আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে—এমনটি ধরেই রমজানে ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এবার ঈদে এসব প্রার্থী নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, কুশল বিনিময় ও গণসংযোগের মাধ্যমে নির্বাচনী আমেজ তৈরি করবেন। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দ্রুত ভোটের যে দাবি তাঁরা এত দিন তুলেছেন, এবার ঈদে সংসদ সদস্য প্রার্থীদের গণসংযোগে তা আরো জোরালো হবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটির সময়ের কর্মকাণ্ডকে নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গত ১৭ বছরের মধ্যে এবার নির্বাচনী আমেজে ঈদ পালিত হবে। ফলে ঈদে ব্যাপক গণসংযোগের মাধ্যমে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবেন প্রার্থীরা।
রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের ঈদ উৎসবে ভোটের রাজনীতি বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠবে। দলের কেন্দ্র থেকে সারা দেশের প্রার্থীদের সে রকম নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একেবারে প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে প্রার্থীদের অনুরোধ করেছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে ভোটের আগের ঈদ সব সময় নির্বাচনী আমেজে পালিত হয়। যেহেতু মানুষ ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে, তাই ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও গণসংযোগে নির্বাচনের কথা উঠে আসবে।
দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা বলেন, সাধারণ মানুষ যে দ্রুত নির্বাচন চায়, প্রার্থীদের নির্বাচনকেন্দ্রিক গণসংযোগে সেই দাবি উঠবে।
এ দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হবে। ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যে কথা উঠেছে, তা আরো তীব্র হবে।
গত ১৭ বছর বিএনপি নেতাকর্মীরা আনন্দে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। ওই সময় গুম, খুন, হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত নেতাকর্মীরা বাড়িছাড়া ছিলেন। এবার তাঁদের ঈদ মানেই হবে খুশির দিন।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দীর্ঘ বন্দিজীবন থেকে মুক্ত পরিবেশে নেতাকর্মী ও সারা দেশের মানুষ এবারের ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের মানুষকে এমনভাবে বন্দি করেছিল যে কেউ স্বাধীনভাবে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। ১৫ বছর কেউ জেলখানায়, কেউ আত্মগোপনে, কেউ পরিবারের প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ঈদ উদযাপন করেছেন। এবার শেখ হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে আমরা বাধাহীন ঈদ উদযাপন করব।’
ঈদে নেতাকর্মীদের কী নির্দেশনা দেওয়া আছে—এমন প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঈদ ঘিরে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ তৈরি হয়। এর মাধ্যমে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো যায়, আবার জনমতও সৃষ্টি করা সম্ভব। সেটিই করবে বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যাঁরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, তাঁদের বেশির ভাগই এখন নির্বাচনী বার্তা নিয়ে এলাকামুখী। পাশাপাশি ঈদকে ঘিরে যাঁর যাঁর সংসদীয় আসনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে জনসংযোগ করবেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ ছাড়া সংস্কারের নামে যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিছিয়ে না যায়, সে জন্য নির্বাচনের লক্ষ্যে মাঠে থাকবে বিএনপি। ঈদ সামনে রেখে প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগ করবেন।
এবার ঈদ উপলক্ষে বিগত ১৭ বছরের স্বৈরশাসনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যাঁরা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের পাশে ঈদ উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ক্ষেত্রে ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)’ ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর মাধ্যমে উপহার দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে ঈদ উপলক্ষে উপহারসামগ্রী বিতরণ করছেন।
লন্ডনে ঈদ করবেন খালেদা জিয়া : প্রায় ১০ বছর পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিণী ও দুই মেয়েও তাঁর সঙ্গে রয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনও লন্ডনে আছেন। তাঁরা সেখানে ঈদ করবেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ঈদের দিন ঢাকায় থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁদের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের অনুষ্ঠান আছে। তাই তাঁরা কেউ ওই দিন রাতে, কেউ পরদিন নির্বাচনী এলাকায় যাবেন।
এ ছাড়া ঈদুল ফিতরের দিন সকালে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতারা রাজধানীর শেরেবাংলানগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মোনাজাত করবেন।
এ ছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা ঢাকা ও এলাকা মিলিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন। যাঁরা ঢাকায় ঈদ করবেন পরের দিন এলাকায় যাবেন।
নেতারা রমজানের শুরু থেকে নিজ নিজ এলাকায় প্রচার চালিয়ে আসছেন। তাঁরা বলেন, ঈদেও তাঁরা সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে যাবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের সব সময় ছিল। আগামী দিনে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই নির্বাচনেরও প্রস্তুতি রয়েছে।’