ঢাকা, মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫
১৮ চৈত্র ১৪৩১, ০১ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫
১৮ চৈত্র ১৪৩১, ০১ শাওয়াল ১৪৪৬
বিশেষ সাক্ষাৎকার

নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষায় শিল্প খাতের বিনিয়োগকারীরা

শেয়ার
নির্বাচিত সরকারের অপেক্ষায় শিল্প খাতের বিনিয়োগকারীরা
মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দীপু

নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দীপু। শিল্প খাতে গ্যাস সংকট, নতুন বিনিয়োগ বন্ধসহ নানামুখী সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের সঙ্গে। রপ্তানিমুখী শিল্পের অগ্রযাত্রায় করণীয় নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীবুল হাসান

 

প্রশ্ন : গত কয়েক মাসে বেশ কিছু শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েছেন।

শিল্প-কারখানাগুলো বন্ধ হচ্ছে কেন?

উত্তর : বায়ার না পাওয়া, আর্থিক সংকট ও বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কারণে শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু মালিক পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁরাও আত্মগোপনে চলে গেছেন। আর এসব সমস্যার কারণে লাস্ট কয়েক মাসে শিল্পাঞ্চল গাজীপুর, সাভার ও নায়ারণগঞ্জে ৯৫টি শিল্প-কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া গ্যাস সংকটে উৎপাদনের গতি কিছুটা কমেছে।

একজন শ্রমিক বেকার; শুধু একজন শ্রমিক না, এর পেছুনে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও সমস্যার মুখে পড়েছে। সরকারের উচিত, বাইরে থেকে যে শক্তিগুলো কাজ করে এই শিল্প-কলকারখানা বন্ধ করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য, তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থানে যাওয়া।

 

প্রশ্ন : শিল্প-কারখানা বন্ধের কারণ হিসেবে আপনি কী দেখছেন, আর দেশে বড় ধরনের একটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে কোনো প্রভাব পড়েছে কি না?

উত্তর : দেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে মাত্র আট-৯ মাস হলো, কিন্তু শিল্পের এমন দুর্দিন চলছে ১৭ বছর ধরেই। নারায়ণগঞ্জে ওয়ান অব দ্য বিগেস্ট ইপিজেড হচ্ছিল জাপান সরকারের অর্থায়নে।

এর কাজও বর্তমানে বন্ধের দ্বারপ্রান্তে। একটা মহল চিন্তা করছে, এখন বিনিয়োগ বন্ধ রাখি। নির্বাচিত সরকার এলে বিনিয়োগ করবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে খুব দ্রুত একটি নির্বাচন দিয়ে দেশে নির্বাচিত সরকার আসতে সহযোগিতা করা; তাহলে রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর হওয়ার পাশাপাশি শিল্পে বিনিয়োগ ফিরবে।

 

প্রশ্ন : যাঁরা এত দিন শিল্পে বিনিয়োগ নিয়ে ভাবছিলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাঁরা থেমে গেলেন কি না?

উত্তর : আসলে দেশের অর্থনীতি কতটুকু শক্তিশালী, এটার বেশির ভাগই নির্ভর করে বিদেশি বিনিয়োগের ওপর।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি জনগণের আস্থায় ফিরে আসেনি। বিদেশি বায়াররা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নজরে রাখছেন। তাঁরা এখনো এ দেশে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হলে এই সংকট কাটবে না।

 

প্রশ্ন : বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে গার্মেন্ট শ্রমিকসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। তাঁদের দাবি-দাওয়া পূরণে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়?

উত্তর : সরকার কিন্তু একবারও খোঁজ নিচ্ছে না যে শুধু নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতি মাসে শিল্প-কারখানা মালিকদের কত হাজার কোটি টাকা বেতন-ভাতা দিতে হচ্ছে। তাঁরা কিভাবে এটার জোগান দিচ্ছেন, সেটাও জানার প্রয়োজন মনে করে না সরকার। সরকারের উচিত বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া। আর প্রতিবছর ঈদ এলে আমরা দেখি শিল্প-কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করছেন। এ ক্ষেত্রে মালিকরা একেবারেই অসহায়; কারণ বাইরের দেশের বিনিয়োগ খুব কম। ফলে কারখানা চালানোর খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

 

প্রশ্ন : বিভিন্ন সময় শোনা যায়, শিল্পে অস্থিরতা দেখিয়ে প্রতিযোগী দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে অর্ডার ও বিনিয়োগ তাদের দেশে নিয়ে যায়, এটা কতটুকু সত্য?

উত্তর : এটা আসলে আমি মানতে রাজি না। দেখেন বাংলাদেশের যেসব শ্রমিক আছেন তাঁরা অন্য দেশগুলোর শ্রমিকদের চেয়ে অনেক দক্ষ, আবার বিভিন্ন কল-কারখানায় এখন প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগছে। এটা সত্য, ক্রয়াদেশ আনতে আমরা অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রতিযোগিতা করে থাকি। আমরা একেবারে সামান্য প্রফিট করে বায়ারদের চাহিদা পূরণ করি। আবার আমাদের শ্রমিক ভাইদের কাজের দক্ষতা থাকায় বায়াররা সন্তুষ্ট। এখন সরকারের উচিত বায়ারদের ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া।

 

প্রশ্ন : ব্যবসা করতে গিয়ে কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে?

উত্তর : দেশে সিন্ডিকেট নেই এমন কোনো সেক্টর নেই। শুধু এই অসাধুচক্রের কারণে আমরা প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। বিভিন্ন সময় গার্মেন্টশিল্পে অস্থিরতা তৈরি হয়, এটা মূলত এক শ্রেণির সিন্ডিকেটের কারণে।

 

প্রশ্ন : দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে ইন্ডাস্ট্রি বাঁচাতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?

উত্তর : দেশে একটি নির্বাচিত সরকার না এলে শিল্পের এই সংকট দূর হবে না। আমি বলছি না, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, তারাও তাদের মতো করে চেষ্টা করছে। ব্যবসায়ীদের অনেকেই পরবর্তী সরকার আসার অপেক্ষায় আছেন বলে আমি মনে করি।

 

প্রশ্ন : নারায়ণগঞ্জবাসী ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে আপনার কী পরিকল্পনা রয়েছে?

উত্তর : নারায়ণগঞ্জ একটি শিল্পনগরী। এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ জীবিকার তাগিদে বসবাস করেন। আমি অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত হই এই ভেবে, যখন দেখি সবাই এক সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করে। আমি মনে-প্রাণে চাইব, সরকার যেন নারায়ণগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে পরিকল্পিত ভূমিকা রাখে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০-৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কালের কণ্ঠ বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মার্চ এবং ১-২ এপ্রিল পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর ১ এপ্রিল হলে ৩ এপ্রিলও পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে ঈদের ছুটিতে কালের কণ্ঠ অনলাইন চালু থাকবে।

সম্পাদক

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

শেয়ার
শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিজয়নগরে শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন।ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উসকানি দেন।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের মনে কী আছে (হোয়াটস অন বাংলাদেশস আর্মি চিফস মাইন্ড?) শিরোনামে ইন্ডিয়া টুডেতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বেন কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা বিবিসি ও রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন রক্ষণশীল ও পেশাদার কর্মকর্তা, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সামরিক শাসন কার্যকর নয়। ইতিহাস, বিশেষ করে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়ন না চালাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল।

তবে ওয়াকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেষ্টাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।

সম্প্রতি কিছু ব্লগার ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের প্রতি অনুগত এবং তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তবে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর অনুগত নন, বরং তিনি পেশাদার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুকরণ করে রাজনীতির বাইরে থাকতে চান।

এদিকে সেনাপ্রধান চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর।

আওয়ামী লীগপন্থী এই আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন; আর এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে পারেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।

তবে তানিয়া আমীরের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।

এক সেনা কর্মকর্তা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, তিনি (সেনাপ্রধান) সেনা ও বাইরের সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চান। তিনি সেনা কর্মকর্তা ও অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা না করে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ তিনি একটি ঐকমত্য চান।

অন্যদিকে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাঁর অধীনে সেনাপ্রধান আগে চাকরি করেছেন, তিনি বলেন, যদি মনে হয় তাঁকে (সেনাপ্রধান) সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।

ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না। এতে বোঝা যায়, তিনি কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর বাবা ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কিনেছিলেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের জন্য।

মন্তব্য

রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। রমজান এলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন চিত্রই দেখে আসছে দেশবাসী।

তবে এবার ভিন্ন চিত্র। এবার রোজার ভোগ্যপণ্যের বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল। ভোক্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার রজমানে পণ্যের দাম সবচেয়ে কম। বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই ক্রেতাসাধারণের হাতের নাগালে রয়েছে।

রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল তা এখন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ বছর রমজান সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এতে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, দেশি রসুন, আলু ও আদাসহ কয়েকটি পণ্য। সবজি ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ছিল। 

এবার রমজানে পেঁয়াজ ও আলু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেশির সবজি গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম দামে বিক্রি হয়েছে। রমজানে ইফতারসামগ্রীর বাজারেও তেমন বাড়াবাড়ি নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত তদারকি জোরদার করায় সবজির বাজার সিন্ডিকেট কাঁচা মরিচ ও বেগুনের দাম বাড়াতে পারেনি।

গত রমজানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয় মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ঈদ ঘিরে মুরগির দাম বাড়লেও রোজার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় দরেই এবার মুরগি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, রোজার আগে আগে যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম কমে চিনি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, ডাল, মুরগি, ডিম, মাছ, সয়াবিন, পামঅয়েল, চিনি, লবণ, আলু, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয়।

এদিকে এবার রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে আছে। সংস্থাগুলো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনিটরিং টিম। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও করা হচ্ছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ