ঈদ যাত্রায় বাড়তি ভাড়ার বিড়ম্বনা

জহিরুল ইসলাম
জহিরুল ইসলাম
শেয়ার
ঈদ যাত্রায় বাড়তি ভাড়ার বিড়ম্বনা

প্রতিবছর ঈদ যাত্রা মানে ট্রেন-বাসের টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন আর পদে পদে নানা বিড়ম্বনা। এবার ঘটেছে ব্যতিক্রম। ট্রেন-বাসের টিকিটের জন্য কোনো যাত্রীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। তবে কিছু ক্ষেত্রে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী, গুলিস্তানসহ কিছু টার্মিনালে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

দেখা যায়, গুলিস্তানে বরিশালগামী বিআরটিসি বাসের ৬৬২ টাকার ভাড়া নেওয়া হয় এক হাজার টাকা। পরে বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে ফোন দেন ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসে জরিমানা করেন।

তবে এর পরও যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিতে নানা টালবাহানা শুরু করেন চালকরা।

অভিযোগ রয়েছে, বিআরটিসির দেখাদেখি অন্যরাও ভাড়া বাড়িয়ে দেয়।

বরিশালগামী সৌরভ হোসাইন বলেন, ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু হওয়ায় চার ঘণ্টায় বরিশাল যাওয়া যায়।

কিন্তু ঈদে প্রায় সব পরিবহন মূল ভাড়ার চেয়ে ২০০ টাকা বেশি রাখছে।

ঈসমাইল নামের আরেক যাত্রী বলেন, বিএমএফ পরিবহনে নিয়মিত ভাড়া ৫০০ টাকা। দুজনের টিকিট কেটেছি এক হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে। আগামীকাল আরো বেশি ভাড়া রাখতে পারে।

লক্ষ্মীপুরগামী ইকোনো পরিবহনের বাস অন্য সময় ৫০০ টাকা নিলেও গত দুই দিন থেকে ভাড়া নিচ্ছে ৭০০ টাকা করে।

সায়েদাবাদ এই পরিবহনের যাত্রী রাশেদ বলেন, প্রতিবছর এরা ভাড়া বাড়ায়। ৭০০ টাকা দিয়ে টিকিট নিয়েছি। ফিরতি টিকিটও ২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি শুরু করেছে তারা।

বাড়তি ভাড়া নেওয়ায় গোলাপবাগে চুয়াডাঙ্গাগামী ও গোল্ডেন লাইনের মালিককে জরিমানা করা হয়। কিছু সময় কাউন্টারও বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে যাত্রীদের কথা চিন্তা করে কাউন্টার খুলে দেওয়া হয়। গোল্ডেন লাইন বাসে এসি, ননএসি বাসে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে বেশি নিচ্ছিল। তাদের দুজন কর্মীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

রাজধানী ফাঁকা : ঈদে কর্মজীবী মানুষ পরিবার নিয়ে বাড়ি ফেরায় রাজধানী এখন অনেকটা ফাঁকা। রাস্তায় গণপরিবহনের দীর্ঘ সারি ছিল না। ছিল না যানজট। কমেছে মানুষের আনাগোনা।

বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড় : গাবতলীতে যাত্রীর চাপ না থাকলেও সকাল থেকে যাত্রীর উপস্থিতি বেড়েছে। তবে কোনো রুটেই অতিরিক্ত গাড়ি দিতে হচ্ছে না বলে জানান পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ইব্রাহিম হাওলাদার নামের এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, বিগত ১২ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম যাত্রীর চাপ এত কম। সকাল থেকে আমাদের দুটি গাড়ি ছেড়ে গেছে। 

ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে স্বস্তি : ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে ঈদ যাত্রায় স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে পারছে মানুষ। নেই কোনো যানজট। বাড়তি ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না ঘরমুখো যাত্রীদের।

সাভার ও আশুলিয়ায় যানজট নেই : ঢাকা-আরিচা এবং নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের দিকে গতকাল যানবাহনের চাপ কম ছিল।

ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, সকালে (গতকাল) আমি সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, আরামবাগসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে গিয়েছি। দেখলাম যদি বিআরটিসির বাসেই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হয়, তাহলে অন্যরা কী করবে? পরে বিষয়টি জানালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। বিআরটিসি, বোরাক, গোল্ডেন লাইনসহ বাড়তি ভাড়া নেওয়া পরিবহনগুলোকে জরিমানা করার পাশাপাশি বাড়তি ভাড়া নেওয়া যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমরা আগে থেকেই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হবে বলে আসছি। এখন সেটার বাস্তবতা দেখছি।

আকাশপথেও বাড়ি ফিরছে মানুষ : অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আকাশপথের যাত্রাও স্বস্তিকর। রাজধানীর হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ রুটে উড়োজাহাজে যাচ্ছে ঘুরমুখো মানুষ। গতকাল সকালে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যাত্রীর ভিড় ছিল।

বাংলাদেশ বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম জানান, এবারের ঈদে বিভিন্ন রুটে বাংলাদেশ বিমানের চারটি ফ্লাইট বাড়ানো হয়েছে। তার পরও সব টিকিট শেষ।

সময়মতো ছাড়ছে ট্রেন : ঘরমুখো মানুষকে প্রতিবছরই ট্রেনে ঈদ যাত্রায় নানান বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। তবে এবারের চিরচেনা সেই চিত্রে পরিবর্তন এসেছে। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ট্রেন ছাড়ছে, আর যাত্রীদের জন্য যাত্রা হয়েছে আগের চেয়ে স্বস্তিদায়ক।

কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন জানান, সকাল ৯টা পর্যন্ত ১০টি আন্ত নগর ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে এবং কোনো ট্রেনই বিলম্ব হয়নি।

ঈদের দিন মেট্রো রেল বন্ধ থাকবে : পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন মেট্রো চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে পরদিন থেকে আগের নিয়মে মেট্রো রেল চলাচল করবে। ঢাকায় মেট্রো রেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ গতকাল শনিবার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানিয়েছে।

নৌপথে নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রা : এবারের ঈদ যাত্রায় নৌপথে সরকার নির্ধারিত ভাড়াতেই যাত্রীরা ভ্রমণ করতে পারছে। তবে লঞ্চগুলোতে শিডিউল বিপর্যয় রয়েছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে অভিযান : ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি নিরসনে টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য ঠেকাতে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অভিযানকালে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা রুটের সুমন ডিলাক্স (এসডি) পরিবহনের একটি গাড়ির দুই কাউন্টার থেকে এক আসন দুবার বিক্রির কারণে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ সময় ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ করার চেষ্টা : এবারের ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক।

(তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কালের কণ্ঠের দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি)

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০-৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কালের কণ্ঠ বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মার্চ এবং ১-২ এপ্রিল পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর ১ এপ্রিল হলে ৩ এপ্রিলও পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে ঈদের ছুটিতে কালের কণ্ঠ অনলাইন চালু থাকবে।

সম্পাদক

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

শেয়ার
শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিজয়নগরে শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন।ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উসকানি দেন।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের মনে কী আছে (হোয়াটস অন বাংলাদেশস আর্মি চিফস মাইন্ড?) শিরোনামে ইন্ডিয়া টুডেতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বেন কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা বিবিসি ও রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন রক্ষণশীল ও পেশাদার কর্মকর্তা, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সামরিক শাসন কার্যকর নয়। ইতিহাস, বিশেষ করে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়ন না চালাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল।

তবে ওয়াকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেষ্টাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।

সম্প্রতি কিছু ব্লগার ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের প্রতি অনুগত এবং তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তবে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর অনুগত নন, বরং তিনি পেশাদার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুকরণ করে রাজনীতির বাইরে থাকতে চান।

এদিকে সেনাপ্রধান চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর।

আওয়ামী লীগপন্থী এই আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন; আর এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে পারেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।

তবে তানিয়া আমীরের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।

এক সেনা কর্মকর্তা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, তিনি (সেনাপ্রধান) সেনা ও বাইরের সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চান। তিনি সেনা কর্মকর্তা ও অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা না করে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ তিনি একটি ঐকমত্য চান।

অন্যদিকে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাঁর অধীনে সেনাপ্রধান আগে চাকরি করেছেন, তিনি বলেন, যদি মনে হয় তাঁকে (সেনাপ্রধান) সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।

ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না। এতে বোঝা যায়, তিনি কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর বাবা ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কিনেছিলেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের জন্য।

মন্তব্য

রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। রমজান এলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন চিত্রই দেখে আসছে দেশবাসী।

তবে এবার ভিন্ন চিত্র। এবার রোজার ভোগ্যপণ্যের বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল। ভোক্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার রজমানে পণ্যের দাম সবচেয়ে কম। বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই ক্রেতাসাধারণের হাতের নাগালে রয়েছে।

রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল তা এখন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ বছর রমজান সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এতে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, দেশি রসুন, আলু ও আদাসহ কয়েকটি পণ্য। সবজি ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ছিল। 

এবার রমজানে পেঁয়াজ ও আলু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেশির সবজি গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম দামে বিক্রি হয়েছে। রমজানে ইফতারসামগ্রীর বাজারেও তেমন বাড়াবাড়ি নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত তদারকি জোরদার করায় সবজির বাজার সিন্ডিকেট কাঁচা মরিচ ও বেগুনের দাম বাড়াতে পারেনি।

গত রমজানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয় মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ঈদ ঘিরে মুরগির দাম বাড়লেও রোজার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় দরেই এবার মুরগি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, রোজার আগে আগে যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম কমে চিনি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, ডাল, মুরগি, ডিম, মাছ, সয়াবিন, পামঅয়েল, চিনি, লবণ, আলু, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয়।

এদিকে এবার রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে আছে। সংস্থাগুলো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনিটরিং টিম। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও করা হচ্ছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ