এই নম্বরের ওপর প্রার্থীদের মেধাতালিকা তৈরি ও ক্যাডার পদ বণ্টন করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সম্মিলিত মেধাতালিকায় যে প্রার্থী প্রথম হবেন, তিনি পছন্দক্রমের প্রথম ক্যাডারটিই পাবেন। ধরুন, সম্মিলিত মেধাতালিকায় ১১তম প্রার্থীর প্রথম পছন্দ পররাষ্ট্র ক্যাডার। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র ক্যাডারের পদ বণ্টন শেষ (পররাষ্ট্র ক্যাডারের মোট পদ যদি ১০টি হয়)। তখন দেখা হবে তার পছন্দক্রমের দ্বিতীয় ক্যাডার কোনটি। যেহেতু আগের ১০টি পদই পররাষ্ট্র ক্যাডার দ্বারা পূরণ হয়েছে, অন্য কোনো ক্যাডারে কাউকেই সুপারিশ করা হয়নি; তাই প্রশাসন, পুলিশ বা অন্য যেকোনো ক্যাডার তিনি সহজেই পেয়ে যাবেন। ধরুন, সম্মিলিত মেধাতালিকার ১০০তম প্রার্থীর পছন্দক্রম পররাষ্ট্র>পুলিশ> প্রশাসন। দেখা গেল, আগের ৯৯ জন প্রার্থী থেকে পররাষ্ট্র ও পুলিশ ক্যাডারের সব পদ পূরণ করা হয়ে গেছে। তখন ওই প্রার্থী তাঁর পছন্দক্রমের তৃতীয় ক্যাডার অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডারের কোনো পদ শূন্য থাকলে পাবেন। তা না হলে তার পছন্দক্রমের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ ক্যাডারগুলোতে পদ শূন্য আছে কি না সেগুলো পর্যায়ক্রমে দেখা হবে।
ক্যাডার নির্বাচনের আগে
ক্যাডার পছন্দক্রম নির্ধারণের আগে প্রতিটি ক্যাডারের দায়িত্ব ও কাজ, পদায়ন ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। বিসিএসের গাইডলাইনসংবলিত বই বা সহায়িকা, সংবাদপত্রের ফিচার এবং ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে ক্যাডারগুলো সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারেন। এরপর প্রার্থীর ব্যক্তিগত আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ক্যাডারগুলো প্রথমে এবং তুলনামূলক কম সামঞ্জস্যপূর্ণ ক্যাডারগুলো পরবর্তীতে দিয়ে পছন্দক্রম সাজাতে পারেন।
পদায়ন
চাকরির ধরন অনুযায়ী কিছু ক্যাডারে নিজ জেলায় কখনো পদায়ন হয় না, আবার কিছু ক্যাডারে শূন্যপদ সাপেক্ষে নিজ জেলায় পদায়ন সম্ভব। পরিবারকে সময় দেওয়াসহ নিজ জেলায় কর্মস্থলকে অগ্রাধিকার মনে করলে সেই ক্যাডারগুলোকেই বেছে নিতে হবে। নিজ জেলায় পদায়ন পেতে চাইলে স্বাস্থ্য, সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, ডাক, পরিবার পরিকল্পনা প্রভৃতি ক্যাডারগুলো পছন্দক্রমে রাখতে পারেন। অন্যদিকে কিছু ক্যাডারে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পদায়ন হতে পারে, আবার কিছু ক্যাডারে বিভাগের বাইরে পদায়ন নেই। অনেকেই নাগরিক সুবিধার জন্য বিভাগীয় শহরে পদায়ন পছন্দ করেন আবার অনেকেই বড় শহরের যানজট এড়িয়ে মফস্বল শহরে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাই ক্যাডারের পদায়নস্থল জেনে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ মিলিয়ে নিতে হবে। বিভাগীয় পর্যায়ে পদায়নের জন্য পররাষ্ট্র, নিরীক্ষা ও হিসাব, বাণিজ্য, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক ক্যাডার রাখতে পারেন। উপজেলা পর্যায়ে পদায়নের জন্য রাখতে পারেন—প্রশাসন, পরিবার পরিকল্পনা, সাধারণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ ও বন।
পদোন্নতি
অনেক ক্যাডারে ৯ম গ্রেড থেকে গ্রেড-১/২ পর্যন্ত অনায়াসে যাওয়ার সুযোগ আছে, আবার অনেক ক্যাডারে গ্রেড-৩/৪ থেকেই অবসরে যেতে হয়। তাই ক্যাডার পছন্দক্রম নির্বাচনের আগে সেই ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদোন্নতির সম্ভাবনা সম্পর্কে জেনে নিন। পদোন্নতি বিবেচনায় পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, নিরীক্ষা ও হিসাব, কর, কৃষি, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ প্রভৃতি ক্যাডার পছন্দক্রমে রাখতে পারেন।
কর্মপরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা
ক্যাডারভেদে চাকরির ক্ষেত্র ও কর্মপরিবেশ ভিন্ন ভিন্ন। গাড়ি, কোয়ার্টার, আর্থিক প্রণোদনা, বৈদেশিক প্রশিক্ষণের সুযোগ ইত্যাদিরও তারতম্য নির্ভর করে ক্যাডার বা চাকরির ধরনের ওপর। কর্মপরিবেশ আর সুযোগ-সুবিধার ওপর একজন ক্যাডারের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও গড়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, নিরীক্ষা ও হিসাব, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ প্রভৃতি ক্যাডার পছন্দক্রমে রাখতে পারেন।
একাডেমিক জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্ক
অনেক প্রার্থীই কর্মক্ষেত্রে একাডেমিক জ্ঞান প্রয়োগ করতে পছন্দ করেন। আবার অনেকে একাডেমিক বৃত্ত থেকে বের হয়ে ভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠার ব্যাপারেও কৌতূহলী থাকেন। একাডেমিক জ্ঞান প্রয়োগের জন্য প্রফেশনাল/টেকনিক্যাল ক্যাডারগুলো পছন্দক্রমের প্রথম দিকে রাখতে পারেন।
কাজের সুযোগ ও কাজের চাপ
বিভিন্ন দপ্তরে ও বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ কর্মক্ষেত্রকে উপভোগ্য করে তোলে অনেকের কাছে। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন, নিরীক্ষা ও হিসাব, তথ্য-সাধারণ ক্যাডারগুলো পছন্দক্রমের প্রথম দিকে রাখতে পারেন। তবে কাজের সুযোগ বেশি থাকলে কাজের চাপও বেশি হবে। সব কিছু মাথায় রেখে ক্যাডার নির্বাচন করুন। আবেদনের আগেই পছন্দের ক্যাডার তালিকার খসড়া করুন।