ঢাকা, মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫
১৭ চৈত্র ১৪৩১, ০১ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫
১৭ চৈত্র ১৪৩১, ০১ শাওয়াল ১৪৪৬
ঈদ যাত্রা

স্রোতের মতো রাজধানী ছাড়ছে মানুষ

জহিরুল ইসলাম
জহিরুল ইসলাম
শেয়ার
স্রোতের মতো রাজধানী ছাড়ছে মানুষ
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে তাঁরা যাচ্ছেন গ্রামের বাড়ি। ট্রেনের ভেতর জায়গা না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে ছাদে চড়েই রওনা দেন কেউ কেউ। গতকাল গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে তোলা। ছবি : লুৎফর রহমান

স্বজনদের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে এবার রাজধানী ছাড়ছে প্রায় দেড় কোটি মানুষ। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ট্রেন, বাস, লঞ্চসব মাধ্যমে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও নদীবন্দরগুলোতে বেড়েছে যাত্রীর ভিড়। প্রতিবারের তুলনায় এবারের ঈদ যাত্রা কিছুটা ভিন্ন।

এবার টিকিটের জন্য নেই দীর্ঘ অপেক্ষা, আগের মতো নেই যানজট। এসবের মধ্যেই গ্রামের বাড়ির পথে স্রোতের মতো ছুটছে মানুষ। তবে ট্রেনে স্ট্যান্ডিং টিকিটের কারণে অনলাইনে টিকিট কাটা যাত্রীদের যেমন অস্বস্তির অভিযোগ আছে, তেমনি বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

 

সড়কপথে যানজট নেই, আছে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ

গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যের অনেক বাসের টিকিট পাওয়া গেছে।

গাবতলী বাস টার্মিনালে মোটামুটি যাত্রীর চাপ থাকলেও অন্য বছরের মতো উপচে পড়া ভিড় ছিল না। গাবতলী থেকে নির্বিঘ্নে ভ্রমণ শুরু করতে পারলেও ভাড়া বেশি আদায়ের অভিযোগ করেছে যাত্রীরা। যাত্রীরা বলছে, সাধারণ সময়ে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ১৫০ টাকা ভাড়া নেওয়া হলেও সেলফি পরিবহনের বাসে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। ফলে একপ্রকার বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে।
তবে অন্য লোকাল সার্ভিসে একই দূরত্বে ২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। সেলফি পরিবহনে ভাড়া বেশি নেওয়ার কারণ হিসেবে বিরতিহীন চলাচল ও আসন ফাঁকা রেখে ফেরত আসাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীদের ডেকে ডেকে তুলছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তবে ঈদ মৌসুমে যাত্রীদের দরদাম করে টিকিট কাটতে হচ্ছে। বরিশালগামী বিএমএফ পরিবহনের বাসের ভাড়া অন্য সময় ৫০০ টাকা হলেও বর্তমানে প্রতিটি টিকিট ৭০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুনায়েদ আহমেদ বলেন, সব সময় যাই ৫০০ টাকায়, এখন ৭০০ টাকা ছাড়া উঠতেই দিচ্ছে না। ঈদ এলেই এরা ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। অনেক কাউন্টার ঘুরেছি, বরিশালগামী প্রায় সব বাস এমন ভাড়া রাখছে। নোয়াখালীর বিভিন্ন রুটেও বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছে যাত্রীরা।

 

ভোগান্তিহীন উত্তরের ঈদ যাত্রা

উত্তরের জেলাগুলোতে যেতে হলে রাজধানীবাসীকে পার হতে হয় সাভার, বাইপাইল, নবীনগর, চন্দ্রা। মূলত এই পথ দিয়ে উত্তরের ১৬ জেলায় ঈদ করতে যায় মানুষ, যার ফলে চাপও বাড়ে বেশি। গতকাল রাজধানীর গাবতলী থেকেই ছিল যানজট, তবে তা তীব্র হয়নি। সাভার, বাইপাইল, নবীনগর, চন্দ্রা এলাকায় ছিল তীব্র যানজট। অনেকের এই যানজট পাড়ি দিতে লেগেছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। যমুনা সেতুর টোলঘরকেন্দ্রিক যানজট, পাশাপাশি এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার চার লেন হওয়ায় মিলছে স্বস্তি।

গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে কুড়িগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করা সোহাগ নামের এক যাত্রী জানান, তিনি ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত যানজট পেরিয়ে চান্দুরা বাস টার্মিনালে পৌঁছেছেন। তবে পরে আর যানজটে পড়তে হয়নি। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদ যাত্রায় এবার খুব বেশি যানজট নেই। শুধু চান্দুরা পর্যন্ত যানজট ছিল। তবে এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত তেমন কোনো যানজট হয়নি। গাইবান্ধায় এসে ২০ মিনিট যানজটে পড়তে হয়েছিল।

 

সিরাজগঞ্জে উত্তরাঞ্চলের মহাসড়কে নেই চিরচেনা যানজট

ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তির করতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে সিরাজগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ হাইওয়ে পুলিশ। গতকাল সকাল থেকে সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়, মুলিবাড়ি চেকপোস্ট, নলকা, হাটিকুমরুল গোলচত্বরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ির চাপ লক্ষ করা গেছে। তবে বিকেল পর্যন্ত মহাসড়কগুলোতে কোনো যানজট ছিল না।

উত্তরের ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগ এড়াতে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে ১১টি উড়ালসেতুর মধ্যে ৯টি এবং হাটিকুমরুল ইন্টার চেঞ্জ সার্ভিস সড়ক খুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেন হওয়ায় এর সুফল পেয়েছে ঘরমুখো মানুষ। সড়কে চলাচলকারীরা বলছে, বিগত সময়ের চেয়ে এবারে উত্তরাঞ্চলে ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক।

 

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পথে নেই ভোগান্তি

ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। এই মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন রয়েছে। এই মহাসড়কে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও এখনো এই মহাসড়কে কোথাও যানজট দেখা যায়নি। মহাসড়কের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে হাইওয়ে পুলিশ।

যাত্রী ও হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, একদিকে পদ্মা সেতুর কল্যাণ, অন্যদিকে টানা ৯ দিনের ছুটির কারণে ঘরমুখো মানুষ আগে থেকে রওনা হওয়ায় এবং ঢাকা-মাওয়া ধলেশ্বরী টোল প্লাজা ও পদ্মা সেতু টোল প্লাজার মাওয়া প্রান্তে দ্রুত টোল আদায় করায় এ বছর এই পথে ঈদ যাত্রা স্বাভাবিক ও নির্বিঘ্ন রয়েছে। 

 

সেনাবাহিনী নামায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে স্বস্তি

ঘরমুখো মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরতে পারে সে জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী। এতে কোনো রকম যানজট ও ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছাড়াও কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও নোয়াখালী জেলা সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

 

কমলাপুরে ভিড় থাকলেও ভোগান্তি নেই

প্রতিবছরের মতো ট্রেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার চিত্র এবার নেই। আগে অনলাইনে টিকিট বিক্রির পর এখন ঈদ যাত্রায় নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন। ফলে নির্বিঘ্নে বাড়ির পথে রওনা হতে পারছে যাত্রীরা। তবে স্ট্যান্ডিং টিকিটের যাত্রীদের দাঁড়িয়ে যাওয়ার কারণে কিছুটা অসুবিধার কথা জানিয়েছে যাত্রীরা। দেখা যায়, স্টেশনের প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের লাইনে রাখা আছে ট্রেনের রেক। কোনো কোনো প্ল্যাটফর্মে অতিরিক্ত রেকও রাখা আছে। প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছাড়ছে। ট্রেন ছাড়ার পর যেসব প্ল্যাটফর্ম খালি হচ্ছে, সেসব প্ল্যাটফর্মে পরবর্তী ট্রেনগুলোর রেক এনে রাখা হচ্ছে বা কোনো ফিরতি ট্রেনের জন্য খালি রাখা হচ্ছে। এভাবেই সময়মতো সব ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে।

যাত্রীরা জানিয়েছে, স্টেশনে ভোগান্তি ছাড়া এমন ঈদ যাত্রা কমই পেয়েছে। স্টেশনের ব্যবস্থাপনায় খুশি তারা।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, ভোর থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ১৩টি আন্ত নগর ট্রেন স্টেশন ছেড়ে গেছে। প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ঢাকা স্টেশন ছেড়েছে।

 

ঈদে ফিরতি যাত্রার টিকিট

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের আন্ত নগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। গত ২৪ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে ঈদ-পরবর্তী ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি। আগামী ৮ এপ্রিল যারা ভ্রমণ করতে চায় তাদের আজ শনিবার টিকিট কাটতে হবে। সকাল ৮টায় পঞ্চম দিনের মতো ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। অগ্রিম টিকিটের শতভাগই বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। যাত্রীসাধারণের সুবিধার্থে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট সকাল ৮টায় এবং পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট দুপুর ২টা থেকে ইস্যু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ ছাড়া চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ৩১ মার্চ এবং ১ ও ২ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে।

 

সদরঘাটে ফিরল চিরচেনা রূপ

রাজধানী থেকে নৌপথে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে যাত্রীরা। গতকাল সদরঘাটে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। পন্টুনে নোঙর করা লঞ্চগুলোর সামনে কর্মচারীরা যাত্রীদের ডাকছেন। যাত্রীর চাপও অনেক। লঞ্চের ডেকে যাত্রীরা বসে আছে। কেবিনের টিকিট আগেই বুকিং হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময়েই লঞ্চগুলো ছেড়ে গেছে। নৌপথে যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সদরঘাট টার্মিনালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। লঞ্চের প্রবেশমুখে দায়িত্ব পালন করছেন আনসার সদস্যরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে, অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা বাড়তি যাত্রী নিলেই বাতিল করা হবে লঞ্চের লাইসেন্স। গতকাল সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৫০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে গেছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি, কুমিল্লা (উত্তর) প্রতিনিধি]

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

চীনে স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ছে

চালু হচ্ছে চট্টগ্রাম কুনমিং ফ্লাইট

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
চালু হচ্ছে চট্টগ্রাম কুনমিং ফ্লাইট

চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কুনমিংয়ের হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষদের সহায়তা করতে বন্দরনগর চট্টগ্রাম থেকে কুনমিং রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করেছে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

চীন এরই মধ্যে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতাল নির্ধারণ করেছে। তবে চড়া বিমানভাড়া শহরটিতে ভ্রমণের পথে বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

কুনমিংয়ের সেরা তিনটি হাসপাতালকে বাংলাদেশের রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল তিনটি হলো দ্য ফার্স্ট পিপলস হসপিটাল অব ইউনান প্রভিন্স; দ্য ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হসপিটাল অব কুনমিং মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি এবং ফাওয়াই ইউনান হসপিটাল, চায়নিজ একাডেমি অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস। চিকিৎসার ধরন, ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ, দোভাষী নির্বাচনসহ সামগ্রিক চিকিৎসাসেবার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কাজ করছেন।

কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম-কুনমিং রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে যাতায়াত ব্যয় ও সময় কমে আসবে।

ফলে আরো বেশিসংখ্যক বাংলাদেশি সহজে চীনের স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবে।

চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, কুনমিংয়ের হাসপাতালে বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা ফ্লোর বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, চিকিৎসার খরচ সহনীয়। একজন চীনা নাগরিকের সমান ফিই দিয়ে থাকেন একজন বাংলাদেশি রোগী।

বর্তমানে চায়না ইস্টার্নের ঢাকা-কুনমিং সরাসরি দৈনিক ফ্লাইট আছে। এ ছাড়া প্রতি মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার অতিরিক্ত একটি ফ্লাইট পরিচালনা করে। রাউন্ড ট্রিপ ভাড়া ৩৫ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। কুনমিং ভ্রমণ সহজ করতে ঢাকা থেকে কুনমিং রুটে বিমানভাড়া কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশিদের জন্য আরো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র উন্মুক্ত করবে।

আগামী এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের একদল সাংবাদিককে কুনমিংয়ে পাঠানো হবে সরেজমিনে চিকিৎসার সুবিধাগুলো দেখে আসার জন্য।

গত মাসে প্রথমবারের মতো কয়েক ডজন বাংলাদেশি চিকিৎসার জন্য কুনমিংয়ে যান। তাঁরা সেখানকার হাসপাতালগুলোর মানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তবে অনেকেই যাতায়াত ব্যয় নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন।

চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যাবসায়িক দেশ। চীন থেকে বাংলাদেশের প্রায় সব শিল্প-কারখানার কাঁচামাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের তৈরি পণ্য আমদানি হয়। তাই প্রতিবছরই হাজার হাজার ব্যবসায়ী চীনের বিভিন্ন শহর ভ্রমণ করে থাকেন। তবে দুই দেশের মধ্যে এত দিন সরাসরি বিমানসেবা ছিল না।

কুনমিংয়ে রয়েছে বিশ্বের বিখ্যাত স্টোন ফরেস্ট। কুনমিংকে চীনারা নাম দিয়েছে চিরবসন্তের নগর। সারা বছরই সেখানে ফুল ফোটে। রঙিন থাকে কুনমিংয়ের পথঘাট ও বাসাবাড়ির আঙিনা।

এমনিতে কুনমিং হচ্ছে চীনের ট্রানজিট পয়েন্ট। বাংলাদেশ থেকে যেসব পর্যটক, শিক্ষার্থী বা ব্যবসায়ী চীনের বিভিন্ন প্রদেশে যান, তাঁদের পরদিন বিমানের ফ্লাইট ধরতে প্রথমে কুনমিংয়ে এক রাত অবস্থান করতে হয়।

বিমানে ঢাকা থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের ইউনান প্রদেশের কুনমিং মাত্র দুই ঘণ্টার পথ, অর্থাৎ প্রায় ১২০০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের সীমানার পূর্ব পাশেই ইউনানের অবস্থান। চীনের ৪৩টি প্রদেশের একটি ইউনান।

মন্তব্য
সবিশেষ

আফগানি নতুন প্রজন্মের নারীরা বোরকা ছেড়ে আবায়ায় ঝুঁকছেন

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
আফগানি নতুন প্রজন্মের নারীরা বোরকা ছেড়ে আবায়ায় ঝুঁকছেন

নতুন প্রজন্মের আফগান নারীরা বোরকা থেকে আবায়ার দিকে ঝুঁকছেন। আবায়াও ইসলামী নারীদের পছন্দের পোশাক। আবায়ার সঙ্গে থাকে হিজাব, মাথার ওড়না, এমনকি নেকাবও। অথবা বলা যেতে পারে, আফগান আধুনিক নারীরা সৌদি স্টাইলের পোশাক আবায়া অথবা নিকাব-ঘোমটার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।

আফগান নারীরা প্রথাগতভাবে নীল রঙের বোরকা পরেন। এই বোরকার মুখের অংশে আলাদা একটা ঝালর বা পর্দা থাকে।

২০২১ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর তালেবানরা নারীদের ওপর কঠোর পর্দা প্রথা চালু করে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত একই আইন চালু ছিল।

তালেবানরা ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক নারীর শরীর ও মুখ ঢাকার নির্দেশনা দিয়েছে। তবে এতে কোনো বিশেষ পোশাক, বিশেষত বোরকার কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। এ কারণে আধুনিক নারীরা বোরকার পরিবর্তে আবায়ার দিকে ঝুঁকছেন। অন্ততপক্ষে তাঁরা উপসাগরীয় দেশগুলোর নারীদের ফ্যাশনের দিকে নজর রেখেই আবায়ার দিকে ঝুঁকছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

তরুণ আফগান নারীরা আবায়া পরলেও মাথায় ঠিকই হিজাব পরেন। আর যাঁরা হিজাব পরেন না, তাঁরা মুখে মেডিক্যাল মাস্ক লাগিয়ে ঘর থেকে বের হন। নিদেনপক্ষে সৌদি আবায়ার ওপর নিকাব পরেন, যা তাঁদের চোখ ছাড়া আর সব কিছু ঢেকে রাখে।

রাজধানী কাবুলের ২৩ বছরের নন্দিনী তাহমিনা আদেল বলেন, নতুন প্রজন্মের আফগান নারীরা মনে হয় না বোরকা বেছে নেবেন। ডিজাইন ও কালারের কারণে তাঁরা এটা মানতে অনাগ্রহী।

উল্লেখ্য, তালেবান সরকার মেয়েদের উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে অনুদার হওয়ার কারণে তাহমিনা অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারেননি। তিনি বলেন, আমি আবায়া পছন্দ করি। কারণ এটা আমার কাছে বেশ আরামদায়ক। সূত্র : অ্যারাব নিউজ

মন্তব্য

প্রায় শতভাগ কারখানার বেতন-বোনাস পরিশোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
প্রায় শতভাগ কারখানার বেতন-বোনাস পরিশোধ

আন্দোলনের মুখে ঈদের আগে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের তিন কোটি টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। তবে তা মানেননি সাধারণ শ্রমিকরা। গতকাল শনিবারও শ্রম ভবনের সামনে শ্রমিকরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে তাঁদের প্রাপ্য বেতন-বোনাসের দাবি জানাতে থাকেন। কিন্তু গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে আগামী ৮ এপ্রিল আবারও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শ্রমসচিব।

এদিকে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ও শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, প্রায় শতভাগ কারখানার মালিক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছেন। আর টিএনজেডসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে কাজ করছে সরকার। এদিকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্রমসচিব জানিয়েছেন, শ্রমিকদের বেতন-বোনাস সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত টিএনজেডের তিন মালিক শ্রম ভবনে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকবেন।

এই সংকট সমাধানের পর তাঁরা ছাড়া পাবেন।

বিজিএমইএর তথ্যানুসারে ঈদের আগেই প্রায় শতভাগ কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিজিএমইএর সদস্য কারখানা দুই হাজার ১০৭টির মধ্যে দুই হাজার ৯৮টি কারখানা ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে, যা প্রায় ৯৯.৫৭ শতাংশ। এ ছাড়া মার্চ মাসের বেতন (১৫-৩০ দিনের) পরিশোধ করেছেএমন কারখানা দুই হাজার ৭৯টি, যা ৯৮ শংতাশের বেশি।

এদিকে শিল্প পুলিশ জানিয়েছে,  ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের বোনাস, মার্চ মাসের বেতন বিজিএমইএসহ অন্য সংগঠনের প্রায় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিশোধ করেছে।

তবে টিএনজেডসহ সাতটি কারখানা বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে পারেনি। এই বেতন-বোনাস পরিশোধে বিজিএমইএ, শ্রম মন্ত্রণালয় ও শিল্পাঞ্চল পুলিশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মঈন কালের কণ্ঠকে বলেন, টিএনজেডসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা দরকার। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান ঈদের আগে তিন কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সেটা মানেননি।

ফলে এর কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা আশা করছি সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।

এ প্রসঙ্গে শ্রমসচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, মালিকপক্ষের তিনজনকে হেফাজতে রাখা হচ্ছে। কারখানার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে আপাতত শ্রমিকদের পাওনা তিন কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে। আগামী ৮ এপ্রিল অফিস খোলার পর এ বিষয়ে পূর্ণ সমাধান দেওয়া হবে।

বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, টিএনজেড ও এসসেইন অ্যাপারেলসএ দুই কারখানার বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। টিএনজেডের পরিচালক শনিবার বিকেলের মধ্যে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসসেইন অ্যাপারেলসের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এর বাইরে যেসব কারখানা বেতন বা বোনাস দেয়নি, তারা ছুটির আগেই দেবে।

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দুটি কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা আছে। সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। ৯০ শতাংশ কারখানা ছুটি দিয়ে দিয়েছে। বাকিরা বেতন-ভাতা পরিশোধ করে শনিবার ছুটি দিয়ে দেবে।

 

গাজীপুরে বেতন-বোনাস পাননি ৫ কারখানার শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর জানান, গাজীপুরে বেতন-বোনাস পাননি পাঁচ কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক। ফলে এই শ্রমিকদের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের জারা কম্পোজিট, মোগরখাল এলাকার এএনজেড অ্যাপারেলস, তিন সড়ক এলাকার স্টাইল ক্রাফট, শ্রীপুরের জৈনা বাজার এলাকার এইচডিএফ অ্যাপারেলস এবং কালিয়াকৈর উপজেলার কামরাঙ্গাচালা এলাকার হ্যাগ নিটওয়্যার গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেনি।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, জারা নিট কম্পোজিট  ও হ্যাগ নিটওয়্যার কারখানার মালিক লাপাত্তা। এতে বেতন ও ঈদ বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন জারার ৪০০ এবং হ্যাগ নিটওয়্যারের ৩০০ শ্রমিক। এইচডিএফ অ্যাপারেলসের দুই হাজার ৩০০ শ্রমিকও বেতন-বোনাস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়েছে, ঈদের পর বেতন-বোনাস পরিশোধ করবে। শ্রমিকরা বিষয়টি মেনে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

 

মন্তব্য
আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রম

স্মৃতি হাতড়ে সান্ত্বনা খোঁজেন

মোবারক আজাদ
মোবারক আজাদ
শেয়ার
স্মৃতি হাতড়ে সান্ত্বনা খোঁজেন
এই বৃদ্ধাশ্রমেই কাটে তাঁদের দিনরাত। ঈদও কাটবে এখানেই। ইফতারের আগে মোনাজাত করছেন বাসিন্দারা। গত শুক্রবার রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডে আপন ভুবনে। ছবি : কালের কণ্ঠ

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ-খুশি ভাগাভাগি করে নেওয়া। তবে ঈদের এই আনন্দ-খুশিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয় না অনেকের। উল্টো ঈদ এলে বিষাদ নেমে আসে তাঁদের জীবনে, দুই চোখ বেয়ে জল নামে।

হাতড়ে বেড়ান পুরনো স্মৃতি। এই হতভাগ্য মানুষগুলোর মধ্যে রয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস করা বয়স্করা। ঈদ ঘিরে এই মানুষগুলোর জন্য ভালো মানের খাবার ও পোশাক বরাদ্দ থাকলেও তাঁদের পাশে আপনজন না থাকায় কোনোভাবেই দুঃখ ঘোচে না। তবে বৃদ্ধাশ্রমে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা আদর ও সেবা দিয়ে পাশে থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন এই মানুষগুলোকে হাসিখুশি রাখতে।
গত শুক্রবার রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডে আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রম-এর কর্মী এবং সেখানে বসবাস করা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমে পরিবারহীন, সন্তানহীন, মানসিক ভারসাম্যহীন এবং সড়কে যেসব অসহায় বৃদ্ধা অনাদরে অসহায়ভাবে পড়ে ছিলেন তাঁদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ২৯ জন বৃদ্ধা রয়েছেন।

বৃদ্ধাশ্রমটির একজন বাসিন্দা জোহরা বেগম (৮০)।

তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি সাত সন্তানের জন্ম দিলেও একে একে শৈশবেই সবাই মারা যায়। স্বামীও মারা গেছেন। শেষে ঘরহারা হয়ে বেশ কিছুদিন সড়কে থেকে অবশেষে এই বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় মেলে। এখন আর তাঁর কিছু মনে পড়ে না। তবে পরিবার-পরিজন হারানোর আক্ষেপ কোনোভাবেই দূর হচ্ছে না।

জোহরা বেগমের মতো আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় পেয়েছেন রেনু বেগম। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পুরান ঢাকার ইসলামবাগ এলাকায় তিনি তিন ছেলে, এক মেয়ে আর স্বামীর সঙ্গে থাকতেন। পারিবারিক শত্রুতার জেরে সব কিছু হারাতে হয় তাঁকে। স্বামী মারা যাওয়ার পর কিছুদিন মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করেছেন। এরপর অসুস্থ হলে হাসপাতালে তাঁকে একা তিন মাস কাটাতে হয়। পরে যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সে বাসার লোকজন আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে এখানে পাঠান। রেনু বেগম জানান, এখানে তিনি অনেক ভালো আছেন। এখানে আসার পর তাঁর নিঃসঙ্গতা দূর হয়েছে। কিন্তু তিনি কিছুতেই নিজের সংসার, সন্তান ও স্বামীর কথা ভুলতে পারছেন না।

আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রমের প্রধান কো-অর্ডিনেটর জারা জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, এই মায়েদের তো আপনজন বলতে আমরাই। আমাদের সঙ্গেই তাঁরা ঈদ করবেন। ঈদের দিন সেমাই, পিঠা, পোলাও-রোস্টসহ একটি পরিবারে সাধারণভাবে যা যা আয়োজন থাকে আমরাও এখানে এই মায়েদের জন্য সেসবের আয়োজন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। ঈদের আগের দিন এই মায়েদের হাতে মেহেদি পরাব, ঈদের দিন নতুন শাড়ি, ম্যাক্সির সঙ্গে ইমিটেশনের গহনা পরিয়ে তাঁদের সাজাব। আর ঈদের দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং এই মায়েদের শরীর ভালো থাকলে তাঁদের পাশের পার্কে ঘুরাতে নিয়ে যাব।

ঈদের দিন এই অসহায় বৃদ্ধাদের মানসিক অবস্থা কেমন থাকে, জানতে চাইলে জারা জামান বলেন, এই মায়েরা আক্ষেপ করেন, যদি তাঁদের স্বামী-সন্তান থাকত, তাহলে তাঁদের এখানে আশ্রয় নিতে হতো না। আবার সন্তান থাকলে নিশ্চয় তাঁদের দেখতে আসত। ভালো মানের খাবার, পোশাক, আমাদের শতভাগ আদর-ভালোবাসা দেওয়ার পরও অনেকের পরিবার না থাকার আক্ষেপ ঘুচছে না। এ কারণে আমরা তাঁদের বেশি করে সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করি, যাতে এই মায়েরা মন খারাপ না করেন।

প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্যোক্তা রুমি রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, শুরুতে ২০২২ সাল থেকে আমরা চারজন নিঃসন্তান নারী নিয়ে এই বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা শুরু করি। বর্তমানে এই সংখ্যা ২৯। মা-বাবাকে নিজের সন্তানরা যেভাবে ভালোবাসে, আদর-যত্নে রাখে, আমরাও এখানে থাকা মায়েদের সেভাবে রাখার চেষ্টা করছি। যেকোনো উৎসবের সময় আমাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।

প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা জানান, বর্তমানে এখানে থাকা ২৯ জন মায়ের মধ্যে বেশির ভাগ মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁদের ৮০ শতাংশ প্রেসার, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। এঁদের মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মা-ও রয়েছেন। এই মায়েদের ঈদ উৎসব কাটে পরিবারের সদস্যদের কাছে না পাওয়ার কষ্ট ও অভিমান বুকে চেপে।

জানা গেছে, আপন ভুবন বৃদ্ধাশ্রম প্রতি মাসে এই ময়েদের ভরণ-পোষণে ব্যয় করে প্রায় ছয় লাখ টাকা। এই ব্যয় নিঃসন্তান চার নারীসহ তাঁদের পরিবার ও পরিচিতজনরা বহন করেন। কিছু অর্থ অনুদানের মাধ্যমেও পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ এক বেলা খাবার সরবরাহ কিংবা কেউ কিছু কাপড়চোপড় দিয়ে যান। তবে রমজান মাসে কিছু শাড়ি ও জাকাত পাওয়া যায়। তবে জাকাতের পরিমাণ আরো বাড়লে এই মায়েদের সেবায় আরো কিছুটা বেশি ব্যয় করা যেত।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ