ভোটের দাবি জোরালো করবে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ভোটের দাবি জোরালো করবে বিএনপি

আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবেএমনটি ধরেই রমজানে ইফতারকেন্দ্রিক রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এবার ঈদে এসব প্রার্থী নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, কুশল বিনিময় ও গণসংযোগের মাধ্যমে নির্বাচনী আমেজ তৈরি করবেন। দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দ্রুত ভোটের যে দাবি তাঁরা এত দিন তুলেছেন, এবার ঈদে সংসদ সদস্য প্রার্থীদের গণসংযোগে তা আরো জোরালো হবে।    

বিএনপি নেতারা বলছেন, আসন্ন ঈদুল ফিতরের ছুটির সময়ের কর্মকাণ্ডকে নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

গত ১৭ বছরের মধ্যে এবার নির্বাচনী আমেজে ঈদ পালিত হবে। ফলে ঈদে ব্যাপক গণসংযোগের মাধ্যমে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবেন প্রার্থীরা। 

রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবারের ঈদ উৎসবে ভোটের রাজনীতি বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠবে। দলের কেন্দ্র থেকে সারা দেশের প্রার্থীদের সে রকম নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একেবারে প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে প্রার্থীদের অনুরোধ করেছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে ভোটের আগের ঈদ সব সময় নির্বাচনী আমেজে পালিত হয়। যেহেতু মানুষ ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে, তাই ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও গণসংযোগে নির্বাচনের কথা উঠে আসবে।

দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা বলেন, সাধারণ মানুষ যে দ্রুত নির্বাচন চায়, প্রার্থীদের নির্বাচনকেন্দ্রিক গণসংযোগে সেই দাবি উঠবে।

এ দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হবে। ফলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যে কথা উঠেছে, তা আরো তীব্র হবে।

গত ১৭ বছর বিএনপি নেতাকর্মীরা আনন্দে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। ওই সময় গুম, খুন, হামলা-মামলায় বিপর্যস্ত নেতাকর্মীরা বাড়িছাড়া ছিলেন। এবার তাঁদের ঈদ মানেই হবে খুশির দিন।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘ বন্দিজীবন থেকে মুক্ত পরিবেশে নেতাকর্মী ও সারা দেশের মানুষ এবারের ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের মানুষকে এমনভাবে বন্দি করেছিল যে কেউ স্বাধীনভাবে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেননি। ১৫ বছর কেউ জেলখানায়, কেউ আত্মগোপনে, কেউ পরিবারের প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ঈদ উদযাপন করেছেন। এবার শেখ হাসিনামুক্ত বাংলাদেশে আমরা বাধাহীন ঈদ উদযাপন করব।

ঈদে নেতাকর্মীদের কী নির্দেশনা দেওয়া আছেএমন প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঈদ ঘিরে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ তৈরি হয়। এর মাধ্যমে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো যায়, আবার জনমতও সৃষ্টি করা সম্ভব। সেটিই করবে বিএনপি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যাঁরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, তাঁদের বেশির ভাগই এখন নির্বাচনী বার্তা নিয়ে এলাকামুখী। পাশাপাশি ঈদকে ঘিরে যাঁর যাঁর সংসদীয় আসনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে জনসংযোগ করবেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ ছাড়া সংস্কারের নামে যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিছিয়ে না যায়, সে জন্য নির্বাচনের লক্ষ্যে মাঠে থাকবে বিএনপি। ঈদ সামনে রেখে প্রতিটি সংসদীয় এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগ করবেন।

এবার ঈদ উপলক্ষে বিগত ১৭ বছরের স্বৈরশাসনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যাঁরা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের পাশে ঈদ উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)আমরা বিএনপি পরিবার-এর মাধ্যমে উপহার দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই ব্যক্তি উদ্যোগে ঈদ উপলক্ষে উপহারসামগ্রী বিতরণ করছেন।

লন্ডনে ঈদ করবেন খালেদা জিয়া : প্রায় ১০ বছর পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিণী ও দুই মেয়েও তাঁর সঙ্গে রয়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনও লন্ডনে আছেন। তাঁরা সেখানে ঈদ করবেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ঈদের দিন ঢাকায় থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁদের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের অনুষ্ঠান আছে। তাই তাঁরা কেউ ওই দিন রাতে, কেউ পরদিন নির্বাচনী এলাকায় যাবেন।

এ ছাড়া ঈদুল ফিতরের দিন সকালে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতারা রাজধানীর শেরেবাংলানগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মোনাজাত করবেন।

এ ছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা ঢাকা ও এলাকা মিলিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন। যাঁরা ঢাকায় ঈদ করবেন পরের দিন এলাকায় যাবেন।

নেতারা রমজানের শুরু থেকে নিজ নিজ এলাকায় প্রচার চালিয়ে আসছেন। তাঁরা বলেন, ঈদেও তাঁরা সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে যাবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের সব সময় ছিল। আগামী দিনে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই নির্বাচনেরও প্রস্তুতি রয়েছে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০-৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কালের কণ্ঠ বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মার্চ এবং ১-২ এপ্রিল পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর ১ এপ্রিল হলে ৩ এপ্রিলও পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে ঈদের ছুটিতে কালের কণ্ঠ অনলাইন চালু থাকবে।

সম্পাদক

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

শেয়ার
শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিজয়নগরে শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন।ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উসকানি দেন।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের মনে কী আছে (হোয়াটস অন বাংলাদেশস আর্মি চিফস মাইন্ড?) শিরোনামে ইন্ডিয়া টুডেতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বেন কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা বিবিসি ও রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন রক্ষণশীল ও পেশাদার কর্মকর্তা, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সামরিক শাসন কার্যকর নয়। ইতিহাস, বিশেষ করে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়ন না চালাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল।

তবে ওয়াকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেষ্টাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।

সম্প্রতি কিছু ব্লগার ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের প্রতি অনুগত এবং তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তবে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর অনুগত নন, বরং তিনি পেশাদার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুকরণ করে রাজনীতির বাইরে থাকতে চান।

এদিকে সেনাপ্রধান চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর।

আওয়ামী লীগপন্থী এই আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন; আর এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে পারেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।

তবে তানিয়া আমীরের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।

এক সেনা কর্মকর্তা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, তিনি (সেনাপ্রধান) সেনা ও বাইরের সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চান। তিনি সেনা কর্মকর্তা ও অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা না করে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ তিনি একটি ঐকমত্য চান।

অন্যদিকে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাঁর অধীনে সেনাপ্রধান আগে চাকরি করেছেন, তিনি বলেন, যদি মনে হয় তাঁকে (সেনাপ্রধান) সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।

ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না। এতে বোঝা যায়, তিনি কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর বাবা ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কিনেছিলেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের জন্য।

মন্তব্য

রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। রমজান এলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন চিত্রই দেখে আসছে দেশবাসী।

তবে এবার ভিন্ন চিত্র। এবার রোজার ভোগ্যপণ্যের বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল। ভোক্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার রজমানে পণ্যের দাম সবচেয়ে কম। বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই ক্রেতাসাধারণের হাতের নাগালে রয়েছে।

রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল তা এখন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ বছর রমজান সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এতে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, দেশি রসুন, আলু ও আদাসহ কয়েকটি পণ্য। সবজি ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ছিল। 

এবার রমজানে পেঁয়াজ ও আলু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেশির সবজি গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম দামে বিক্রি হয়েছে। রমজানে ইফতারসামগ্রীর বাজারেও তেমন বাড়াবাড়ি নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত তদারকি জোরদার করায় সবজির বাজার সিন্ডিকেট কাঁচা মরিচ ও বেগুনের দাম বাড়াতে পারেনি।

গত রমজানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয় মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ঈদ ঘিরে মুরগির দাম বাড়লেও রোজার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় দরেই এবার মুরগি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, রোজার আগে আগে যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম কমে চিনি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, ডাল, মুরগি, ডিম, মাছ, সয়াবিন, পামঅয়েল, চিনি, লবণ, আলু, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয়।

এদিকে এবার রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে আছে। সংস্থাগুলো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনিটরিং টিম। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও করা হচ্ছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ