<p>দেশের উচ্চ ও অধস্তন আদালতে মামলার জট বেড়েই চলেছে। বর্তমানে প্রায় ৪৪ লাখ মামলা চলমান রয়েছে। এই জট নিরসনে বিচারকের নতুন পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪৪৮টি বিচারকের পদ সৃষ্টির সম্মতি দিয়েছিল। এর মধ্যে ২৯২টি পদের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন ও বিচার বিভাগ।</p> <p>আজ সোমবার বিকেল ৩টায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে ৩৯টি বিচারকের পদ সৃষ্টির প্রস্তাব উঠতে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে প্রায় ৫০০ বিচারকের নতুন পদ সৃষ্টি হতে পারে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।</p> <p>মন্ত্রিপরিষদসচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে এই বৈঠক হবে। সচিব কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ সম্মতি দিয়েছে। সচিব কমিটির অনুমোদন পাওয়ার পর প্রস্তাবটি প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে যাবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুমোদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।</p> <p>আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন আদালতে মামলার চাপ প্রশমনসহ মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা রোধ করার লক্ষ্যে কয়েক বছর আগে প্রায় দেড় হাজার বিচারকের পদ বাড়ানোর প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৯১টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জন্য ৩৬৪টি এবং ২১টি অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের জন্য ৮৪টি পদসহ মোট ৪৪৮টি পদ সৃজনে সম্মতি দেয়।</p> <p>সব কার্যক্রম শেষে আইন ও বিচার বিভাগ ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল ৬২টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং ১৯টি অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের জন্য ২৯২টি পদ সৃজনের জিও জারি করেছে। এবার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের জন্য ৩৯টি পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে অর্থ বিভাগ সম্মতি দিয়েছে।</p> <p>বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, জনসংখ্যার তুলনায় বাংলাদেশে বিচারকের সংখ্যা অনেক কম। এর মধ্যে বিচারকের কিছু নতুন পদ বাড়লে অবশ্যই ভালো হবে। দেশে পাঁচ হাজারের বেশি বিচারক প্রয়োজন। অথচ সারা দেশে বিচারক কর্মরত মাত্র দুই হাজার ২০০ জন। তিনি আরো বলেন, জাপানে অপরাধের সংখ্যা কম হওয়ার পরও ১২ কোটি জনসংখ্যার জন্য বিচারক আছেন চার হাজার। সে অনুযায়ী বাংলাদেশে পাঁচ হাজারের বেশি বিচারক দরকার। এ ছাড়া আইন কমিশনের এক প্রতিবেদনেও পাঁচ হাজার বিচারক নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।</p> <p>মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও জট কমিয়ে আনার বিষয়ে গত বছরের আগস্টে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদন দাখিল করে আইন কমিশন। প্রতিবেদনে মামলাজটের পাঁচটি মূল কারণ উল্লেখ করা হয়। এগুলো হলো পর্যাপ্ত বিচারক না থাকা, বিশেষায়িত আদালতে পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগ না হওয়া, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা, জনবলের অভাব এবং দুর্বল অবকাঠামো। প্রতিবেদনে জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন পর্যায়ে চার বছরে কমপক্ষে পাঁচ হাজার বিচারক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। </p> <p>এ বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিচার বিভাগ সংস্কারে কমিশন গঠন করেছে। আশা করছি কমিশনের রিপোর্টে মামলাজট নিরসনের বিষয়ে বিভিন্ন সুপারিশ থাকবে। এ ছাড়া বিচারক সংকটের বিষয়েও উল্লেখ থাকবে। মন্ত্রণালয় সুপারিশ পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।</p>