ঢাকা, শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫
৭ চৈত্র ১৪৩১, ২০ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫
৭ চৈত্র ১৪৩১, ২০ রমজান ১৪৪৬

বিশ্ব প্রযুক্তি বাজার ওলটপালট

  • ♦ বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের পছন্দ ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন, বিক্রির শীর্ষে আইফোন ♦ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে বাজেট পিসি ও স্মার্টফোন বাজারে ♦ বাজার বৃদ্ধি পেলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারকারীদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ♦ বড় স্টুডিও নয়, বরং ক্ষুদ্র নির্মাতারাই এ বছর গেমারদের মন জয় করেছে
শেয়ার
বিশ্ব প্রযুক্তি বাজার ওলটপালট
বছরের সেরা চমক রাইজেন ৯৮০০এক্সথ্রিডি সিপিইউ ও আর্ক বি৫৮০ জিপিইউ। ছবি : সংগৃহীত

কম্পিউটার

এএমডি ও অ্যাপলের বাজিমাত

ইন্টেলের দুর্দিন

প্রসেসর নয়, বরং গ্রাফিকস কার্ড নির্মাণেই এ বছর সফলতার মুখ দেখেছে ইন্টেল। এ বছর তারা নতুন কোর আলট্রা সিরিজ বাজারে আনলেও প্রসেসরগুলোর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ ও তাপ উৎপাদন এবং তূলনামূলক পারফরম্যান্সে ঘাটতির ফলে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ব্যবহারকারীরা। সমস্যাটি এতই প্রকট হয়েছে যে তারা প্রায় ২০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে বছরের শেষভাগে বাজারে আসা আর্ক ‘ব্যাটলমেজ’ সিরিজের জিপিইউয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রায় সব গেমার ও সমালোচক।

 

সাফল্যের পাশাপাশি হতাশা এএমডিতেও

রাইজেনের মাধ্যমে এএমডির জয়যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। নতুন রাইজেন ৯০০০ সিরিজ উন্মোচনের পর থেকেই বিভিন্ন সেরা পারফরম্যান্স তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। অন্যদিকে গ্রাফিকস কার্ডে এএমডির ভরাডুবি চলছেই। তাদের রেডিওন ৭০০০ সিরিজের ব্যর্থতা এ বছর পৌঁছেছে চরমে।

তবু বছর শেষে পিসি বাজারে শক্ত অবস্থানেই আছে তারা।

 

এনভিডিয়ার স্বর্ণযুগ চলছেই

গেমিং মানেই এনভিডিয়া—আরটিএক্স ৪০০০ সিরিজের দারুণ সাফল্য এ বছরও ছিল অব্যাহত। শুধু ৪০৬০ এবং ৪০৫০ সিরিজের জিপিইউগুলো কিছু সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। অন্যদিকে এনভিডিয়ার নতুন ব্ল্যাকওয়েল এআই অ্যাক্সালারেটর এ বছর ছিল প্রতিটি এআই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের পছন্দ তালিকার শীর্ষে।

 

হতাশ করেছে স্ন্যাপড্রাগনভিত্তিক ল্যাপটপ

মাইক্রোসফট ও কোয়ালকমের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘কোপাইলট প্লাস’ ল্যাপটপের কাছে ক্রেতাদের আশা ছিল উচ্চ পারফরম্যান্স ও ব্যাটারিলাইফ। মাইক্রোসফট দাবি করেছিল, স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর ও উইন্ডোজ ১১-এর মিশ্রণে তৈরি ল্যাপটপে ব্যবহারকারীরা ম্যাকবুকের চেয়েও ভালো পারফরম্যান্স পাবেন। কিন্তু তেমনটা হয়নি। অতিরিক্ত তাপ, অপ্রতুল ব্যাটারিলাইফ এবং প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ব্যবহারে সমস্যার কারণে বেশির ভাগ ক্রেতা এর মধ্যেই ল্যাপটপগুলো ফিরিয়ে দিয়েছে। কোপাইলট প্লাস পিসি হয়েছে এ বছরের সবচেয়ে বড় ফ্লপ প্রযুক্তি।

জনপ্রিয়তা পেয়েছে এম-ফোর প্রসেসরযুক্ত ম্যাক মিনি    ছবি : সংগৃহীত

জনপ্রিয়তা পেয়েছে এম-ফোর প্রসেসরযুক্ত ম্যাক মিনি    ছবি : সংগৃহীত

অ্যাপলের আধিপত্য অব্যাহত

নতুন এম৪ প্রসেসরযুক্ত ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ও ট্যাবলেট বাজারের সব ডিভাইসকে পারফরম্যান্সে হারিয়ে দিয়েছে, বেড়েছে বিক্রি। আইফোন ১৬ সিরিজও হয়েছে হিট, বিক্রি বেড়েছে ৬ শতাংশ। তবে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ছিল এ বছরের অন্যতম বড় ব্যর্থতা। তাদের এআই ফিচারের অপরিপক্বতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়েছে তুমুল সমালোচনা।

 

ওলেড মনিটরের দাম কমেছে

পিসিবাজারে অবশেষে ওলেড প্রযুক্তির মনিটর জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। এখনো দাম পুরোপুরি হাতের নাগালে না এলেও হাজার ডলারের নিচে নেমেছে ওলেড প্রযুক্তির মনিটরের দাম।

 

বিশ্ব প্রযুক্তি বাজার ওলটপালট

এআই প্রসেসিংয়ে সেরা ‘ব্ল্যাকওয়েল’ প্ল্যাটফরম          ছবি : সংগৃহীত

এআই

এআইয়ের জয়জয়কার

চ্যাটজিপিটি এখনো সেরা

এ বছরেও ওপেনএআই তাদের আধিপত্য ধরে রেখেছে। নতুন ‘জিপিটি ফোর-ও’ মডেলটি সব ধরনের কাজেই যথেষ্ট পারদর্শী, নেই বড় কোনো দুর্বলতা। গুগলের জেমিনি, অ্যানথ্রোপিকের ক্লড অথবা মেটা লামা মডেলগুলো কিছু কাজে তূলনামূলক বেশি পারদর্শী হলেও অন্য বিষয় আছে বেশ পিছিয়ে। ফলে ব্যবহারকারীদের পছন্দের তালিকায় চ্যাটজিপিটি এখনো সবার ওপরে অবস্থান করছে। 

 

কাজের নয় এআই স্মার্টফোন

গুগল, স্যামসাং ও অ্যাপল—প্রতিটি নির্মাতাই চেষ্টা করেছে তাদের স্মার্টফোনে এআই যুক্ত করার। গ্যালাক্সি এআই, গুগল জেমিনি ও অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স খুব কাছাকাছি ধরনের ফিচার ব্যবহারকারীদের হাতে পৌঁছে দিয়েছে। ফোনকল ও বিভিন্ন লেখা সরাসরি ফোনেই ভাষান্তর করা, ছবি জেনারেট এবং আরো সাবলীল ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রতিটি ডিভাইসে দেখা গেলেও ব্যবহারকারীরা তাকে ‘চটকদার’ উপাধি দিয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, নতুন ফিচারের বিষয়ে কৌতূহল শেষ হওয়ার পর ব্যবহারকারীরা সেসব আর ব্যবহার করে না।

 

চ্যাটবটের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে

লেখালেখি অথবা প্রগ্রামিংয়ের পাশাপাশি চ্যাটবটকে বন্ধু অথবা থেরাপিস্ট হিসেবেও ব্যবহারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বিষয়টি নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। চ্যাটবটগুলো ভালো-মন্দ অথবা ভুল-শুদ্ধের মধ্যে এখনো তফাত করতে পারে না, যার ফলে দেয় প্রচুর ভুল উত্তর। মানসিক সমস্যার মতো জটিল ও সংবেদনশীল বিষয় এআইয়ের ওপর নির্ভর করা অনুচিত। ভুল পরামর্শ গ্রহণে বড় ক্ষতিও হতে পারে। এআইকে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতাও বেড়েছে। ফলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে ভুল তথ্য। এআই ব্যবহার করে সংবাদ ম্যানিপুলেশনের জোরালো অভিযোগ উঠেছে এ বছর, যদিও তা প্রমাণিত নয়।

 

শক্তিশালী এআই প্রসেসর এনেছে এনভিডিয়া

দুটি বি২০০ টেনসর কোর জিপিইউ এবং তা পরিচালনার জন্য শক্তিশালী গ্রেস সিপিইউ মিলিয়ে তৈরি গ্রেস-ব্ল্যাকওয়েল সুপারচিপ বর্তমানে বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী এআই প্রসেসিং প্ল্যাটফর্ম। চলতি বছরের শুরুতেই সেটি উন্মোচন করেন এনভিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জেনসেন হুয়াং। সর্বমোট ১ দশমিক ৪ এক্সাফ্লপ এআই পারফরমেন্স এবং ৩০ টেরাবাইট মেমরি এতে আছে। উন্মোচনের পরপরই বিশ্বের সব এআই নির্মাতা এটি কেনার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ফলাফল এনভিডিয়ার আয় বৃদ্ধিতে এ বছর আবারো হয়েছে নতুন রেকর্ড।

 

জ্যামিতিক হারে বেড়েছে এআই ব্যবহার

প্রচুর অসন্তোষ ও নিন্দার পরও এআই ব্যবহারের পরিমাণ এ বছর বেড়েছে। বিশেষত কাস্টমার কেয়ার এজেন্ট, অফিসের বিভিন্ন লেখালেখির কাজ এবং বিজ্ঞাপনের জন্য ছবি ও ভিডিও তৈরিতে এআই ব্যবহৃত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ বছর এআইভিত্তিক সেবার বাজারমূল্য ২০০ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ওপেনএআইকে একাই মূল্যায়ন করা হয়েছে ১৫৭ বিলিয়ন ডলার।

 

বিশ্ব প্রযুক্তি বাজার ওলটপালট

চমক দেখিয়েছে স্পেস মেরিন-২।      ছবি : সংগৃহীত

গেম

সবার পছন্দ সহজবোধ্য গেম

সিঙ্গল প্লেয়ার গেমের জয়জয়কার

বছরের শেষ প্রান্তিকে প্রকাশিত হয়েও সর্বাধিক বিক্রির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে স্পেস মেরিন ২, স্টকার ২ : হার্ট অব চোরনোবিল এবং ইন্ডিয়ানা জোনস অ্যান্ড দ্য গ্রেট সার্কেল। স্পেস মেরিন ২-এর তুমুল জনপ্রিয়তা ছিল এ বছরের সবচেয়ে বড় চমক। বহু বছর ধরে চলছে অতিরিক্ত প্যাঁচানো কাহিনি, জটিল গেমপ্লে এবং মাইক্রোট্রানজাকশনে ভরা মাল্টিপ্লেয়ার মোডের গেম ডিজাইনের দৌরাত্ম্য। সেসব বাদ দিয়ে সিঙ্গল প্লেয়ার গেমের স্বর্ণযুগে ফিরে গেছে স্পেস মেরিন ২-এর গেম ডিজাইন, ফলাফল গেমটির বিক্রি গড়েছে বেশ কয়েকটি রেকর্ড।

 

বড় বাজেটের গেম ফ্লপ

এ বছর বেশ কয়েকটি মাল্টিপ্লেয়ার গেম চরম ফ্লপ করেছে। সুইসাইড স্কোয়াড : কিল দ্য জাস্টিস লীগ এবং কনকর্ড তার মধ্যে অন্যতম। সুইসাইড স্কোয়াড গেমটি নিয়ে বহুমুখী বিতর্ক হলেও শেষ পর্যন্ত গেম ডিজাইন এবং গেমপ্লের চরম ঘাটতির ফলে গেমাররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কনকর্ড তৈরিতে সময় লেগেছে প্রায় আট বছর, ব্যয় হয়েছে ৪০ কোটি ডলারেরও বেশি। এর পরও মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে নির্মাতা সনি গেমটি বাজার থেকে উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। স্কাল অ্যান্ড বোনস, অ্যাসাসিনস ক্রিড মিরাজ এবং স্টার ওয়ার্স আউটলজ—পর পর তিনটি ফ্লপ গেম বাজারে এনে একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় গেম নির্মাতা ইউবিসফটও বড়সড় লস দিয়েছে এ বছর। তাদের নতুন গেম অ্যাসাসিনস ক্রিড শ্যাডোসের ট্রেইলার নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। অ্যাক্টিভিশন প্রকাশ করেছে কল অব ডিউটি ব্ল্যাক অপস ৬, গেমটির সিঙ্গল প্লেয়ার ক্যাম্পেইন নিয়ে গেমাররা সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও মাল্টিপ্লেয়ারে প্রচুর মাইক্রোট্রানজেকশন থাকায় দ্রুত গেমটি জনপ্রিয়তা হারিয়েছে।

 

গেমারদের খরচ বেড়েছে

এ বছর সনি বাজারে এনেছে প্লেস্টেশন ৫ প্রো, যার মূল্য ৭০০ ডলার। বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান মন্দার মাঝে এমন চড়া মূল্যের গেমিং কনসোল বাজারে এনে সনি পড়েছে নিন্দার মুখে। অন্যদিকে পিসি গেমারদেরও বেড়েছে খরচ, চলনসই জিপিইউ কিনতে তাদের খরচ হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ ডলার। গেমের দামও বাড়ছে দ্রুত। অচিরেই নতুন গেমের দাম ৮০ থেকে ৯০ ডলার দাঁড়াবে ধারণা করছে গেমাররা। গেমের আকৃতিও প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ পিসি গেমের জন্য ১৫০ জিবি জায়গা হরহামেশাই প্রয়োজন হচ্ছে। তাই দ্রুতগতির ইন্টারনেটসেবা এবং বড়সড় এসএসডির জন্যও গেমারদের রাখতে হচ্ছে বাজেটের বড় অংশ।

 

মোবাইল গেমের বাজার প্রায় অপরিবর্তিত

বরাবরের মতোই রোব্লক্স, ফ্রি ফায়ার, মোবাইল লেজেন্ডস, মাইনক্রাফট এবং পাবজি মোবাইল ছিল স্মার্টফোনে সবচেয়ে জনপ্রিয় গেম। বেশ কিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটে গেম খেলার পরিমাণ কমেছে। তবে স্মার্টফোন গেম থেকে এ বছর নির্মাতারা আয় করেছেন ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। অর্থাৎ প্রতিটি গেমার এ বছর তূলনামূলক বেশী অর্থ গেমগুলোর পেছনে ব্যয় করেছেন। স্মার্টফোনে ক্যাজুয়াল, মাল্টিপ্লেয়ার শ্যুটার এবং বিল্ডিং স্যান্ডবক্স ছাড়া অন্য ঘরানার গেম কেন সফলতা পাচ্ছে না, সে বিষয় নিয়ে গেম নির্মাতা চিন্তিত। আগামী বছরগুলোতে হয়তো স্মার্টফোন গেমিং বাজার থেকে তাদের আয় আরো বাড়বে, কিন্তু নতুনত্বের আশা নেই।

 

বিশ্ব প্রযুক্তি বাজারের তথ্য সংগ্রহ ও সালতামামি লিখেছেন আশিক উল বারাত ও এস এম তাহমিদ

ফোন

ক্রেতাদের আস্থা আইফোনেই

স্মার্টফোন বাজারে অস্থিরতা

বছরের শুরুতে বিক্রি কিছুটা কম থাকলেও বছরের শেষে মন্দা কাটিয়ে উঠেছে স্মার্টফোন বাজার। মার্কিন বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতাদের ওপর। যেমন—এ বছরের সেরা ক্যামেরাসমৃদ্ধ স্মার্টফোন ভিভো এক্স ২০০ প্রো বিশ্বব্যাপী তেমন একটা সাড়া ফেলতে পারেনি। কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরযুক্ত স্মার্টফোন তেমন দেখা যায়নি, বেশির ভাগ চীনা নির্মাতার ফোনই ছিল মিডিয়াটেক প্রসেসরচালিত।

 

ট্যাবলেট বাজারে হতাশা

গুগল আবারও ঘোষণা দিয়েছে, তারা অ্যানড্রয়েড ট্যাবলেট নিয়ে কাজ করবে না। দোদুল্যমান অ্যানড্রয়েড ট্যাবলেট বাজারে গুগল কখনোই শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেনি, স্যামসাং এবং লেনোভোও বিক্রি কমেছে এ বছর। যারা ট্যাবলেট ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে আইপ্যাড ও অ্যামাজন ফায়ারের জনপ্রিয়তা রয়েছে অপরিবর্তিত।

 

অপারেটিং সিস্টেম অপরিবর্তিত

আইওএস ১৮ এবং অ্যানড্রয়েড ১৫, দুটিই ব্যবহারকারীদের তেমন নতুনত্ব দিতে পারেনি। দুটি নির্মাতাই জোর দিয়েছে এআই ফিচারের ওপর; যেমন—সরাসরি ডিভাইসেই ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট চালনা, ট্রান্সলেশন করা, ছবি তৈরি অথবা লেখার সামারি তৈরির মতো ফিচার ব্যবহারকারীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার। অ্যাপল তাদের নিজস্ব অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স এখনো পুরোদস্তুর চালু করতে পারেনি, তা নিয়ে প্রচুর সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন ফোরামে।

 

মানসম্মত ভিডিওর কদর বেড়েছে

এ বছর ছবি নয়, স্মার্টফোন ক্রেতারা ভিডিওর ওপর জোর দিয়েছে বেশি। স্ন্যাপচ্যাট ও টিকটকের পাশাপাশি ভিডিও কলের জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সেলফি ক্যামেরার মানের ওপরও অনেকটা নির্ভর করেছে ফোনগুলোর জনপ্রিয়তা। প্রচুর স্মার্টফোনের মূল ক্যামেরার চেয়ে আলট্রাওয়াইড ও জুম ক্যামেরার মান খারাপ হওয়ায় ভিডিওর মধ্যে জুম পরিবর্তন করলে তা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। সমস্যাটিকে ‘ডিল ব্রেকার’ বলেছে বেশির ভাগ ক্রেতা।

 

♦ বিশ্ব প্রযুক্তি বাজারের তথ্য সংগ্রহ ও সালতামামি লিখেছেন আশিক উল বারাত ও এস এম তাহমিদ

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

গেম

লেক ডিস্ট্রিক্ট রহস্য

শাহরিয়ার মোস্তফা
শাহরিয়ার মোস্তফা
শেয়ার
লেক ডিস্ট্রিক্ট রহস্য

বাস্তবেই ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্যের উইন্ডস্কেলে অবস্থিত পারমাণবিক চুল্লিতে ঘটেছিল এক প্রলয়ংকরী দুর্ঘটনা। বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল তেজস্ক্রিয় পদার্থ। দুর্ঘটনাটির ওপর ভিত্তি করেই অ্যাটমফলের কাহিনি সাজানো হয়েছে,যদিও এর সঙ্গে বাস্তবতার মিল সামান্যই।

অ্যাটমফলের পটভূমি ১৯৬০-এর দশকের উত্তর ইংল্যান্ডের লেক ডিস্ট্রিক্ট অঞ্চল।

তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে পুরো এলাকার গাছপালা ও প্রাণীর মধ্যে দেখা দিয়েছে অদ্ভুত সব মিউটেশন, বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে বিস্তীর্ণ জায়গা। সরকারি সিদ্ধান্তে একে কোয়ারেন্টিন অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। লেক ডিস্ট্রিক্ট এখন শক্তিশালী মিউট্যান্ট প্রাণী, উন্মাদ কাল্টের সদস্য, পরীক্ষামূলক রোবট ও অদ্ভুত সব প্রযুক্তির আস্তানা। পাশাপাশি অঞ্চলটির নিরাপত্তায় থাকা সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও আছে।
মূল্যবান প্রযুক্তির সন্ধানে আসা ভাগ্য অন্বেষণকারীরও অভাব নেই।

ফার্স পারসন সারভাইভাল অ্যাকশন ঘরানার গেম অ্যাটমফল। এর মূল চরিত্রের কোনো নাম-পরিচয় নেই। অতীতের সব স্মৃতি কোনো এক অজানা কারণে হারিয়ে ফেলেছে সে।

জ্ঞান ফেরার পর সে নিজেকে লেক ডিস্ট্রিক্টে আবিষ্কার করে। এখানে কী ঘটেছিল, তার সঙ্গে সম্পর্কই বা কী, এ রহস্যের জট ছাড়ানোর মাধ্যমেই কাহিনি এগিয়ে যাবে।

পটভূমি ও ঘরানায় গেমটির সঙ্গে মিল হওয়ার কথা স্টকার বা মেট্রো সিরিজের। অথচ গেমপ্লের দিক থেকে এর সঙ্গে বরং ফার ক্রাই সিরিজেরই মিল বেশি। গেমারের মূল শত্রু এক ডুমস ডে কাল্ট, তাদের বিভিন্ন আউটপোস্ট দখল করা গেমের বড় অংশ।

এ ছাড়া গেমটিতে অস্ত্রপাতি ও রসদ সংগ্রহের ওপর খুব জোর দিয়েও খেলতে হবে না। শত্রুদের পরাস্ত করাও খুব কঠিন নয়। অন্যান্য সারভাইভাল গেমের মতো লুকিয়ে থেকে শত্রুদের চোখ ফাঁকি দেওয়ার তেমন প্রয়োজন নেই।

অ্যাটমফলের গেমপ্লে পুরোপুরি গেমারের স্বাধীনতার দিকে লক্ষ রেখে সাজানো হয়েছে। নিজের ইচ্ছামতো যেমন পুরো এলাকা ঘুরে বেড়ানো যাবে, কোন মিশন গেমার খেলবে বা সেটা শেষ করবে কিভাবে, তার কোনো কিছুতেই বাধ্যবাধকতা নেই। গেমারকে মিশন দেওয়ার সময়েও চরিত্রগুলো সরাসরি কোনো নির্দেশনা দেবে না, প্রতিটি মিশনই যেন ধাঁধার সমাধান করা।

বিভিন্ন রসদ জোগাড় করা এবং নতুন সব অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি তৈরি করা গেমপ্লের অন্যতম অংশ। পাশাপাশি নিজেকে আরো শক্তিশালী করতে মূল চরিত্রের স্কিল বাড়াতে হবে। গেমটিতে স্ট্যামিনা সিস্টেম দেওয়া হয়নি, এর বদলে আছে হার্টবিট সিস্টেম। দৌড়ালে বা দেয়াল বেয়ে ওঠার পর হৃত্স্পন্দন বেড়ে যাবে গেমারের। সে সময় লক্ষ্যভেদ করা হবে যেমন কঠিন, তেমনই দীর্ঘ সময় হার্টবিট বেশি থাকলে শরীরের ক্ষতিও হতে পারে।

গেমটির গ্রাফিক মনোমুগ্ধকর। সবুজ বনভূমি দেখে বিশ্বাস করা কঠিন, এর মধ্যেই ভয়ংকর বিপদ লুকিয়ে আছে। তবে যারা ফলআউট  বা স্টকারের মতো গেমপ্লে খুঁজছেন তাঁদের অ্যাটমফল ভালো না-ও লাগতে পারে।

 

বয়স : শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এই গেম।
খেলতে লাগবে : ইন্টেল কোরআই ৫ ৯৪০০এফ অথবা এএমডি রাইজেন ৫ ২৬০০ প্রসেসর, ১৬জিবি র‌্যাম, এনভিডিয়া আরটিএক্স ২০৬০ অথবা রেডিওন আরএক্স ৫৮০ জিপিইউ এবং ৬০ জিবি জায়গা।
মন্তব্য

সার্ভারের জন্য আলিবাবার নতুন প্রসেসর

    আলিবাবার গবেষকদল তৈরি করেছে নতুন একটি প্রসেসর। আরআইএসসি-ভি বা রিস্ক-ফাইভ আর্কিটেকচারে তৈরি প্রসেসরগুলো সার্ভারে ব্যবহার উপযোগী। শুয়ানটাই সি৯৩০ প্রসেসরের বিস্তারিত জানাচ্ছেন টি এইচ মাহির
শেয়ার
সার্ভারের জন্য আলিবাবার নতুন প্রসেসর
গবেষকের হাতে শুয়ানটাই সি ৯৩০ প্রসেসর। ছবি : সংগৃহীত

শুয়ানটাই প্রসেসরটি তৈরিতে গবেষণা চালিয়েছে আলিবাবার দামো একাডেমি। ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন এই প্রযুক্তিপণ্য উন্মোচিত হয়েছে বেইজিংয়ের এক প্রযুক্তি প্রদর্শনীতে। শুয়ানটাই সি৯৩০ নামের এই সিপিইউটির ডিজাইনের পাশাপাশি তৈরিও করছে আলিবাবারইনিজস্ব সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট টি-হেড। অর্থাৎ সি৯৩০-এর মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তিতে পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমানোতে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল চীন।

ওয়েব সার্ভার, ডেটা সেন্টার এবং প্রাতিষ্ঠানিক ওয়ার্কস্টেশন কম্পিউটিংয়ে ব্যবহারের জন্য বানানো হয়েছে এই প্রসেসর। প্রযুক্তিবিদদের অভিমত, চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নানা প্রযুক্তিগত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চীনের লড়াইয়ের বড় অংশ হতে যাচ্ছে এটি। এর মধ্যেই আলিবাবার এই প্রসেসর চীনা প্রযুক্তি নির্মাতা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।

রিডিইউসড ইনস্ট্রাকশন সেট কম্পিউটিং বা রিস্ক ঘরানার সিপিইউ আর্কিটেকচারের মধ্যে আছে রিস্ক-ফাইভ।

এটি পুরোপুরি ওপেন সোর্স ইনস্ট্রাকশন সেট আর্কিটেকচার, ফলে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্যাটেন্ট বা লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই। বহুল ব্যবহৃত দুই প্রসেসর আর্কিটেকচার, ইন্টেলের এক্স৮৬ ও এআরএমের বিকল্প এটি। কোনো ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা না থাকায় রিস্ক-ফাইভ প্রসেসর তৈরির ওপর কোনো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়, যা এআরএম বা এক্স৮৬-এর বেলায় দেওয়া সম্ভব। এ কারণেই চীনা নির্মাতারা এটি ব্যবহারে ঝুঁকেছেন।
এ ধরনের প্রসেসরগুলো সাধারণত এমবেডেড সিস্টেম, ক্লাউড কম্পিউটিং, এআই, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়। প্রসেসরগুলো ৩২, ৬৪ ও ১২৮ বিট ইনস্ট্রাকশন সেটের হয়ে থাকে। ফলে রিস্ক-ফাইভ প্রসেসরগুলো খুবই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। এই আর্কিটেকচারের প্রসেসর তৈরি করছে বেশ কিছু নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ডেটা সেন্টার, স্মার্ট গাড়ি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে এসব প্রসেসর।

বহুদিন ধরেই আলিবাবা কাজ করছে রিস্ক-ফাইভ প্রসেসর তৈরিতে। এর আগে ২০১৯ সালে সি৯১০ এবং ২০২৩ সালে সি৯২০ নামের দুটি প্রসেসর তারা বাজারে এনেছে। নতুন সি৯৩০ প্রসেসরটি এর মধ্যেই বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতার কাছে পাঠিয়েছে আলিবাবা। এসব প্রতিষ্ঠানের অভিমত, উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসরটিকে তারা ইন্টেল জেনন এবং এএমডি এপিক সিপিইউয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। তবে এ ছাড়া কোনো পারফরম্যান্স বেঞ্চমার্ক পাওয়া যায়নি। আলিবাবার দাবি, স্পেকিন্ট২০০৬ বেঞ্চমার্কে সি৯৩০ স্কোর প্রতি গিগাহার্জে ১৫ পয়েন্ট স্কোর করেছে। এখন দেখার পালা আরো আধুনিক বেঞ্চমার্কে প্রসেসরটির পারফরম্যান্স দেখার।

চীনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে এআই ও ক্লাউড অবকাঠামো উন্নয়ন করতে ৩৮০ বিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে চীনা সরকার। এর বড় অংশ আলিবাবা বিনিয়োগ করেছে সার্ভারের জন্য প্রসেসর তৈরির গবেষণায়। হ্যাংজুভিত্তিক স্টার্ট-আপ ডিপসিকের তৈরি উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন এআই মডেলগুলোর জনপ্রিয়তায় চীনে এআই সার্ভারের চাহিদা বাড়ছে দ্রুত। এই চাহিদা মেটাতে নতুন প্রসেসরগুলো গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে আলিবাবা। কয়েক দশক ধরেই এআইশিল্পে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান। চীনজুড়ে আরো ডেটা সেন্টার নির্মাণ করবে তারা। ডিপসিক যেমন কম খরচে উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন এআই সেবার মাধ্যমে ওপেনএআইয়ের একচেটিয়া আধিপত্য ভেঙে দিয়েছে, তেমনি রিস্ক-ফাইভ প্রসেসর এআইশিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাবে, এটাই প্রতিষ্ঠানটির আশা।

চীনা প্রসেসরগুলো ইন্টেলের আধিপত্যকে চোখ-রাঙানি দিচ্ছে। এরই মধ্যে চীন সরকার প্রতিটি কম্পিউটারে রিস্ক-ফাইভ প্রসেসর ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা জারি করেছে। বিশ্বব্যাপী এই প্রসেসরগুলোর চালান ২০৩০ সালের মধ্যে ১৬.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে ধারণা করে হচ্ছে, ২০২৩ সালে যা ছিল মাত্র ১.৩ বিলিয়ন ডলার। আগামী দিনে আর্ম ও এক্স৮৬-এর পাশাপাশি বাজারে রিস্ক-ফাইভভিত্তিক কম্পিউটারও জনপ্রিয় হবে বলেই ধারণা করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।

 

 

মন্তব্য

রেকর্ড গড়েছে ইলেভেন১১ বটনেট

    সাইবার হামলায় ব্যবহৃত নেটওয়ার্ক ‘বটনেট’। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বটনেটভিত্তিক হামলার ঘটনা ঘটে গত মাসের শেষ সপ্তাহে, যুক্তরাষ্ট্রে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আশিক উল বারাত
শেয়ার
রেকর্ড গড়েছে ইলেভেন১১ বটনেট
বটনেটের প্রতীকি ছবি। ছবি : সংগৃহীত

ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রায় ৩০ হাজার ওয়েবক্যাম ও ভিডিও রেকর্ডার লক্ষ্য করে বিশাল এক সাইবার হামলা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। মোট ৮৬ হাজার ইন্টারনেট অব থিংস ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ইলেভেন১১’‌ নামের একটি ম্যালওয়্যার। হ্যাকড ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ডেটা ট্রাফিক তৈরি করে বেশ কিছু ওয়েবসেবাদানকারী সার্ভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয় এই হামলার হোতারা। মূলত যোগাযোগ ও গেম হোস্টিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভার লক্ষ্য করেই হামলাটি চালানো হয়।

এর ফলে সেসব ওয়েবসাইট ও অনলাইন সার্ভিসগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ব্যবহারকারীদের অ্যাকসেস বন্ধ হয়ে যায়।

নোকিয়ার ডিপফিল্ড ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম এই হামলার তদন্ত করেছে। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে ইলেভেন১১বট নামের নতুন এক বটনেট ম্যালওয়্যার। এই ম্যালওয়্যার  ইন্টারনেটে সংযুক্ত বিভিন্ন ধরনের স্মার্ট ডিভাইস, যেমনস্মার্ট লাইট, স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট বা স্মার্ট ফ্রিজের মতো ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তৈরি করে নিজস্ব নেটওয়ার্ক, যার নাম বটনেট।

এই নেটওয়ার্কের কাজ ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস (ডিডিওএস) ঘরানার সাইবার হামলা চালানো। নোকিয়া গবেষক জেরোম মেয়ার জানান, এই বটনেটে থাকা বেশির ভাগ ডিভাইসের ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ঠিকানা আগে কখনো ডিডিওএস আক্রমণে যুক্ত ছিল না। অর্থাৎ এই বটনেট একেবারে নতুন।

ওয়েবসেবা ব্যবহার ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি এই সাইবার হামলার কারণে লক্ষাধিক ব্যবহারকারী ইন্টারনেট সংযোগেও নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।

অকার্যকর হয়ে যাওয়া ওয়েবসাইট ও সেবাগুলো দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর মারাত্মক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, যার মূল্য অন্তত কয়েক মিলিয়ন ডলার। নোকিয়ার গবেষকদলের দাবি, এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিডিওএস হামলা। হামলার শিকার সার্ভারগুলোর প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে ছয় টেরাবিট তথ্য সামলাতে হয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারির এক হামলায় সর্বোচ্চ ৫.৬ টেরাবিট পার সেকেন্ড গতিতে তথ্য সঞ্চালনের রেকর্ড ছিল।

রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ইরান ও চীনের হ্যাকাররা এ ধরনের হামলা বেশি চালায়। সাইবার নিরাপত্তা গবেষকরা বলছেন, এই বটনেটটির সর্বাধিক আইপি ঠিকানা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে (২৪.৪%)। পাশাপাশি আছে তাইওয়ান (১৭.৭%) এবং যুক্তরাজ্যে (৬.৫%)। সাধারণত হামলার শিকার বেশি হয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।

বাংলাদেশেও বেশ কয়েকবার ডিডিওএস হামলা চালিয়েছে সাইবার অপরাধীরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০২৩ সালের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সাইবার আক্রমণ। এ ছাড়া স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি নামের সরকারি অ্যাপের কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্য ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন সাইবার আক্রমণ চালানো হয়। সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশে সাইবার হামলার সংখ্যা বেড়ে ৩৩৭-এ পৌঁছেছে, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছিল ১৬৪। এই বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ সাইবার ঝুঁকির শীর্ষ দেশগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

 

মন্তব্য

ডিজিটাল চিত্রকর্মের শিল্পী হতে চাইলে...

    ডিজিটাল চিত্রকর্ম থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফটোকার্ড ডিজাইন—ডিজিটাল শিল্পীদের কাজের শেষ নেই। ডিজিটাল শিল্পকর্মে ব্যবহৃত হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং কিভাবে ডিজিটাল মাধ্যমে শিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা যায়, তার বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ
শেয়ার
ডিজিটাল চিত্রকর্মের শিল্পী হতে চাইলে...
গ্রাফিকস ট্যাবলেটে ছবি আঁকছেন শিল্পী। ছবি : সংগৃহীত

কাজের সুবিধার্থে শিল্পীদের পছন্দ ডিজিটাল ক্যানভাস। প্রায় ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পিউটার গ্রাফিকস, এখন শৌখিন শিল্পীরাও আঁকাআঁকির জন্য স্কেচবই ফেলে বেছে নিচ্ছেন ট্যাবলেট। ডিজিটাল শিল্পী হিসেবে ক্যারিয়ারও গড়ছেন অনেকে। 

ডিজিটাল শিল্পকর্মের আছে বেশ কয়েকটি রকম ফের।

মোটাদাগে একে দুই ধরনে ভাগ করা যায়, টুডি ও থ্রিডি। টুডি আর্টের তুলনায় থ্রিডি কাজ শেখা বেশ কঠিন, শক্তিশালী হার্ডওয়্যারের প্রয়োজনীয়তাও বেশি। মূলত তিন ধরনের আর্ট কাজে লাগিয়ে তৈরি হয় ডিজিটাল কোলাজ, এনিমেশন, কম্পিউটার জেনারেটেড গ্রাফিকস থেকে শুরু করে অনেক ধরনের ভার্চুয়াল শিল্পকর্ম। এর মধ্যে আছে

 

ভেক্টর ইলাস্ট্রেশন : সরল জ্যামিতিক আকৃতি ব্যবহার করে চিত্রকর্ম বা পটভূমি তৈরি করাকেই বলা হয় ভেক্টর ইলাস্ট্রেশন বা আর্ট।

বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিক ডিজাইন তৈরিতে এর ব্যবহার বেশি, শিল্পকর্ম সৃষ্টিতেও ভেক্টর আর্টের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। মার্কেটিং ও বিজ্ঞাপন তৈরিতে ভেক্টর আর্ট বহুল ব্যবহৃত। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য ফটোকার্ড তৈরি এবং ওয়েবসাইট ডিজাইনেও দৃষ্টিনন্দন ভেক্টর আর্ট ব্যবহৃত হয়। ভেক্টর আর্টের একটি বড় সুবিধা, ছবির মান নষ্ট না করেই ইচ্ছামতো ছোট বা বড় করা যায়।
ফলে ব্যানার বা পোস্টার তৈরিতে ভেক্টর আর্ট অপরিহার্য। সফটওয়্যার ও ওয়েবসাইটের ইন্টারফেস ও আইকন তৈরিতেও ভেক্টর আর্ট সমাদৃত।    

ডিজিটাল পেইন্টিং : রংতুলি আর ক্যানভাসের ডিজিটাল সংস্করণ ব্যবহার করে চিত্রকর্ম তৈরি করেন অনেক শিল্পী। জলরং, তেল বা রেখাচিত্রসব কিছুই করা যায় ডিজিটালি। ডিজিটাল ক্যানভাসে আঁকার বড় সুবিধা হলো ভুল ঠিক করা সহজ, পাশাপাশি রং বা ক্যানভাস কেনার প্রয়োজনীয়তা নেই।

শিল্পকর্মগুলো সংরক্ষণেও বাড়তি জায়গার দরকার হয় না। ফলে শিল্পীদের মধ্যে ডিজিটাল পেইন্টিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ওয়েবসাইট বা অন্যান্য ভার্চুয়াল স্পেস সাজানোর পাশাপাশি অনেক শিল্পী ডিজিটাল পেইন্টিং বা স্কেচের প্রিন্টও বিক্রি করেন। বাস্তব ক্যানভাসে আঁকার দক্ষতা বাড়ানোর জন্যও প্র্যাকটিস করতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করেন কেউ কেউ।

থ্রিডি মডেলিং : থ্রিডি আর্টের প্রথম ধাপ মডেল তৈরি। মডেলের সঙ্গে ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট জুড়ে তৈরি হয় সব ধরনের থ্রিডি গ্রাফিকস, সেটা হতে পারে খুব সাধারণ প্রডাক্ট শোকেস থেকে শুরু করে বিলিয়ন ডলার বাজেটের ভিডিও গেম। ভাস্কর্য তৈরি আর থ্রিডি মডেলিংয়ের কার্যপ্রণালী অনেকটা একইরকম। প্রতিটি মডেল শুরু হয় একটি কিউব বা স্ফিয়ার থেকে। এর সঙ্গে নতুন অংশ জোড়া দিয়ে অথবা সেটা টেনে নতুন আকার দিয়ে ধীরে ধীরে তৈরি করা হয় পূর্ণাঙ্গ মডেল। একে বলা হয় মেশ বা কার্ভ মডেলিং। ভেক্টর আর্টের মতো থ্রিডি মডেলও প্রয়োজন অনুযায়ী ছোট-বড় করা যায়। বেশির ভাগ থ্রিডি মডেল তৈরিতে রেফারেন্স ছবি ব্যবহার করেন শিল্পী, তবে এখন থ্রিডি স্ক্যানিং প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে প্রাথমিক একটি মডেল তৈরি করে এরপর সেটি পরিমার্জন করার মাধ্যমে মডেলিং করাই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

 

সফটওয়্যার

ওয়েবসেবা ক্যানভা টুডি গ্রাফিকস শিল্পীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষত সফটওয়্যার ইন্টারফেস, ওয়েবসাইট ডিজাইন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য ফটোকার্ড তৈরি এবং নানা বিজ্ঞাপন তৈরিতে এটি বহুল ব্যবহৃত। ভেক্টর গ্রাফিকস তৈরির জন্য ইলাস্ট্রেটর ও ইংকস্কেপ, থ্রিডি মডেলিংয়ের জন্য ব্লেন্ডার ও অটোডেস্ক মায়া এবং ডিজিটাল পেইন্টিং করার জন্য আডবি ফটোশপ, ক্রিতা ও প্রোক্রিয়েটের মতো সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাফিনিটির তৈরি ডিজাইনার, ফটো ও পাবলিশার সফটওয়্যারগুলো ধীরে ধীরে আডবির সফটওয়্যারের বিকল্প হয়ে উঠছে।

 

হার্ডওয়্যার

ডিজিটাল আর্ট নিয়ে কাজ করার জন্য কিছুটা শক্তিশালী হার্ডওয়্যার প্রয়োজন। টুডি আর্ট করতে চাইলে প্রয়োজন গ্রাফিকস ট্যাবলেট। ডিজিটাল ক্যানভাসে আঁকার জন্য এই হার্ডওয়্যারে আছে টাচপ্যাড ও ডিজিটাল কলম। ডিজিটাল পেইন্টিংয়ের জন্য গ্রাফিকস ট্যাবলেট অপরিহার্য, ভেক্টর ইলাস্ট্রেশন করার জন্যও এটি খুবই কাজের। গ্রাফিকস ট্যাবলেট বাজারে সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড ওয়াকম, তবে এ প্রতিষ্ঠানের হার্ডওয়্যারের মূল্য প্রায় সাত হাজার টাকা থেকে শুরু। কম বাজেটে কাজ শুরু করতে চাইলে হুইয়নের গ্রাফিকস ট্যাবলেটগুলোও খুবই কাজের, দামও কম, আড়াই হাজার টাকা থেকে শুরু।

প্রতিটি ডিজিটাল আর্ট সফটওয়্যার চালনার জন্য অনেক র‌্যাম এবং শক্তিশালী প্রসেসর প্রয়োজন। তাই অন্তত ৬ কোরের আধুনিক প্রসেসর এবং ১৬ জিবি র‌্যাম পিসিতে থাকতে হবে। যারা থ্রিডি মডেলিং নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী তাদের পিসিতে আলাদা গ্রাফিকস কার্ডও প্রয়োজন।

আঁকাআঁকির জন্য আইপ্যাড খুবই জনপ্রিয়। উজ্জ্বল ও কালার অ্যাকুরেট ডিসপ্লে, নিখুঁত ডিজিটাল পেন এবং শক্তিশালী হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি আডবি ও অ্যাফিনিটি দুই প্রতিষ্ঠানের পুরো সফটওয়্যার স্যুট এবং প্রোক্রিয়েটের মতো চমৎকার সফটওয়্যারের কারণেই জনপ্রিয় আইপ্যাড ও অ্যাপল পেনসিল।

 

আর্ট তুলে ধরার উপায়

ডিজিটাল শিল্পকর্ম তুলে ধরার জন্য পোর্টফোলিও তৈরি করা জরুরি। ওয়েবসাইট ডিজাইন বা বিজ্ঞাপনের জন্য ভেক্টর ইলাস্ট্রেশনের পোর্টফোলিও তৈরিতে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম বিহান্স। নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি করেও কাজের শোকেস তৈরি করা যেতে পারে। ডিজিটাল পেইন্টিংয়ের জন্য বিহান্সের পাশাপাশি আর্টস্টেশনও জনপ্রিয়। যারা শুধু নির্দিষ্ট কাজের জন্য নয়, বরং নিজের শৈল্পিকতা তুলে ধরতে চায় তাদের জন্য আর্টস্টেশন আদর্শ। থ্রিডি মডেলিংয়ের জন্য পোর্টফোলিও তৈরি একটু জটিল। মডেলের রেন্ডার করা ছবি বিহান্স বা আর্টস্টেশনে আপলোড করার পাশাপাশি মডেল তৈরি এবং তার শোকেসের ওপর তৈরি ছোট ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করা উচিত। অনেক থ্রিডি আর্টিস্ট কার্বনমেড ওয়েবসাইটটিতে মডেল আপলোড করেন। পোর্টফোলিও তৈরির পর অবশ্যই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা উচিত। পিন্টারেস্ট বা রেডিটের মতো ফোরামেও আপলোড করে অনেকে।

 

কাজের ধরন

বিজ্ঞাপন সংস্থা, পণ্য প্রস্তুতকারী ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, প্রকাশনী থেকে শুরু করে গণমাধ্যমপ্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই আছে ডিজিটাল আর্টিস্টের প্রয়োজনীয়তা। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স কাজের প্ল্যাটফর্মেও ডিজিটাল আর্টিস্টদের জন্য কাজের অভাব নেই। সব ক্ষেত্রেই পোর্টফোলিও তৈরি সবচেয়ে জরুরি। ভেক্টর ইলাস্ট্রেশনের কাজ অপেক্ষাকৃত সহজ, ব্যবহারের ক্ষেত্রও অনেক।

ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইনারদের কদর প্রতিনিয়ত বাড়ছে, ওয়েবসাইটের জন্য থিম তৈরিতেও ভেক্টর ইলাস্ট্রেশন প্রয়োজন। থ্রিডি মডেল ব্যবহার করে ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস এবং ভিডিও গেম তৈরিত হয়। তবে এ ধরনের কাজের সুযোগ কিছুটা কম। বেশির ভাগ সময় থ্রিডি মডেল তৈরির জন্য খণ্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া হয়, অর্থাৎ ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মেই কাজ পাওয়া যাবে বেশি। ডিজিটাল পেইন্টিংয়ের বিক্রি অথবা পেইন্টিংয়ের জন্য কমিশন খুঁজে পাওয়ার সেরা মাধ্যমও অনলাইন ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্ম। ডিজিটাল আর্ট বিক্রির জন্য বেশ কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে। সেখানে পোর্টফোলিওর সব ডিজাইন আপলোড করলে ক্রেতারা যেকোনো সময় কিনতে পারবে। তবে বেশির ভাগ শিল্পী একে উপরি রোজগারের পথ হিসেবে ব্যবহার করেন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ