<p>হাদিসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিখ্যাত কিতাব সহিহ বুখারির দরসদানকারী প্রথম নারী কারিমা  বিনতে আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন হাতেম মারজিয়া (রহ.)। তিনি ছিলেন উন্নত ব্যক্তিত্বের অধিকারিণী, হাদিসের সনদের ব্যাপারে বিজ্ঞ আলেমা এবং বায়তুল্লাহর প্রতিবেশী। ইসলাম ও ইলমের খেদমতে তাঁর বিরাট অবদানের কারণে পরবর্তী আলেমগণ তাঁকে উম্মুল কিরাম উপাধিতে ভূষিত করেন। ইলমের জন্য তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে আমৃত্যু কুমারী ছিলেন। তিনি বর্তমান তুর্কমেনিস্তানের নিকটবর্তী অঞ্চল খোরাসানের মার্ভ নামক এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন।</p> <p>ইমাম জাহাবি (রহ.) বলেন, তাঁর পিতা তাঁকে নিয়ে নিজ শহর মার্ভ থেকে বের হয়ে প্রথমে বায়তুল মুকাদ্দাস, অতঃপর সেখান থেকে মক্কা মোকাররমায় চলে যান এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেখানেই বসবাসরত ছিলেন। একজন নারীর জন্য সফরের ক্ষেত্রে শরিয়তের বিভিন্ন হেকমতপূর্ণ বিধি-নিষেধের কারণে অন্য শায়েখদের ন্যায় তিনি নানা দেশ সফর করে ইলম অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু এ কারণে হজরত কারিমা থেমে যাননি। নিজের সমস্ত ধ্যান-জ্ঞান হাদিসের বিশুদ্ধতম কিতাব সহিহ বুখারির প্রতি মনোনিবেশ করেন এবং নিজ এলাকায় এই কিতাবের প্রসিদ্ধ শায়েখদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি ইমাম আবু হাইছাম কুশমিহানি (রহ.) থেকে বুখারির পাঠ নিয়েছেন। জাহের বিন আহমদ সারাখসি ও আবদুল্লাহ বিন ইউসুফ ইস্পাহানি (রহ.) থেকেও শিক্ষা লাভ করেন। যখনই তিনি হাদিস বর্ণনা করতেন তখন সনদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতেন।</p> <p>হাদিসের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি  ইবাদত ও কল্যাণকর কাজেও তাঁর অত্যধিক আগ্রহ ছিল। উলামা ও তালাবাদের একটি বড় দল তাঁর থেকে সহিহ বুখারির হাদিস গ্রহণ করতেন। তৎকালীন শায়েখ আবু জর (রহ.) উপদেশ দিতেন যেন সবাই তাঁকে ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে বুখারি অধ্যয়ন না করে। আবুল গনাঈম নারসি, আবু তালিব হুসাইন বিন মুহাম্মদ জাইনাবি, মুহাম্মদ বিন বারাকাত সাঈদি, আলী বিন হুসাইন ফাররা, আবুল কাসেম আলী বিন ইবরাহিম নাসিব, আবুল মুজাফফর মনসুর বিন সামআনি (রহ.) প্রমুখ ব্যক্তি তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেন।</p> <p>তাঁর ছাত্র আবুল গনাঈম নারসি বলেন, ‘হজরত কারিমা আমার জন্য বুখারি শরিফের পাণ্ডুলিপি বের করলেন। আমি তাঁর সামনে বসে সাত পৃষ্ঠা লিখলাম এবং পড়লাম। এরপর আমি তা একা একা পুনরাবৃত্তি করতে চাইলে তিনি বললেন, না আমার সাথে মুজাকারা করো। অতঃপর আমি তার সাথে মুজাকারা করলাম। আবু বকর ইবনে মনসুর সামাআনি থেকে বর্ণিত, নিজ উস্তাদের স্মরণকালে আমার বাবা বলতেন, কারিমার মতো আর কাউকে দেখেছ কি? তিনি আরো বলেন, আমি হজরত কারিমার ভাইয়ের মেয়ের থেকে শুনেছি যে, তিনি কখনো বিয়ে করেননি। তিনি প্রায় এক শ বছর বেঁচে ছিলেন। ইমাম জাহাবি (রহ.) এর মত অনুযায়ী তিনি ৪৬৩ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা : ১৮/২৩৩-২৩৪)</p>