বিশ্বব্যাপী পরকীয়া পারিবারিক অশান্তির কারণ। এর জের ধরে ভেঙে পড়ছে পরিবার কাঠামা। ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও স্বপ্ন-সাধ। কখনো কখনো খুনখারাবির মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটছে পরকীয়ার কারণে।
পরকীয়া প্রতিরোধে ইসলামী অনুশাসন
উম্মে আহমাদ ফারজানা

পরকীয়া মানুষকে ব্যভিচারের দিকে টেনে নেয়।
নিম্নে পরকীয় প্রতিরোধে ইসলামী অনুশাসন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো—
আল্লাহর ভয় : বিবাহের খুতবায় পবিত্র কোরআনের তিনটি আয়াত পাঠ করতে হয়, যা যথাক্রমে সুরা নিসা, আয়াত : ১, সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০২ এবং সুরা আহজাব, আয়াত : ৭০-৭১।
এই তিন আয়াতের মূলকথা হলো আল্লাহর ভয় অন্তরে সদা জাগ্রত রাখা। গভীর আল্লাহভীতি না থাকলে পারিবারিক জীবনের এই সঙ্গিন পথ পাড়ি দেওয়া কঠিন। প্রকৃত আল্লাহভীতি মানুষকে সব ধরনের পাপাচার থেকে বিরত রাখতে পারে।
বিবাহের ক্ষেত্রে সমতাবিধান : মুসলিম বিবাহে সমতাবিধান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটাকে ‘কুফু’ বলা হয়।
ছেলে-মেয়ের সম্মতিতে বিয়ের ব্যবস্থা করা : বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর সম্মতি থাকা জরুরি। আর পরকীয়া থেকে সমাজকে বাঁচাতে হলে বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রী একে অন্যকে দেখার ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে বিয়ের পরে তাদের মধ্যে ভালোবাসা তৈরি হবে। অনেক পরিবার এ ক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ের মতামতকে গুরুত্ব দেয় না বা তাদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করে না। অথচ এটা ইসলামবিরোধী। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে, তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)
পরিবারে ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা থাকা : পরিপূর্ণ ইসলামী পরিবেশ ও ইসলামী শিক্ষা পরকীয়ার মতো পরিবার বিধ্বংসী পাপ থেকে নারী-পুরুষকে রক্ষা করতে পারে। ইসলামী শিক্ষা, পর্দা প্রথা, দৃষ্টি নিম্নগামী রাখার নির্দেশ, বিনা প্রয়োজনে মাহরাম থেকে দূরে থাকার বাস্তবধর্মী আমলগুলো মানুষকে পরকীয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। স্ত্রীর দ্বিন-দুনিয়ার প্রয়োজনমাফিক শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করাও স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকার। এ ক্ষেত্রে কোরআনে নির্দেশ হলো, ‘তোমরা তোমাদের নিজেকে ও পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
গায়র মাহরাম থেকে দূরে থাকা : মাহরাম নয়, এমন পরপুরুষের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও যোগাযোগ না রাখা। কেননা চারিত্রিক নির্মলতা ও মানসিক পবিত্রতা রক্ষায় এটি খুবই জরুরি। কোনো গায়র মাহরাম নারীর একাকী অবস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অশ্লীল কাজে লিপ্ত করা শয়তানেরই কাজ। এ জন্যই ইসলাম উক্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার আজকের এই দিনের পর থেকে কোনো পুরুষ একজন বা দুজন পুরুষ সঙ্গী ছাড়া কোনো স্বামী থেকে দূরে থাকা নারীর সঙ্গে নির্জনে দেখা করতে পারবে না। (মুসলিম, হাদিস : ২১৭৩)
পরিপূর্ণ পর্দা করা : পরকীয়া থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় হলো পরিপূর্ণ পর্দা মেনে চলা। বেপর্দা হয়ে চলাচলের কারণে একে অন্যের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়, নিজেদের মধ্যে অবৈধ ভাব বিনিময় হয়, স্বামী-স্ত্রীর দুর্বল দিক নিয়ে কথা হয় এবং পরবর্তী সময়ে পরকীয়ার দিকে ধাবিত হয়। মুসলিম নারীর ওপর পর্দা ফরজ করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিনা স্ত্রীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের বড় চাদরের কিছু অংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। বস্তুত আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ (সুরা : আহজাব, হাদিস : ৫৯)
সফরে সঙ্গে মাহরাম থাকা : পরকীয়া থেকে বাঁচতে দূরের সফর হলে অবশ্যই স্বামী অথবা মাহরাম সঙ্গে থাকতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, নারীরা মাহরাম (যার সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ) ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে সফর করবে না। মাহরাম কাছে নেই, এমতাবস্থায় কোনো পুরুষ কোনো নারীর কাছে গমন করতে পারবে না। (বুখারি, হাদিস : ১৮৬২)
পরিবারের সঙ্গে থাকা : আজকাল বিভিন্ন কারণে নারী-পুরুষ আলাদা থাকে। ফলে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় তারা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে যাদের স্বামী দূরে অবস্থান করে তাদের সঙ্গে পরপুরুষ একাকী হবে না। সন্তানদের সঙ্গে রাখবে। সন্তান না থাকলে মা, বোন, ভাগ্নি-ভাতিজি, ননদ, শাশুড়ি, পিতা, আপন ভাই কিংবা নিকটাত্মীয় নারীদের সঙ্গে থাকবে। স্বামী-স্ত্রী কোনো কারণে একত্রে থাকা সম্ভব না হলে নিয়মিত নফল সিয়াম পালন, কোরআন তিলাওয়াত, নবীজীবন, সাহাবিচরিত ও ইসলামী বই-পুস্তক বেশি বেশি পাঠ করা এবং পারিবারিক ও অন্য কাজকর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করা।
প্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ : বর্তমান প্রযুক্তির যুগে পরকীয়া অনেক সহজ। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফ্রি কলিং অ্যাপ ও মোবাইল ফোন এই কাজটি ভীষণ সহজ করে দিয়েছে। এখন আর কারো সঙ্গে দেখা করার জন্য গোপনে তার ঘরের পেছনে গিয়ে মশার কামড় খেতে হয় না। মুঠোফোনে ভিডিও কলের মাধ্যমে এক মুহূর্তেই প্রেমিকার দেখা পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩)
সম্পর্কিত খবর

প্রতিদিনের আমল
ঘুম থেকে উঠে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তেন
ইসলামী জীবন ডেস্ক

মুমিনের সব কাজ ইবাদতের অংশ। তাই ঘুম ও সজাগ সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর স্মরণ জরুরি। ঘুমানোর সময় ও ঘুম থেকে উঠার পর কী দোয়া পড়তে হবে রাসুল (সা.) তা শিখিয়েছেন।
হুজাইফা বিন আল ইয়ামান (রা.) বলেছেন, নবী করিম (সা.) যখন বিছানায় ঘুমাতে যেতেন তখন তিনি বলতেন,
«باسْمِكَ اللَّهُمَّ أمُوتُ وأَحْيَا»
উচ্চারণ : বিসমিকা আল্লাহুম্মা আমুতু ওয়া আহইয়া।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, তোমার নামেই আমি মারা যাব এবং জীবিত হব। ’
এবং যখন তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন তখন তিনি পড়তেন,
«الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ»
উচ্চারণ : ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর। ’
‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি (ঘুমের মতো) মৃত্যুর পর আমাদেরকে জীবিত করলেন, আর তাঁরই কাছে আমাদের সবার পুনরুত্থান। ’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৬৩২৪)

কিয়ামতের দিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি হবে
উম্মে আহমাদ ফারজানা

ইসলামে উত্তম চরিত্রের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। মুমিনদের জন্য বিভিন্ন গুণে চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা ঈমানের দাবি। কেননা উত্তম চরিত্র ছাড়া একজন মুমিনের ঈমান পরিপূর্ণ হতে পারে না। ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য উত্তম চরিত্র অর্জন করা অপরিহার্য।
আমাদের সমাজে মানুষের সর্বোত্তম হওয়ার বিভিন্ন মাপকাঠি আছে। বিভিন্নজনের কাছে ভিন্ন মাপকাঠিতে ভিন্ন ধরনের মানুষ সর্বোত্তম। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হচ্ছে উত্তম চরিত্র।
রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি কখনো কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি।
উত্তম চরিত্রের সওয়াব এত বেশি, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কিয়ামতের দিন মানুষের সওয়াব ও গুনাহ পরিমাপের জন্য দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা হবে। সেদিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি ভারী হবে তা হলো উত্তম চরিত্র। এ সম্পর্কে আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোনো জিনিস হবে না। কেননা আল্লাহ অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০২)
উত্তম চরিত্রের সওয়াব ওজনে সবচেয়ে বেশি ভারী হওয়ার রহস্য আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়। এক ব্যক্তি সারা দিন সাওম পালন করে এবং সারা রাত নফল সালাত পড়ে যেরূপ সওয়াব পায়, মহান আল্লাহ উত্তম চরিত্রের বদৌলতে সেরূপ সওয়াব দান করেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনে) সাওম পালনকারী ও (রাতে) নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৮)
জান্নাতে মানুষের আমল অনুযায়ী সম্মানজনক জায়গায় অধিষ্ঠিত করা হবে। যার আমল যত ভালো হবে, সে তত বেশি সম্মানিত হবে। রাসুল (সা.) নিজে উত্তম চরিত্রবানদের জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে ঘর বরাদ্দের জিম্মাদারি নিয়েছেন। এ বিষয়ে আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না, আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার এবং যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে, আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)

আজকের নামাজের সময়সূচি, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
অনলাইন ডেস্ক

আজ রবিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬
ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—
জোহর সময় শুরু- ১২টা ৩ মিনিট।
আসরের সময় শুরু - ৪টা ৩০ মিনিট।
মাগরিব- ৬টা ২৩ মিনিট।
এশার সময় শুরু - ৭টা ৩৯ মিনিট।
আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ২৩ মিনিট।
আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ১৯ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৫টা ৪০ মিনিটে।
সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রশ্ন-উত্তর
মৃত ব্যক্তির আকিকা দেওয়া জায়েজ আছে কি?
ইসলামী জীবন ডেস্ক

প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির আকিকা দেওয়া জায়েজ আছে কি?
-আতিক, মিরপুর
উত্তর : আকিকা জীবিত ব্যক্তির জন্য মুস্তাহাব। মৃত ব্যক্তির আকিকা করা মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই তাতে আকিকার সওয়াব পাওয়া যাবে না। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৩৬, ফয়জুল বারি : ৪/৩৩৭)
সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা
।