রমজানের শেষ মুহূর্তে আল্লাহর ডাক, আপনি কি প্রস্তুত

আইয়ূব হুসাইন
আইয়ূব হুসাইন
শেয়ার
রমজানের শেষ মুহূর্তে আল্লাহর ডাক, আপনি কি প্রস্তুত

রমজান বিদায়ের পথে, সময়ের চাকা দ্রুত ঘুরে চলছে। কিন্তু এখনো আপনার জন্য দুয়ার খোলা। হয়তো আপনি এখনো গভীরভাবে রমজানের মাহাত্ম্য অনুভব করতে পারেননি, ইবাদতে একাগ্রতা খুঁজে পাননি, অন্তরে প্রশান্তির পরশ লাগেনি। চারপাশে মানুষ ইবাদতে মশগুল, কেউ কোরআন তিলাওয়াতে রত, কেউ লাইলাতুল কদরের সন্ধানে রাত জাগরণে মগ্ন।

অথচ আপনার হৃদয় যেন শূন্য, আবেগহীন, কাঠিন্যে মোড়ানো! তবে সুখবর হলো—আল্লাহর রহমত এতটাই বিশাল যে তিনি মুহূর্তের মধ্যে আপনার অবস্থান বদলে দিতে পারেন। তিনি বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।

’ (সুরা : আজ-জুমার, আয়াত : ৫৩)

এই আয়াত কি যথেষ্ট নয় আমাদের জন্য—যেখানে মহান রব নিজেই ডাকছেন, ‘তোমরা নিরাশ হয়ো না!’ তাহলে আমরা কেন তার রহমত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব?

লাইলাতুল কদর—এক রাতের ইবাদতে ৮৪ বছরের সওয়াব

এখন রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ রাতগুলো পার হচ্ছে। হতে পারে, এটাই লাইলাতুল কদর! যে রাত সম্পর্কে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন : ‘নিশ্চয়ই আমি কদরের রাতে কোরআন নাজিল করেছি। আর তুমি কী জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হলো এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম!’ (সুরা : আল-কদর, আয়াত : ১-৩)

ভাবুন, এই রাতে যদি আপনি নফল নামাজ পড়েন, একটি তাসবিহ বলেন, একটি দোয়া করেন—আপনার আমলনামায় ৮৪ বছরের ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে! এমন সুবর্ণ সুযোগ আর কোথায় পাওয়া যাবে?

তাওবার দরজা এখনো খোলা

হয়তো আপনি ভাবছেন—‘আমি অনেক গুনাহ করে ফেলেছি, আল্লাহ কি আমাকে মাফ করবেন?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—‘যে ব্যক্তি অন্তর থেকে খাঁটি মনে তাওবা করে, আল্লাহ তার গুনাহ এমনভাবে মাফ করে দেন, যেন সে কখনো সেই পাপ করেনি।’ (ইবন মাজাহ, হাদিস : ৪২৫০)

সুতরাং, আপনি যতই পাপ করে থাকুন না কেন, এই মুহূর্তে যদি আল্লাহর দরবারে ফিরে আসেন, তিনি আপনাকে ক্ষমা করবেন।

শেষ সময়ে বিজয়ীর মতো ছুটুন

আমাদের পূর্বসূরিরা রমজানের শেষ দশকে নিজেদের আরো বেশি ইবাদতে ডুবিয়ে দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) যখন রমাদানের শেষ দশকে প্রবেশ করতেন, তখন তিনি রাত জাগতেন, পরিবারের সবাইকে জাগাতেন এবং ইবাদতে অধিক মনোযোগী হতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২০২৪)

আমরা কি সেই সুন্নাহকে অনুসরণ করব না?

এখনো সময় আছে—আল্লাহর কাছে ফিরে যান। অনেকেই মনে করেন, ‘আরেকটা বছর আসবে, তখন ভালোভাবে ইবাদত করব।’ কিন্তু আপনি কি নিশ্চিত যে আপনি আরেকটি রমজান পাবেন?

রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘সুযোগ থাকতেই পাঁচটি জিনিসকে গ্রহণ করো—(১) বৃদ্ধ হওয়ার আগে তোমার যৌবনকে, (২) অসুস্থ হওয়ার আগে তোমার সুস্থতাকে, (৩) দরিদ্র হওয়ার আগে তোমার সম্পদকে, (৪) ব্যস্ত হওয়ার আগে তোমার অবসরকে, (৫) মৃত্যুর আগে তোমার জীবনকে।

’ (হাকিম, হাদিস : ৭৮৪৬) 

এখনো সময় আছে! আল্লাহর দিকে ফিরে যান, তাহাজ্জুদের মিহরাবে দাঁড়ান, হাত তুলে দোয়া করুন, অশ্রু ঝরান, কোরআনে মনোযোগ দিন।
এই রমজান হতে পারে আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ রমজান

রমজান শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই শেষ সময়ে আপনি যে আমল করবেন, সেটাই হতে পারে আপনার জান্নাতের চাবিকাঠি। হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি শেষ সময়ে ভালো আমল নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে ভালো পরিণতি লাভ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৪১)

এখনো সময় আছে—নিজেকে বদলানোর, আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার, কদরের রাতের সর্বোচ্চ ফায়দা নেওয়ার।

উঠুন, ফিরে আসুন! রমজান চলে যাচ্ছে, কিন্তু আপনার সুযোগ এখনো শেষ হয়নি। ইতিহাসে অনেক মানুষ জীবনের শেষ সময়ে আমল বাড়িয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আপনি কি সেই তালিকায় থাকতে চান না?

আল্লাহ আপনাকে ডাকছেন। আপনি কি সাড়া দেবেন?

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

যাত্রাপথে নামাজের সময় হলে যেভাবে পড়বেন

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
যাত্রাপথে নামাজের সময় হলে যেভাবে পড়বেন

আল্লাহ মুমিন নর-নারীর ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন। মুমিনের দায়িত্ব হলো যথাসময়ে ফরজ নামাজ আদায় করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০৩)

আর নির্ধারিত সময়ে যথাযথভাবে নামাজ আদায়ের কথা হাদিসেও এসেছে।

এ বিষয়ে অবহেলা করলে জাহান্নামের হুমকি এসেছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা যথাযথভাবে পালন করবে, আর অবহেলার কারণে এর কোনোটি পরিত্যাগ করবে না, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অঙ্গীকার করেছেন। আর যে ব্যক্তি তা (যথাযথভাবে) আদায় করবে না, তার জন্য আল্লাহর কাছে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই।
তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেবেন কিংবা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪২০)

সফরকালে নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় জেনে রাখা উচিত। তা হলো- 

এক. চলন্ত জাহাজ, ট্রেন ও বিমানে নামাজ ‍পড়া

চলন্ত লঞ্চ, জাহাজ, ট্রেন ও বিমানে ফরজ নামাজ সম্ভব হলে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে রুকু-সিজদাসহ আদায় করবেন।

দাঁড়ানো যদি কষ্টকর হয়, তাহলে বসে স্বাভাবিক রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করবেন। এভাবে নামাজ আদায় করতে পারলে পরবর্তী সময়ে তা পুনরায় পড়তে হবে না। 

দুই. অপারগ হলে ইশারায় পড়া এবং পরবর্তীতে কাজা করা 

আর যদি কেবলামুখী হয়ে রুকু-সিজদার সঙ্গে নামাজ আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে যেভাবে সম্ভব বসে বা ইশারায় নামাজ পড়ে নেবেন। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলে সতর্কতামূলক ওই ফরজ নামাজ পরবর্তী সময়ে আবার পড়ে নেবেন। 

তিন. পারলে যানবাহন থেকে নেমে নামাজ পড়া

আর বাসে যেহেতু সাধারণত দাঁড়িয়ে স্বাভাবিকভাবে নামাজ পড়া যায় না, তাই কাছাকাছি যাতায়াতের ক্ষেত্রে ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগে গন্তব্যে পৌঁছে নামাজ আদায় করা সম্ভব হবে না বলে মনে হলে এবং নেমে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ অথবা অসুবিধাজনক না হলে পথিমধ্যে নেমে ফরজ নামাজ পড়ে নেবেন।

চার. নামা সম্ভব না হলে ইশারায় পড়া ও পরে কাজা করা

আর দূরের যাত্রা হলে অথবা যে ক্ষেত্রে নেমে গেলে ঝুঁকি অথবা সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা থাকে সে ক্ষেত্রে বাস না থামলে সিটেই যেভাবে সম্ভব বসে বা ইশারায় নামাজ আদায় করে নেবেন এবং সতর্কতামূলক পরবর্তী সময়ে এর কাজা করে নেবেন।

পাঁচ. নামাজের জন্য যাত্রাবিরতি দেওয়া

উল্লেখ্য, দীর্ঘ যাত্রায় বাসচালকদের উচিত ফরজ নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে কোনো মসজিদে যাত্রাবিরতি করা। এ বিষয়ে বাস মালিকদেরও ইতিবাচক নির্দেশনা দিয়ে রাখা উচিত। এ ক্ষেত্রে মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতিগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে। আর যাত্রীদের কর্তব্য হলো, বাসের একজন মুসল্লি নামাজ পড়তে চাইলেও তার জন্য বাস থামাতে চালককে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।(তথ্যসূত্র : ইলাউস সুনান : ৭/২১২; মাআরিফুস সুনান : ৩/৩৯৪; আদ্দুররুল মুখতার : ২/১০১)।

মন্তব্য

আজকের নামাজের সময়সূচি, ২ এপ্রিল ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ২ এপ্রিল ২০২৫

আজ বুধবার ২ এপ্রিল ২০২৫, ১৯ চৈত্র ১৪৩১, ০২ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহরের সময় শুরু ১২টা ৬ মিনিট। 

আসরের সময় শুরু - ৪টা ২৯ মিনিট।

মাগরিব- ৬টা ১৯ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ৩৪ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ৩৫ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ১৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৫টা ৪৯ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
প্রশ্ন-উত্তর

লঞ্চে নামাজ আদায় করা যাবে কি?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
লঞ্চে নামাজ আদায় করা যাবে কি?
সংগৃহীত ছবি

প্রশ্ন : লঞ্চ বা জাহাজ ঘাটে ভিড়ে থাকা অবস্থায় তাতে ফরজ নামাজ আদায় করা যাবে কি? এ অবস্থায় নিচে নেমে নামাজ আদায় করা আবশ্যক কি না?

- খোরশেদ আলম, বরিশাল

উত্তর : লঞ্চের কোনো অংশ জমি স্পর্শ অবস্থায় থাকলে লঞ্চে নামাজ পড়তে আপত্তি নেই; অন্যথায় নিচে নেমে নামাজ আদায় করতে হবে। (হিন্দিয়া : ১/১৫৮, নূরুল ঈজাহ : ৯৯)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

মন্তব্য
প্রশ্ন-উত্তর

নিজেই নিজের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার বিধান কী?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
নিজেই নিজের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করার বিধান কী?
সংগৃহীত ছবি

প্রশ্ন : কোনো স্বপ্ন দেখে নিজেই অনুমানের ভিত্তিতে তার ব্যাখ্যা করার বিধান কী?

-আতিক, মিরপুর।

উত্তর : স্বপ্নের ব্যাখ্যা নিজে বুঝতে পারলে কাউকে বলার প্রয়োজন নেই। তা না হলে অভিজ্ঞ দ্বিনদার হিতাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া উত্তম। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ২/৫২৭)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ