সফর অবস্থায় রোজা ভাঙার বিধান

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
শেয়ার
সফর অবস্থায় রোজা ভাঙার বিধান

মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে মুসাফিরের জন্য রোজা না রাখা জায়েজ। ওই মুসাফির রোজা রাখতে সক্ষম হোক অথবা অক্ষম, রোজা তার জন্য কষ্টদায়ক হোক অথবা না হোক—সর্বাবস্থায় তার জন্য রোজা না রাখা বৈধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘...কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে সে অন্য কোনো দিন (রোজা) গণনা করবে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৪)

সফরে রোজা না রাখা বৈধ হওয়ার শর্ত হলো, সফর পরিমাণ মতো দূরত্বের হতে হবে।

শরয়ি সফরের দূরত্ব ৪৮ মাইল তথা ৭৭-৭৮ কিলোমিটার।যদি কোনো ব্যক্তি সফরে বা ভ্রমণে থাকা অবস্থায়ও রোজা পালন করেন, সেটা উত্তম। তবে বেশি কষ্ট হলে বা ইচ্ছা করলে তিনি রোজা ছাড়তে পারবেন। এই রোজা পরে সুবিধামতো নিকটতম সময়ে কাজা আদায় করে নিতে হবে।
 

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) রমজান মাসে মদিনা থেকে (মক্কা অভিযানে) রওনা হন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১০ হাজার সাহাবি। তখন হিজরত করে চলে আসার সাড়ে আট বছর পার হয়ে গিয়েছিল। তিনি ও তাঁর সঙ্গী মুসলমানরা রোজা অবস্থায় মক্কা অভিমুখে রওনা হন।

অবশেষে তিনি যখন উসফান ও কুদাইদ স্থানদ্বয়ের মধ্যবর্তী কাদিদ নামক জায়গায় ঝরনার কাছে পৌঁছলেন তখন তিনি ও তাঁর সঙ্গী মুসলমানরা ইফতার করেন। (বুখারি, হাদিস : ৪২৭৬)

স্মরণ রাখতে হবে যে মুসাফিরের জন্য সফর অবস্থায় দিনের শুরু থেকেই রোজা না রাখার অনুমতি আছে। সুতরাং কোনো মুসাফির রোজা না রাখার ইচ্ছা করলে রোজা না রাখা অবস্থায় দিন শুরু করবে। কিন্তু যদি এই ছাড়ের ওপর আমল না করে রোজা শুরু করে দেয়, তাহলে বিনা ওজরে তার জন্য তা ভঙ্গ করা জায়েজ নয়; বরং ওই রোজা পুরো করা তার ওপর জরুরি হয়ে যায়। এতদসত্ত্বেও কেউ যদি এ রোজা ভেঙে ফেলে তাহলে এর কারণে তার ওপর কাফফারা ওয়াজিব হবে না।

পরবর্তী সময়ে শুধু কাজা করে নিলেই চলবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা : ২/৪৩২, কিতাবুল আছল : ২/২০৬, ফাতহুল কাদিস : ২/২৮৪)

মাসআলা : হানাফি মাজহাব মতে, সফর অবস্থায় নিয়ত করে রোজা রাখা শুরু করলে, তা ভাঙা জায়েজ নয়। কেউ ভেঙে ফেললে গুনাহগার হবে। তবে কাফফারা দিতে হবে না। শুধু কাজা করবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/৪৩১)

মাসআলা : যে ব্যক্তি মুকিম (স্থায়ী বাসিন্দা) অবস্থায় সাহরি খেয়ে সফর শুরু করেছেন, তাঁর জন্য সফরের অজুহাতে রোজা ভাঙা জায়েজ নয়। ভাঙলে গুনাহগার হবেন, তবে শুধু রোজার কাজা ওয়াজিব হবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০৬)

মাসআলা : সফর অবস্থায় রোজা রাখা জায়েজ এবং সওয়াবও আছে। তবে যদি না রাখে, তাহলে সেটা বৈধ। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৩/৭৩)

এক দিনের ভ্রমণেও কি রোজা রাখা যায়?

প্রশ্ন : এক দিনের ভ্রমণের জন্যও কি রোজা না রাখতে পারবে?

উত্তর : যদি ৪৮ মাইলের ভ্রমণ হয়, তখন রোজা ভাঙা জায়েজ আছে। সেটি এক দিনের ভ্রমণ হলেও। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৭৩, রাদ্দুল মুহতার : ২/১০৮)

১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য সফরে রোজার বিধান

যদি রাস্তার মধ্যে ১৫ দিন থাকার নিয়তে অবস্থান করে, তাহলে আর রোজা ভাঙা জায়েজ নেই। কেননা শরিয়তের মধ্যে এখন সে মুসাফির নয়। ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য সফর করলে সফরকারী মুকিম হয়ে যায়। সুতরাং যদি ১৫ দিনের কম অবস্থান করার নিয়ত করে সফর করে থাকে, তাহলে রোজা না রাখা জায়েজ আছে। এই রোজাগুলো পরে কাজা করে নেবে। (বেহেশতি জেওর : ৩/১৯, শামি : ২/১৬৮)

দ্বিপ্রহরের আগে ঘরে পৌঁছে যাওয়া

কারো ভ্রমণে রোজা না রাখার নিয়ত ছিল, কিন্তু দ্বিপ্রহরের এক ঘণ্টা আগেই স্বীয় ঘরে পৌঁছে গেল, তাহলে তখন রোজার নিয়ত করে নেবে। (বেহেশতি জেওর : ৩/১৯, হিদায়া : ১/২০৩)

সফরে তীব্র গরম হওয়ায় রোজা ভেঙে ফেলা

প্রশ্ন : যদি কোনো ব্যক্তি রমজান মাসে এ ধরনের ভ্রমণের সম্মুখীন হয়, যে সফরের দ্বারা শরিয়ত অনুযায়ী মুসাফির হয় না। এ কারণে রোজা অবস্থায় ভ্রমণ করে আর দ্বিপ্রহরে মারাত্মক রোদ ও তীব্র গরম হওয়ায় অসহ্য হয়ে রোজা ভেঙে দিয়েছে, তাহলে তার ওপর কাজা ওয়াজিব হবে, নাকি কাফফারাও আবশ্যক হবে?

উত্তর : এ অবস্থায় এই ব্যক্তির ওপর কাফফারা আবশ্যক হবে না। শুধু কাজা আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৪৪, রাদ্দুল মুহতার : ২/১৫৮)

তৃষ্ণার কষ্ট অথবা সফরে রোজা ভেঙে ফেলা

প্রশ্ন: রোজাদার ব্যক্তি মারাত্মক তৃষ্ণার কারণে রোজা ভেঙে ফেলল অথবা ভ্রমণের মধ্যে রোজা ভেঙে ফেলল, তখন তার জন্য কী বিধান?

উত্তর : তৃষ্ণা যদি এত মারাত্মক হয় যে প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দেয় অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে এ অবস্থায় রোজার কাজা আবশ্যক। একইভাবে ভ্রমণের মধ্যে ভ্রমণের দিন রোজা ভাঙা উচিত নয়। কিন্তু যদি ভেঙে ফেলে তাহলে কাজা আবশ্যক হবে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৪০, রাদ্দুল মুহতার : ২/১৫৮)

সফরে ছুটে যাওয়া রোজার বিধান

সফর অবস্থায় ছুটে যাওয়া রোজা পরে কাজা করা আবশ্যক। আর যদি মৃত্যুর আগে কাজা না করে থাকে, তাহলে ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত করা আবশ্যক। শর্ত হলো, সম্পদ রেখে যাওয়া। আর যদি ভ্রমণ অবস্থায় মৃত্যু হয়ে থাকে অথবা মুকিম হয়ে মারা যায়; কিন্তু রোজা কাজা রাখার সময় পায়নি, তাহলে ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত আবশ্যক নয়। আর যদি কিছু রোজা কাজা রাখার সময় পায় তাহলে সে রোজাগুলোর কাজা আবশ্যক। আর যদি কাজা করতে না পারে, তাহলে সেসব দিনের ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত করা আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়াহ : ২/৩৪, শামি : ২/১৬০)

মাসআলা : যদি মুসাফির ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর অথবা অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পর কাজা আদায় করার মতো সময় না পায়, তাহলে তার কাজা আবশ্যক নয়। ভ্রমণ থেকে ফিরে অথবা অসুস্থ থেকে সুস্থ হওয়ার পর, যত দিন পায় তত দিনের কাজা আবশ্যক। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : ১/৩৮১)

রোজাদার মুসাফিরের ভ্রমণে মৃত্যু হয়ে যাওয়া

প্রশ্ন : এক ব্যক্তি রমজানে মুসাফির হলো। সে রোজা রাখেনি। সফরে তার মৃত্যু হয়ে গেল, তখন তার রোজার বিধান কী?

উত্তর : তার দায়িত্বে রোজার কাজা আবশ্যক নয় এবং ফিদিয়ার অসিয়তও আবশ্যক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৩২, দুররে মুখতার : ২/১৬০)
 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আজকের নামাজের সময়সূচি, ২৩ মার্চ ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ২৩ মার্চ ২০২৫

ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহরের সময় শুরু ১২টা ৯ মিনিট। 

আসরের সময় শুরু - ৪টা ২৮ মিনিট।

মাগরিব- ৬টা ১৪ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ২৮ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ৪৭ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ২ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৬টা ১০ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।
 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
প্রশ্ন-উত্তর

অজু ছুটে যাওয়ার পর লজ্জায় নামাজ না ছাড়লে গুনাহ হবে?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
অজু ছুটে যাওয়ার পর লজ্জায় নামাজ না ছাড়লে গুনাহ হবে?
প্রতীকী ছবি

প্রশ্ন : নামাজের মধ্যে অজু ভেঙে গেলে লজ্জায় নামাজ ত্যাগ না করলে কোন ধরনের গুনাহ হয়? এ গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য ইসলামে কোনো পন্থা আছে কি?

-সালাউদ্দীন, কিশোরগঞ্জ

উত্তর : নামাজের মধ্যে অজু ভেঙে গেলে নামাজ ত্যাগ না করলে বড় ধরনের গুনাহ হয়। বহু ওলামায়ে কিরাম বিনা অজুতে নামাজ পড়লে ঈমান চলে যাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে পতিত হলে নামাজ ছেড়ে দেবে। গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য বেশি মুসল্লিকে কষ্ট না দিয়ে বের হওয়া সম্ভব হলে বের হয়ে অজু করবে।

আবার নামাজে শামিল হবে। আর নামাজ শেষ হয়ে গেলে একাকী নামাজ পড়ে নেবে। বের হওয়া সম্ভব না হলে নামাজ ছেড়ে দিয়ে নিজ জায়গায় বসে থাকবে। (হিদায়া : ১/২৪৯, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ২/৩২৬)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ বসুন্ধরা, ঢাকা

মন্তব্য

যেসব কারণে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
যেসব কারণে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়

ইতিকাফকারীর জন্য বিশেষ কিছু নির্দেশনা ইসলামে দেওয়া আছে। আছে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় এবং বৈধ ও অবৈধ বিষয়। নিম্নে সেসব বিষয়ে আলোচনা করা হলো—

ইতিকাফকারীর জন্য যেসব কাজ করা জায়েজ :

ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদে পানাহার ও ঘুমানোর অনুমতি আছে। তবে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।

এ ব্যাপারে সব ইমামদের ঐকমত্য আছে। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত;  কেননা আল্লাহর প্রতি একাগ্রচিত্ত ও একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশের জন্য কম খাওয়া, কম ঘুমানো সহায়ক বলে বিবেচিত।

আর জরুরি কাজের জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়াও বৈধ। নিজ পরিবারের লোকদের বিদায় জানানোর জন্য বের হওয়া জায়েজ আছে।

তবে বিনা প্রয়োজনে বের না হওয়াই ভালো।

এ ছাড়া গোসল করা, চুল আঁচড়ানো, তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার, ভালো পোশাক পরা—এসবের  অনুমতি আছে। আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি মাসিক অবস্থায় নবী (সা.)-এর মাথার কেশ বিন্যাস করে দিতেন, যখন রাসুল (সা.) মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় থাকতেন, আয়েশা (রা.) তাঁর কক্ষে থাকা অবস্থায় রাসুল (সা.)  মাথার নাগাল পেতেন। (বুখারি, হাদিস : ২০৪৬)

ইতিকাফকারীর পরিবার তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে।

কেননা নবী (সা.)-এর স্ত্রীরা  ইতিকাফকালীন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। কিন্তু সাক্ষাৎ দীর্ঘ না হওয়া বাঞ্ছনীয়।

যে কাজ দ্বারা ইতিকাফ ভঙ্গ হয় :

ইতিকাফের স্থান থেকে ইসলামসম্মত প্রয়োজন বা স্বাভাবিক প্রয়োজন ছাড়া বের হয়ে গেলে তবে ইসলামসম্মত প্রয়োজন হলে মসজিদের বাইরে বের হওয়া যায়।

স্ত্রী সহবাস করলে, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক। ইচ্ছাকৃত হোক বা ভুলক্রমে হোক।

সহবাসের আনুষঙ্গি কাজ যেমন চুম্বন, আলিঙ্গন ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

তবে চুম্বন ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত না হলে ইতিকাফ বাতিল হবে না। তবে ইতিকাফ অবস্থায় এসব করা হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের যৌন মিলন করো না যখন তোমরা মসজিদে ইতিকাফে থাকো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

এ ছাড়া পাগল হয়ে গেলে, নারীদের হায়েজ-নেফাস হলে এবং কেউ ধর্মত্যাগী (মুরতাদ) হলে ইতিকাফ ভেঙে যায়।

মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান :

১.  ইতিকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার ইতিকাফ ভেঙে যাবে।

২.  আর ইতিকাফের স্থান থেকে যদি মানবীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য বের হয় তাহলে ইতিকাফ ভঙ্গ হবে না।

৩.  মসজিদে থেকে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব না হলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার অনুমতি আছে।

৪.  বাহক না থাকার কারণে ইতিকাফকারীকে যদি পানাহারের  প্রয়োাজনে  বাইরে যেতে হয় অথবা মসজিদে খাবার গ্রহণ করতে লজ্জা বোধ হয়, তাহলে এরূপ প্রয়োাজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে।

৫.  যে মসজিদে ইতিকাফে বসেছে সেখানে জুমার নামাজের ব্যবস্থা না থাকলে জুমার নামাজ আদায়ের প্রয়োজনে মসজিদ থেকে  বের হওয়া ওয়াজিব এবং আগেভাগেই রওনা হওয়া তার জন্য মুস্তাহাব।

৬.  ইসলামসমর্থিত ওজরের কারণে ইতিকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারে।

৭.  কোনো নেকির কাজ করার জন্য ইতিকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন রোগী দেখতে যাওয়া, জানাজায় উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘ইতিকাফকারীর জন্য সুন্নত হলো, রোগী দেখতে না যাওয়া, জানাজায় অংশ গ্রহণ না করা, স্ত্রী স্পর্শ না করা এবং সহবাস না করা এবং খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মসজিদ থেকে বের না হওয়া।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৭৩)

৮.  ইতিকাফ-বিরুদ্ধ কোনো কাজের জন্য ইতিকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, স্বামী-স্ত্রীর মিলন ইত্যাদি।

ইতিকাফকারীর জন্য যা যা মাকরুহ :

ইতিকাফ অবস্থায় চুপ থাকলে সওয়াব হয়, এই মনে করে চুপ থাকা মাকরুহে তাহরিমি। বিনা প্রয়োজনে পার্থিব কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া মাকরুহে তাহরিমি। যেমন কেনাবেচা করা ইত্যাদি। তবে একান্ত প্রয়োজনবশত, যেমন: ঘরে খাবার নেই এবং সে ছাড়া অন্য কোনো বিশ্বস্ত মানুষও নেই—এরূপ অবস্থায় মসজিদে মালপত্র উপস্থিত না করে কেনাবেচার চুক্তি করতে পারে।
 

মন্তব্য

আল্লাহর জিকিরে অন্তরের প্রশান্তি

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
শেয়ার
আল্লাহর জিকিরে অন্তরের প্রশান্তি

ইবাদতের প্রকৃত স্বাদ তখনই লাভ করা যায়, যখন তার উপযুক্ত কারণগুলো পাওয়া যায়। একজন মুসলমানের কর্তব্য হলো, এই কারণগুলো অর্জনের চেষ্টা করা, যাতে সে সুখময় জীবন উপভোগ করতে পারে।

নামাজ : নামাজের মাধ্যমে মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি আসে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিলাল (রা.)-কে বলতেন, ‘হে বেলাল, আজান দাও, আমরা নামাজের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করব।

’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৮৬)

এর দ্বারা বোঝা যায়, মহান আল্লাহ নামাজে প্রশান্তি রেখেছেন। যে ব্যক্তি তা পরিপূর্ণ হক আদায় করে পালন করতে পারবে, সে ইবাদতের স্বাদ পাবে।

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘নামাজ সেই ব্যক্তির পাপ মোচন করে, যে তার হক আদায় করে পূর্ণ খুশুখুজু নিয়ে পড়ে এবং আল্লাহর সামনে দাঁড়ায় হৃদয় ও দেহের উপস্থিতিসহ। যখন সে নামাজ শেষ করে, তখন নিজেকে হালকা অনুভব করে, যেন তার সব বোঝা নামাজের মাধ্যমে দূর হয়ে গেছে।

এতে সে প্রশান্তি, আনন্দ ও স্বস্তি অনুভব করে, এমনকি সে চায় যে নামাজ কখনো শেষ না হোক। কারণ নামাজই তার চোখের শীতলতা, আত্মার প্রশান্তি, অন্তরের জান্নাত এবং দুনিয়ার বিশ্রামস্থল...।

নবীজির সাহাবিরা নামাজে পরম শান্তি অনুভব করতেন। যেমন—আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা.) নামাজে এতটাই খুশুখুজু রাখতেন যে মনে হতো তিনি একটি কাঠের গুঁড়ি।

তিনি সিজদায় গেলে চড়ুই পাখি তাঁর পিঠে বসে যেত, যেন তিনি কোনো গাছের ডাল।

কোরআন পাঠ : আল্লাহর কালাম তথা পবিত্র কোরআন পাঠে অপূর্ব সৌন্দর্য, আনন্দ ও প্রশান্তি রয়েছে। যখন আল্লাহর কালাম জিহ্বায় উচ্চারিত হয়, কানে বাজে, তখন অন্তর নরম হয়ে যায়, দেহ প্রশান্ত হয় এবং হৃদয় পরিতৃপ্ত হয়। কারণ প্রেমিকদের কাছে তাদের প্রিয়তমের বাণীই সর্বাধিক মধুর। এই স্বাদ অনুভব করতে অন্তরকে অধিক কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে পবিত্র করতে হয়।

যার অন্তর যত পবিত্র হবে, তার প্রেম তত গভীর হবে। তার তিলাওয়াতের আগ্রহ ও প্রশান্তি তত বৃদ্ধি পাবে, ফলে সে যতই তিলাওয়াত করবে, ততই তার তিলাওয়াতের স্পৃহা বৃদ্ধি পাবে। উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলতেন, ‘যদি আমাদের হৃদয় পবিত্র হতো, তবে আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের বাণীতে পরিপূর্ণ তৃপ্তি অনুভব করতাম না। আমি তো অপছন্দ করি সেই দিনকে, যখন আমি মুসহাফের (কোরআনের) দিকে তাকাতে পারি না।’ (আল জামি‘লিশুআবিল ঈমান : ৩/৫১০)

পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার মধ্যে এমন সুখ রয়েছে, যা অন্য কিছুতে নেই। মুমিন যদি প্রকৃত ঈমান রাখে, তার হৃদয় বিশুদ্ধ হয়, তবে সে কখনো কোরআন শুনে তৃপ্ত হবে না।

আল্লাহর জিকির : আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে মুমিন হৃদয়ে প্রশান্তি আসে। অন্তর জীবিত হয়। এটি এমন এক আমল, যা সবচেয়ে কম কষ্টসাধ্য, অথচ সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু ও আত্মার ঘোরাক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্ত হয়।’ (সুরা : রাআদ, আয়াত : ২৮)

দান ও সহমর্মিতা : আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় অর্থ ব্যয়ের মধ্যেও এক অনন্য সুখ রয়েছে। তাই তো সাহাবায়ে কিরাম তাদের প্রিয় ও মূল্যবান জিনিসও আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিতে দ্বিধাবোধ করতেন না।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তোমরা যা ভালোবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯২) অথবা ‘কে সে ব্যক্তি যে আল্লাহ তাআলাকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে? তিনি তার জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করবেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৪৫) আয়াত অবতীর্ণ হলে আবু তালহা (রা.), যার একটি ফলের বাগান ছিল, বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার বাগানটি আল্লাহ তাআলার পথে দান করে দিলাম। আমি গোপনে এটি দান করতে পারলে এর প্রকাশ্য ঘোষণা দিতাম না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে তা বণ্টন করে দাও। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯৯৭)

তা ছাড়া যারা মানুষের উপকার করে, মানুষের প্রতি দয়া করে, মহান আল্লাহও তাদের প্রতি দয়া করেন। ফলে তারা ঈমানের স্বাদ পায়, ইবাদতে প্রফুল্লতা অনুভব করে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইবাদতের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ