<p>দেশের চলমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটি বলেছে, ছাত্র আন্দোলনে হতাহত ও নির্যাতনের যে চিত্র গণমাধ্যমে উঠে এসেছে, তা লোমহর্ষক ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সঙ্গে শুক্রবার (২ আগস্ট) বাদ জুমা দেশব্যাপী দোয়া করার আহ্বানও জানায় তারা।</p> <p>রাজধানীর উত্তরায় জামিআতুল মানহালের এক সভায় বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেলে এই আহ্বান জানানো হয়। হেফাজতের মহাসচিব সাজিদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে হেফাজতের আমীর মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। পরে হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ সব জানানো হয়।</p> <p>হেফাজতের আমির বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী নিরীহ ছাত্রদের সঙ্গে প্রশাসনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শত শত ছাত্র-জনতা নিহত ও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। যৌক্তিক এ আন্দোলনকে দমনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক ছাত্র জনতার ওপর বলপ্রয়োগ ও বেপরোয়া নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতাকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘চলমান নাজুক পরিস্থিতিতে দেশের সব মসজিদের ইমাম ও খতিবদের কূনুতে নাজেলা পড়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং বিচারবহির্ভূত জুলুম থেকে নিরস্ত্র মানুষকে হেফাজতের জন্য দোয়া করার জন্য বিশেষভাবে আহবান জানাচ্ছি।’</p> <p>বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে মহাসচিব শায়েখ সাজিদুর রহমান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সমগ্র দেশকে গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের যে কালো ইতিহাস রচনা করা হয়েছে, তার পূঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য তাৎক্ষণিক জানা সম্ভব হচ্ছিল না। পরবর্তীতে বিভিন্ন মিডিয়ার কল্যাণে যেসব তথ্য উঠে এসেছে, সেগুলো রীতিমতো লোমহর্ষক ও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ পরিস্থিতিতে দেশের সর্বত্র আতঙ্কময় ভয়াবহ এক অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়।’</p> <p>এ ছাড়া অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল করুন। ছাত্রদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে তা বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুন। ছাত্র আন্দোলনে দেশজুড়ে যেই নির্মম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তার নিরেপক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করুন। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিন। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত যাারা নিখোঁজ রয়েছে তাদের সন্ধান দিন এবং জনসমক্ষে দ্রুত হাজির করুন।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ছাত্রদের কাউকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হবে না, মামলাও দেবে না; কিন্তু সারা দেশে ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে এবং নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। একদিকে সরকার সহানুভূতির কথা বললেও অন্যদিকে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও মামলা অব্যাহত রেখেছে। আমরা সরকারের এই আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দেশের এই উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অবিলম্বে সরকারকে সব ধরনের রাজনৈতিক অপকৌশল, নির্যাতন, নিপীড়ন এবং অহেতুক হামলা ও মিথ্যা মামলার হয়রানি বন্ধ করতে হবে।’</p> <p>আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারবর্গ ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে তারা। আন্দোলনে যারা হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি হেফাজতের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।</p> <p>সভায় উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী, নাজমুল হাসান কাসেমী, আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা মামুনুল হক, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, মুফতি মুনির হুসাইন কাসেমী, মুফতি বশিরুল্লাহ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা মুসা বিন ইজহার, মুফতী কিফায়াতুল্লাহ আজহারী, মুফতি কামাল উদ্দিন, মুফতি জাকির হুসাইন কাসেমী, মুফতী আনিসুর রহমান, মাওলানা আফসার মাহমুদ, মাওলানা রাশেদ বিন নূর, মাওলানা শরিফুল্লাহ প্রমুখ নেতারা।</p>