প্রশ্ন : ঢাকার মাঠে ড্রিবলিংয়ের জাদুকর ছিলেন আপনি। এমন ঘটনাও ঘটেছে যে প্রতিপক্ষের চার-পাঁচজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বসে পড়েছেন বলের ওপর। ওই ঘটনাটি দিয়েই সাক্ষাৎকার শুরু করতে চাই।
হাসানুজ্জামান খান বাবলু : যে ম্যাচটির কথা বলছেন, সেটি ১৯৭৬ সালে ইস্টএন্ড ক্লাবের বিপক্ষে।
আর যে ঘটনা, সেখানে আমার বন্ধু মহসিনের পরোক্ষ অবদান রয়েছে। ব্রাদার্স ক্লাবে আমাকে ও মহসিনকে বলা হতো মানিকজোড়। ইস্টএন্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচে মাঠ ছিল ভেজা। আমাদের ড্রিবলিংয়ে খুব সুবিধা, ডজ দিলেই ওরা পড়ে যায়। গোলের পর গোল করে আমরা এগিয়ে যাই ৭ গোলে। তখন হ্যাটট্রিক হতো পর পর তিন গোল করলে। আমি পর পর দুই গোল করলাম, কিন্তু পরেরটি মহসিন আমাকে দিয়ে না করিয়ে গোল করে নিজে। আমরা তো খুব বন্ধু, ওকে বললাম, ‘দাঁড়া, আমাকে হ্যাটট্রিক করতে দিসনি, তোকেও দেব না।’ ম্যাচের মিনিট ১৫ বাকি থাকতে বল পেয়ে চার-পাঁচজনকে কাটিয়ে ইস্টএন্ডের ডি-বক্সের সামনে যাই চলে। কিন্তু মহসিনকে পাস না দিয়ে ওই বল নিয়েই আবার চলে আসি আমাদের ডি-বক্সে। এসে বসে পড়ি বলের ওপর। ওদের খেলোয়াড়দের ডাকি বল নেওয়ার জন্য। কিন্তু আসে না। আসলেই তো ডজ দিয়ে ওদের মাঠে ফেলে দিয়ে বেইজ্জতি করব।
প্রশ্ন : এ জন্য তো আপনাকে হলুদ কার্ডও দেখানো হয়েছিল?
বাবলু : বলের ওপর বসার একটু পর বেজে ওঠে রেফারির বাঁশি। তিনি এসে হলুদ কার্ড দেখান আমাকে। আমি তো অবাক। অনুশীলনেও মজা করে এমন বলের ওপর বসে পড়েছি অনেকবার। এতে যে প্রতিপক্ষের প্রতি অসম্মান দেখানো হয়, সেটি কেউ বলে দেয়নি। অথচ রেফারি কিনা সে কারণেই আমাকে হলুদ কার্ড দেখালেন! আর কোচ গফুর বেলুচ তো সাইডলাইন থেকে চিৎকার করে মাঠ থেকেই উঠিয়ে নেন। হাজার দশেক দর্শকের সামনে এমন অপমান! পরের কয়েক দিন তাই কোচের সঙ্গে কথা বলিনি। পরে তিনি আমাকে বুঝিয়ে বলেন, ‘আরে পাগলা, তুই তো ইস্টএন্ডের ১১ জন খেলোয়াড়কে অপমান করেছিস। আমি তোকে তুলে না নিলে ওরা সবাই মিলে তোকে মারত। তোর ক্ষতি যেন না হয়, সে জন্য তুলে নিয়েছি।’ ওই যে আমার শিক্ষা হলো, এরপর মাঠে কোনো দিন আর বলের ওপর বসিনি। তবে ওই চার-পাঁচজনকে কাটানো কোনো ব্যাপার ছিল না। প্রতি ম্যাচেই সেটি করতাম।
প্রশ্ন : হ্যাঁ, ড্রিবলার হিসেবে আপনার খ্যাতি কিংবদন্তিতুল্য। এই দক্ষতা অর্জন করলেন কিভাবে?
বাবলু : সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব দেব ওস্তাদ গফুর বেলুচকে। একজন ফুটবলারের ভেতর কী দক্ষতা থাকে, সেটি বুঝতে পারেন কেবল কোচ। ওস্তাদ বুঝেছিলেন, আমি সহজাতভাবেই ড্রিবলিংয়ে ভালো। সে কারণে সবার অনুশীলন শেষে আমাকে নিয়ে আলাদা করে প্র্যাকটিস করাতেন। এখন পেছন ফিরে তাকালে আরো দুটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। স্টেডিয়ামে অনুশীলনের পর সবাই ক্লাব টেন্টে ফিরে যেত রিকশায় বা হেঁটে। আমি সব সময় ফিরতাম বল পায়ে। রিকশা-সাইকেল-বাস-টেম্পো অথবা মানুষ— সামনে যা পড়ত, সব কাটিয়ে কাটিয়ে এগোতাম। এতে বলের ওপর দক্ষতা বাড়ে। আরেকটি ব্যাপার হলো, প্র্যাকটিসের সময় সবাইকে তো দৌড়ে চক্কর দিতে হতো। আমি সেই চক্করগুলো দিতাম বল পায়ে। বলের ওপর নিয়ন্ত্রণ তাই হয়ে যায় অবিশ্বাস্য। তখন তো একটা কথা বলাই হতো যে বাবলুর পায়ে চুম্বক আছে!