সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে সম্প্রতি যে অধ্যাদেশ হয়েছে, তার চারটি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজমল হোসেন খোকন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট করেন।
রিটে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ-২০২৫-এর ৩, ৪, ৬ ও ৯ ধারা কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, জানতে রুল চাওয়া হয়েছে। রিটে প্রাথমিক শুনানি পর আদালত এই রুল জারি করলে সেই রুল নিষ্পত্তি পর্যন্ত অধ্যাদেশটির কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়েছে রিটে।
আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
আইনজীবী আজমল হোসেন খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত ২৩ জানুয়ারি অধ্যাদেশের চারটি ধারা সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে বিবাদীদের আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। পদক্ষেপ না নেওয়ায় রিট আবেদনটি করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটটির শুনানি হতে পারে।
’
স্থায়ী ও স্বতন্ত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের বিধান রেখে গত ২১ জানুয়ারি অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই করে প্রধান বিচারপতি কর্তৃক রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে অধ্যাদেশটি প্রণয়ন করা হয়েছে। সংবিধানের ৯৫ (গ) অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে আইনের কথা বলা আছে।
কিন্তু ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের পর গত ৫৩ বছরে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকার। এই অধ্যাদেশ জারির দুই দিন পর চারটি ধারা সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ দেন আইনজীবী আজমল হোসেন খোকন।
নোটিশে বলা হয়, ‘অধ্যাদেশের ৩ ধারা অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের দুটি দলে বিভক্ত করা হয়েছে। এর ফলে বিচারকদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দেবে। তাছাড়া কাউন্সিলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি ‘
অধ্যাদেশের ৪ ধারায় বলা আছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিলের সচিব হবেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল।
আবার বলা হয়েছে, তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক প্রার্থীও হতে পারবেন। নোটিশে বলা হয়, এই বিধান স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি করবে।
অধ্যাদেশের ৬ ধারা নিয়ে নোটিশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হওয়ার জন্য ন্যূনতম বয়স ৪৫ ধরা হয়েছে, যা সংবিধানের পরিপন্থী এবং এর ফলে অনেক যোগ্য প্রার্থী বয়সসীমার কারণে বঞ্চিত হবেন। একই সঙ্গে এই বিধান বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের বিচারক হিসেবে নিয়োগের বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে। আর ৯ ধারায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগের বিধান বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণে বাধ্যবাধকতা তৈরি করায় এটি অবৈধ, আইনগতকর্তৃত্ববহির্ভূত এবং সংবিধানের চরম লঙ্ঘন।