<p>যেসব মুহাদ্দিস রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসের খিদমতে আত্মনিয়োগ করেছেন তাঁদের মধ্যে ইমাম বুখারির নাম সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য। তিনিই সহিহ হাদিসের ওপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে সার্থক ভূমিকা রাখেন। বুখারি শরিফ রচয়িতা ইমাম বুখারি (রহ.) বলেন, ‘আমি ছয় লাখ হাদিস যাচাই-বাছাই করে সুদীর্ঘ ১৬ বছরে এই গ্রন্থ সংকলন করেছি এবং এই গ্রন্থ আমার নাজাতের অসিলারূপে স্থাপন করেছি।’ (ইবনে হাজার, হুদাস সারি, পৃষ্ঠা ৬৭৫)</p> <p>মুহাদ্দিসিনে কিরামের মতে, ‘আল্লাহর কিতাব কোরআনুল কারিমের পর সর্বাধিক বিশুদ্ধ কিতাব হলো সহিহুল বুখারি।’ (উমদাতুল কারি, ১/৫)</p> <p><strong>সহিহ বুখারি সংকলনের কারণ</strong></p> <p>ইমাম বুখারির সংকলনের আগে আলেমরা সহিহ ও জয়িফ হাদিসগুলো একসঙ্গেই লিখতেন। কিন্তু ইমাম বুখারি (রহ.) জয়িফ হাদিস থেকে সহিহ হাদিসগুলো আলাদা করে লেখার কাজে অগ্রসর হন। তিনি তাঁর বিশিষ্ট উস্তাদ ইসহাক বিন রাহওয়াই (রহ.)-এর কাছ থেকে এই মহৎ কাজের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তিনি নিজেই বর্ণনা করেন, একদিন আমি ইসহাক ইবনে রাহওয়াইয়ের মসজিদে বসা ছিলাম।</p> <p>তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যদি হাদিসের এমন একটি গ্রন্থ রচনা করত, যাতে শুধু সহিহ হাদিসগুলো স্থান পাবে, তাহলে খুবই সুন্দর হতো। মজলিসে উপস্থিত সবাই তাঁর কথা শুনলেও এই কাজে কেউ অগ্রসর হওয়ার সাহস পায়নি। ইমাম ইসহাকের কথাগুলো ইমাম বুখারির অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। তিনি সেই দিন থেকে এই মহান দায়িত্ব পালন করবেন বলে মনে মনে স্থির করেন।</p> <p><strong>সহিহ বুখারি রচনায় ইমাম বুখারির শর্ত ও সতর্কতা</strong></p> <p>বুখারি শরিফ রচনার ক্ষেত্রে ইমাম বুখারি (রহ.) কয়েকটি শর্তের প্রতি খেয়াল রাখেন। যথা—</p> <p>১. হাদিসের বর্ণনাকারী তার ওপরের বর্ণনাকারীর সমসাময়িক হতে হবে এবং উভয়ের মধ্যে সাক্ষাৎ হওয়া প্রমাণিত হতে হবে। অর্থাৎ সাক্ষাৎ করা এবং সরাসরি হাদিস শোনা প্রমাণিত হওয়া জরুরি। এই শর্তে তিনি অন্য মুহাদ্দিসদের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন।</p> <p>২. বর্ণনাকারী সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য হতে হবে।</p> <p>৩. বর্ণনাকারীকে ন্যায়পরায়ণ অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে কথাবার্তায় ও লেনদেনে সত্যবাদী হতে হবে।</p> <p>৪. হাদিস বর্ণনাকারী পূর্ণ ম্মরণশক্তিসম্পন্ন হতে হবে।</p> <p>৫. হাদিসের সনদ মুত্তাসিল হওয়া। অর্থাৎ মাঝখান থেকে কোনো বর্ণনাকারী বাদ না পড়া।  </p> <p>কোনো হাদিসে উপরোক্ত শর্তগুলো পাওয়া গেলেই ইমাম বুখারি তাঁর কিতাবে তা লিখে ফেলেননি, বরং প্রতিটি হাদিস লেখার আগে তিনি গোসল করে দুই রাকাত নামাজ পড়েছেন এবং ইস্তেখারা করেছেন। তাঁর অন্তরে যদি হাদিসটি সম্পর্কে কোনো ধরনের সন্দেহ জাগত তাহলে সেই হাদিস শর্ত মোতাবেক সহিহ হওয়া সত্ত্বেও তিনি সহিহ বুখারিতে লিখতেন না।</p> <p>এভাবে মসজিদে নববীতে বসে তিনি তা লেখা শুরু করেন এবং টানা ১৬ বছর এই কাজে দিনরাত পরিশ্রম করেন। লেখা শেষ করেই তাড়াহুড়া করে তা মানুষের জন্য প্রকাশ করেননি; বরং কয়েকবার তিনি তাতে পুনঃদৃষ্টি প্রদান করেছেন, ভুল-ত্রুটি সংশোধন করেছেন এবং পরিমার্জিত করেছেন। তিনবার তিনি তা লিপিবদ্ধ করেন।</p> <p>ইবনে আল সালাহ (রহ.)-এর হিসাব মতে, দ্বিরুক্তিসহ বুখারি শরিফে হাদিসের সংখ্যা সাত হাজার ৫৬৩। আর পুনরুক্ত ছাড়া আছে চার হাজারের মতো। আর মাত্র একবার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা দুই হাজার ২৩০।</p> <p>তবে এটা উল্লেখ্য, সহিহ বুখারি ছাড়াও আরো সহিহ হাদিসের কিতাব আছে এবং আরো অসংখ্য সহিহ হাদিস অন্য হাদিসের কিতাবে আছে। ইমাম বুখারি (রহ.) বলেন, ‘আমি এই গ্রন্থে সহিহ হাদিস ছাড়া একটি হাদিসও সংযোজন করিনি। আর গ্রন্থের পরিধি বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক সহিহ হাদিস লিপিবদ্ধ না করে ছেড়ে দিয়েছি। অর্থাৎ এই গ্রন্থের বাইরেও অনেক সহিহ হাদিস আছে।’ (বদরুদ্দিন আইনি, উমদাতুল কারি, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১০)</p> <p> </p>
