ঘুরতে যেতে পারেন ‘বনলতা সেন’-এর নাটোরে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ঘুরতে যেতে পারেন ‘বনলতা সেন’-এর নাটোরে
সংগৃহীত ছবি

‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।’ 

জীবনানন্দ দাশের এই বিখ্যাত পঙক্তি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আপনি যদি একটু প্রশান্তি খুঁজে বেড়াতে চান, তবে নাটোর হতে পারে একটি আদর্শ গন্তব্য। নাটোর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমৃদ্ধ একটি জেলা। যা ‘রাজসিক নাটোর’ নামে পরিচিত।

নাটোরে রয়েছে একাধিক প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। এখানে রয়েছে রানি ভবানীর রাজবাড়ি, উত্তরা গণভবন, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি ও চৌগ্রাম জমিদারবাড়ি। এ ছাড়া রয়েছে চলনবিল ও হালতি বিলের মতো জায়গা। যেগুলো পরিবেশপ্রেমীদের জন্য অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়।

নাটোরকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এখানে দেশের সব প্রান্ত থেকে সড়ক, রেলপথ ও আকাশপথে সহজেই পৌঁছানো যায়। রাজশাহী থেকে এক ঘণ্টা সড়কপথে নাটোর পৌঁছানো সম্ভব। যা এই অঞ্চলের কাছে অত্যন্ত সুবিধাজনক।

চলুন, জেনে নিই নাটোরের কয়েকটি বিখ্যাত স্থান সম্পর্কে।

রানী ভবানীর রাজবাড়ি
নাটোর শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত রানী ভবানীর রাজবাড়ি। যা প্রাচীন নাটোর রাজবাড়ি হিসেবেও পরিচিত। বাংলার সুবেদার মুর্শিদকুলী খানের শাসনামলে এই রাজবাড়ির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এটি প্রাসাদ, দিঘি, মন্দির, উদ্যান ও মনোরম অট্টালিকা দিয়ে একটি সুসজ্জিত নগরীতে পরিণত হয়।

নাটোর রাজবংশটি দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল—বড় তরফ এবং ছোট তরফ। রাজপ্রাসাদ দুটি এই দুই তরফের জন্য আলাদা আলাদাভাবে তৈরি করা হয়েছিল। উদ্যানের মধ্যে প্রশস্ত জায়গা রয়েছে। যেখানে বড় তরফের প্রাসাদ উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং ছোট তরফের প্রাসাদ দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। রাজবাড়ির পোড়ামাটির টেরাকোটায় মোড়ানো প্রাসাদের মেঝে ও শ্বেতপাথরের উপস্থিতি এখনো রাজবংশের ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। পরিচর্যার অভাবে রাজপ্রাসাদের অনেক অংশ ভেঙে পড়ছে। রাজবাড়ি দর্শনের জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশমূল্য দিতে হয়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। বনভোজনের জন্য সুব্যবস্থা রয়েছে এখানে।

উত্তরা গণভবন
নাটোর শহরের দিঘাপতিয়ায়, নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে অবস্থিত উত্তরা গণভবন। এটি ১৭৩৪ সালে দিঘাপতিয়ার দেওয়ান দয়ারাম রায় নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালে এক শক্তিশালী ভূমিকম্পে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। পরে রাজা প্রমদানাথ রায় ১১ বছর ধরে এই রাজপ্রাসাদটি পুনর্নির্মাণ করেন। প্রাসাদটি পুনর্নির্মাণে তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নির্মাণ উপকরণ ও গাছপালা ব্যবহার করেন। চারদিকে সীমানাপ্রাচীর ও পরিখা দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছিল রাজপ্রাসাদটিকে। উত্তরা গণভবনের মূল ফটকটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। ফটকের মাঝখানে একটি বিশাল ঘড়ি রয়েছে, যা ঘণ্টাধ্বনি দিয়ে সময় জানায়। রাজবাড়ির ভেতরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফলের গাছের সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

চলনবিল 
নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও বগুড়া জেলার অল্প কিছু অংশ নিয়ে চলনবিল। চলনবিল এক বিশাল জলাভূমি। এটি দেশের অন্যান্য বিলের তুলনায় খুবই বিশেষ। সব ঋতুতেই চলনবিলের পানি প্রবাহিত থাকে। বর্ষাকালে ছোট ছোট গ্রামগুলো বিলের মধ্যে দ্বীপের মতো দেখা যায়। নৌকায় ঘুরে বেড়াতে গেলে বিলের সীমানা শেষ হয় না। 

মাথার ওপর উড়ন্ত পাখি, পাশাপাশি নৌকার শব্দ ও পানি থেকে ছোট মাছের লাফালাফি এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা দেয়। শুকনা মৌসুমে দুই বিলের মধ্যে ডুবোসড়কগুলো জেগে ওঠে। অনেকেই সেখানে হেঁটে বা মোটরসাইকেল চালিয়ে ঠাণ্ডা পানির স্পর্শ পান।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বন্য সৌন্দর্যের স্বর্গ 'মাসাই মারা'

শেয়ার
বন্য সৌন্দর্যের স্বর্গ 'মাসাই মারা'
সংগৃহীত ছবি

আফ্রিকার বিস্তীর্ণ এক তৃণভূমি, যেখানে আকাশজুড়ে সূর্যের আলো। দূরে কোথাও একদল সিংহ বিশ্রাম নিচ্ছে শিকারের পর—এটাই মাসাই মারা ন্যাশনাল রিজার্ভ, কেনিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এলাকা। 

মাসাই মারার অবস্থান ও বিস্তৃতি
কেনিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে, তানজানিয়ার বিখ্যাত সেরেনগেটি ন্যাশনাল পার্কের সঙ্গে সংযুক্ত মাসাই মারা। এটি প্রায় ১,৫০০ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।

যার মাঝে দিয়ে বয়ে গেছে মারা নদী। এখানেই ঘটে বিশ্বের অন্যতম প্রাণী অভিবাসন, গ্রেট মাইগ্রেশন।

গ্রেট মাইগ্রেশন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অভিবাসন
প্রতি বছর জুলাই থেকে অক্টোবরে লক্ষ লক্ষ উইল্ডবিস্ট, জেব্রা ও গাজেল খাবারের সন্ধানে তানজানিয়া থেকে মাসাই মারায় আসে। কিন্তু এই যাত্রা মোটেও সহজ নয়।

তাদের মারা নদী পার হতে হয়। যেখানে ওঁৎ পেতে থাকে ভয়ঙ্কর নাইল কুমির। হাজার হাজার প্রাণী যখন একসঙ্গে নদীতে ঝাঁপ দেয়, তখন শুরু হয় বেঁচে থাকার এক ভয়ংকর প্রতিযোগিতা। কিছু প্রাণী সফলভাবে নদীর ওপারে পৌঁছে যায়, আবার অনেকেই কুমিরের খাবারে পরিণত হয়।
এই পুরো দৃশ্য এক অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক ঘটনা।

মাসাই মারার বিখ্যাত প্রাণী

এখানে দেখা যায় বিগ ফাইভ অর্থাৎ আফ্রিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় পাঁচটি প্রাণী—
সিংহ: মাসাই মারায় আফ্রিকার সবচেয়ে বড় সিংহগোষ্ঠী রয়েছে।
হাতি: বিশাল আকৃতির হাতির দল ঘুরে বেড়ায়, যাদের মধ্যে শতবর্ষী হাতিও থাকে।
গণ্ডার: বিরল ব্ল্যাক রাইনো প্রজাতির গণ্ডার এখানে টিকে আছে।
চিতাবাঘ: মাসাই মারায় সহজেই চিতাবাঘ দেখা যায়।

যারা গাছের উপর উঠে বিশ্রাম নেয়।
মহিষ: বিশাল মহিষের দল তৃণভূমিতে অবাধে ঘুরে বেড়ায়।

এ ছাড়াও এখানে দেখা যায়—
চিতা: বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির প্রাণী।
হায়েনা: এরা মৃত প্রাণী খায়। অনেক সময় নিজেরাও শিকার করে।
জিরাফ: তাদের লম্বা গলা দিয়ে উঁচু গাছের পাতা খেতে পারে।
জেব্রা ও গাজেল: হাজার হাজার সংখ্যায় মাসাই মারায় বিচরণ করে।


মাসাই মারার অভিজ্ঞতা

১। গেম ড্রাইভ
খোলা জিপে সাফারি, যেখানে খুব কাছে থেকে বন্যপ্রাণী দেখা যায়। সকালে ও সন্ধ্যায় এই সাফারি সবচেয়ে ভালো হয়। কারণ তখন শিকারি প্রাণীরা সক্রিয় থাকে।

২। হট এয়ার বেলুন সাফারি
উড়ন্ত বেলুন থেকে মাসাই মারার পুরো তৃণভূমির দৃশ্য দেখার মতো অভিজ্ঞতা আর কিছুতেই পাওয়া যায় না। সিংহের শিকার করা, হাতির দল চলাফেরা করা—সবকিছু উপর থেকে এক ভিন্নরকম রোমাঞ্চ তৈরি করে।

৩। মাসাই উপজাতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ
মাসাই উপজাতির মানুষরা এই অঞ্চলের আদিবাসী, যারা তাদের ঐতিহ্য বজায় রেখে চলছে। তাদের লাল পোশাক, বর্শা ও বিখ্যাত ‘মাসাই জাম্পিং ডান্স’ এই অঞ্চলের সংস্কৃতির অংশ।

মাসাই মারার ভ্রমণের সেরা সময় হচ্ছে জুলাই-অক্টোবর বা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস। মাসাই মারা শুধু একটি ন্যাশনাল পার্ক নয়, এটি প্রকৃতির এক বিশাল নাট্যমঞ্চ, যেখানে প্রতিদিন জন্ম ও মৃত্যুর খেলা চলে। বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণ, ভয়ঙ্কর শিকার ও অভিবাসন এটিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা সাফারি পার্ক হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। প্রকৃতিকে তার আসল রূপে দেখতে চাইলে ভ্রমণ পিপাসুদের মাসাই মারা অন্তত একবার ঘুরে আসা উচিত।

সূত্র : মাসাই মারা ডট কম

মন্তব্য
ইসলামী স্থাপত্য

ইসলামী সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যের ধারক ‘হিন্দা শাহি মসজিদ’

সউদ আব্দুল্লাহ, কালাই( জয়পুরহাট)
সউদ আব্দুল্লাহ, কালাই( জয়পুরহাট)
শেয়ার
ইসলামী সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যের ধারক ‘হিন্দা শাহি মসজিদ’

ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের ছোঁয়ায় নির্মিত অন্যতম মসজিদ হিন্দা-শাহি জামে মসজিদ। জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত। পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদের অপূর্ব নির্মাণশৈলীর জন্য স্থানীয়দের কাছে তো বটেই, পর্যটকের কাছেও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বাংলা ১৩৬৫ সালে বাগমারী পীর হিসেবে পরিচিত চিশতিয়া তরিকার অন্যতম পীর হজরত আবদল গফুর চিশতির (রহ.) নির্দেশে মাওলানা আবদুল খালেক চিশতির তত্ত্বাবধানে মসজিদটি নির্মিত হয়।

হজরত আবদুল কাদের এর নকশা তৈরি ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে।

মসজিদটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর চমৎকার কারুকাজ ও গঠনশৈলী। মোগল আমলের অধিকাংশ স্থাপনার মতো পোড়ামাটির কারুকাজের পরিবর্তে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে রঙিন কাচ, চিনামাটির টুকরা ও মোজাইকের সমন্বয়ে তৈরি সুদৃশ্য অলংকরণ। যখন সূর্যের আলো মসজিদের গায়ে পড়ে, তখন তা এক স্বর্গীয় সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়।

পাঁচটি গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের নির্মাণশৈলী ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়েছে। প্রধান গম্বুজটি মাঝখানে স্থাপিত, আর চারটি ছোট গম্বুজ চার পাশে অবস্থান করছে। বিস্ময়কর বিষয় হলো, পুরো মসজিদটি নির্মাণে কোনো রড ব্যবহার করা হয়নি, যা আজকের আধুনিক প্রকৌশলীদেরও বিস্মিত করে।

মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করলে নজরে আসবে অপরূপ নকশা ও ক্যালিগ্রাফি।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো প্রধান গম্বুজের অভ্যন্তরে পবিত্র আয়াতুল কুরসি সুদৃশ্যভাবে খচিত রয়েছে, যা মুসল্লিদের মনে এক অনন্য ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত করে। মসজিদের অভ্যন্তরের দৈর্ঘ্য ৪৯.৫০ ফুট এবং প্রস্থ ২২.৫০ ফুট। উত্তর পাশে ৪০ ফুট উচ্চতার একটি মিনার রয়েছে, যার শীর্ষে মাইকের মাধ্যমে আযানের ধ্বনি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

স্থানীয় শিক্ষক ছাবের হোসেন ফকির। বয়স ৮৮ বছর।

কথা হয় তার সাথে, স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা এই মসজিদ নির্মাণের কাজে বাবার সাথে এসে সহযোগিতা করেছি। এই বৃদ্ধ বয়সে এসেও এখানে নামাজ পড়ে হৃদয়ে তৃপ্তি নেয়। মসজিদসংলগ্ন স্থানে হজরত শাহ সুলতান বখতির চারজন শিষ্যের মাজার রয়েছে। যেখানে প্রতি বৃহস্পতিবার হালকায়ে জিকির অনুষ্ঠিত হয়। দূরদূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এখানে সমবেত হন, কুরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আসকারে মগ্ন হন।

রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে অন্যতম সিরাজগঞ্জের আমিনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হিন্দা শাহী মসজিদের স্থাপত্যের কারুকার্যের গুনকথা শুনে অনেক দূর থেকে এসেছি। এখানে জুমার নামাজ আদায় করে এক অভূতপূর্ব প্রশান্তি অনুভব করেছি। নামাজ শেষে মহান আল্লাহর কাছে সবার জন্য দোয়া করেছি।’

মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুস সালাম বলেন, ‘মোগল স্থাপত্যের ছোঁয়ায় অনন্য নিদর্শন হিন্দা শাহী মসজিদ কেবল মুসলমানদের নামাজ আদায়ের স্থান নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীকও বটে। সুদৃশ্য নির্মাণশৈলী, কারুকাজ এবং ধর্মীয় আবহ এটিকে বিশেষভাবে অনন্য করে তুলেছে। যদি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তবে এটি ভবিষ্যতেও এক অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে টিকে থাকবে, যা যুগযুগ ধরে ইসলামি সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যের ধারক হয়ে থাকবে।’

ইসলামী স্থাপত্যশিল্পের ছোঁয়ায় নির্মিত অন্যতম মসজিদ হিন্দা-শাহি জামে মসজিদে আদায়ের অনুভূতি পেতে চাইলে আপনিও ছুটির দিনে পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীদের নিয়ে আসতে পারেন।

যেভাবে যাবেন
হিন্দা-শাহী জামে মসজিদ যেতে চাইলে প্রথমে জয়পুরহাট  শহরে আসতে হবে।  গাবতলি, মহাখালী আব্দুল্লাহপুর, শ্যামলী এবং কল্যাণপুর থেকে শাহ্ ফতেহ আলী পরিবহণ, সেইন্টমার্টিন ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহন এ আর, এস আর ট্রাভেল এবং হানিফ সহ বেশ কয়েকটি পরিবহণের বাস সার্ভিস ঢাকা হতে জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে যাত্র করে। এসি, নন-এসি এসব বাসের ভাড়া ৫৫০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত। 

এছাড়া ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে নিলসাগর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, কুরিগ্রাম এক্সপ্রেস, ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে জয়পুরহাট যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে জনপ্রতি টিকেটের ভাড়া শোভন চেয়ার ৫১০ টাকা, স্নি ৯৭৮ টাকা, এসি সিট ১,১৭৩ টাকা ও এসি বার্থ ১,৮১০ টাকা। 


ঢাকা হতে জয়পুরহাট বাস টার্মিনালে পৌঁছে অন্য বাসে চড়ে ১৫ টাকা ভাড়ায় ক্ষেতলালের ইটাখোলায় এসে সেখান থেকে ১০-১৫ টাকা রিকশা ভাড়ায় হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ যেতে পারবেন। 
 

কোথায় থাকবেন 
জয়পুরহাট শহরের থানা রোডে হোটেল সৌরভ ইন্টাঃ, হোটেল জাহান আরা ইন্টাঃ, জসিম রেসিডেন্সিয়াল হোটেল, পৃথিবী হোটেল, হোটেল বৈশাখী রেসিডেন্সিয়াল ইত্যাদি ছাড়াও আরো বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। 


কোথায় খাবেন 
জয়পুরহাটে বিভিন্ন মানে চাইনিজ এবং বাংলা খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এদের মধ্যে ক্যাফে অরেঞ্জ চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, বিসমিল্লা হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, রুচিটা রেস্টুরেন্ট এন্ড চাইনিজ, মিনা, প্রিন্স রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

মন্তব্য

নামে ষাটগম্বুজ মসজিদ কিন্তু গম্বুজের সংখ্যা ৬০ নয়

শেয়ার
নামে ষাটগম্বুজ মসজিদ কিন্তু গম্বুজের সংখ্যা ৬০ নয়
সংগৃহীত ছবি

ষাটগম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি বাংলার প্রথম স্বাধীন মুসলিম সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহের বংশধর সুলতান নাছিরুদ্দীন মাহমুদ শাহের রাজত্বকালে নির্মাণ করা হয়। খানজাহান আলী দিল্লী থেকে এসে সুন্দরবন অঞ্চলে ইসলামিক খেলাফত প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাগেরহাট শহরকে তাঁর প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। এই মসজিদটি ছিল তাঁর বৃহত্তম কীর্তি।

 

মসজিদটির আকার বেশ বড়। মসজিদের বাইরের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬০ ফুট ও প্রস্থ ১০৪ ফুট। মসজিদের ভেতরের দৈর্ঘ্য ১৪৩ ফুট ও প্রস্থ ৮৮ ফুট। দেয়ালগুলোর পুরুত্ব প্রায় ৮.৫ ফুট।

মসজিদটির গম্বুজের সংখ্যা মোট ৮১। তবে লোকমুখে এটি ষাটগম্বুজ নামে পরিচিত। কিছু ঐতিহাসিকের মতে, সাতটি সারিবদ্ধ গম্বুজের কারণে মসজিদের নাম সাত গম্বুজ থেকে ষাটগম্বুজ হয়ে গেছে। কিছু গবেষক মনে করেন, গম্বুজের সংখ্যা ৬০টির স্তম্ভের ওপর নির্মিত হওয়ার কারণে মসজিদটির নাম ষাটগম্বুজ হয়েছে।

মসজিদের দেয়ালে ১১টি বড় খিলানযুক্ত দরজা রয়েছে। যার মধ্যে মাঝের দরজাটি সবচেয়ে বড়। এ ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ৭টি করে দরজা এবং মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনার রয়েছে। মিনারগুলোর উচ্চতা ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি। দুটি মিনারে সিঁড়ি রয়েছে, যেখানে আজান দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

মসজিদের ভেতরে ৬০টি পাথরের স্তম্ভ রয়েছে। যা ৬টি সারিতে বিভক্ত। ৫টি স্তম্ভ ইটের হলেও বাকি স্তম্ভগুলো পাথরের। মসজিদের গম্বুজ এই স্তম্ভগুলোর ওপর স্থাপন করা হয়েছে।

মসজিদটি বর্তমানে একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। বাহারি ফুলের গাছ দিয়ে আঙিনা সাজানো হয়েছে। ঐতিহাসিকদের মতে, খানজাহান আলী ৯০ বছর বয়সে এই মসজিদে এশার নামাজরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর কবর মসজিদের পাশের দিঘির পাড়ে অবস্থিত।

মোগল আমলে ঢাকা বাংলার রাজধানী হওয়ায়, ষাটগম্বুজ মসজিদ একসময় লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। তবে ২০১৪ সাল থেকে এটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। এখানে রেস্ট হাউস ও গেস্ট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। দর্শকদের জন্য টিকিট সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

কিভাবে যাবেন :
ঢাকার গুলিস্তান থেকে সরাসরি বাসে বাগেরহাট যেতে পারেন। গাবতলী থেকেও বাগেরহাটে যাওয়ার বাস রয়েছে। সময় নিয়ে যাতায়াত করতে চাইলে বাগেরহাট থেকে মোংলা গিয়ে সুন্দরবন ঘুরে আসা সম্ভব। বাগেরহাটে থাকার জন্য কিছু হোটেল রয়েছে, তবে সেখানে থাকার ব্যবস্থা সীমিত।

সূত্র : শিউলিমালা একাডেমি

মন্তব্য

কলকাতার সুলুক সন্ধানে- শেষ পর্ব

জাহিদ হাসান
জাহিদ হাসান
শেয়ার
কলকাতার সুলুক সন্ধানে- শেষ পর্ব
বিশ্বকবির জোড়াসাঁকোর বাড়ির আঙিনায়

প্রিন্সেপ ঘাট
আমরা রওনা হলাম ঐতিহাসিক স্থান প্রিন্সেপ ঘাটের দিকে। কলকাতার ঘিঞ্জি শহর থেকে দূরে নির্জনে অবস্থিত প্রিন্সেপ ঘাট। হুগলি নদীর তীরে ঐতিহাসিক এ স্থানটি ব্রিটিশ আমলে ১৮৪১ সালে নির্মিত হয়েছে। ব্রিটিশ যাত্রীবাহী জাহাজের ওঠানামার কাজে ব্যবহার করা হত এই ঘাট।

ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত এই ঘাট দিয়ে। 

ঘাটে পৌঁছে দেখলাম বিশেষ আকর্ষণীয় একটি মনুমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। অন্ধকার আর বাহারি লাইট মিলিয়ে এক অপরূপ দৃশ্য ধারণ করেছে প্রিন্সেপ ঘাট। মনুমেন্টের পেছনে আবছা অন্ধকারে ছেয়ে আছে।

ঘাটের চারপাশের পরিবেশ বেশ মনোরম ও খোলামেলা, ডান দিকে সুসজ্জিত একটি পার্ক। বাহারি খাবারের দোকানে বিক্রি হচ্ছে পাউ ভাজি, ফুচকা। ঘাটকে ঘিরে পর্যটককেন্দ্র ভালোই গড়ে উঠেছে। সিঁড়ি বেয়ে ঘাটের নিচে নামলাম।
পানির ওপর কয়েকটি জাহাজ নোঙর করা আছে। হুগলি নদীতে ভাটা চলছে। পানির ওপর আলোর ঝাপটা পড়ে অন্য রকম এক আবহ সৃষ্টি হয়েছে। সত্যিই ব্রিটিশ নির্মিত ঘাটের সৌন্দর্য্যের তুলনা হয় না।

হাওড়া ব্রিজ
দিনের শেষ ভ্রমণ হিসেবে বাসে চেপে রওনা হলাম হাওড়া ব্রিজের দিকে।

কলকাতা ও হাওড়া শহরের মধ্যে সংযোগকারী ব্রিজ হচ্ছে হাওড়া। সেতুর মূল আকর্ষণ হলো এতে কোনো পিলার নেই। বিশাল স্টিলের পাত একটার সঙ্গে আরেকটা জুড়ে বানানো হয়েছে। ব্রিজটি দেড়শ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী দাঁড়িয়ে আছে। নাটবল্টু ছাড়াই ১৮৭৪ সালে ব্রিটিশরা নির্মিত করেছিলেন হাওড়া ব্রিজ। হাওড়া এখনো বিশ্বের ষষ্ঠ দীর্ঘতম সেতু।

হাওড়া ব্রিজের কাছে পৌঁছে দেখলাম ব্রিজের দুই পাশের পানির ওপর আলো পড়ে অন্য রকম আবহ সৃষ্টি করেছে। উপভোগ করছি, আলোর ছন্দে ছন্দে রং বদলানোর দৃশ্যপট। ভাবছি, আঠারো শতকে সেতু প্রকৌশল ও প্রযুক্তি জ্ঞানের কথা। দেড় শ বছর আগে কিভাবে নকশা প্রনয়ণ করে, নাটবল্টু ছাড়াই ব্রিজ নির্মাণ করল? সত্যি, ইংরেজরা শুধু ভারতবর্ষ নয় পুরো পৃথিবী শাসন করতো বুদ্ধির জোরে।
পথচারীদের দেখে মনে হচ্ছে, ব্রিজের ওপর দিয়ে নির্বাচনী মিছিল যাচ্ছে। মানুষের এমন চলন্ত স্রোত কখনো চোখে পড়েনি। দৈনিক ৮০,০০০ যানবাহন ও প্রায় ১০ লাখ পথচারী চলাচল করে। 

জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি 
দ্বিতীয় দিন সকালে রওনা হলাম কবি গুরুর জোড়াসাঁকোর বাড়ির উদ্দেশে। বাড়িতে প্রবেশের সময় মনে হচ্ছে ইতিহাসের পুরাতন অধ্যায়ে প্রবেশ করছি। বিশ্বভারতীর গেট পেরিয়ে সবুজ আঙিনা। ২০ রুপির টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম, বিশ্বকবির পদচারণে মুখরিত চোখধাঁধানো লাল বিল্ডিংয়ে। নীলমণি ঠাকুরের ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করা জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। বাড়ির সামনে মূর্তি  হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মহর্ষি রবীন্দ্রনাথ। কবি গুরু হাতে বই রেখে সাহিত্য চর্চায় মগ্ন।

বিশ্বকবি ১৮৬১ সালে এ বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করে ১৯৪১ সালে মারা যান। কবির স্মৃতি সংরক্ষণে মিউজিয়াম ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বাড়িতে। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় জাদুঘর ও সংরক্ষণাগার। সাউন্ড সিস্টেমে অবিরত রবীন্দ্রসংগীত বেজে চলেছে। বিল্ডিংয়ে রয়েছে সারি সারি রুম। প্রধান দর্শনীয় ঘরের নাম রবীন্দ্র প্রয়াণকক্ষ। এ ঘরেই কবি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। বিছানাটি ঘেরা রয়েছে কাঠের বেষ্টনীতে। সময় সবাইকে অতীত করে দেয়। হোক সে মহা পরাক্রমশালী বা জ্ঞানী।

ভবনে আর্কাইভ করে রাখা হয়েছে কবি গুরুর লিখার প্রয়োজনীয় উপকরণ। আছে কবির ব্যবহৃত পোশাক ও তার নানা বয়সের ছবি। কবিপত্নী মৃণালিনী দেবীর রান্নার কাজে ব্যবহৃত তৈজসপত্র সংরক্ষণিত আছে যথাযথ ভাবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব ভ্রমণে গিয়ে ৩০টির অধিক দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। কবির ভ্রমণকালীন স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য রয়েছে সংগ্রহশালা। গ্যালারিতে প্রদর্শিত আছে কবির আগের কয়েক প্রজন্মের শিল্পকলা ও সাহিত্য। শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকর্ম, তৈলচিত্র, ল্যান্ডস্ক্যাপ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। এ বাড়িতেই কবি তার সাহিত্যের উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন। ১৯১৩ সালে কবি নোবেল পুরস্কারে ভুষিত হয়েছিলেন। সব শেষে সিঁড়ির পাশের রুমে চোখে পড়ল বিশ্বকবির বংশতালিকার ওয়ালমেট।

ভবনের তত্ত্বাবধায়ককে জিজ্ঞেস করলাম, দাদা একটা ছবি নেওয়া যাবে? উনি বললেন, জাদুঘরের ভেতরে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ কিন্তু বাইরে অনুমোদিত। আমি ছবি নিলে কর্তৃপক্ষ তার চাকরিটা নিয়ে নেবে।

পরদিন সকালে কলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলাম। ফিরতি পথে ভাবছি, এক সময় দুই বাংলার মানুষের দেখা করতে ভিসা পাসপোর্ট লাগত না। দেশভাগের সময় ব্রিটিশরা রাজনীতির কূটখেলায় অবিভক্ত বাংলাকে বিভক্ত করে দিয়ে গেছেন। দুই বাংলায় চির বিভাজন সৃষ্টি হলো। হয়তো দুই বাংলার বিভাজনের দেওয়াল আর ভাঙবে না কখনো। দুই বাংলা পরস্পরের সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত হবে চিরকাল। এটি হয়তো দেশ বিভাজনের সময় তলিয়ে দেখেনি বাঙালি। হয়তো দেখার মতো চোখও তখন তাদের ছিল না।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ