<p style="text-align:justify">গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের মামলায় দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি অনুসারীদের প্রধান সৈয়দ ওয়াসিকুল ইসলামসহ ২৩ জনকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।  </p> <p style="text-align:justify">বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিচারপতি মোহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের জামিন দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান।</p> <p style="text-align:justify">আদেশের পর আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, ‘টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে নিহতের ঘটনায় সাদপন্থীদের প্রধান মুরব্বি সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামসহ আসামিদের বেশির ভাগের বয়স ৮০ বছরের বেশি। মামলার আসামিদের সবাই সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠ ও গণ্যমান্য ব্যক্তি। হাইকোর্ট ২৩ জনকে আগাম জামিন দিয়েছেন। মামলার পুলিশ প্রতিবেদন দেওয়া পর্যন্ত তারা জামিনে থাকবেন।’</p> <p style="text-align:justify">তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষ দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি এবং বাংলাদেশের কাকরাইল মারকাজের মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারীদের বিরোধের শুরু ২০১৯ সালে। আগে এক মঞ্চ থেকে একবারই বিশ্ব ইজতেমা হলেও মতভেদের কারণে দুই পক্ষ বিশ্ব ইজতেমা দুইবারে করার সিদ্ধান্ত নেয়। মাঝে কোভিড মহামারির কারণে ইজতেমা দুই বছর বন্ধ থাকে। ২০২২ সাল থেকে ফের ইজতেমা হচ্ছে দুই পর্বের আয়োজনে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও টঙ্গীর তুরাগ তীরে দুই পর্বে হবে তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। সিদ্ধান্ত হয়, প্রথম পর্বে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি ইজতেমায় অংশ নেবেন ‘জুবায়েরপন্থীরা’। আর দ্বিতীয় পর্বে ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি অংশ নেবেন ‘সাদপন্থীরা’। গত ১৭ নভেম্বর এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।</p> <p style="text-align:justify">প্রথম পর্বের আয়োজকরা তাদের আয়োজন শেষে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত বিশ্ব ইজতেমার মাঠ প্রস্তুতি সংক্রান্ত কমিটিকে ৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টার মধ্যে ইজতেমার মাঠ বুঝিয়ে দেবেন। দ্বিতীয় পর্বের আয়োজনকারীরা একই দিন বিকালে কমিটির কাছ থেকে ইজতেমার মাঠ বুঝে নেবেন। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শেষে ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তারা কমিটির কাছে মাঠ হস্তান্তর করবেন।</p> <p style="text-align:justify">এর মধ্যে গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে ৫ দিনের জোড় ইজতেমা পালন করেন কাকরাইল মারকাজের মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা। এরপর ইজতেমা মাঠে ২০ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিনের জোড় ইজতেমা পালনের ঘোষণা দেন দিল্লির মাওলানা সাদের অনুসারীরা।</p> <p style="text-align:justify">তবে সাদের অনুসারীদের জোড় ইজতেমা করতে না দেওয়ার দাবিতে ১৩ ডিসেম্বর টঙ্গী-কালীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। সমাবেশের পর দাবি আদায়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর স্মারকলিপিও দেন বিক্ষোভকারীরা। সাদ অনুসারীদের ইজতেমা মাঠে জোড় পালন করতে সরকার থেকে অনুমতি নেই এমন দাবি করে ইজতেমা মাঠ না ছাড়ার ঘোষণা দেন তারা। কিন্তু সাদপন্থিরা ঘোষিত জোড় ইজতেমা পালন করতে ময়দানে আসতে থাকে। গত ১৭ ডিসেম্বর শেষ রাতে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। পরদিন দুপুর পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হয় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। এ ঘটনায় গত ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জুবায়েরপন্থি এস এম আলম হোসেন বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় ২৯ জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতপরিচয় আরও শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">মামলা হওয়ার পরদিন রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার একটি বাসা থেকে আসামি মোয়াজ বিন নূরকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের মুখপাত্র। তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ২৫ জন আসামি গত ২৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। সেদিন আদালত আবেদনগুলো কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছিলেন।</p>