সাধারণ বন্দিদের মতো খাবার পাবেন আ. লীগ হেভিওয়েটরা

ওমর ফারুক ও মাসুদ রানা
ওমর ফারুক ও মাসুদ রানা
শেয়ার
সাধারণ বন্দিদের মতো খাবার পাবেন আ. লীগ হেভিওয়েটরা

গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দলীয় নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হয়েছেন। আওয়ামী লীগের এই হেভিওয়েট নেতাদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। প্রয়োজনে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় এবং কোনো মামলায় জামিন না পাওয়ায় তাঁদের এবারের ঈদ কাটছে কারাগারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কারাগারে বন্দি নেতাদের জন্য ঈদে থাকছে খাবারদাবারের বিশেষ আয়োজন। ঈদের পরদিন তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে খাবার সরবরাহ করা যাবে। ঈদের দিন সকালে কারাগারের পক্ষ থেকে এই নেতাদের সেমাই, পায়েস ও মুড়ি সরবরাহ করা হবে। দুপুরে দেওয়া হবে পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরুর মাংস, খাসির মাংস, সালাদ, কোল্ড ড্রিংকস, মিষ্টি, পান-সুপারি।

রাতে সাদা ভাত, রুই মাছ ও আলুর দম।

অন্য বন্দিদের মতো ডিভিশন পাওয়া বন্দিরাও ঈদ উপলক্ষে স্বজনদের সঙ্গে দেখা ও ফোনে কথা বলার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া ঈদের পরদিন বাড়ির রান্না করা খাবার খাওয়ার সুযোগ মিলবে বন্দি এই নেতাদের। বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৫৭ জন, কাশিমপুরের চারটি কেন্দ্রীয় কারাগারে ৬২ জনসহ ১২৫ জন ভিআইপি বন্দি আটক রয়েছেন।

এদিকে ঈদ উপলক্ষে কারাগারগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা সতর্কতা ও নজরদারি নিশ্চিত করা হচ্ছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সশস্ত্র প্রহরার পাশাপাশি পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা, আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর, হ্যান্ডহোল্ড মেটাল ডিটেক্টর, ভেহিকল সার্চ মিরর, বডি স্ক্যানার, লাগেজ স্ক্যানার ইত্যাদি নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে। কারাগারে ঈদের মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হচ্ছে। কারাভ্যন্তরে কারাবন্দিদের অংশগ্রহণে হবে গান, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্য, কৌতুক, বক্তব্য ইত্যাদি।

ঈদের দিন সন্ধ্যায় কারারক্ষী ব্যারাকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যার পর কারা স্টাফদের সন্তানদের অংশগ্রহণে কবিতা আবৃত্তি ও গানের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

ঈদ উপলক্ষে কারাভ্যন্তরে ভলিবল খেলাসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।

ঈদ উপলক্ষে সব বন্দি (বিশেষ বন্দিসহ) ঈদের তিন দিনের মধ্যে একবার তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। তিন দিনের মধ্যে একবার পাঁচ মিনিট নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে সরকারি টেলিফোন থেকে কথা বলারও সুযোগ মিলবে তাঁদের। বিশেষ বা ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের একজন কারা কর্মকর্তার সামনে মোবাইল ফোনে কথা বলতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজনস মো. জাহাঙ্গীর কবির কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদের দিন সব বন্দিকে একই ধরনের খাবার দেওয়া হয়। সকাল থেকে রাত তিন বেলা বিশেষ খাবারের আয়োজন রয়েছে আমাদের। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঈদের দিন কারাগার থেকে পোলাও, মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের খাবার দেওয়া হয়। এ কারণে ঈদের দিন পরিবারের খাবার অ্যালাউ করা হয় না। পরদিন পরিবার থেকে যে খাবার নিয়ে আসে তা খেতে দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী কালের কণ্ঠকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তারা গণহত্যা করেছে, তারা গণহত্যার ষড়যন্ত্রকারী। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার তদন্ত চলছে। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করে বলেছি, তারা জামিন পেলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে এবং তদন্তে বিঘ্ন ঘটবে। আমাদের জোরালো ভূমিকায় তাদের জামিন নামঞ্জুর হয়েছে। তাদের এখন রাজনৈতিক নেতা বলা যাবে না। তারা জনগণের ওপর জুলুম, নির্যাতন করে ক্ষমতায় বসেছিল। তারা ফ্যাসিস্টের দোসর।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর একে একে গ্রেপ্তার হন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম।

এর বইরে সাবেক সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, সাবেক মুখ্য সচিব ও উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সাবেক যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ, জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শাসসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সভাপতি শাহরিয়ার কবির, একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবু, সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রূপা ও প্রধান বার্তা সম্পাদক শাকিল আহমেদ, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, আব্দুস সোবহান গোলাপ, হাজি সেলিম, মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিম, সেলিম আলতাফ জর্জ, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছেন।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, শহিদুল হক, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, সাবেক ডিসি মশিউর রহমান, সাবেক পুলিশ পরিদর্শক আবুল হাসান, মাজহারুল ইসলাম, বহিষ্কৃত সেনা অফিসার মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহাইল ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার সাবেক পরিচালক কমোডর মনিরুল গ্রেপ্তার হয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ছুটির ঘোষণা

শেয়ার
ছুটির ঘোষণা

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০-৩১ মার্চ ও ১ এপ্রিল কালের কণ্ঠ বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মার্চ এবং ১-২ এপ্রিল পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদুল ফিতর ১ এপ্রিল হলে ৩ এপ্রিলও পত্রিকা প্রকাশিত হবে না। তবে ঈদের ছুটিতে কালের কণ্ঠ অনলাইন চালু থাকবে।

সম্পাদক

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

শেয়ার
শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা গতকাল বিজয়নগরে শ্রমসচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন।ছবি : কালের কণ্ঠ

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি

দেশে জরুরি অবস্থা জারির উসকানি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই উসকানি দেন।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের মনে কী আছে (হোয়াটস অন বাংলাদেশস আর্মি চিফস মাইন্ড?) শিরোনামে ইন্ডিয়া টুডেতে একটি সংবাদ বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়। সেখানে মূলত সেনাপ্রধান বাংলাদেশের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বেন কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করা বিবিসি ও রয়টার্সের সাবেক সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের লেখায় বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একজন রক্ষণশীল ও পেশাদার কর্মকর্তা, যিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন। তাঁর সহকর্মীরা জানান, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশে সামরিক শাসন কার্যকর নয়। ইতিহাস, বিশেষ করে পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাঁকে এই দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কঠোর দমন-পীড়ন না চালাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ সতর্ক করেছিল এবং তা কার্যকর হয়েছিল।

তবে ওয়াকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি গুলি চালানোর অনুমতি দেননি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর উপদেষ্টাদের নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন।

সম্প্রতি কিছু ব্লগার ও অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা অভিযোগ করেছেন, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের প্রতি অনুগত এবং তিনি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন। তবে সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠরা বলেন, তিনি কোনো গোষ্ঠীর অনুগত নন, বরং তিনি পেশাদার ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুকরণ করে রাজনীতির বাইরে থাকতে চান।

এদিকে সেনাপ্রধান চাইলে দেশে জরুরি অবস্থা জারিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সমর্থন দিতে পারেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানিয়া আমীর।

আওয়ামী লীগপন্থী এই আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন; আর এ ক্ষেত্রে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান তাঁকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে পারেন। এর ফলে রাষ্ট্রপতি অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করে দ্রুত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবেন। সেনাবাহিনী সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে পারবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবে।

তবে তানিয়া আমীরের এমন মন্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা।

এক সেনা কর্মকর্তা ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, তিনি (সেনাপ্রধান) সেনা ও বাইরের সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চান। তিনি সেনা কর্মকর্তা ও অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা না করে তাড়াহুড়া করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। কারণ তিনি একটি ঐকমত্য চান।

অন্যদিকে এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, যাঁর অধীনে সেনাপ্রধান আগে চাকরি করেছেন, তিনি বলেন, যদি মনে হয় তাঁকে (সেনাপ্রধান) সরিয়ে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাহলে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করবেন।

ইন্ডিয়া টুডের সংবাদ বিশ্লেষণে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সম্প্রতি আফ্রিকা সফর শেষে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না, যা আমি করতে চাই না। এতে বোঝা যায়, তিনি কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হতে পারেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। তাঁর বাবা ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম কিনেছিলেন কুষ্টিয়া-৩ আসনের জন্য।

মন্তব্য

রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রমজানে সহনীয় পণ্যের দামে স্বস্তিতে রোজা পার

প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে অসাধু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। রমজান এলেই মাছ-মাংস, শাক-সবজি থেকে শুরু করে কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে বাড়তে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যায়। বিশেষ করে রোজার ভোগ্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনির বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। বছরের পর বছর ধরে এমন চিত্রই দেখে আসছে দেশবাসী।

তবে এবার ভিন্ন চিত্র। এবার রোজার ভোগ্যপণ্যের বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল। ভোক্তারা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার রজমানে পণ্যের দাম সবচেয়ে কম। বেশির ভাগ খাদ্যপণ্যই ক্রেতাসাধারণের হাতের নাগালে রয়েছে।

রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এবার রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামলে অসাধু ব্যবসায়ীদের যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল তা এখন ভেঙে গেছে। এ ছাড়া এ বছর রমজান সামনে রেখে ট্যাক্স-ভ্যাট কমার পাশাপাশি পণ্য আমদানি বেড়েছে, যার সুফল মিলছে বাজারে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা। এতে গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমে বিক্রি হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, দেশি রসুন, আলু ও আদাসহ কয়েকটি পণ্য। সবজি ও মুরগির বাজারেও কিছুটা স্বস্তি ছিল। 

এবার রমজানে পেঁয়াজ ও আলু গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া বেশির সবজি গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কম দামে বিক্রি হয়েছে। রমজানে ইফতারসামগ্রীর বাজারেও তেমন বাড়াবাড়ি নেই। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত তদারকি জোরদার করায় সবজির বাজার সিন্ডিকেট কাঁচা মরিচ ও বেগুনের দাম বাড়াতে পারেনি।

গত রমজানে রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, যা গত বছর রমজানে বিক্রি হয় ৪০ টাকা কেজি। পাকা টমেটো কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর বিক্রি হয় মানভেদে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এখন ঈদ ঘিরে মুরগির দাম বাড়লেও রোজার শুরু থেকে মাঝামাঝি পর্যন্ত অনেকটাই সহনীয় দরেই এবার মুরগি বিক্রি হয়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদ উপলক্ষে এখন মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজায় ব্রয়লার মুরগি কেজি ছিল ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, রোজার আগে আগে যা ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দাম কমে চিনি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানিয়েছেন, গত বছরের রমজানের তুলনায় এ বছর বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় রয়েছে গম, ডাল, মুরগি, ডিম, মাছ, সয়াবিন, পামঅয়েল, চিনি, লবণ, আলু, টমেটো, মরিচ, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও হলুদ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বলেছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় এবার রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয়।

এদিকে এবার রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারের একাধিক সংস্থা মাঠে আছে। সংস্থাগুলো হলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল, র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মনিটরিং টিম। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজারে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও করা হচ্ছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ