফারের আওতায় নির্দিষ্ট ব্যাংক কার্ডধারীরা পাবেন ‘বাই ওয়ান গেট টু’ সুবিধা।

যাঁরা বাড়িতে বসে খাবার উপভোগ করতে চান, তাঁদের জন্য রয়েছে ইফতার টেকঅ্যাওয়ে।

হোটেলে হোটেলে ইফতার-সাহরি

রিজেন্সি হোটেল

রমজান উপলক্ষে নানা আয়োজন করেছে রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টও। ২০ থেকে ৬০০ জন অতিথি ধারণক্ষমতার আটটি ভেন্যুতে আয়োজন করা যাবে সামাজিক ও করপোরেট ইফতার। বলরুম, সেলিব্রেশন হল ছাড়াও খোলা আকাশের নিচে রুফটপ রেস্টুরেন্ট গ্রিল অন দ্য স্কাইলাইনে ইফতার ও কাপল ক্যান্ডেললাইট ইফতারের ব্যবস্থা রয়েছে।

গ্র্যান্ডিওজ রেস্টুরেন্টে দেশি-বিদেশি সুস্বাদু খাবারের ইফতার ডিনার বাফেটের মূল্য ৬৬৬৬ টাকা। নির্ধারিত ব্যাংক কার্ড ও সদস্যদের জন্য রয়েছে বাই ওয়ান গেট ওয়ান সুবিধা। ইফতার প্যাকেজে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী, কন্টিনেন্টাল ও আরবীয় স্বাদের বিশেষ মেন্যু। করপোরেট ইফতার আয়োজনে রয়েছে বিনামূল্যে ভেন্যু, কাস্টমাইজড সেটআপ, ঈদ উপহারসহ নানা কিছু। অতিথিদের জন্যও থাকছে বিশেষ অফার।
নির্বাচিত কার্ডে ২০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় পাবেন তাঁরা।

 

 

 

 

মন্তব্য

শিশুর মানসিক বিকাশে খেলনা

    শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে উপযোগী খেলা ও খেলনা খুব জরুরি। এতে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। শিশু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন তানজিনা আকতারী
শেয়ার
শিশুর মানসিক বিকাশে খেলনা
নানা রকম খেলা ও খেলনা শিশুর মনোবিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখে। মডেল : মাশিয়াত ও তাঁর মেয়ে এশাল; ছবি : এটুজেড

খেলতে পছন্দ করে সব শিশুই। কোনো কিছু ধরতে শিখলে সেটা দিয়েই খেলতে চায়। বাজারের রংবেরঙের খেলনা তাদের আরো বেশি আকর্ষণ করে। এ জন্য মা-বাবারা তাঁদের সাধ্যমতো খেলনা কিনে দেন।

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে খেলনা। তবে তা শিশুর বয়সের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। বড়দের খেলনা শিশুদের আকর্ষণ করে না। বয়সের অনুপযুক্ত খেলনায় শিশুর বিকাশ বরং ব্যাহত হতে পারে।
সঠিক বয়সে সঠিক খেলনা নির্বাচনে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের বহির্বিভাগের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. লুনা পারভীন বলেন, ‘নবজাতক থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুকে নরম, সহজে চ্যাপ্টা করা যায় এমন খেলনা কিনে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে খেলনায় যেন ধারালো কোণা না থাকে, চিবানো যায়। পেটে যাওয়ার মতো কোনো দানাদার কিছু না থাকে।

সহজে পরিষ্কার করা যায় এমন খেলনা দেওয়া উচিত।’

শিশুর মানসিক বিকাশে খেলনা

উজ্জ্বল রঙের বল, কাপড়ের পুতুল, ঝুনঝুনি, প্লাস্টিকের ছবি দিতে পারেন। ঝুনঝুন শব্দ করে এমন খেলনা শিশুরা পছন্দ করে। ছবিওয়ালা বই দেখাতে পারেন।

সাত মাস থেকে এক বছরের শিশু হামাগুড়ি দেয়, বসতে শেখে।

অল্প অল্প হাঁটেও। এই বয়সী শিশুকে বল, গাড়ি, পুতুল, বড় কিউব বা লেগো, কাগজ, মুড়িভর্তি বোতল, শব্দ করে এমন যেকোনো খেলনা বা বাদ্যযন্ত্র দেওয়া যাবে। গল্পের বই থেকে ছোট ছোট গল্প, ছড়া, ছবি দেখানো যেতে পারে। এক থেকে দুই বছরের শিশু ধরে ধরে হাঁটতে, ছুটতে শেখে। এ সময় বল, কাপড় বা প্লাস্টিকের পুতুল, জীবজন্তু, মিউজিক্যাল সেট, লেগো, চার বা ছয় পিসের পাজল সেট দিতে পারেন। রং পেন্সিল, কাগজ ও পেন্সিল দিয়ে আঁকিবুঁকিতে উত্সাহ দিতে পারেন। দুই থেকে তিন বছর বয়স মানেই ছোটাছুটি আর দৌড়ঝাঁপ। এ বয়সের শিশুর দক্ষতা ও কাজের পরিধি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পাজল, লেগো দিয়ে সৃজনশীল কিছু তৈরি করা, কিচেন সেট, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার সেট, কনস্ট্রাকশন সেট দেওয়া যাবে। এমনকি হাঁড়ি-পাতিল, টি-সেট, তিন বা চার চাকার সাইকেল, খেলনা গাড়ি, শিশুদের উপযোগী বাদ্যযন্ত্র কিনে দিতে পারেন। বয়সটা শিশুকে বর্ণ চেনানোর জন্য উপযুক্ত সময়। বর্ণ লেখা ফ্রিজ ম্যাগনেট, স্টিকার, স্লেট, বই শিশুকে পড়ার প্রতি আগ্রহী করবে। চার থেকে পাঁচ বছরের শিশুর জানার আগ্রহ থাকে বেশি। এ বয়সে বর্ণমালা দিয়ে তৈরি কিউব, পাজল, আর্ট ও  ক্রাফট, রং করা ও ছবি আঁকার বই, বিদ্যুত্চালিত খেলনা, সুপারহিরোদের পুতুল, জামাকাপড়, আসবাবসহ নানা সামগ্রী দেওয়া যায়। পাঁচ বছরের অধিক বয়সী শিশুকে খেলাধুলা ও শরীরচর্চায় আগ্রহী করতে ক্রিকেট, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন খেলতে দিতে পারেন। বিজ্ঞানবিষয়ক বিভিন্ন গেম সেট শিশুর জ্ঞানচর্চার চমত্কার উত্স হতে পারে এই বয়সে।

শিশুদের নিয়ে কাজ করে ‘শৈশব’। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ফারহানা মান্নান বলেন, ‘এক বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে রঙিন ছবিসহ বই, গাছের পাতা বা ফুল স্পর্শ করানো যায়। সেই সঙ্গে নরম ও ধারবিহীন খেলনা তুলে দেওয়া যায়। এক-দুই বছরের শিশু ক্রেয়ন বা রং পেন্সিলে আঁকিবুঁকি, সহজ পাজল, তিন বা চার চাকার সাইকেল, বাবলস ও বেলুন দিয়ে খেলতে পারে। দু-তিন বছর বয়সীদের বিভিন্ন ছড়া শেখা, বর্ণ চেনা, ক্লে দিয়ে নানা কিছু বানানোর সুযোগ দেওয়া উচিত।’

তিন বছরের অধিক শিশুকে ক্রাফটিং, কাটিং ও পেস্টিং, নানা ধরনের পাজল, কৌতূহল ও প্রশ্ন করার ক্ষমতা বাড়বে এমন খেলনা কিনে দিতে পারেন। গঠনমূলক ও তথ্যবহুল ভিডিও দেখানো যেতে পারে। তবে শিশুর হাতে সরাসরি অপারেট করার মতো কোনো ডিভাইস দেওয়া উচিত নয়। এ ছাড়া আমাদের চারপাশের পরিবেশ, প্রকৃতি সম্পর্কে খেলাচ্ছলে ধারণা দিতে হবে শিশুকে। সেটি বই থেকে, ভিডিও দেখে, সরাসরি দেখে বা স্পর্শ করেও হতে পারে। পাঁচ থেকে ১০ বছরের শিশুরা বাড়িতে ক্যারম, লুডু, দাবা, মনোপলি, ওয়ার্ড গেম খেলতে পারে। তবলা, বাঁশি, হারমোনিয়াম, পিয়ানো, জুডো বা কারাতে শিখতে পারে। এতে শিশুর বিকাশ স্বাভাবিক হবে। 

 

 

 

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ