ইসলামের দৃষ্টিতে

দাদার উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নাতি-নাতনির অধিকার

  • বিশেষ গবেষণা
মুফতি মাহমুদ হাসান
মুফতি মাহমুদ হাসান
শেয়ার
দাদার উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নাতি-নাতনির অধিকার

ইসলাম মানবরচিত বিধান নয় এবং তা মানবীয় আবেগ দ্বারা প্রভাবিতও নয়। বরং এটি হলো আল্লাহপ্রদত্ত ভারসাম্যপূর্ণ দ্বিন ও শরিয়ত। তাই সাম্য ও ইনসাফের আইন একমাত্র ইসলামই দিতে পারে। এ কথা যেমন সৃষ্টিজীবের অন্য সব হকের ক্ষেত্রে সত্য, তেমনি মিরাসের হকের ক্ষেত্রেও সত্য।

মৃতের উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে জীবিত আত্মীয়দের কার অংশ কতটুকু, তা শরিয়তের অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। শরিয়তের অনেক বিধান কোরআনে কারিমে বিস্তারিতভাবে নেই। কিন্তু মিরাসের বিধান ভিন্ন। তা এক এক করে কোরআন মাজিদে সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে।
হাদিস শরিফের বিশাল অধ্যায়ে প্রত্যেকের অংশ ও প্রাপ্য খুলে খুলে বর্ণিত হয়েছে। ফলে ১৪০০ বছর পর এসে কারো অংশের ব্যাপারে নতুন করে যুক্তি-তর্কের কোনো সুযোগ নেই।

আল্লাহ তাআলা ওয়ারিশদের প্রত্যেকের অংশ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, অতঃপর সতর্ক করে দিয়েছেন যে এই বণ্টন অনুসরণ না করলে আল্লাহর দেওয়া সীমা লঙ্ঘনের ফলে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : ‘আল্লাহ তোমাদের অংশ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করলেন যেন তোমরা এ ব্যাপারে ভ্রষ্টতার শিকার না হও।

আল্লাহ সব বিষয়ে অবগত।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৭৬)

মিরাসের বিধান বর্ণনা শেষে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এসব আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অনুসরণ করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত। তারা সেখানে স্থায়ী হবে এবং এটা মহাসাফল্য। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য হবে এবং নির্ধারিত সীমাকে লঙ্ঘন করবে তাকে দোজখে নিক্ষেপ করবেন।

সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং সেখানে তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৩-১৪)

ইসলামী আইন বনাম ‘মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১’
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে মুসলমান পরিচয় দিয়ে আজ কোরআন-সুন্নাহবিরোধী চিন্তা লালন করে এবং আল্লাহর আইনের বিরোধী আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এখানে মিরাসসংক্রান্ত এমনই একটি বিধান নিয়ে আলোচনা করব, যে আইনটি মুসলিম নামধারী পাকিস্তানি শাসক আইয়ুব খান ‘মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১’তে চালু করেছিলেন। তা হলো, দাদার জীবদ্দশায় পিতা মারা গেলে চাচাদের উপস্থিতিতে নাতি-নাতনিরা দাদার মিরাস পাবে কি না? আইনটির বিবরণ হলো—

৪ নম্বর ধারা : ‘যার সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে বণ্টিত হবে, তার পূর্বে তার কোনো পুত্র বা কন্যা মারা গেলে এবং উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি বণ্টনের সময় উক্ত পুত্র বা কন্যার কোনো সন্তানাদি থাকলে, তারা প্রতিনিধিত্বের হারে সম্পত্তির ওই অংশ পাবে, যা তাদের পিতা অথবা মাতা জীবিত থাকলে পেত।’

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের এ ধারাটি সম্পূর্ণ শরিয়তবিরোধী আইন। কোরআন-হাদিস ও ইজমায়ে সাহাবার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে আইয়ুব খানের শাসনামলে তা প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, স্বাধীন বাংলাদেশে আইয়ুব খানের ওই পরিত্যক্ত আইন স্থান করে নিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান নাগরিকের ওপর মুসলিম আইনের নামে সম্পূর্ণ কোরআন-হাদিসবিরোধী আইন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

‘মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১’-এর একটি ধারা শরিয়তবিরোধী?
শরিয়তের বিধান হলো, দাদার জীবদ্দশায় পিতা মারা গেলে চাচাদের উপস্থিতিতে নাতি-নাতনিরা দাদার মিরাস পাবে না। সহিহ বুখারিতে এ বিষয়টি নিয়ে স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদ আনা হয়েছে। সেখানে মিরাসের ব্যাপারে সর্বাধিক জ্ঞানী সাহাবি হজরত জায়েদ বিন সাবেত (রা.)-এর ফতোয়া উল্লিখিত হয়েছে, তিনি বলেন, ‘ছেলে থাকাবস্থায় (মৃত) ছেলের সন্তানাদি মিরাস পাবে না।’ (সহিহ বুখারি : ২/৯৯৭)

এটি সর্বযুগের ইসলামী আইনবিদদের সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তও। (উমদাতুল কারি : ২৩/২৩৮)

উত্তরাধিকার বণ্টনের ক্ষেত্রে নিকটবর্তী দূরবর্তীর ওপর প্রাধান্য পাবে। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোরআনে নির্দেশিত নির্ধারিত অংশের অধিকারীর অংশ তাদের দিয়ে দাও। এরপর যা অবশিষ্ট থাকবে তা সবচেয়ে নিকটবর্তী পুরুষ আত্মীয় পাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৭৩৫, সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৬১৫, আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৯৮, তিরমিজি, হাদিস : ২০৯৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৭৪০)

আর এ কথা সবারই জানা যে কারো নাতির চেয়ে ছেলেই অপেক্ষাকৃত বেশি নিকটবর্তী।

ইসলামের উত্তরাধিকার আইনের মূলনীতি বনাম যুক্তি
একজন মুমিনের কাজ হলো আল্লাহর হুকুম জানা। যখন কোরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে আল্লাহর হুকুম জানা হয়ে গেল, তখন বিশ্বাস ও কর্মের জন্য অন্য কোনো কিছুর অপেক্ষা নেই। যদি বিধানটির রহস্য ও তাৎপর্য নিশ্চিত ও পূর্ণাঙ্গভাবে জানা না যায় কিংবা একেবারেই জানা না যায়, তবু তার বিশ্বাস ও কর্মে কোনো পার্থক্য সূচিত হবে না।

কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে ইসলামের বিধানের পেছনে কোনো যুক্তি নেই। বরং ইসলামের প্রত্যেকটি বিধানের পেছনেই অনেক যুক্তি আছে, হয়তো কোনোটির যুক্তি মানুষের সহজে বুঝে আসে, আর কিছুর যুক্তি সহজে বুঝে আসে না। যুক্তি বুঝে না এলেই কি আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করতে হবে? অথচ ইসলাম অর্থই হচ্ছে আত্মসমর্পণ। মুসলিম দাবি করলাম আর আল্লাহর বিধানের সামনে আত্মসমর্পণ করলাম না, তা চরম হাস্যকর। এ রকম ব্যক্তি আল্লাহর ভাষ্যে মুসলিম নয়।

প্রকৃতপক্ষে আমাদের আলোচ্য বিধানটিও পরিপূর্ণ যুক্তিবহির্ভূত নয়। তা বোঝার জন্য একটু আন্তরিকতা ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা রাখা প্রয়োজন।

উত্তরাধিকার বণ্টনের জন্য কোরআন যে মূলনীতি নির্ধারণ করেছে তা এই নয় যে যারা অভাবগ্রস্ত অথবা সহানুভূতি পাওয়ার যোগ্য, তাদের এই সম্পত্তি দেওয়া হবে। বরং কোনো ধর্মেই দারিদ্র্যের ভিত্তিতে উত্তরাধিকার বণ্টনের বিধান নেই। যদি তা-ই হতো, তাহলে নির্দেশ হতো যে কেউ মারা গেলে তার স্বজনদের মধ্যে যে ব্যক্তি সবচেয়ে দরিদ্র, অভাবী ও প্রয়োজনগ্রস্ত সে মিরাস পাবে। তদ্রূপ একই বাবার দুই সন্তানের মধ্যে যদি একজন অত্যধিক দরিদ্র ও অন্যজন ধনী, সে ক্ষেত্রে কি এ কথা কেউ মেনে নেবে যে এখানে দরিদ্র ছেলেকে বাবার সম্পদ থেকে সব সম্পদ দিয়ে দেওয়া হবে। আর স্বজনদের মধ্যে দরিদ্র কেউ না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে যে বেশি অভাবগ্রস্ত তাকে দেবে। বরং এটি হবে ওয়ারিশদের ওপর স্পষ্ট জুলুম। যদিও অভাবী-দুঃখীদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য দান, ওয়াক্ফ ও অসিয়তসহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি শরিয়তে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আর এতিমের লালন-পালনের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের চেয়ে বেশি দুনিয়ায় কে উদ্বুদ্ধ করেছেন?

পবিত্র কোরআনে ১১টি সুরায় ২২টি আয়াতে এতিমদের অধিকার সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে।

কিন্তু তার পরও মিরাস বণ্টনের ভিত্তি কারো প্রয়োজনের ওপর করা হয়নি। কারণ, উত্তরাধিকার সম্পদ বণ্টিত হয় আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে, প্রয়োজনীয়তার বিচারে নয়।

আবার আত্মীয়তার ব্যাপারটিও যদি ব্যাপকভাবে ধরা হয়, তাহলে পৃথিবীর সব মানুষই একে অপরের আত্মীয় হবে। কেননা সব মানুষই বাবা আদম (আ.)-এর সন্তান। এ বিচারে সবাই সবার ওয়ারিশ হয়। অথচ তা একটি অযৌক্তিক ও অসম্ভব বিষয়।

অতএব, যুক্তি ও বাস্তবতা এটিই যে আত্মীয়তার নৈকট্যের বিচারেই উত্তরাধিকার সম্পদ বণ্টিত হবে এবং নিকটতম আত্মীয়ের বর্তমানে অপেক্ষাকৃত দূরতম আত্মীয় বঞ্চিত হবে। আর শরিয়তের মূলনীতিও হচ্ছে এটিই যে আত্মীয়তার দিক থেকে যে ব্যক্তি মৃতের ‘নিকটতর’ তারাই তার উত্তরাধিকারী হবে। নিকটতর আত্মীয়ের বর্তমানে অপেক্ষাকৃত দূর সম্পর্কের আত্মীয় ওয়ারিশ হবে না। কেননা মৃত্যুপরবর্তী অবস্থায় মৃতের কাফন-দাফনসহ সব দায়-দায়িত্ব ও ঋণ পরিশোধের দায়িত্বও নৈকট্যের ভিত্তিতে জীবিত আত্মীয়দের ওপর ন্যস্ত হয়। আর পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়ম এটিই যে, যে ব্যক্তি যে জিনিসের দায়িত্ব বহন করে, সে ওই জিনিসের ফলও ভোগ করার ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে অগ্রগণ্য। 

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মা-বাবা ও নিকটতম আত্মীয়-স্বজনরা যে ধন-সম্পত্তি রেখে গেছে, তাতে পুরুষদের অংশ রয়েছে। আর মেয়েদেরও অংশ রয়েছে সেই ধন-সম্পত্তিতে, যা মা-বাবা ও নিকটতম আত্মীয়-স্বজনরা রেখে গেছে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭)

কারা কারা মৃত ব্যক্তির নিকটতম তা মানবীয় বুদ্ধি-বিবেচনার মাধ্যমে উদ্ঘাটনের জন্য ছেড়ে না দিয়ে কোরআন নিজেই তার ব্যাখ্যা দিয়েছে (দ্রষ্টব্য সূরা : নিসার উত্তরাধিকার আয়াতগুলো)। এখানেই শেষ নয়, ব্যাখ্যার মাঝখানেই কোরআন পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছে : ‘তোমাদের পিতা ও সন্তানদের মধ্যে কে তোমাদের জন্য বেশি উপকারী, তোমরা তা জানো না। নিশ্চয়ই এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১)

কোরআনে উল্লিখিত নির্ধারিত অংশ প্রাপকদের বাইরে অতিরিক্ত অংশ প্রাপকদের উত্তরাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বংশধরদের কয়েকটি স্তরে ভাগ করে দিয়েছে। নিচে তার বিবরণ দেওয়া হলো—

ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি = প্রথম স্তর

বাবা-দাদা = দ্বিতীয় স্তর    

ভাই-বোন = তৃতীয় স্তর

চাচা-ফুফু, চাচাতো ভাই = চতুর্থ স্তর

ওপরের তালিকা থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে পিতা, ভাই ও চাচাদের তুলনায় পুত্ররা প্রথম স্তরে রয়েছে। তার বা তাদের উপস্থিতিতে অন্য স্তরের কারোরই মিরাসের অধিকারী হওয়ার সুযোগ নেই। আবার পুত্র ও প্রপৌত্র উভয়েই একই স্তরের হলেও পৌত্রের তুলনায় পুত্র মৃত ব্যক্তির অপেক্ষাকৃত অধিকতর নিকটবর্তী। মৃত্যুপরবর্তী অবস্থায় মৃতের কাফন-দাফন ও ঋণ পরিশোধসহ সব দায়-দায়িত্বও প্রাথমিকভাবে জীবিত ছেলে-মেয়েদের ওপর বর্তায়, তারা না থাকলে নাতি-নাতনিদের ওপর। নাতি-নাতনিদের বাবার উপস্থিতিতে তারা যেমন দাদার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে না, কেননা তাদের চেয়ে অতি নিকটবর্তী হচ্ছে তাদের বাবা-চাচারা। তদ্রূপ বাবা মারা যাওয়ার পরও তাদের চাচাদের উপস্থিতিতেও তারা সম্পত্তি পাবে না, কেননা চাচাদের চেয়ে তারা অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী। মৃত পুত্র যেমন বাবার দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়, তদ্রূপ তার সন্তানরাও তাদের চাচাদের উপস্থিতিতে দাদার দায়িত্বশীল নয়। তাই স্বাভাবিক নিয়মে জীবিত পুত্রের উপস্থিতিতে পৌত্রদের থেকে তারাই বেশি অগ্রাধিকারযোগ্য বিবেচিত হবে।

নাতির সম্পদে দাদার অধিকার
উক্ত মূলনীতির আলোকে আমাদের কাছে এটিও স্পষ্ট হলো যে আমরা যে নাতি-নাতনি দাদার সম্পত্তি থেকে অংশ পাওয়ার আলোচনা করছি, ওই নাতি-নাতনি যদি দাদার আগে মারা যায়, তাহলে তাদের পিতা বেঁচে থাকা অবস্থায় দাদা তাদের সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে না। এর কারণ ওই মূলনীতিটিই, কেননা তাদের পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় পিতা দাদা থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি নিকটবর্তী। একইভাবে ওই নাতি-নাতনি যদি বড় হয়ে বিয়েশাদির পর তাদের সন্তান হয়ে যাওয়ার পর দাদার জীবদ্দশায় মারা যায়, তাহলে তাদের সন্তানাদি তাদের অধিক নিকটবর্তী হওয়ায় মৃতের দাদা মৃত নাতির উত্তরাধিকারী হবে না। এখানেও আলোচ্য মূলনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি কার্যকর। এখানেও যদি আমরা বৃদ্ধ দাদার অধিকার নিয়ে চিন্তা করি, তাহলে এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধ দাদার অধিকার হরণের দাবি করা যায়! তবে আমরা ওই বৃদ্ধের জন্য কোনো দাবি করি না এবং এ বিষয়ে ইসলামবিরোধী কোনো আইন প্রণয়নের চিন্তা করা হয়নি। কিন্তু শরিয়ত এ ক্ষেত্রেও বৃদ্ধ দাদাকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি না দিলেও দাদার ছেলেদের অনুপস্থিতিতে নাতিদের ওপর তার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব দিয়ে বার্ধক্যে উপনীত দুর্বল বৃদ্ধের সমস্যা সমাধান করেছে।

কিছু সরল যুক্তি ও তার খণ্ডন
যুক্তি ১ : কেউ কেউ এ যুক্তি দেয় যে ইসলামে স্থলাভিষিক্ত আইন রয়েছে। তাই বাবার মৃত্যুর পর ওই বাবার ছেলেরা বাবার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে দাদার সম্পদ থেকে ওই পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া যুক্তিযুক্ত, যে পরিমাণ তার বাবা জীবিত থাকলে পেত।

খণ্ডন : ইসলামে স্থলাভিষিক্তের আইন গ্রহণযোগ্য। তবে তা ব্যাপকভাবে সীমাহীন সব ক্ষেত্রে নয়, বরং তা ইসলামী বিধি অনুসারে গ্রহণযোগ্য। নচেৎ আমাদের বলতে হবে যে কারো মা ও নানি না থাকলে তার মামা-খালারা তার স্থলাভিষিক্ত হবে, স্ত্রী না থাকলে তার মা-বাবারা তার স্থলাভিষিক্ত হয়ে জামাতা থেকে সম্পত্তি পাবে ইত্যাদি। অথচ এরূপ দাবি আমরা কেউই করি না। প্রকৃতপক্ষে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধি হলো—নিকটতম আসাবা আত্মীয় কেউ না থাকলে তার পরবর্তী নিকটের আত্মীয় সম্পদ পাবে। ওই স্তরের কেউ না থাকলে এর পরের স্তর পাবে। কিন্তু আলোচ্য মাসআলায় যেহেতু নিকটতম ছেলে আছে, সেখানে নাতি পাবে না। হ্যাঁ, যদি কোনো ছেলে না থাকত, তখন এর পরের নিকটবর্তী হিসেবে নাতিরা অবশ্যই পেত।

যুক্তি ২ : কোনো ব্যক্তির একাধিক ছেলে ছিল। এর মধ্যে এক ছেলে বাবার জীবদ্দশায় কিছু সন্তান রেখে মারা যায়। পরবর্তী সময়ে তার বাবা অর্থাৎ সন্তানদের দাদা মারা যাওয়ার পর যখন তার সম্পত্তি জীবিত ছেলেদের মাঝে ভাগ করা হয়, তখন জীবিত ছেলেদের মধ্যস্থতায় জীবিত ছেলেদের সন্তানরাও দাদার সম্পত্তি থেকে অংশ পেল। কিন্তু মৃত ছেলের সন্তানরা তো দাদার সম্পত্তি থেকে কিছুই পেল না, অথচ সে জীবিত থাকলে তার সন্তানরা তার মধ্যস্থতায় সম্পদ পেত এবং তার সন্তানরাই এতিম হওয়ার কারণে অধিক সহানুভূতির উপযুক্ত।

খণ্ডন : নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ইনসাফের সঙ্গে ভাবলে এ কথা বোঝা যায় যে এ প্রশ্নের ভিত্তি দুটি জিনিসের ওপর, আর ওই দুটি জিনিসই ভুল, অতএব যুক্তিটাই ভুল।

প্রথমত, জীবিত ছেলেদের সন্তানরা দাদার মিরাস পেয়েছে আর মৃত ছেলের সন্তানরা দাদার মিরাস পায়নি—এরূপ চিন্তা বা কথাটাই ভুল। কেননা এতে একজনের মালিকানার অধিকার অন্যজনের দিকে সম্বন্ধ করা হচ্ছে। বাবার মালিকানাকে ছেলের মালিকানা ধরা হচ্ছে। অথচ উভয়ের মালিকানা ভিন্ন। যদিও স্বাভাবিকভাবে এমন হয় যে বাবার মালিকানা সম্পদ থেকে সন্তানরা উপকৃত হয়। এর উত্তর হচ্ছে, প্রথম কথা হলো, আমাদের সমাজে এমন ঘটনারও অভাব নেই যে দাদার সম্পদ পুত্রের দীর্ঘ জীবনে সব খেয়েদেয়ে শেষ হয়ে যায়, তার মৃত্যুর পর ওই সম্পদ থেকে তার সন্তানরা আর কিছুই পায় না। অথবা দীর্ঘ হায়াত না পেলেও সম্পদের সঠিক সংরক্ষণ ও পরিচালনার অভাবে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে বিনাশ হয়ে যায়। এ অবস্থায় জীবিত ছেলের ঘরের নাতিরা তার দাদার সম্পদ থেকে কি কোনো উপকৃত হতে পারল?

আর যদি কারো সঠিক পরিচালনা ও সংরক্ষণের কারণে দাদার সম্পত্তি নাতিদের পর্যন্ত পৌঁছে, তাহলে ওই সম্পত্তি মূলত তাদের বাবার সম্পদ, দাদার নয়। বাবার সুষ্ঠু ও দক্ষ পরিচালনায়ই তা পেল। তাই সে বাবার সম্পদ থেকেই অংশীদার হলো, দাদার সম্পদ থেকে নয়। অতএব যে সম্পদ পেল, তার বাবার সম্পদ থেকেই পেল, আর যে বঞ্চিত হলো, তার বাবা সম্পত্তি না রেখে যাওয়ার কারণেই বঞ্চিত হলো। এখন দাদার সম্পত্তির ব্যাপারে উভয় ধরনের ঘটনাই ঘটা সম্ভব। এ অবস্থায় কেউ যদি সমতা রক্ষা করতে যায়, তা কি আদৌ সম্ভব হবে?

তা ছাড়া নাতিদের ওপর দয়াপরবশ হয়ে কোরআনের আইনের বিরুদ্ধাচরণ করতে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করা হলো, এমনও হতে পারে যে তাদের বাবা শতকোটি টাকার সম্পদ রেখে মারা গেল, যার তুলনায় দাদার পূর্ণ সম্পদও কিছু নয়। তাহলে এ ক্ষেত্রে কোরআনবিরোধী উক্ত আইনের কোনো উপকারিতাই রইল না।

দ্বিতীয়ত, মৃত ছেলের এতিম সন্তানরাই অধিক সহানুভূতি পাওয়ার যোগ্য। কেননা তারা বাবা হারিয়ে অসহায় হয়ে গেছে। প্রশ্নের ভিত্তি যদি এটা হয়, তাহলে তা চরম অজ্ঞতার পরিচায়ক। কেননা আমরা আগেই মূলনীতি বর্ণনা করেছি যে উত্তরাধিকারের মূলভিত্তি প্রয়োজনীয়তার ওপর নয়, আত্মীয়তার নৈকট্যই হলো মূলভিত্তি। নচেৎ অনেক মৃতের আত্মীয়রা বঞ্চিত হবে এবং পাড়া-প্রতিবেশীরাই সম্পদ পাবে। এমনকি শুধু আত্মীয়তাই ভিত্তি নয় বরং আত্মীয়তার নৈকট্য। নতুবা পৃথিবীর সব মানুষই আদমসন্তান হিসেবে একে অপরের আত্মীয় হয়ে মিরাস পেত। যখন আত্মীয়তার নৈকট্যই হলো মূলভিত্তি, তাই নিকটতম আত্মীয়ের উপস্থিতিতে তার চেয়ে দূরের আত্মীয়রা বঞ্চিত হবে। তা ছাড়া এখানে এমন একটি জুলুমও প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে যে মৃত ছেলের সন্তানদের দাদার সম্পদ থেকে সম্পদ দেওয়া হলো, কিন্তু জীবিত ছেলেদের সন্তানদের বঞ্চিত করা হলো, অথচ তারা সবাই মৃতের সমান নৈকট্যের অধিকারী।

উক্ত আলোচনায় প্রমাণিত হলো যে যুক্তিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। (বিস্তারিত দেখুন : জাওয়াহিরুল ফিকহ : ৭/৫৩০-৫৪৫)

একটি সমস্যা ও তার সমাধান
আমাদের সবারই একটি সাধারণ প্রশ্ন হচ্ছে, পিতৃহীন এতিম শিশুরা দাদার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হলে তাদের ভরণ-পোষণের ও ভবিষ্যতে চলার উপায় কী?

এর উত্তরে ইসলামী শরিয়ত মতে, তাদের জন্য ছয়টি পন্থায় ভরণ-পোষণ ও ভবিষ্যতে চলার উপায়-অবলম্বন করে দেওয়া যায় :

সমাধান ১ : দাদার জীবদ্দশায় বাবার অনুপস্থিতিতে ছোট ও উপার্জনে অক্ষম নাতি-নাতনির ভরণ-পোষণ ও বাসস্থান দাদার ওপর বাধ্যতামূলক। বাবার অনুপস্থিতিতে তার নিকটবর্তী আত্মীয়ের ওপর বর্তাবে, যথা প্রথমে মা ও দাদা-দাদি, তারপর নানা-নানি, তারপর ভাই-বোন, তারপর মামা-খালা ও চাচা-ফুফু প্রমুখ। এদের ওপর আত্মীয়তার নৈকট্যের ভিত্তিতে ভরণ-পোষণ ও বাসস্থানের দায়িত্ব বর্তাবে। যদি সমপর্যায়ের কোনো আত্মীয় থাকে, তাহলে তাদের ওপর সমভাবে দায়িত্ব বর্তাবে। (ফাতহুল কদির : ৪/৪১০, ৪২১)

সমাধান ২ : দাদার ছেলেদের প্রয়োজনীয়তা বেশি না থাকলে তার জীবদ্দশায় চাইলে নিজের সব সম্পত্তি নাতি-নাতনিদের নামে লিখে দিয়ে তাদের মালিক বানিয়ে দিতে পারে। এতে কারো প্রশ্ন করার অধিকার নেই। কেননা তার জীবদ্দশায় তার সম্পদ সে যেথায় ইচ্ছা খরচ করতে পারে। হ্যাঁ, ছেলে-মেয়েদের প্রয়োজন থাকলে সে ছেলে-মেয়েদের জন্য তাদের প্রাপ্য অংশ রেখে বাকি সম্পদ নাতি-নাতনিদের লিখে দিতে পারে, এতে শরিয়ত নিষেধ করেনি। বরং শরিয়ত নাবালেগ এতিম শিশুদের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য সবাকেই উদ্বুদ্ধ করেছে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ৪/৩৯১)

সমাধান ৩ : দাদা চাইলে তার আংশিক বা পূর্ণ সম্পদ নাতিদের জন্য ওয়াক্ফ করে যেতে পারে।

সমাধান ৪ : দাদা চাইলে তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ থেকে নাতি-নাতনিদের জন্য অসিয়ত তথা উইল করে যেতে পারে, যা পালন করা ওয়ারিশদের ওপর বাধ্যতামূলক।

সমাধান ৫ : কোরআনে কারিমে ওয়ারিশদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, তারা যেন মিরাস বণ্টনের সময় অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের প্রতি খেয়াল রেখে তাদেরও তা থেকে কিছু অংশ দেওয়া, যদিও তা ঐচ্ছিক, বাধ্যতামূলক নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ধন-সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারার সময় আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও মিসকিনরা এলে তাদেরও ওই সম্পদ থেকে কিছু দিয়ে দাও এবং তাদের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮)

সমাধান ৬ : নিকটাত্মীয়ের অনুপস্থিতি কিংবা অক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ভরণ-পোষণ ও বাসস্থানের দায়িত্ব সরকারের। সরকারি কোষাগার থেকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। রাসুল (সা.)-এর একটি বক্তব্য থেকে এ বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তি ধন-সম্পদ রেখে গেলে তা তার ওয়ারিশরা পাবে, আর যে দুস্থ পরিবার রেখে যাবে আমি তার অভিভাবক।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৭৪৫) এ ক্ষেত্রে কেউ যদি বলে, বর্তমানে ইসলামী আইন ও ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রচলিত না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এর উত্তরে আমরা বলব, উক্ত ইসলামী শাসনব্যবস্থা না থাকার সমস্যার সমাধান এটা নয় যে টুটাফাটা যে ইসলামী আইনগুলো ভুলেচক্করে রয়ে গেছে, সেগুলোও বিদায় করে দেওয়া নয়, বরং ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম করে উক্ত সমস্যাসহ আরো যাবতীয় সমস্যা সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়া চাই।

উক্ত ছয় সমাধানের পর নাতি-নাতনিদের আর সমস্যা থাকার কথা নয়। এতৎসত্ত্বেও যারা দাবি করে বা ভাবে যে কোরআনের চেয়ে তাদের যুক্তি অগ্রগামী। তাদের আমরা আল্লাহ তাআলার এই সতর্কবাণী স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার আয়াতসমূহকে বিকৃত করে তারা আমার অগোচর নয়। শ্রেষ্ঠ কে? যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে, নাকি যে কিয়ামতের দিন নিরাপদ থাকবে? তোমাদের যা ইচ্ছা করো। তোমরা যা করো তিনি তা দেখেন।’ (সুরা : ফুসসিলাত,

আয়াত : ৪০)

এ কথাটিও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে মিরাসের কোরআনি হিসসাসমূহকে আল্লাহ তাআলা তাঁর পক্ষ থেকে নির্ধারিত বণ্টন বলেছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে এগুলো আল্লাহর এঁকে দেওয়া সীমারেখা, যার লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (দেখুন : সুরা নিসা : ১৩, ১৪)

মহান আল্লাহ সত্য অনুধাবন করে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

দৈনিক কালের কণ্ঠ নারী, শিশু ও গণমানুষের অধিকার বিষয়ে সচেতন ও সচেষ্ট এবং দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধাশীল। দাদার উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নাতি-নাতনির অধিকার বিষয়ে প্রচলিত আইনের সঙ্গে ইসলামিক স্কলারদের ভিন্নমত রয়েছে।

এ বিষয়ে তাঁদের অভিমত দেওয়ারও অধিকার রয়েছে। এ লেখার উদ্দেশ্য শুধু ইসলামের ব্যাখ্যা বা ইসলামিক স্কলারদের বক্তব্য তুলে ধরা।—বি. স.

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আজকে নামাজের সময়সূচি, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকে নামাজের সময়সূচি, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সংগৃহীত ছবি

আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৯ শাবান ১৪৪৬

ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহরের সময় শুরু ১২টা ১৬ মিনিট। 
আসরের সময় শুরু - ৪টা ১৮ মিনিট।
মাগরিব- ৫টা ৫৯ মিনিট।
এশার সময় শুরু - ৭টা ১৩ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৫টা ১৫ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত ৫টা ৫৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ২৯ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
প্রশ্ন-উত্তর

পশু বর্গার সঠিক পদ্ধতি কী?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
পশু বর্গার সঠিক পদ্ধতি কী?
সংগৃহীত ছবি

প্রশ্ন : আমাদের দেশে প্রথা আছে যে এক ব্যক্তি গরু ক্রয় করে অন্য ব্যক্তিকে দেয় পালন করার জন্য। শর্ত হলো, গরু পালনের পর বিক্রি করে মূল টাকা মালিককে ফিরিয়ে দেবে, শুধু লভ্যাংশ সমান ভাগে ভাগ হবে। এখন আমার জানার বিষয় হলো, উল্লিখিত নিয়মে গরু বর্গা দেওয়া জায়েজ হবে কি? যদি না হয় তাহলে কোন পদ্ধতিতে জায়েজ হবে?

-আশিক, কুমিল্লা

উত্তর : প্রশ্নে উল্লিখিত পদ্ধতিতে গরু বর্গা দেওয়া ফাসেদ ইজারার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় নাজায়েজ। তবে কোনো কোনো আলেম পদ্ধতিটির সমাজে ব্যাপক প্রচলন হওয়ায় জায়েজ বলেছেন।

তা সত্ত্বেও নিম্নে বর্ণিত বর্গা দেওয়ার সঠিক দুটি পদ্ধতি থেকে কোনো একটি অবলম্বন করা উত্তম। ১. গরু লালন-পালনের পারিশ্রমিক (টাকা বা নির্দিষ্ট বস্তু) ও সময় নির্ধারণ করে নেওয়া। ২. গরুর মূল্যের যেকোনো একটি অংশে যেমন—১০০ টাকার অংশে হলেও লালন-পালনকারী শরিক হওয়া। এ ক্ষেত্রে মুনাফা সমানভাবে বণ্টন করা বৈধ হবে।
(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ৪/৫০৪, ফাতাওয়ায়ে হক্কানিয়া : ৬/২৪৩)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

শত্রুর ক্ষতি থেকে বাঁচার দোয়া

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
শত্রুর ক্ষতি থেকে বাঁচার দোয়া
প্রতীকী ছবি

শত্রুরা মুমিনের ক্ষতি করার জন্য ওত পেতে থাকে। তাই সব ধরনের ক্ষতি বাঁচতে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা মুমিনের কর্তব্য। রাসুল (সা.) শত্রুর হামলার ভয় করলে একটি দোয়া পড়তেন। তা হলো-

 اللَّهُمَّ إنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُورِهِمْ وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شُرُورِهِمْ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফি নুহুরিহিম অনাউযু বিকা মিন শুরুরিহিম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আপনাকে তাদের মোকাবেলায় রাখছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।

হাদিস আবু মুসা আশআরি (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) যখন কোনো শত্রুদলকে ভয় করতেন তখন এই দোয়া পড়তেন।

মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের শত্রুর অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

মন্তব্য

ইসলামে বছরের যেসব দিন ফজিলতপূর্ণ

মাওলানা হেলাল খান
মাওলানা হেলাল খান
শেয়ার
ইসলামে বছরের যেসব দিন ফজিলতপূর্ণ

ইসলামে কোনো রাত-দিন, সর্বোপরি কোনো মুহূর্ত  অশুভ কিংবা অকল্যাণকর নয়। মানুষ যেকোনো সময়কে সঠিক কাজের মাধ্যমে ফলপ্রসূ করতে পারে। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক রাত-দিনকে তুলনামূলক বেশি মর্যাদা দিয়েছেন। আজ আমরা আলোচনা করব এমন কিছু দিন নিয়ে যে দিনগুলোকে মহান আল্লাহ বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন।


 
১. আশুরা : পৃথিবীর ইতিহাসে এই দিনে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। শুধু ইসলাম ধর্ম নয়, অন্যান্য আসমানি ধর্মেও এই দিনটি সম্মানিত। এ দিন রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি আশাবাদী যে আশুরার রোজার অছিলায় আল্লাহ তাআলা অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)

২. দুই ঈদের দিন : আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন হিজরত করে মদিনায় আসেন তখন মদিনাবাসীর দুটি উৎসবের দিবস ছিল।

রাসুল (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, কী হিসেবে তোমরা এ দুদিন উৎসব পালন করো? তারা বলল,  ইসলাম-পূর্ব যুগে আমরা এ দিন দুটিতে উৎসব পালন করতাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের এ দুটি দিনের পরিবর্তে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন, ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২০০৬)

৩. আরাফার দিন : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফার দিনের (৯ জিলহজ) রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ মিটিয়ে দিবেন। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)

৪. আইয়ামে তাশরিক : আইয়ামে তাশরিক হলো ৯ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন।

আইয়ামে তাশরিক এবং তার আমল সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০৩)

এ আয়াতে ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর ওপর একবার তাকবিরে তাশরিক ওয়াজিব হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত আছে। (আত-তাফসিরুল কুরতুবি : ৩/৪; বাদায়িউস সানায়ি : ১/১৯৬)

৫. আইয়ামে বিজ : রাসুল (সা.) বলেন, তুমি যদি মাসে তিন দিন রোজা রাখো তাহলে ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোজা রেখো। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২১৪৩৭)

এ রোজার ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সংযমের মাস (রমজান) ও প্রতি মাসে তিন দিন সারা বছর রোজার সমতুল্য।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৫৭৭)

৬. জিলহজের প্রথম ১০ দিন : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের ১০ দিনের নেক আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই...।

(বুখারি, হাদিস : ৯৬৯)

৭. জুমার দিন : পবিত্র কোরআনে সুরা জুমা নামে একটি আলাদা সুরাই অবতীর্ণ হয়েছে। জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিন সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ।’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস : ১৭২৮)

৮. সোম ও বৃহস্পতিবার : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল উপস্থাপন করা হয়। সুতরাং আমি চাই যে আমার আমল পেশ করার মুহূর্তে যেন আমি রোজা অবস্থায় থাকি। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৭৬৩৯)

আরেক হাদিসে আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৩৮)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে উক্ত দিনগুলোর ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন।
 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ