সংস্কার প্রস্তাবে অনির্বাচিতদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা দেখছে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সংস্কার প্রস্তাবে অনির্বাচিতদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা দেখছে বিএনপি

সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করে কিছু প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। দলটির মনে হয়েছে, সংস্কার প্রস্তাবে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে রাজনীতিবিদদের অপাঙক্তেয় এবং অনির্বাচিত লোকদেরই দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার সুপারিশ তুলে ধরে এই কথা বলা হয়।

কমিশনের কাছে সংস্কার প্রস্তাব আজ রবিবার জমা দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ন্যাশনাল কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিলএনসিসি নামে একটা ফ্রেমের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটার গঠন প্রক্রিয়া ও কার্যপরিধি বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে সব স্তরে স্তরে দেখা যায়, অনির্বাচিত বিভিন্ন ব্যক্তিরা এসব কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং সাংবিধানিকভাবে তাদের ক্ষমতায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে দেখা যাবে নির্বাচিত প্রতিনিধির আর কোনো গুরুত্ব নেই। প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি রাষ্ট্রের অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সম্পন্ন হবে যদি এগুলো গৃহীত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ অবস্থায় বজায় রাখতে হবে। কোনো মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয়, সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সুপারিশমালায় সাংবিধানিক কমিশনসহ (এনসিসি) নতুন নতুন বিভিন্ন কমিশনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব কমিশনের এখতিয়ার, কর্মকাণ্ডের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, আইন বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে যতটা সম্ভব অবমূল্যায়ন করা এবং ক্ষমতাহীন করাই উদ্দেশ্য।

যার ফলে একটি দুর্বল ও প্রায় অকার্যকর সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেড শিটের অবস্থা ও কমিশনের সদস্যদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য বিবৃতির মধ্যে মিল পাওয়া যায় যাতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম হতে পারে যে, সব বিষয়গুলো যেন একটি পূর্বপরিকল্পনার অংশ, যা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কি না বলা মুশকিল। সুপারিশমালা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, এতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে, যা অনভিপ্রেত। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র, জনগণের মালিকানার প্রতিফলন হয় নির্বাচিত সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কিন্তু সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশসগুলো পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয়, রাজনীতিবিদরা অপাঙতেয় এবং অনির্বাচিত লোকদেরই দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করাই শ্রেয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রেরিত স্প্রেডশিটে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে। তাতে একটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে, যে বিষয়গুলো প্রস্তাবাকারে আসতে পারত তা প্রস্তাবে না রেখে হ্যাঁ, না, উত্তর দিতে বলা হয়েছে। যেমন, প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই কি না? হ্যাঁ অথবা না বলুন। কিন্তু প্রথমে সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে, গণপরিষদের প্রস্তাবে আমরা একমত কি না? একইভাবে গণভোট, গণপরিষদ এবং আইন সভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চাই কি না ইত্যাদি হ্যাঁ-না বলুন।

তিনি বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনার মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও তা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয়নি। স্প্রেডশিটে ৭০টির মতো প্রস্তাব উল্লেখ করা হলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশসংখ্যা প্রায় ১২৩টির মতো। একইভাবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মতো সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে আছে মাত্র ২৭টি বিষয়। তার মধ্যে বেশির ভাগই সংবিধান সংস্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই আমরা মনে করছি, স্প্রেডশিটের সঙ্গে মূল সুপারিশমালার ওপর আমাদের মতামত সংযুক্ত করে দিলে বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।

সংস্কার আগে না নির্বাচন পরে, কিংবা নির্বাচন আগে না সংস্কার পরে এ ধরনের অনাবশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই বলে মনে করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটিই একই সঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি চার্টার অব রিফর্ম (সংস্কার সনদ) তৈরি হতেই পারে, নির্বাচিত সরকার পরবর্তী সময়ে যা বাস্তবায়ন করবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ও প্রমাণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে, যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, উপযুক্ত সময় যখন হবে, তখনই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। দেশে ফেরার বিষয়ে আমরা এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ নির্ধারণ করিনি। আমাদের যখন মনে হবে যে, উপযুক্ত সময় সেই সময়ে তিনি (তারেক রহমান) আসবেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

শেয়ার
পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
গাজীপুরের টঙ্গীতে গতকাল সকালে বেতন-বোনাসের দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। খবর পেয়ে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত করে কারখানার সামনে নিয়ে যান। তখন মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য
মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ

পুনর্বিবেচনার আবেদন পদোন্নতিবঞ্চিত শতাধিক কর্মকর্তার

উবায়দুল্লাহ বাদল
উবায়দুল্লাহ বাদল
শেয়ার
পুনর্বিবেচনার আবেদন পদোন্নতিবঞ্চিত শতাধিক কর্মকর্তার

গত বৃহস্পতিবার রাতে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন প্রশাসনের ১৯৬ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে বিসিএস ২৪তম ব্যাচের পদোন্নতিযোগ্য ৩২০ জনের মধ্যে পদোন্নতি পেয়েছেন ১৩৭ জন। বাদ পড়েছেন ১৮৩ জন। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জনই রবিবার সকালে দল বেঁধে মন্ত্রিপরিষদসচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে দেখা করে পদোন্নতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আবেদন দিয়েছেন।

এ সময় উভয় সচিবই বঞ্চিতদের দাবি মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বলে বঞ্চিতদের অনেকে কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রশাসনে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পান ১৯৬ জন উপসচিব। এর মধ্যে স্বাস্থ্য, খাদ্য ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টার একান্ত সচিবসহ (পিএস) ২১ জন জেলা প্রশাসকও (ডিসি) রয়েছেন।

এ ছাড়া পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তালিকায় সালমান এফ রহমানের পিএস ও শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী সাবেক কয়েকজন ডিসিও রয়েছেন। প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পদোন্নতি পাওয়া শেখ হাসিনা আমলের প্রভাবশালীদের মধ্যে রয়েছেন সালমান এফ রহমানের পিএস আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ; দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থাকা এ কে এম মনিরুজ্জামান, সাবেক ডিসি সাহেলা আক্তার, শ্রাবস্তী রায় ও অলিউর রহমান প্রমুখ। এ ছাড়া পদোন্নতি পেয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা পিএস আবুল হাসান, খাদ্য উপদেষ্টার পিএস মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পিএস ড. মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম। এ ছাড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক ও এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের পিএস কামরুল হাসান ও আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর পিএস আমিনুর রহমানও।
তবে আগের সরকারের মন্ত্রীদের পিএস ও ডিসিসহ এই ব্যাচের অন্তত ১৮৩ জন কর্মকর্তা এবার পদোন্নতি পাননি।

পদোন্নতির পর প্রথম কর্মদিবস রবিবার সকাল ৯টায় বঞ্চিত কর্মকর্তারা দল বেঁধে প্রথমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পরে মন্ত্রিপরিষদসচিবের কাছে যান। তাঁরা এসএসবির প্রভাবশালী দুই কর্মকর্তার কাছেই যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান। পাশাপাশি তাঁরা প্রত্যেকে আলাদাভাবে পদোন্নতি পুনর্বিবেচনার আবেদন দেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।

একাধিক বঞ্চিত কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, দুই স্যারই আমাদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনেছেন।

মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেছেন, তিনিও একসময় বছরের পর বছর বঞ্চিত ছিলেন। বঞ্চনার বেদনা তিনি বোঝেন। বিষয়টি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়কে জানাবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৪ ব্যাচের একজন বঞ্চিত কর্মকর্তা জানান, যেখানে অন্যান্য ব্যাচের যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার হার কমবেশি ৭০ শতাংশ, অথচ আমাদের ব্যাচের এই হার মাত্র ৪২.৮১ শতাংশ। সালমান এফ রহমানের পিএস যদি পদোন্নতি পান, তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পিএস কি দাবি করতে পারেন না? সে ক্ষেত্রে আমাদের অপরাধটা কী? যে বৈষম্যের অবসানের জন্য জুলাই বিপ্লব হলো, এ সরকারের আমলে তা যদি আরো প্রকট হয়, তাহলে তা হবে চরম হতাশার। আমরা শুধু ন্যায়বিচার চাই। আমরা বলেছি যাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নেই, দুর্নীতির মামলা তো দূরের কথা, কোনো অভিযোগও নেই, এসিআরের নম্বর ভালো ও বিরূপ কোনো মন্তব্য নেই, শিক্ষাগত যোগ্যতায় রেজাল্ট ভালো, তাঁরা কেন বঞ্চিত হবেন? তাঁদের যেন সঠিক জাজমেন্ট হয়।

 

 

 

মন্তব্য

সুন্দরবনে ১৯ বছরে ৩০ বার আগুন, জ্বলছে নতুন এলাকা

    নাশকতা আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে
বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী, বাগেরহাট
বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্ত্তী, বাগেরহাট
শেয়ার
সুন্দরবনে ১৯ বছরে ৩০ বার আগুন, জ্বলছে নতুন এলাকা

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের টেপার বিলে জ্বলতে থাকা আগুন নেভার আগেই নতুন করে শাপলার বিল এলাকা আগুনে পুড়ছে। নতুন স্থানে আগুনের ভয়াবহতা অনেক বেশি।

গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাগেরহাট জেলাধীন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির শাপলার বিল এলাকায় গহিন বনে আগুন দেখতে পায় বন বিভাগ। কলমতেজি ক্যাম্পের টেপার বিল এলাকায় যেখানে শনিবার সকালে আগুন দেখা গেছে, সেখান থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে এই শাপলার বিল এলাকা।

তবে টেপার বিল এলাকায় জ্বলতে থাকা আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ করা হয়েছে বলে বন বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা জানান। এক দিনের ব্যবধানে সুন্দরবনের সাত কিলোমিটারের মধ্যে পৃথক স্থানে আগুনের ঘটনায় নাশকতা আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে বন অধিদপ্তর।

 

১৯ বছরে ৩০ বার আগুন

বন বিভাগের তথ্যমতে, সুন্দরবনে গত ১৯ বছরে ৩০ বার আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় পুড়েছে প্রায় ৯০ একর বনভূমি।

এর আগে ২০২৪ সালের ৪ মে চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া ফরেস্ট ক্যাম্পের লতিফের ছিলা নামক স্থানে আগুনে ৭.৯৮ একর বনভূমি পুড়ে যায। তখনকার কমিটি আগুন লাগার সুনির্দিষ্ট কারণ বলতে পারেনি। ২০২১ সালের ৩ মে দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগে। ২০১৭ সালের ২৬ মে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ফরেস্ট ক্যাম্পের আবদুল্লাহর ছিলায় আগুনে প্রায় পাঁচ একর বনভূমির ছোট গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় প্রতিবারই বন বিভাগ তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু কমিটির প্রতিবেদন সুপারিশ কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে, কাজের কাজ কিছুই হয় না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। গত ২০২৪ সালের মে মাসের আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি সুন্দরবনের ২৪, ২৫ এবং ২৭ নম্বর কম্পার্টমেন্টে মধু আহরণের পাস (অনুমতি) বন্ধ রাখার জন্য সুপারিশ করেছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হবে।

এবারও টেপার বিল এলাকায় আগুনের পর গতকাল তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ।

এই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভায়ীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও)।

গত দুই দিনের দুটি অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী জানিয়েছেন।

 

শাপলার বিলে আগুন

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, আগুন যাতে বনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে না পারে এ জন্য ফায়ার লাইন কাটা হচ্ছে। কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের ভোলা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে আগুন নেভানো হবে।

চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দ্বীপেন চন্দ্র দাস জানান, আগুনের খবর পাওয়ার পর ড্রোনের মাধ্যমে বনের গহিনে তারা আগুন দেখতে পান। এরপর তাঁরা দ্রুত ফায়ার লেন কাটতে থাকেন। কিন্তু এর মধ্যেই কয়েকটি স্থানে আগুন ফায়ার লেন অতিক্রম করে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ফায়ার লেন কাটার কাজ চলছে। লেন কাটা শেষ হলেই ভোলা নদী থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হবে। কিভাবে আগুন লেগেছে তার কারণ জানাতে পারেননি তিনি।

বাগেরহাট ফায়ার স্টেশনের ডিএডি সাকরিয়া হায়দার জানান, আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিতে তাঁরা সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। খুলনা, বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোল্লাহাট এবং শরণখোলার ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।

 

টেপার বিলের আগুন নির্বাপণ

বাগেরহাট জেলার শরণখোলায় সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজি ক্যাম্পের টেপার বিল এলাকার আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ করা হয়েছে। ভোলা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর আগেই ওই এলাকায় প্রায় চার একর বনভূমি পুড়ে গেছে। 

বাগেরহাট ফায়ার স্টেশনের ডিএডি সাকরিয়া হায়দার জানান, গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ করা হয়।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম জানান, সুন্দরবনের টেপার বিলে এখন আগুনের অস্তিত্ব নেই। কোথাও ধোঁয়াও দেখা যাচ্ছে না। এর পরও বন বিভাগের স্টাফরা আগামী ২৪ ঘণ্টা সেখানে পর্যবেক্ষণে থাকবেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।

ডিএফও নুরুল করিমের ধারণা, মৌসুম শুরুর আগেই অবৈধভাবে কোনো মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারেন। মৌয়ালের মশাল অথবা বিড়ি-সিগারেটের অংশ থেকে সুন্দরবনে আগুন ধরতে পারে। এ ছাড়া আইন ভঙ্গ করে কোনো কোনো রাখাল ভোলা নদী পাড়ি দিয়ে তাদের গবাদি পশু নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। ওই রাখালদের ফেলে রাখা বিড়ি-সিগারেটের আগুন থেকেও সুন্দরবনে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে।

 

নাশকতার আশঙ্কা

প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, এক দিনের ব্যবধানে দুটি পৃথক স্থানে আগুনের ঘটনায় নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। নাশকতামূলকভাবে কেউ সুন্দরবনে আগুন দিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

 

মন্তব্য

জি এম কাদের ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জি এম কাদের ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব জব্দ
জি এম কাদের

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) ও তাঁর স্ত্রী শেরিফা কাদেরের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। গতকাল রবিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) দেশের সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে তাঁদের হিসাব জব্দ করতে বলা হয়েছে।

সিআইসি সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখায় পরিচালিত হিসাবগুলো থেকে অর্থ উত্তোলন বা স্থানান্তর স্থগিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ জন্য দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

আরেকটি চিঠিতে জি এম কাদের, তাঁর স্ত্রী শেরিফা কাদের, মেয়ে ইশরাত জাহান কাদের ও ভাই মাহফুজ আহমেদের ব্যাংক হিসাব বিবরণী পাঠাতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে করদাতার একক বা যৌথ নামে অথবা তাঁর মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত যেকোনো মেয়াদি আমানত হিসাব, এফডিআর, এসটিডি, যেকোনো মেয়াদের সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব, ঋণ হিসাব, ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, লকার বা ভল্ট, সঞ্চয়পত্র বা অন্য কোনো ধরনের সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্ট, ইনভেস্টমেন্ট স্কিম বা ডিপোজিট স্কিমের হালনাগাদ বিবরণী ও ঋণের বিপরীতে রক্ষিত জামানতের বিবরণী সাত দিনের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ করা হলো। এই সময়ের মধ্যে বা আগে হিসাব শুরু হয়ে তা বন্ধ হয়ে গেলে অথবা শেষ হয়ে গেলে বা সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও তথ্য পাঠাতে হবে।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে অনুসন্ধানের স্বার্থে বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এনবিআরকে সহযোগিতা করেনি বলে উল্লেখ করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য না দিলে এবং তথ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে আয়কর আইনের বিধান অনুযায়ী এককালীন ৫০ হাজার টাকা ও পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ৫০০ টাকা হারে জরিমানা আরোপ করা হবে। এ ছাড়া অর্থদণ্ডের ও কারাদণ্ড আরোপের জন্য প্রয়োজনীয় ফৌজদারি কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে জাতীয় পার্টি সব সময়ই একটি সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। ভোট কারচুপি ও আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে এই দলটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

এখন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ